Know the love story of Mandira Bedi and Raj Kaushal dgtl
Mandira Bedi
Raj-Mandira Love Story: বহু অমিলের বাধা টপকে ২২ বছর সব কঠিন সময়ে একে অপরের পাশে ছিলেন রাজ-মন্দিরা
সব সময়ই নিজের কাঁধে স্বামীর মাথা নিয়ে তাঁকে শক্ত হতে শিখিয়েছেন। বাইরের দুনিয়া অবশ্য বিন্দুমাত্র সে সবের আঁচ পায়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২১ ০৯:৩৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
লাল-সাদা জামা এবং খাকি প্যান্ট পরা মেয়েটা প্রথম দেখাতেই নজর কেড়েছিল। কিন্তু তখনও রাজ জানতেন না খারাপ সময়ে এই মেয়েই এক দিন তাঁর নুইয়ে পড়া মাথায় নীচে নিজের শক্ত কাঁধ পেতে দেবে, এই মেয়েই এক দিন তাঁর ভার বহন করবে।
০২২১
সেটা বুঝতে অবশ্য দেরি হয়নি রাজের। বুঝেছিলেন বলেই প্রথম দেখার তিন বছরের মধ্যে সেই মেয়েকেই বিয়ে করেন তিনি। তার পর একসঙ্গে হাতে হাত রেখে অনেকটা পথ পেরিয়েছেন। অনেক বাধা অতিক্রম করেছেন একসঙ্গে।
০৩২১
ঘরে-বাইরে সমান দক্ষ সেই মেয়ে স্বামীর খারাপ সময়ে কখনও ভেঙে পড়েননি। স্বামীকেও ভেঙে পড়তে দেননি। বরং সব সময়ই নিজের কাঁধে স্বামীর মাথা নিয়ে তাঁকে শক্ত হতে শিখিয়েছেন। বাইরের দুনিয়া অবশ্য বিন্দুমাত্র সে সবের আঁচ পায়নি।
০৪২১
গত ৩০ জুন সারা দুনিয়া চাক্ষুষ করল সেই শক্ত কাঁধের মেয়েটিকে। ছক ভেঙে যখন তিনি স্বামীর শবদেহ নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। তাঁদের দাম্পত্যের সবচেয়ে খারাপ সময়ে যখন আরও এক বার এবং শেষ বারের জন্য স্বামীর মাথার নীচে নিজের কাঁধ পেতে দিলেন।
০৫২১
এ রকমই ছিল অভিনেত্রী-সঞ্চালক মন্দিরা বেদী এবং পরিচালক-প্রযোজক রাজ কৌশলের ভালবাসা। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২১— এই ২২ বছরে যা শুধুই গভীরতর হয়েছে।
০৬২১
১৯৯৬ সালে মন্দিরা এবং রাজের প্রথম দেখা একটি অডিশনে। রাজ তখন মুকুল আনন্দের সহকারী হিসাবে কাজ করছিলেন। ‘ফিলিপস ১০’ নামে একটি শো-এর জন্য অডিশন নিতে চূড়ান্ত ব্যস্ত। সেই ব্যস্ততার ফাঁকেই নজর পড়ে মন্দিরার উপর।
০৭২১
ওই দিন লাল-সাদা জামা এবং খাকি প্যান্ট পরে অডিশন দিতে এসেছিলেন মন্দিরাও। মন্দিরা অবশ্য তখন পরিচিত মুখ। দূরদর্শনের ধারাবাহিক ‘শান্তি’ এবং বলিউডের অন্যতম সেরা ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’-তে অভিনয় করে ফেলেছিলেন তিনি।
০৮২১
রাজও সেই প্রথম বার মন্দিরাকে দেখেছিলেন তেমন নয়। তবে সেই প্রথম বার চোখ আটকে গিয়েছিল তাঁর। লাল-সাদা স্ট্রাইপ টি-শার্ট এবং খাকি প্যান্টে অনবদ্য লাগছিল মন্দিরাকে। ১৯৯৬ সালের শেষের দিক থেকেই মূলত কাজের বাইরে তাঁদের কথাবার্তা শুরু হয়।
০৯২১
ঘন ঘন দেখা করা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা শুরু হয়। খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা একে অপরের ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। রাজ তাঁর জীবনসঙ্গী হিসাবে কতটা উপযুক্ত হবে সেটা বুঝে নিতে একটু সময় নিয়েছিলেন মন্দিরা। কিন্তু মন্দিরাকে প্রথম তিন ডেটিংয়েই বুঝে নিয়েছিলেন রাজ।
১০২১
মন্দিরার মতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার সুযোগ হারাতে চাননি রাজ। তাই বেশি দেরি করেননি। মুকুল আনন্দের বাড়িতেই এক দিন মন্দিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রীতিমতো কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন মন্দিরা।
১১২১
মন্দিরা এবং রাজের মধ্যে অনেক অমিল ছিল। মন্দিরা সম্পূর্ণ নিরামিষাশি। উল্টো দিকে রাজ ছিলেন ভীষণ ভাবে মাংসাশী। তাঁরা প্রথম দেখা করেছিলেন একটি উদিপি হোটেলে। দুই ভিন্ন মেরুর মানুষ কী ভাবে এক হওয়ার চেষ্টা করছেন, তা দেখে অবাক হতেন তাঁদের বন্ধুরাও।
১২২১
মন্দিরার কাছে একটাই জবাব বরাবর পেয়ে এসেছেন বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়েরা। রাজ অত্যন্ত সাধারণ মনের মানুষ। অত্যন্ত সৎ রাজের বাইরে এবং ভিতরে একেবারেই এক। মন্দিরার কোন বিষয় রাজকে আকর্ষণ করেছিল? সুন্দরী, বুদ্ধিমতী এবং মন্দিরার সংস্কারি ও পাশে থাকার মনোভাব তাঁকে আকর্ষণ করে বলে জানান রাজ।
১৩২১
১৯৯৯ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। রাজের পরিবার মন্দিরাকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে নেন। কিন্তু বিষয়টি এতটা সহজ ছিল না মন্দিরার পরিবারের ক্ষেত্রে।
১৪২১
অনিশ্চিত কেরিয়ারের পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে মেয়ের জীবন জুড়তে কিছুতেই রাজি ছিলেন না মন্দিরার মা-বাবা।
১৫২১
মন্দিরার বাবা ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। কর্পোরেট মানুষটি উপার্জন-সঞ্চয়-ভবিষ্যৎ এই তিন বিষয় নিয়ে সব সময় হিসাব কষে গিয়েছেন। এমন এক জন কী করে উঠতি পরিচালক-প্রযোজকের ভরসায় মেয়েকে ছাড়বেন!
১৬২১
শেষমেশ মন্দিরা-রাজের ভালবাসারই জয় হয়েছিল। মেয়ের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য জামাইও তাঁদের চোখের মনি হয়ে গিয়েছিলেন।
১৭২১
বিয়ের পর একটা দিনের জন্যও একে অপরের পাশ থেকে সরে দাঁড়াননি তাঁরা। কেরিয়ারে অনেক উথালপাথাল দেখেছেন দু’জনেই। সে সব দিনগুলো একসঙ্গে সামলেছেন মন্দিরা-রাজ। রাজ যখনই ভেঙে পড়েছেন সবসময়ই কাঁধ এগিয়ে দিয়েছেন মন্দিরা।
১৮২১
বিয়ের ১২ বছর পর তাঁদের সন্তান বীরের জন্ম হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২২ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল মন্দিরার। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় পাশে থেকেছেন রাজও।
১৯২১
২০২০ সালে তারা নামে এক ৪ বছরের মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন মন্দিরা-রাজ। নেটমাধ্যমে মেয়ের ছবি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন দু’জনে। ছেলে বীরও বোন পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল।
২০২১
সুখী সংসারে আচমকাই খাঁড়া নেমে আসে। ২০২১-এর ৩০ জুন ভোর সাড়ে ৪টেয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রাজের। শেষযাত্রাতেও স্বামীকে কাঁধ দিয়েছেন মন্দিরা। তাঁর ছক ভাঙা পদক্ষেপ সারা দেশের প্রশংসা কুড়োচ্ছে।
২১২১
মন্দিরা আজ একা। জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। রাজ নেই। মাথা রাখার জন্য ভালবাসার মানুষটির কাঁধও নেই।