Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
kedara

মুভি রিভিউ: শান্ত হয়ে ভেতরকে খুঁজতে চাইলে ‘কেদারা’-কে অনুভব করতে হবে

নরসিংহের আর এক নাম এখন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। এখানে তিনি হরবোলা। ঠাকুমার গলা থেকে বাঘের আওয়াজ, সব নিজের গলায় তিনি কথা বলেন।

কেদারা ছবিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

কেদারা ছবিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ২০:৩৩
Share: Save:

ছবির নাম: কেদারা

অভিনয়: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, বিদীপ্তা চক্রবর্তী

পরিচালক: ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত

সব মানুষের জীবনেই ব্যর্থতা আছে। থাকবে। সেই ব্যর্থতা জীবনে বুনতে বুনতে চলা এক ছবির নাম ‘কেদারা’।
কেদারা দেখতে দেখতে মনে হয় না কোনও ছবি দেখছি!
গান, নায়িকা, প্রেম?
না, কিছুই নেই এখানে। আছে তো কেবল নিজের সঙ্গে প্রেম।যত্ন করে তৈরি করা এক মায়াময় পরিসর।
চাঁদ ছোঁয়া আলো, যার নাম একাকিত্ব! এক ধূসর দীপ। যেখানে নরসিংহ, মানে এক চরিত্র প্রবল ভাবে বেঁচে আছে। শ্যাওলা আর আলো মেশানো তার ঘর ঘিরেই কেদারার আলাপ জমে ওঠে। পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত স্বপ্ন, সাধ আর ব্যর্থতায় মাখা এক অন্য জীবনকে দেখাতে চেয়েছেন তাঁর দর্শককে। তাঁর প্রথম ছবি। মিলেছে জাতীয় পুরস্কার। চেনা ছকে বা বাজারের কথা ভেবে তিনি তাঁর স্বপ্নকে মেলে দেননি।
কেদারা এক ধূসর দ্বীপ। তারমধ্যে শব্দের দীপ জেলে দিয়েছেন শ্রীজাত।সংলাপ আর চিত্রনাট্য তাঁর। মরচে মাখা বর্ণহীন দেওয়ালে তারা ফুটিয়ে তোলেন শ্রীজাত। নরসিংহের শরীরে শব্দ লেগে লেগে থাকে। সিংহ হয়ে ওঠেন তিনি। কখনও অসহায় বাবা। কখনও কামাতুর পুরুষ। ‘রাত কলি এক খোয়াব মে আয়ি’গানের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর ফেলে আসা প্রেম— তাঁর স্ত্রীকে দেখতে পান বৃষ্টিস্নানে। একাই ভেজেন নরসিংহ।একাই নিজের যৌন ইচ্ছাকে তৃপ্ত করেন। ছবি দেখতে দেখতে মনে হয় একার মধ্যে এত বড় জীবন!

আরও পড়ুন- মাথায় টাক! আয়ুষ্মানকে ছেড়ে চলে গেলেন স্ত্রী


তার সেই দ্বীপের রাজা নরসিংহ! তবে এই রাজা ভাব ছবিতে প্রথম থেকে দেখা যায়না। সাদা আলুর তরকারিতে আনন্দ পেলেও জীবনে যে দিন কেদারা এল সে দিন ঠিক কী করলেন নরসিংহ? সেটা ছবি বলবে।
তবে ‘কেদারা’,এই তিন অক্ষর দিয়ে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত খুলেদিলেন তিন দিগন্ত। কেদারা রাজনীতির ক্ষমতায়নকে সামনে হাজির করে, যে রাজনীতি এ সমাজের। যে রাজনীতি জোর যার মুলুক তার-এর আস্ফালনে ভরপুর। পয়সার বিনিময় যে রাজনীতিতে চলে দলবদল।
কেদারা নরম সুরের ধুন তোলে। সঙ্গীত পরিচালক অরিজিৎ সিংহ কেদারাকে বাজিয়ে চলেছেন নিজের ওজস্বীতায়। কড়ি মধ্যমে কেদারা নরসিংহের কান্না হয়ে মোচড় তোলে। আবার শুদ্ধ মধ্যম নরসিংহকে ঠেলে দেয় স্থির দিঘির কাছে, যার নাম জীবন। কাগজ পড়া, চা-চুমুকের শব্দ কোনও অ্যাকশন ছাড়া ব্যবহৃত হয়। দৃশ্য নয়, এখানে শব্দের জয়!

স্বল্প পরিসরে দৃপ্ত বিদীপ্তা চক্রবর্তী


নরসিংহের আর এক নাম এখন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। এখানে তিনি হরবোলা। ঠাকুমার গলা থেকে বাঘের আওয়াজ, সব নিজের গলায় তিনি কথা বলেন।তাহলে ‘কেদারা’শুধু অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের দিগন্ত ছোঁয়া অভিনয়ের চিত্তপট তৈরি করেনি, নির্মাণ করেছে এক সত্যিকারের হরবোলার চিত্রপট। যারআর এক নাম কৌশিক। আসলেতিনি চিরকালই শব্দনিয়ে ছবি আঁকতে চেয়েছেন।
নরসিংহ কেদারা জুড়ে। তার দুয়ারে অন্ধকার। কিন্তু ভেতরে আলো! ছেলের ছোটবেলার কাঠের দোল দেওয়া ঘোড়া, নানা মুখোশ জোড়া বাড়ির দেওয়াল, ধুলো জমা বাতিল টেলিফোন, গ্রামাফোন সব সঙ্গে নিয়ে তার সংসার। ঠাকুমার হাতের ডিমের মামলেট থেকে রূপচাঁদা মাছের ঝাল আর দিলীপের দোকানের চা— এই ছোট ছোট পাওয়ার মধ্যেই তার তৃপ্তি।ভুলে গিয়েছি আমরা ছোট ছোট পাওয়ায় সুখ খুঁজতে। কেদারা মনে করিয়ে দেয় তা।সংসারের কারও কাছ থেকেই আরকিছু পাওয়ার নেই নরসিংহের। ঠিক যেন বাঙালি ঘরের ছোট কাকা বা বড়দা, জীবনে যার কিছুই হল না।তবে ছোটবেলাকে নিয়ে নরসিংহ একা বাঁচেন। সঙ্গে পান কেষ্টকে। ফেলে দেওয়া ধুলো জমা ভাঙা আসবাবের মধ্যে কেষ্টর দিন-রাত কাটে। এরাই তার আত্মীয়। কেষ্টর মধ্যেও একাকিত্ব আর আনন্দকে মিলিয়ে দেখান পরিচালক। রুদ্রনীল ঘোষ! আর এক ডাকসাইটে অভিনেতা। প্রায়শই দেখতে পাওয়া হাজার হাজার কেষ্টর মধ্যে দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠেন।
নরসিংহ একরকম করে থাকতে চান। কিন্ত সমাজ?

আরও পড়ুন- বৃদ্ধ দম্পতির একচালায় মেয়েকে গুড়-রুটি খাওয়ালেন অক্ষয়


ছবিতে ‘জ্ঞানদা’-কে এনেছেন ইন্দ্রদীপ। নেট পাতা ভুবনে পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় ধরতে শেখার মধ্যেই একমাত্র সফলতা বলে দিয়ে যান তিনি। সাফল্য হল বড় চাকরি, স্কাইপে বাবা-মায়ের খোঁজ রাখা আর বাবা-মাকে একবার বিদেশ, মানে সিঙ্গাপুর পাঠানো। খুব চেনা কথাগুলোকে যেন ভেঙে দিয়ে নরসিংহর তারা ভরা রাত দেখার দৃশ্য তৈরি করেন ডিওপি শুভঙ্কর ধর।কেদারা তাঁর চোখ দিয়েই এত বর্ণিল!
স্বল্প পরিসরে দৃপ্ত বিদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর চোখের ভাষাতেই তাঁকে আলাদা করে চেনা যায়।
নিজেকে চেনার পরিসর কেদারা। এই ছুটন্ত সময়ে খানিক শান্ত হতে চাইলে, ভেতরকে খুঁজতে চাইলে কেদারাকে অনুভব করতে হবে। যা আমরা শিখেছি, যা জেনেছি, তাকে বাইরে ধূপের আলোয় একা পুড়তে দেখার সময় এখন। পুড়তে হবেই...
না পুড়লে সূর্য হওয়া যায় না!

অন্য বিষয়গুলি:

Kedara Kaushik Ganguly Tollywood Movie Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy