Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Satyajit Ray

Jeetu Kamal: নিজের ছবি দেখে আমিই সত্যজিৎ বলে ভুল করেছিলাম, এত নিখুঁত রূপ বদল!

‘আমার বীজমন্ত্র ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ আপাতত বদলে গিয়েছে ‘ওঁ নমঃ সত্যজিৎ রায়’-তে!’  

সত্যজিৎ হয়ে উঠলেন জিতু।

সত্যজিৎ হয়ে উঠলেন জিতু। ছবি: নেটমাধ্যম।

জিতু কমল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১ ১১:৫৩
Share: Save:

‘সত্যজিৎ রায়’ লুক প্রকাশ্যে আসার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনের আবদার ছিল, ‘রে’ হয়ে ওঠার বর্ণনা লিখতে হবে স্বয়ং জিতু কমলকে। শ্যুট শুরুর আগে কলম ধরেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দফার শ্যুট চলাকালীন শুধুমাত্র আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য সেই লেখা প্রকাশ্যে।


আমি জিতু কমল। নাকি আমিই সত্যজিৎ রায়?


গত দেড়-দু’মাস ধরে সব গুলিয়ে গিয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনের অনুরোধ, নিজের অভিজ্ঞতা নিজেকে লিখতে হবে। কী কঠিন কাজ! ঠিক কবে থেকে সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে একটু একটু করে তলিয়ে যেতে শুরু করলাম? নাকি আমার মধ্যে ধারণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে শুরু করলাম ওই মহাসমুদ্রকে? জটিল ধাঁধা। মনে হয় আবীর চট্টোপাধ্যায়ের জুতোয় যে দিন পা গলানোর সুযোগ এল, সে দিন থেকেই একরকম নিজেকে ভেঙেচুরে দেওয়ার মন তৈরি হল। আবীরদা কাজের চাপে অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’ থেকে, সত্যজিৎ রায় চরিত্র থেকে সরে দাঁড়ালেন। আমার শাপে বর হল। আমি ডাক পেলাম।

আগে বলে দিই, আমিও কিন্তু অনীকদার এই ছবিতে শুরু থেকেই ছিলাম। তখন কথা হয়েছিল, অল্পবয়সি সত্যজিৎ হব আমি। পরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমিই আমি! আবীরদার বাবা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মঞ্চ এবং ছোট পর্দায় অভিনয়ের সুবাদে বেশি ঘনিষ্ঠতা। ফাল্গুনীদা প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেছেন। বলেছেন, ‘‘তুই আমার ছোট ছেলে। খুব খুশি হয়েছি, সুযোগ পেয়েছিস। তোর কাঁধে কিন্তু বিরাট দায়িত্ব।’’ পাঁচ বছর আগে ওঁর দেওয়া বিজয়া রায়ের লেখা ‘আমাদের কথা’ বইটি আমাকে খুব সাহায্য করেছে। অনেক গল্প শুনিয়েছেন। উপদেশ দিয়েছেন। চরিত্র হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন।

‘ছবি দেখে, তথ্যচিত্র দেখে ওঁর কিছু বৈশিষ্ট্য অনুকরণের চেষ্টা করেছি’

‘ছবি দেখে, তথ্যচিত্র দেখে ওঁর কিছু বৈশিষ্ট্য অনুকরণের চেষ্টা করেছি’

এর পরে লুক সেট। যে দিন স্টুডিয়োয় লুক টেস্ট ছিল সে দিন আমার প্রচণ্ড ব্যস্ততা। অনীকদা রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুন্ডুর হাতে তুলে দিলেন আমায়। সোমনাথদা তাঁর মতো করে সাজালেন। ছবি তোলা হল। সবাই কম্পিউটারের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। আমি তখন ছুটছি অন্য স্টুডিয়োয়। মেগার শ্যুট বাকি যে! রাতে বাড়ি ফিরে চা খাচ্ছি। অনীকদা কিছু ছবি পাঠিয়ে বললেন, ‘‘জিতু দেখে নাও।’’ আমি ছবি দেখে দাদাকে বললাম, ‘‘দাদা, এই ছবিগুলো কত বার দেখেছি। আমার ছবি পাঠাও! কই সে গুলো?’’

এ বার অনীকদা বললেন, ‘‘ভাল করে টিভির বড় স্ক্রিনে ছবি গুলো ফেলে দেখো। ওগুলো তুমিই।’’ আমি বিস্ময়ে বোবা! রূপটানে আমি হুবহু কিংবদন্তি পরিচালক। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রথম দিন নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারিনি। শুধু আমি? একই ভুল করেছিল নবনীতাও। ও তখন রান্নায় ব্যস্ত। ছবিগুলো ফোনে দেখাতেই বলল, ‘‘হ্যাঁ, এগুলো দেখেছি।’’ ভাবলাম, যাহ! ছবি ফাঁস হয়ে গেল? সন্দেহ হওয়ায় ওকেও বড় স্ক্রিনে দেখালাম। থতমত খেলো আমারই মতো। এক বার ছবিগুলো দেখছে। এক বার আমায়। যেন মেলাতে চেষ্টা করছে।

সে দিন থেকেই চাপটা বেড়ে গেল। শ্যুটের দিন যত এগিয়ে আসতে লাগল, আমার অধ্যবসায় বাড়তেই থাকল। সেই ছোট্ট ছবি নবনীতা ফেসবুকে তুলে ধরেছে। সেটা পড়ে অনেকে ভেবেছেন, আমি বোধ হয় সত্যজিৎ রায় হয়ে গিয়েছি। অনীকদা পর্যন্ত পড়ে আমায় বলেছেন। আমি নবনীতাকে তখন বলেছিলাম, ‘‘এ কী! লিখলেই যখন তখন তো পুরোটা লিখবে! আমি যে রোজ ভোরে তোমায় নিয়ে হাঁটতে বের হই! সেটা সবাই জানবে না?’’ আসলে কী বলুন তো? নবনীতা পুরো দক্ষ পরিচালকের মতো ছবির সারাংশ তুলে ধরেছে। বাড়তি অঙ্গ ছেঁটে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে যে ওই অংশের গুরুত্ব অনেক বেশি। নবনীতার মনে কোনও অভিযোগ তৈরি না হওয়ার জন্যই আমার ভোর ওর জন্য। অনেকটা সময় আমরা এক সঙ্গে কাটাই। যাতে রায় মশাইয়ের দাপট আমাদের দাম্পত্যে আঁচড় না কাটে।

‘শ্যুটের দিন যত এগিয়ে আসতে লাগল, আমার অধ্যবসায় বাড়তেই থাকল’

‘শ্যুটের দিন যত এগিয়ে আসতে লাগল, আমার অধ্যবসায় বাড়তেই থাকল’

অবশেষে প্রথম শ্যুটের দিন। এর আগে প্রস্থেটিক রূপটান নিয়েছি কিনা খেয়াল নেই। তবে সোমনাথদার হাতযশ নিয়ে কিছুই বলার নেই। আমায় সত্যজিৎ রায় বানিয়ে দিতে বেশি সময় নেন না। অবশ্য গালের ওই ব্রণর দাগটুকু ছাড়া আমায় তেমন রূপটান নিতেও হয় না। ও টুকুর ছোঁয়াতেই আমি যেন অবিকল ‘রে’! এখন আমার উচ্চতা নিয়ে আমারই খুব গর্ব হয়। ভাগ্যিস এই উচ্চতা পেয়েছিলাম। তাই তো এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলাম! গায়ে ‘পথের পাঁচালী’র স্রষ্টার মতো পাঞ্জাবি, পাজামা, চটি। ছবি দেখে, তথ্যচিত্র দেখে ওঁর কিছু বৈশিষ্ট্য অনুকরণের চেষ্টা করেছি। অভিনয়ের সময় সে গুলোই কাজে লাগাচ্ছি। প্রথম দিন বোলপুরে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে শট দিয়েছিলাম। শেষ হওয়ার পরে তৃপ্ত অনীকদা বললেন, ‘‘জিতু আজ যা অভিনয় করলে সেটাই গোটা ছবিতে ধরে রাখতে হবে।’’

জানেনই তো, ভাল সহ-অভিনেতা পেলে অভিনয় আরও খোলে। আমারও সেটা হয়েছে সায়নী ঘোষের কারণে। সায়নী পর্দায় আমার ‘বিজয়া’। কী খুঁতখুঁতে! পছন্দ না হলে শট দিয়েই যায়। তেমনই প্রচণ্ড সাহায্য করে শটের আগে পরে। এই প্রথম ওঁর সঙ্গে কাজ করছি। সেটা কিন্তু বুঝতে দিচ্ছেন না। সায়নী খুবই সহযোগী। অনেকেই আমি, অনীকদা আর সায়নীর মধ্যে দুই বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক ছায়া খুঁজছেন। আমি সটান বলে দিয়েছি, ভারতীয় ছবির ঈশ্বরকে নিয়ে কাজ করছি। এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই।


শুনেছি, বাবুদা মানে সন্দীপ রায় নাকি আমার ‘লুক’ দেখে প্রশংসা করেছেন। অন্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, অনীক খুঁটিয়ে কাজ করছে। আমার সঙ্গে ওঁর আলাপ নেই। যাবতীয় কথাবার্তা অনীকদার সঙ্গেই। পরিচালকের মুখ থেকে বাবুদার কথা শোনার পরে একটু যেন ধাতস্থ হয়েছি। যাক, তা হলে যা করছি ঠিকই করছি! খুব ইচ্ছে ছিল, শ্যুটের আগে রায় বাড়িতে এক বার যাব। সময় করে উঠতে পারিনি। মেগা, রিয়্যালিটি শো-এর কাজ। তারই মধ্যে আচমকা ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা চুরি।

‘কথা হয়েছিল, অল্পবয়সি সত্যজিৎ হব আমি’

‘কথা হয়েছিল, অল্পবয়সি সত্যজিৎ হব আমি’

কোনটা ছেড়ে কোনটা সামলাব?

ছবির কাজে যাতে মন দিতে পারি তার জন্য মেগা থেকে আপাতত এক মাসের ছুটি নিয়েছি। এমনিতেই আমি সকালে উঠি। এখন ভোর পাঁচটায় আমার দিন শুরু হচ্ছে। নবনীতার সঙ্গে সময় কাটিয়ে, তৈরি হতে হতেই প্রোডাকশনের গাড়ি আসছে। সাতটায় পৌঁছে সোজা রূপটান ঘরে। সত্যজিৎ রায়ের জন্য আমি জিম ছেড়েছি! আমার ধারণায়, ‘সীমাবদ্ধ’ ছবির পরিচালক হয়তো প্রাণায়াম বা হাল্কা যোগব্যায়াম করতেন। এ দিকে এ সব করে আমার কাঁধ চওড়া। পেশিবহুল চেহারা। বেমানান যাতে না লাগে তার জন্যই আপাতত শরীরচর্চা বন্ধ। রাত সাড়ে আটটার মধ্যে খেয়ে নিচ্ছি। তার পর অল্প পড়াশোনা। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছি।

প্রথম পর্বে বোলপুরে ‘পথের পাঁচালী’ ছবি তৈরির অংশ শ্যুট হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের শ্যুট ১৯ নভেম্বর থেকে। ওই অংশে থাকবে পরিচালকের বাড়ি, অফিসের পর্ব। স্টুডিয়োতেই সমস্ত সেটে তৈরি হয়েছে।

এর মধ্যে মজার একটি ঘটনাও ঘটেছে। আমার এক শিক্ষক আমায় ফোন করেছিলেন। আমি ফোন তুলে তাঁর সঙ্গে হুবহু রায়মশাইয়ের গলার ভঙ্গিতে কথা বলে ফেলেছি। স্যর ঘাবড়ে গিয়েছেন। খেয়াল হতেই নিজেকে সামলে নিয়ে আবার স্বাভাবিক গলায় কথা বলেছি তাঁর সঙ্গে। বাড়িতেও একই কাণ্ড ঘটছে। নবনীতা মানে মৌ-কে মাঝেমধ্যেই ভুল করে ‘মঙ্কু’ বলে ডাকছি!

বললে বিশ্বাস করবেন? মনোযোগ যাতে বিক্ষিপ্ত না হয় তার জন্য আমার বীজমন্ত্র ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ আপাতত বদলে গিয়েছে ‘ওঁ নমঃ সত্যজিৎ রায়’-তে!

অন্য বিষয়গুলি:

Satyajit Ray Jeetu Kamal Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy