পদ্মাপ্রিয়া জানকীরমণ ও জয়া আহসান। নিজস্ব চিত্র।
দুই নারী, শরীরে হ্যান্ডলুমের শাড়ি। এক জনের হাত কাটা ব্লাউজ়। আর এক জন ছোট জংলা ছাপা শার্টের সঙ্গে শাড়ি। জয়া আহসান আর পদ্মাপ্রিয়া। অনেক দিন পর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দুই অভিনেত্রীকে একে অপরের প্রতি এত মুগ্ধ হতে দেখা গেল। মুগ্ধতার কারণ অভিনয়। জয়া পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘অপরাজিতা তুমি’তে পদ্মাপ্রিয়ার চরিত্র দেখে মনে মনে ভাবতেন, এই অভিনেত্রীর সঙ্গে যদি কোনও দিন দেখা হয়, তাঁকে জড়িয়ে ধরবেন!
আর পদ্মাপ্রিয়া একই পরিচালকের ‘কড়ক সিংহ’ ছবিতে জয়াকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন। অবশেষে সেই চমক আর মুগ্ধতার মেলবন্ধন ঘটালেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। তাঁর আগামী ছবি ‘ডিয়ার মা’-তে জয়া আর পদ্মাপ্রিয়া একসঙ্গে কাজ করবেন। কলকাতায় যে দিন প্রথম জয়া আর পদ্মাপ্রিয়ার দেখা হল, উভয়কে জড়িয়ে ধরলেন, সামনে ছিল একমাত্র আনন্দবাজার অনলাইন। কেমন ছিল তাঁদের কথোপকথন? শুনল আনন্দবাজার অনলাইন।
দু’জনে মুখোমুখি
পদ্মাপ্রিয়া: (জয়ার দিকে তাকিয়ে) তোমার থেকে চোখ সরছিল না আমার। আমি পঙ্কজ ত্রিপাঠীর ভক্ত। মালয়ালম ছবিতে কাজ করার সুবাদে পার্বতীকে বহু দিন চিনি। কিন্তু তোমাকে দেখে আমি দাদাকে (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) ফোন করে জানতে চাই, এই মহিলা কে?
জয়া: আর তুমি জানো ‘অপরাজিতা তুমি’তে ওই চরিত্র আমাকে আবিষ্ট করে রাখত, মনে হত ওই চরিত্রকে গিয়ে আলিঙ্গন করি…
পদ্মাপ্রিয়া: আসলে টোনিদার (পরিচালক অনিরুদ্ধের ডাকনাম) ছবিতে মহিলা চরিত্রদের যে আবেগ নিয়ে বোনা হয়, তা সত্যি বিরল। ওই সময় ‘অপরাজিতা তুমি’র কুহু আর কমলিনীর পারস্পরিক সম্পর্ক সরাসরি ঘৃণার না দেখিয়ে অন্য আবেগ নিয়ে দেখিয়েছিলেন টোনিদা। ‘ডিয়ার মা’তেও সে রকমই কিছু হবে। আমি নিশ্চিত। তাই না?
জয়া: আমি তোমার সঙ্গে কাজ করব। ভেবেই কী ভাল লাগছে!
পদ্মাপ্রিয়া: আমি কী বলব জানি না! স্বপ্ন সত্যি? আমরা তো অভিনেতা; আমাদের অন্য অভিনেতাকে নিয়ে আবেগ থাকে। তার পর চরিত্র আসে।
‘ডিয়ার মা’
জয়া: টোনিদা যেমন বলেছেন এই ছবি প্রসঙ্গে, ‘ভালবাসা রক্তের চেয়ে গাঢ়’। আমি এখানে মায়ের চরিত্র করছি। মা আর সন্তানের সম্পর্ক। পরিবার আসছে সেখানে। তবে এখানে ভাল মা বলে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো সব পিতৃতান্ত্রিক ধারণা। মায়েদের দশটা হাত থাকবে, তারা সব পারবে। মায়েদের আসলে কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। মা ভুল করবে, ঠিক করবে। বেশ করবে! তবে পরিবারের গল্পের সঙ্গে সঙ্গে এই ছবিতে রহস্যও ধরা আছে।
পদ্মাপ্রিয়া: টোনিদার সব ছবিতে মহিলা চরিত্রের অবস্থান বিশেষ কারণে ঘটে। ‘ডিয়ার মা’ ছবিতে আসলে মাতৃত্বের বহুবিধ আবেগের প্রকাশ দেখা যাবে। এই বহু ধারার মাতৃত্বের একটি বিশেষ দিকে আমার চরিত্র দাঁড়িয়ে আছে। মায়েদের একটা দিক দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এই ছবিতে টোনিদা যে ভাবে গল্প বলেছেন, তা আগে কোনও দিন বলেননি। আচ্ছা, আমি এত কথা বলে কি বিষয়টাকে জটিল করলাম? (মজা করে) দাদাকে বলেইছিলাম, এই ভাবে কথা বলে আমি আনন্দবাজার অনলাইনকে একটু বিভ্রান্ত করব।
আমার মা
পদ্মাপ্রিয়া: মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক, আবেগ এগুলো কিন্তু প্রজন্মের নিরিখে খুব বেশি বদলায় না। আগে আমরা মায়ের সঙ্গে পার্কে যেতাম, এখন শপিং মলে যাই। আমার মায়ের সঙ্গে খুব জটিল সম্পর্ক। কিন্তু খুব স্বচ্ছ, সৎ। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। মা স্কুলে পড়াতেন। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব অবশ্য মায়ের উপর ছিল। বাবা ইচ্ছে থাকলেও, সময় দিতে পারতেন না। তবে মা আমাকে আর ভাইকে সমান ভেবে মানুষ করেছেন। পরিবারে বাবা-মায়ের অবস্থান এক ছিল। তিরিশের কোঠার শেষ দিকে এসে আমি মাকে এক জন নারী হিসেবে বুঝতে শুরু করি। সন্তান হিসেবে নয়। আমার মা এখন বাচ্চাদের মতো করে। আবার আচমকা ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারে ‘তোর মন ঠিক আছে?’ এই যে মনের ভিতর দেখতে পাওয়া, এটা মায়েরাই পারে। আর যে কোনও মা, যিনি দত্তক নিয়েছেন, তাঁকেও দেখেছি আমি। তিনিও বুঝতে পারেন সন্তানের মনে কী চলছে। জয়া, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তোমার এমন মনে হয়?
জয়া: আমার বাবার সঙ্গে ঝগড়া ও ভালবাসার সম্পর্ক। মা বন্ধু। মা-ও বড় হয়েছেন, আমিও সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছি। আমার বয়সের মায়ের ছবি দেখে চমকে যাই। যেন হুবহু আমি। মনে হয় বয়সের কারণে মায়ের পায়ে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে আমারও কি ওই বয়সে এ রকম হবে? মা খুব গাছ ভালবাসে, আমিও তাই। আমি কিন্তু চাষ করি। এটা সকলে জানেন না।
পদ্মাপ্রিয়া: আমিও আসলে কৃষক। চাষ করতে খুব ভালবাসি!
জয়া: আমাদের মিল! তবে পদ্মাপ্রিয়া, তোমার মতোই মা আমাকে বাংলাদেশে থেকেই স্বাধীন ভাবে মানুষ করেছেন। মেয়ে বলে আলাদা কিছু করতে হবে, এমন বলেননি। তবে আমার মা খুব জড়িয়ে ধরতেন বা গায়ে-গায়ে থাকতেন, তা না। আমি অবশ্য মায়ের গন্ধ খুব ভালবাসি। ওটা আমার কাছে শক্তি। মা শাড়ি ছেড়ে গেলে আমি ওটা থেকে গন্ধ নিই। আমার মা-ও স্কুলশিক্ষিকা।
পদ্মাপ্রিয়া: আমি আর আমার সঙ্গী বাচ্চার কথা ভাবছিলাম, তখন বুঝতে পারছিলাম মা হওয়া কী শক্ত!
ইন্ডাস্ট্রি
পদ্মাপ্রিয়া: আমি তো সেনাবাহিনীর মেয়ে; ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন চরিত্র, নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসি। এটাই আমার ইন্ডাস্ট্রি। আমার কাছে মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি, তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি সব এক। একটা কথা মনে হয় যে, অভিনেতারা বরং এক ইন্ডাস্ট্রি থেকে আর এক ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে চান না। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে পাকাপাকি ভাবে নায়ক হয়ে, সেখানেই কাজ করতে চান। আমি সিনেমাকে শিল্প হিসাবে দেখি; যেখানে শিল্প তৈরি হবে, আমি সেখানে থাকতে চাইব।
মালয়ালম ছবি
পদ্মাপ্রিয়া: মালয়ালম ছবি নিয়ে আমি জানি বাংলায় খুব আলোচনা হয়। আমি অন্য কথা বলব। ওই ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের অবস্থান প্রায় শূন্য হয়ে আসছে। নায়িকাদের ওখানে আর বিশেষ কিছু করার থাকছে না। অথচ মুম্বইয়ে অভিনেত্রীদের আলাদা করে কিছুটা হলেও প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে বাংলার কিছু নায়কের কাছে শুনেছি, বাংলায় এখন নাকি অভিনেত্রীদের প্রাধান্য। আমি যে খুব চট করে বিশ্বাস করেছি তা নয়।
জয়া: আমার মনে হয় না বাংলায় দারুণ সব মহিলা-প্রধান ছবি হচ্ছে! আসলে বলবার মতো তেমন কোনও কাজ বাংলায় হচ্ছে না। সমাজব্যবস্থাও এর জন্য দায়ী।
মিটু এবং…
পদ্মাপ্রিয়া: সমাজের কথা যখন বললে, একটা কথা বলি। ইন্ডাস্ট্রিতে এসেই কিন্তু আমি পিতৃতন্ত্রকে বুঝতে শিখেছিলাম। আমেরিকায় ‘মিটু’ আন্দোলন শুরুর আগেই কেরলে ‘উইমেন ইন সিনেমা কালেক্টিভ’ গড়ে উঠেছিল। আমি এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এই ‘ডিয়ার মা’ ছবির কাজ শেষ করে আমি আর তুমি ফিরে যাব। কবে আবার দেখা হবে জানি না। এটা ঠিক নয়। তোমার বিপদে আমি পাশে থাকতে চাই। তেমনি আমার বিপদে তুমি পাশে থাকবে। ‘উইমেন ইন সিনেমা কালেক্টিভ’ আমায় শিখিয়েছে মহিলা সহকর্মীর জন্য কী ভাবে লড়তে হবে।
জয়া: আমাদের এখানে দামিনী বসু এই চেষ্টাই করছে। আমার সহকর্মীর সঙ্গে অন্যায় হলে, পয়সা কম দিলে, অত্যাচার হলে, আমি নিশ্চয়ই তার পাশে দাঁড়াব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy