বিনোদন দুনিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন শিল্পীরা।
২০২২-এও অতিমারির চোখরাঙানি কমেনি। ফলে, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ফের সংক্রমণের বাড়াবাড়ি। যার জেরে ভারতের কোনও রাজ্যে পুরোপুরি লকডাউন। কোনও রাজ্যে আংশিক। বাংলায় এখনও ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ, সভাগৃহ খোলা রাখা হচ্ছে। শ্যুটিং চলছে কোভিড বিধি মেনে। তবুও আতঙ্ক কি আবার পিছু নিচ্ছে? শ্যুট, ছবি মুক্তি, বিনোদন দুনিয়ার ভবিষ্যত--- সব মিলিয়ে কি কোভিড-ভীতিতে কাবু টলিউড?
আনন্দবাজার যোগাযোগ করেছিল পরমব্রত চট্টোপাধ্যয়, সোহম চক্রবর্তী, সৌরভ দাস, নিসপাল সিংহ রানে, অতনু রায়চৌধুরী, সন্দীপ রায়, সপ্তাশ্ব বসু, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে। কী বলছেন তাঁরা?
তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় একটু হলেও টালমাটাল টলিউড। ফের সবার মনে শ্যুট বন্ধ, প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নিজেও আশা-নিরাশায় ভুগছেন, জানালেন পরমব্রত। তাঁর কথায়, ‘‘তৃতীয় ঢেউয়ের কয়েকটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এক, প্রায় সবার প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বুস্টার ডোজ চালু হতে চলেছে। দুই, ওমিক্রম দ্রুত ছড়ালেও প্রাণঘাতী নয়। ফলে, সংক্রমণের পাশাপাশি সুস্থতার হার দ্রুত হবে। তিন, আশা, মাস দু’য়েকের মধ্যে হয়তো এই ঢেউ সামলে নেওয়া যাবে। তখন ৫০ শতাংশ দর্শকসংখ্যা বেড়ে আবার ১০০ শতাংশ হবে। পুরো মাত্রায় শ্যুটিং হবে।’’ পাশাপাশি, প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতা মন থেকে চাইছেন, চতুর্থ ঢেউ যেন না আসে। তা হলে শুধুই বিনোদন দুনিয়ায় নয়, অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিপর্যস্ত হবে সব স্তরেই।
সোহম এবং সৌরভ, এই দুই অভিনেতাও শ্যুট করছেন। কাজের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, শ্যুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন ঠিকই, খানিকটা ভয়ও মনে রয়েছে। তার মধ্যেই আশার কথা শুনিয়েছেন বিধায়ক সোহম। তাঁর মতে, সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী অতিমারি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি, তিনিও জোর দিয়েছে সতর্কতা বিধির উপরে। সোহম, সৌরভ মাস্ক ছাড়া থাকছেন না। দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। পোশাক কেচে ব্যবহার করছেন। ফ্লোরেও সমস্ত বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে, এমনই দাবি তাঁদের। সঙ্গে আফশোসও করেছেন, ‘মেরি ক্রিসমাস’ পালন করতে গিয়ে নতুন বছর যে এতটাই ‘আন হ্যাপি’ হয়ে উঠবে ভাবতে পারেননি কেউই। এখন হাত কামড়াচ্ছেন। তবে এর পরেও হুঁশ না ফিরলে বিনোদন দুনিয়া সত্যিই পথে বসবে।
পরিচালক সন্দীপ রায়ের মতে, আগাম দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। তাঁর ফেলুদা-র শ্যুট শুরু মার্চের শেষে। পরিচালকের কথায়, তখনও যদি অতিমারি থাকে তা হলে পরিস্থিতি বুঝে তিনি এবং প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ আলোচনা করে পদক্ষেপ করবেন। জানুয়ারিতে উত্তরবঙ্গে শ্যুট চলার কথা পরিচালক সপ্তাশ্ব বসুর ‘ডা. বক্সী’র বাকি অংশের। তাঁর কথায়, ‘‘২০২০-২১ মিলিয়ে এটাই ঘটছে। বারবার প্রেক্ষাগৃহ খুলছে, বন্ধ হচ্ছে। কোভিড-কড়াকড়ির জেরে আটকে যাচ্ছে শ্যুটিং। এতে কাজের স্বাভাবিক গতি বাধা পাচ্ছে।’’ আপাতত তাঁর একটাই প্রার্থনা, জানুয়ারির শ্যুট যেন কোনও কারণেই বন্ধ না হয়। এতে প্রযোজক, অভিনেতা, কলা-কুশলী— সকলেরই ক্ষতি। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার চেষ্টায় আছেন তিনি।
দিল্লির মত প্রেক্ষাগৃহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। তবে ১০০ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে ছবি দেখালে বাণিজ্যে যে তার ছায়া পড়বে স্বীকার করে নিয়েছেন প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী। তাঁর ‘টনিক’ ২৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে। অতনুর কথায়, ‘‘আমি ভাগ্যবান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমার ছবি মুক্তি পেয়েছে। ফলে, ভাল ব্যবসা করেছে। দর্শক সংখ্যা কমলে কিছু তো ছাপ ছবির ওপরে পড়বেই। তবু আমার বিশ্বাস যাঁরা আসবেন তাঁরাই বাকি দিনগুলোয় ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’’ বেঙ্গল টকিজের কর্ণধারের মতে, প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসা দরকার। নইলে বিনোদন দুনিয়া মুখ থুবড়ে পড়বে। সীমিত দর্শক নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ চালানো বা নতুন ছবি-মুক্তি কতটা ঝুঁকির? খরচের অর্থ উঠে আসবে? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল সুরিন্দর ফিল্মসের অন্যতম কর্ণধার নিসপাল সিং রানের কাছে। এখন কোনও ছবি-মুক্তির কথা নেই প্রযোজনা সংস্থার। তাই নিসপালের দাবি, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে দর্শকদের কথা ভাবতে হবে। ওঁরা থাকলে ব্যবসাও থাকবে। ১৫ জানুয়ারির পরে নির্দেশ বদলালে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে সুরিন্দর ফিল্মস।
অতিমারি নিয়ে নতুন করে মাথা ঘামাতে আর রাজি নন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। আগের দুটো লকডাউন তাঁকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কাজ না থাকা কী ভীষণ যন্ত্রণার! তাঁর অবাক প্রশ্ন, যত কোপ পড়াশোনা আর বিনোদনের উপরে! ‘‘যত না বিরক্তি লাগছে জনসাধারণের উপরে তার চেয়েও বেশি বিরক্তি রাজনৈতিক নেতাদের উপরে। সভা, মিছিল, সমাবেশের সময় এই অতিমারির আতঙ্ক কোথায় যায়?’’ সাফ বক্তব্য অভিনেতার। একই সঙ্গে দাবি, নির্বাচনের আগে যদি রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের আখের না গুছিয়ে সাধারণের কথা বেশি ভাবতেন তা হলে এই দিন দেখতে হত না কাউকেই। রুদ্রনীল ঘোষের দুটো ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা এই জানুয়ারিতেই। ১৪ জানুয়ারি 'আবার বছর ২০ পরে' এবং ২১ জানুয়ারি 'স্বস্তিক সংকেত'। অভিনেতার দাবি, বহু দিন বাদে পর পর দুটো ছবি আসছিল। দুটোই বড় বাজেটের। খরচের টাকাও যদি না ওঠে প্রযোজক কেন লগ্নি করবেন? পরিচালকেরাই বা কী করে কাজ করবেন? অভিনেতা, কলাকুশলীরা উপার্জন করবেন কী ভাবে? বিরোধী দলের সদস্যের আক্ষেপ, রাজ্য সরকার যদি কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করত তা হলে এই দিন কাউকেই দেখতে হত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy