কী চাইছে টলিপাড়া?
টলিউডের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বিগ্ন অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, কলাকুশলীরা। অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম বারের মতই আছড়ে পড়েছে আবার। বাড়ছে সংক্রমণ, মৃতের সংখ্যাও। ইতিমধ্যেই চৈতি ঘোষাল, জিতু কমল, অনুশ্রী দাস, শ্রুতি দাস সহ একাধিক অভিনেতা আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, টেলিপাড়ায় বহু জন অসুস্থতা লুকিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলাফল, দ্রুত সংক্রমণ। চিত্রগ্রাহক গোপী ভগতের সহকর্মী বিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন সদ্য। হাসপাতালে রোগের সঙ্গে লড়ছেন প্রবীণ অভিনেত্রী অনামিকা সাহা। এ ভাবেই কোনও কিছু টের পাওয়ার আগেই ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছেন অভিনয় দুনিয়ার বাকি মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে, অতিমারি রুখতে, ভাইরাসের শৃঙ্খলা ভাঙতে সাময়িক বিরতির কি সত্যিই প্রয়োজন?
কী চাইছে টলিপাড়া?
নতুন ধারাবাহিকের হাত ধরে ১০ বছর পরে অভিনয় দুনিয়ায় ফিরছেন দেবশ্রী রায়। তাঁর মতে, ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেকে আছেন যাঁরা হয়তো ‘দিন আনি দিন খান’। তাই অনেকেই অসুস্থতা লুকিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ‘‘এঁদের উপস্থিতি ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে বাকিদের শরীরে। সে দিকটা কেউ ভেবেছেন কি?’’ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সমাধান হিসেবে তাই দেবশ্রীর পরামর্শ, সাময়িক বিরতি বা লকডাউন যদি ভাইরাসের শৃঙ্খলা ভাঙতে পারে তা হলে সবার মঙ্গল হবে। তাঁর দাবি, ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই সবার পাশে রয়েছেন। তাই যতই অভাব থাক, কেউ না খেয়ে থাকবেন না। প্রাণ বাঁচলে কাজ থাকবে।
পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনীকার স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সাফ কথা, শুধু সাবধানতা মেনে অতিমারি আটকানোর দিন আর নেই। তাঁর দাবি, ‘‘ব্লুজ প্রযোজনা সংস্থা স্টুডিয়ো ফ্লোরে সমস্ত সাবধানতা মানছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কারওর তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি দেখলেই ছুটি দিয়ে দিচ্ছি। তার পরেও অতিমারি আটকাতে পারছি কই?’’ তাঁর চেনা বহু অভিনেতা, কলাকুশলী ইতিমধ্যেই আক্রান্ত। নতুন করে মৃত্যুর সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে তার জন্যই তিনি লকডাউনের পক্ষপাতী। একই সঙ্গে আশ্বাস, আগের লকডাউনে তিনি কারওর পারিশ্রমিক কাটেননি। এ বারেও তা বজায় থাকবে। জোর গলায় দাবি করেছেন, ‘‘আমি খেতে পেলে আমার কর্মীরাও খেতে পাবেন। আগে প্রাণে বাঁচুন সবাই।’’ পাশাপাশি পরিচালকের পাল্টা অভিযোগ অভিনেতাদের দিকেও, ‘‘বহু তারকা এ বারের নির্বাচনের আগে হুড়মুড়িয়ে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। কতটা নিরাপত্তা, সতর্কতা মেনেছেন তাঁরা?’’ স্নেহাশিসের যুক্তি, যিনি জনসভায় গিয়েছেন তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। কিন্তু স্টুডিয়োয় এসে যাঁর সঙ্গে কাজ করছেন তিনি দুর্বল। ফলে, সংক্রমিত হয়ে পড়ছেন।
পরিচালকের প্রশ্ন, রোগ ছড়ানোর এই দায় কে নেবে?
লকডাউনের পক্ষপাতী আর এক অভিনেত্রী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ও। তিনিও মানছেন, সাময়িক লকডাউন ছাড়া গতি নেই। দেবযানী এই মুহূর্তে ব্যস্ত ‘যমুনা ঢাকি’, ‘বরণ’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের সঙ্গে। নিজেও গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকেই তাঁর মত, ‘‘স্টুডিয়ো ফ্লোরে কে অসুস্থতা লুকিয়ে কাজ করছেন জানা সম্ভব নয়। তাই সাময়িক বিরতির প্রয়োজন।’’ একই সঙ্গে তিনি আঙুল তুলেছেন একাধিক বিশেষ অনুষ্ঠানের দিকে। দেবযানীর মতে, ‘‘দোলের বিশেষ পর্ব, বৈশাখী আড্ডা-র মতো অনুষ্ঠান এই পরিস্থিতিতে না করলেই ভাল হত। কারণ, এতে সেটে ভিড় বাড়ে। সংক্রমণও বাড়ে।’’ অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত তুলে ধরেছেন আরও দু’টি জ্বলন্ত সমস্যা। তাঁর মতে, কোভিড নিয়ে এখনও কথা বলতে স্বচ্ছন্দ নন মানুষ। ‘কোভিড পজিটিভ’ শুনলে কেমন ব্যবহার পাবেন বাকিদের থেকে? সারাক্ষণ এই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে অনেকেই। তেমনই, প্রতি মুহূর্তে সেট, পোশাক, মেকআপ স্যানিটাইজ করা সম্ভব নয়। যেটা বাড়ির একটি ঘরে নিজেকে বন্দি রেখে করা যায়।
স্টুডিয়ো পাড়ার সঙ্গে যুক্ত বেশির ভাগ মানুষ লকডাউনের পক্ষে হলেও ভিন্ন কথা বলেছেন রূপসজ্জার কারিগর সোমনাথ কুণ্ডু। তাঁর দাবি, কোনও কলাকুশলী রোগ লুকিয়ে কাজে আসছেন না। একই সঙ্গে তাঁর মত, প্রত্যেকে ব্যক্তিগত ভাবে সতর্কতা মেনে চললে এখনও অতিমারিকে সামাল দেওয়া সম্ভব। কারণ, গত বছরের মতো কর্মনাশা লকডাউন চালু করলে আবারও ভেঙে পড়বে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। তখন কাউকে পাশে পাবেন না অসহায় কলাকুশলীরা। সোমনাথের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে ‘পাশে আছি’ আশ্বাস দিয়েছিলেন অনেকেই। নির্বাচন ফুরোতেই তাঁরা অদৃশ্য! রূপসজ্জার কারিগরের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘নেটমাধ্যমে দেখুন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাসপাতালের বেড, চিকিৎসক, ওষুধ থেকে খাওয়াদাওয়া, সব কিছু সামলাচ্ছে জনতা জনার্দন। বিশিষ্টরা কোথায়?’’
কী বলছেন ইম্পার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত? তিনিও কি চান আপাতত বন্ধ থাকুক ছবি তৈরির কাজ? পিয়া জানালেন, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে এমনিতেই মানুষ কাজের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবা বা বলা অমানবিক। তা হলে কি নিয়ম মেনে কাজ চালানোর পক্ষপাতী তিনি? পিয়ার মতে, এক্ষুণি কোনও সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ ইম্পা করছে না। তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সবাইকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। অসুস্থতা লুকিয়ে কাজের ক্ষেত্রে তাঁর দাবি, এই দায়িত্ব ফেডারেশনের। একজন পরিচালক বা প্রযোজকের জানা সম্ভব নয়, কে অসুস্থ কে নন।
আনন্দবাজার ডিজিটাল কথা বলেছিল ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও। করোনা ঠেকাতে আগামী দিনে কি লকডাউনের পথেই হাঁটবে টলিপাড়া? ‘‘আগামী কাল, বৃহস্পতিবার কার্যকরী সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে বিকেল ৪টেয়। পাশাপাশি, চলতি সপ্তাহেই ইসি কমিটির বৈঠকও ডাকা হবে। তার পর সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে ফেডারেশন’’, জানিয়েছেন স্বরূপ। তাঁর কথায়, কোন পদ্ধতিতে শ্যুটিং চলবে সেই নিয়েও আলোচনা হবে বৃহস্পতিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy