Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
adrija mukhopadhyay

‘জানলা দিয়ে টেনে বের করা হয় আমাকে’, দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা জানাল শিশুশিল্পী অদ্রিজা

‘বালিকা বধূ’, ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’, ‘ভানুমতীর খেল’, ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘ফিরকি’-র মতো বিখ্যাত ধারাবাহিকে অভিনয় করেছে সে।

‘বালিকা বধূ’-তে অদ্রিজা মুখোপাধ্যায়

‘বালিকা বধূ’-তে অদ্রিজা মুখোপাধ্যায় নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৩৭
Share: Save:

অদ্রিজার হাতে এখনও প্লাস্টার। সাড় নেই হাতে। সবেমাত্র কয়েক দিন আগের ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘোর কাটিয়ে উঠছেন। পুরোপুরি সুস্থ নন। অথচ সেই অবস্থাতেই শ্যুটিং শুরু করে দিল ১২ বছরের ছোট্ট অদ্রিজা। অদ্রিজার হাতে এখনও প্লাস্টার। সাড় নেই হাতে।

দু’সপ্তাহ আগে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল অদ্রিজা ও তার পরিবার। সোমরাবাজার এলাকায় তাঁদের গাড়ি উল্টে যায়। প্রাক্তন ফুটবলার বিদেশ বসুর বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। গাড়ি চালাচ্ছিলেন অদ্রিজার মা। পাশে বাবা ও পেছনে ছিল অদ্রিজা। হঠাৎই গাড়ি যায় উল্টে। গুরুতর জখম হয় প্রত্যেকে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁদের।

‘বালিকা বধূ’, ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’, ‘ভানুমতীর খেল’, ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘ফিরকি’-র মতো বিখ্যাত ধারাবাহিকে অভিনয় করেছে সে।

শরীরে কষ্ট হচ্ছে না? দুর্ঘটনার কথা কি মাঝে মধ্যেই চোখে ভাসছে? পুরোপুরি সুস্থ না হতেই কাজে নেমে পড়তে হল কেন?

‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ অদ্রিজা মুখোপাধ্যায়

‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এ অদ্রিজা মুখোপাধ্যায়

এ সব প্রশ্নের উত্তর পেতেই যোগাযোগ করা হল শিশুশিল্পী অদ্রিজা মুখোপাধ্যায়কে। অদ্রিজার গলায় উত্তেজনা শুনেই বোঝা গেল, তার পক্ষে শ্যুটিং ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। সকলের আদরের ‘বালিকা বধূ’ অদ্রিজা দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে অভিনয় করছে যে! নিজের জগৎ ছে়ড়ে কত দিনই বা বাড়িতে বসে থাকা যায়। আর তাই অদ্রিজার সিদ্ধান্ত, হাতে প্লাস্টার নিয়েই সে অভিনয় করবে ‘আকাশ আট’-এর ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে।

অদ্রিজার কথায়, ‘‘ডিরেক্টর আঙ্কেল দারুণ উপায় বের করেছেন। আমার তো হাতে প্লাস্টার, কিন্তু সেটা দেখানো যাবে না। ঠিক করা হয়েছে, আমি এ কয়েক দিন গায়ে শাল পরে থাকব। তাতে আর আমার প্লাস্টারটা দেখা যাবে না’’।

কিন্তু হাতে ব্যথা করলে? নাহ, ব্যথার দিকে তার মনই নেই। বরং আগের মতো মারপিটে মনোযোগ দিয়েছে সে। ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে তার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেন অভিনেতা সমৃদ্ধ পাল (১৭)। ওই প্লাস্টার হাতে তাঁকে মারধর করায় কোনও খামতি রাখছে না অদ্রিজা। শুধু তাকেই নয়, বাকি কলাকুশলীদের সঙ্গেও দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে সে। এ সব ছাড়া নাকি তার ভালই লাগে না।

বড়ই সাহসী সকলের ‘বালিকা বধূ’। দুর্ঘটনার পরেও সে ভয় পায়নি। জানাল, ‘‘গাড়িটা যে কী ভাবে উল্টে গেল বুঝতেই পারিনি। তার কিছু মুহূর্ত পর আমি শুনতে পাচ্ছি, বাইরে চেঁচামেচি হচ্ছে, ‘বাচ্চাটাকে বের করতে হবে!’ আমার কানে ঢুকছে, কিন্তু আমি হাত পা নাড়াতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছিল না। আমি তাও ভয় পাইনি। যতটুকু মনে রয়েছে, আমাকে জানলা দিয়ে বের করা হল’’। তার পর একটা ট্র্যাক্টরে করে কালনা চিকিৎসালয়ে নিয়ে গিয়ে অদ্রিজা ও তার পরিবারকে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। ফের সেখান থেকে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অদ্রিজার বাবার ফুসফুসে সমস্যা দেখা দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিলেন অদ্রিজার মা। কিন্তু অদ্রিজা জানত, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভয় পেয়ে লা‌ভ নেই। সাহস জুগিয়েছে তার মা-কেও।

তার পর দিন থেকে ফোনের পর ফোন। স্কুলের বন্ধুরা ফোন করে জানতে চায়, ঘটনাটি কি সত্যি নাকি ভুয়ো খবর! প্রাপ্তবয়স্কের মতোই সব ফোনের উত্তর দিয়েছে অদ্রিজা। সমস্ত ঘটনা জানিয়েছে তার বন্ধু ও আত্মীয়দের। আর তার কয়েক দিনের মধ্যেই শ্যুটিং আরম্ভ করে দেয় সে। এমনকি বাড়ির লোকের সঙ্গে না, একা একাই রোজ কাজে আসে। সেটে মারপিট করে, আনন্দ করে, অভিনয় করে। তার পর ছুটি পেলে বাড়ি ফিরে যায় একাই। বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে সে জানাল, ‘‘মা ও বাবা জানিয়ে দিয়েছিল, আমার যা ইচ্ছে সেটাই করতে পারি। তাই আমাকে কাজে ফেরার ব্যাপারে কখনও আটকায়নি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy