সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
অল্প সময়ের মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের নীচের জমি শক্ত করেছেন। মডেলিং এবং সিনেমা— সমান তালে ব্যালান্স করে চলেছেন। চাঁছাছোলা স্পষ্ট কথায় বিশ্বাসী অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে সাম্প্রতিক আড্ডায়ও তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
প্রশ্ন: একটা অভিযোগ দিয়ে শুরু করি?
সুস্মিতা: এই রে! আচ্ছা, শোনা যাক।
প্রশ্ন: আপনি নাকি এখন সকলের ফোন তোলেন না?
সুস্মিতা: কাজের জন্য।
প্রশ্ন: এটা কিন্তু একটু সাবধানী উত্তর।
সুস্মিতা: (একটু ভেবে) বুঝলাম। আরও একটা কারণ, একটা সময় অনেকের ফোন তুলে তাদের সময় দিয়ে ঠকেছি। সকলকে তখন বন্ধু ভেবে ভুল করেছিলাম। যেমন সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজনে যাদের সাক্ষাৎকার দিয়েছি, পরে তারাই দেখেছি আমার ছবি রিলিজ়ের পর আমাকে নিয়ে কিছুই লেখেনি। বলছি না, শুধু ভাল কথা লিখতে হবে! খারাপ হলে সেটাও তো লেখা যায়। তাই মনখারাপ হয়েছিল। তাই এখন আমি ফোন তুলতেই ভয় পাই। আবার একটা প্রত্যাশা তৈরি হবে। তার পর সেটা ভেঙে যাবে, সেটা চাই না।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জিতের সঙ্গে পর পর দুটো ছবি করে ফেললেন। কী মনে হচ্ছে?
সুস্মিতা: এটাই মনে হচ্ছে যে, ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি। মনের দিক থেকেও অনেকটা পরিণত হয়েছি। কারণ, কাজ করতে করতে তো মানুষ বুঝতে পারে, কোনটা করা উচিত আর কোনটা না করলেও হত। সময়ের সঙ্গে এখন সেটা বুঝতে পারি।
প্রশ্ন: তার মানে এমন ছবিও করেছেন, যার জন্য এখন অনুশোচনা হয়?
সুস্মিতা: হ্যাঁ। এখন বুঝতে পারি, তখন সেগুলো না করলেই হত। কিন্তু তার জন্য নিজেকে দোষারোপ করি না। কারণ, ইন্ডাস্ট্রিতে তখন আমি নতুন। তখন অতটা বোঝা যায় না, কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি আড়াই বছর রয়েছেন। এত তাড়াতাড়ি ভুল পদক্ষেপ নিয়ে কিন্তু অনেকেরই ধারণা তৈরি হয় না।
সুস্মিতা: এটা মনে হয় দর্শকের ভালবাসার ফল। আমার কাজ দর্শকের মনোরঞ্জন করা। সেটা করতে পারছি মানে দর্শক আমার কাজ পছন্দ করছেন। মানুষের আলাদা মতামত থাকবেই। কিন্তু আমি তো শুরু থেকেই চেয়েছি সুপারস্টার হতে। তাই দর্শকের সমর্থন তো চাই। বুঝতে পারছি, সময়ের সঙ্গে সেটা বাড়ছে।
প্রশ্ন: শুরু থেকেই চেয়েছিলেন সুপারস্টার হতে!
সুস্মিতা: হ্যাঁ। মিথ্যা বলছি না।
প্রশ্ন: তা হলে এখন আপনার নতুন কাজ নির্বাচনের মধ্যে নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে।
সুস্মিতা: এখন আমি খুবই বুঝে পা ফেলতে চাই। এখন আমার কাছে গল্প এবং চরিত্র দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। কোনও চিত্রনাট্য পড়ার সময় আগে দেখি আমার চরিত্রটা বাদ দিয়ে দিলে গল্পের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে, না একই রয়েছে। তার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই। আমি জানি প্রক্রিয়াটা কঠিন। কিন্তু আমার প্রথম ছবিতে সুযোগ পাওয়াটাও ততটাই কঠিন ছিল (মুচকি হাসি)।
প্রশ্ন: এত কম সময়ের মধ্যে প্রসেনজিৎ, দেব এবং জিতের সঙ্গে ছবি করে ফেললেন। নতুনদের মধ্যে অনেকেই এ রকম সুযোগ পান না।
সুস্মিতা: আমি জানি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। কিন্তু এটাও জানি যে, এর পিছনে আমার কতটা লড়াই রয়েছে। পাশাপাশি পরিশ্রম এবং ভাগ্যেরও প্রয়োজন। তিন বছর পর আজ নিজের ব্যক্তিত্বের মধ্যেও একটা বিশাল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। শুধু মনে হয়, এই সুযোগগুলোকে যেন ধরে রাখতে পারি।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির সিঁড়ি চড়তে শুরু করলে নাকি আশপাশে বন্ধুর সংখ্যা কমতে থাকে। গ্রাস করে একাকিত্ব। আপনার ক্ষেত্রে কখনও সে রকম কিছু হয়েছে?
সুস্মিতা: স্কুল-কলেজে আমার প্রচুর বন্ধু ছিল। কিন্তু তার পর সকলেই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে চলে গিয়েছে। তবে যোগাযোগ এখনও রয়েছে।
প্রশ্ন: টলিউডে আপনার ভাল বন্ধু কারা?
সুস্মিতা: নেই। আমি এখানে বন্ধুত্ব করতে আসিনি। আমার টিমের সদস্যরাই আমার সবথেকে কাছের বন্ধু।
প্রশ্ন: সে কী! এই যে বলা হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বন্ধু’ বা ‘গোষ্ঠী’র অংশ না হলে কাজ পাওয়া নাকি মুশকিল।
সুস্মিতা: (হেসে) আমি পাচ্ছি তো! আমার মতে, বন্ধুত্ব ইন্ডাস্ট্রির বাইরে হওয়াই ভাল।
প্রশ্ন: আপনি তো আসানসোল কুলটির মেয়ে। ওখানকার বন্ধুদের সঙ্গে এখন যোগাযোগ নেই?
সুস্মিতা: আছে তো। কুলটিতে এখন খুব একটা যেতে পারি না। তবে মা-বাবা নিয়মিত কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে থাকেন। কুলটির পরিচিত মানুষ, আত্মীয়েরা আমাকে প্রচণ্ড ভালবাসেন। ওখানকার বন্ধুরা আমার ছবি মুক্তির আগে ফলাও করে প্রচারও করে। সবাই ছবিটা দেখে। সত্যি বলছি, ওরা আমাকে নিয়ে গর্বিত।
প্রশ্ন: মডেলিংয়ের মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করে এখন অভিনয়ও করছেন। শোনা যায়, বিজ্ঞাপন জগতে টলিপাড়ার বহু নায়িকা নাকি আপনার জন্য কোণঠাসা?
সুস্মিতা: আমি জানি না। (হেসে) আসলে কেউ কাউকে কোণঠাসা করে না। পরিবর্তন তো সব জায়গায় হয়। কাল ওরা করেছে, আজকে আমি করছি। আগামী কাল আমার জায়গায় অন্য কেউ আসবে। কেউ কারও কাজ ছিনিয়ে নিচ্ছে, এটা হতে পারে না। কপালে লেখা থাকলে কাজটা আমি করব, না লেখা থাকলে অন্য কেউ করবে।
প্রশ্ন: আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ‘প্রেম টেম’ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যে গুজব রটে, সেগুলো সামলান কী করে?
সুস্মিতা: গুজব নিয়ে দেখি আলোচনা চলতেই থাকে। কিন্তু যেটা সত্য, সেটাও কিন্তু প্রকাশ্যে আসে না।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে আপনি কি কোনও সম্পর্কে রয়েছেন?
সুস্মিতা: না, নেই। আর সম্পর্কের পাট আমি চুকিয়ে দিয়েছি। এখন কেরিয়ারে মন দিতে চাই। কোনও সম্পর্কে জড়াতে চাই না।
প্রশ্ন: তার মানে সম্পর্কে ছিলেন?
সুস্মিতা: ছিলাম। কিন্তু এখন কাজে মন দিতে চাই।
প্রশ্ন: কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব তো নিশ্চয়ই আসতেই থাকে?
সুস্মিতা: (হেসে) অবশ্যই। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি জড়াতে চাই না।
প্রশ্ন: তা হলে যিনি প্রেম নিবেদন করবেন তার কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন, সেটা বলুন। হতেই পারে, এই সাক্ষাৎকারের পর মনের মানুষ পেয়ে গেলেন..।
সুস্মিতা: একটা মানুষের কাছে আমি খুব সাধারণ কিছু জিনিস চাই। একটু আমাকে বুঝবে, যত্ন নেবে আর ভালবাসবে। কিন্তু ভাল মানুষ পাওয়াই মুশকিল। কারণ, অতীতেও সম্পর্কে আমাকে ঠকানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy