‘‘আমার প্রথম সিরিজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। অসুস্থতার কারণে পারিনি। তাই হাসপাতাল থেকেই ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। একই ভাবে এ বছরের বইমেলায় আমার কবিতার বইপ্রকাশ হল। বড় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সব ভেস্তে দিল শরীর খারাপ। সেদিনও হাসপাতাল থেকেই অংশ নিয়েছিলাম।’’
পরিচালক রাজা চন্দ
দিব্য ছিলেন খোশমেজাজে। হাতে একাধিক ছবি, সিরিজ। পরের ছবি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে হৃদরোগে আক্রান্ত রাজা চন্দ। কেন? পয়লা এপ্রিল থেকে ফের অফিসে বসবেন ২৪টি ছবির পরিচালক। শ্যুট শুরু করবেন কবে থেকে? সোহম, অঙ্কুশ, বনির পরে তাঁর আগামী নায়ক-নায়িকা কে? সবিস্তার আড্ডা দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে
প্রশ্ন: এখন শরীর কেমন?
রাজা: আগের থেকে অনেকটাই ভাল। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হব বুঝিনি। সঠিক চিকিৎসার ফলে বড় ফাঁড়া কাটিয়ে উঠলাম। ৯ তারিখে অস্ত্রোপচার। ১৬ তারিখ হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছি। তার পর থেকে বাড়িতে। কড়া নিয়মে রয়েছি।
প্রশ্ন: তার মধ্যেই প্রথম সিরিজ ‘কাটাকুটি’র ট্রেলার-মুক্তি হাসপাতাল থেকে...
রাজা: হ্যাঁ। আমার প্রথম সিরিজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। অসুস্থতার কারণে পারিনি। তাই হাসপাতাল থেকেই ট্রেলার মুক্তির অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। একই ভাবে এ বছরের বইমেলায় আমার কবিতার বইপ্রকাশ হল। বড় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সব ভেস্তে দিল শরীর খারাপ। সেদিনও হাসপাতাল থেকেই অংশ নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: এ গুলো প্রফেশনালিজম?
রাজা: এ গুলো আমার ভালবাসার জায়গা। যা করি হৃদয় দিয়ে করি আমি। আর একটি শব্দ এখানে বসাতে পারেন, দায়িত্ববোধ। এই অনুভূতি আমায় এই কর্তব্যপালনে আরও এগিয়ে দেয়। তবে যা করেছি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই করেছি। এবং আমার শরীর সেটা নিতে পেরেছে। তবেই করেছি।
প্রশ্ন: ‘কাটাকুটি’ দেখে সবাই কী বলছেন?
রাজা: নন্দনে চারটি পর্ব দেখানো হয়েছে। আমার কাছের জনেরাও দেখেছেন। সবাই ইতিবাচক মন্তব্যই করেছেন। পরিসংখ্যান ৮০ শতাংশ বলতে পারেন। কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো আছে। দর্শকেরা ধরিয়ে দিলে পরের কাজে সেটা সংশোধন করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: আপনি তৃপ্ত?
রাজা: খুব উপভোগ করেছি। এক দম অন্য ধারার কাজ। ছবি পরিচালনা এক রকমের। সিরিজ পরিচালনা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখলাম। নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করলাম। ওঁদের সঙ্গে কাজ করতে করতে বেশ ঝরঝরে লাগল নিজেকে। নতুন মাধ্যমকে জানলাম। নতুন যে কোনও জিনিস সব সময়েই উদ্দীপনা জাগায়।
প্রশ্ন: সিরিজ, ছবি মিলিয়ে মুঠোভর্তি কাজ উপভোগই যদি করবেন তা হলে এই অসুস্থতা কেন?
রাজা: আমি নিজেই বুঝিনি। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, তেলমশলাদার খাবার খাওয়া বা নেশা আমি করি না। উল্টে নিয়মিত জিমে যাই। শরীরচর্চা করি। তার পরেও কী করে হল বুঝলাম না। এখন মনে হচ্ছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনেক দিন থেকেই ভিতরে ভিতরে কাবু করে ফেলেছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ হয়তো এই হৃদরোগ।
প্রশ্ন: সবিস্তার যদি বলেন?
রাজা: আমরা সবাই কাজের স্বীকৃতি খুঁজি। যিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন। ইতিবাচক স্বীকৃতি মনকে এগিয়ে দেয়। নেতিবাচক স্বীকৃতি আপনাকে দমিয়ে দেবে। আমার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন সবাই স্বঘোষিত সমালোচক। সবাই সব জানেন, বোঝেন, পারেন। ইদানীং তেমনই কিছু ইউটিউবার ক্রমাগত আমার কাজ নিয়ে অকারণ সমালোচনা করছিলেন। পুরো কাজ না দেখেই বোকা বোকা কিছু মন্তব্য করে দেন তাঁরা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করেন। যেমন, ‘ম্যাজিক’ ছবির ক্লাইম্যাক্স তিন দিনের দিন বলে দিলেন কিছু ইউটিউবার। এঁদের আমি বাংলা বিনোদনের শ্রেণীশত্রু বলে মনে করি। লোকে এর পরে আর ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাবেন?
প্রশ্ন: শত্রু পক্ষের কারসাজি নয়তো?
রাজা: মনে হয় না। কারণ, এই ঘটনা একা আমার সঙ্গে হচ্ছে না। কিছু দিন আগেই এক বর্ষীয়ান পরিচালকও একই ভাবে অপমানিত হয়েছেন। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তো হচ্ছেনই। আমার সঙ্গে কারওর সম্পর্কই খারাপ নয়। কিন্তু এই আচরণগুলো মানসিক চাপ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। এক জনের প্রশংসাও আমাদের কাছে অস্কার পাওয়ার মতো। ফলাফল ‘ফিফটি ফিফটি’ বললেও বুঝি, কাজ দেখে তার পর মন্তব্য করেছেন। যাঁরা চোখ-কান বুজে নিন্দে করেন তাঁদের কী বলব? অথচ এঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার উপায় নেই। কারণ, পুরোটাই এখন উন্মুক্ত প্রাঙ্গন।
প্রশ্ন: পাশাপাশি বাংলা ছবির জন্য রাজ্যে প্রেক্ষাগৃহ নেই! নতুন ছবির মুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা। অসুস্থতা আসবেই..
রাজা: দামি কথা। বাংলা ছবির বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হতে বাধ্য। হয়তো আমার অসুস্থতার এটি দ্বিতীয় কারণ। টলিউডকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে রাজ্যবাসীদের বাংলা ছবি ভালবাসতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে বাংলা ছবির। তবে বাংলা বিনোদন আবার ঘুরে দাঁড়াবে। দক্ষিণী ছবি কেন হিট হয় জানেন? দক্ষিণের দর্শকেরা তাঁদের নিজের ভাষার ছবিকে মাথায় তুলে রাখেন। প্রযোজক পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তাই সারা দেশে ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’-এর এত জনপ্রিয়তা, ব্যবসা। আমরা কী করি? কূট-কচালি, নিন্দে-মন্দ। কেউ কারওর ভাল দেখতে পারি না। ভাবতেও পারি না। নোংরা ভাষায় আক্রমণ করি। এ ভাবে বেশি দিন কাজ করা বা লড়া যায় না। একই ভাবে রাজ্য সরকারকেও বাংলা বিনোদনের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই সবটা ভাল হওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন: অতিমারির পরে আপনার ম্যাজিক পর্দায় সত্যিই ম্যাজিক দেখিয়েছিল। ‘আম্রপালি’, ‘হার মানা হার’, ‘সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ পারবে?
রাজা: আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ‘ম্যাজিক’ দর্শকদের ভাল লেগেছিল চিত্রনাট্য, অভিনয়ের গুণে। ‘হার মানা হার’-এ একা বাবার গল্প রয়েছে। ‘আম্রপালি’ প্রেমের ছবি। ‘সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ এই প্রজন্মের জন্য বানানো ঝকঝকে ছবি। আশা করি, দর্শকদের খুবই ভাল লাগবে। পুরোটাই সময় বলবে। তিনটি ছবির নায়কও আলাদা। যথাক্রমে সোহম চক্রবর্তী, বনি সেনগুপ্ত, অঙ্কুশ হাজরা। দর্শক একঘেয়েমিতে ভুগবেন না।
প্রশ্ন: এই সব কারণগুলো যখন অবসন্ন করে তখন কী করেন?
রাজা: গান শুনি। আমি গান খুব ভালবাসি। অনেক ছবির গান লিখেছি। সে গুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়। গান লিখি। কবিতাও লিখি। জানি, সম্মিলিত প্রতিবাদ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার অসভ্যতামি বন্ধ করা যাবে না। তাই একা একা কিছু করতে যাই না। বদলে সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে বেশি করে ডুবিয়ে দিতে চেষ্টা করি। যাতে অন্য কোনও দিকে নজর চলে না যায়। মনখারাপ না হয়।
প্রশ্ন: কবে কাজে ফিরবেন?
রাজা: ইচ্ছে ছিল এপ্রিল থেকে শ্যুটে ফিরব। চিকিৎসকেরা বারণ করেছেন। তাই মে মাস থেকে শ্যুট শুরু করব। এপ্রিল থেকে অফিসে বসব নিয়মিত। আরও একটি কাজ করব। নিজে অসুস্থ হয়ে বুঝলাম, অর্থনৈতিক জোর না থাকলে আচমকা অসুস্থতা এক জন মানুষকে কত কাবু করতে পারে। তাই ঠিক করেছি, হৃদরোগ সম্পর্কে প্রচারমূলক কাজে, অনুষ্ঠানে অংশ নেব। পাশে দাঁড়াব তেমন কিছু মানুষের, যাঁরা অর্থের অভাবে নিজেদের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেন না।
প্রশ্ন: নতুন ছবি কোন পটভূমিকায় বানাবেন? নায়ক-নায়িকা কে?
রাজা: আগামী ছবিতে ফের ফিরছেন অঙ্কুশ হাজরা-ঐন্দ্রিলা সেন। লন্ডনে শ্যুট হবে। ভয় আর কৌতুক রস হাত ধরাধরি করে আসতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy