প্রিয়াঙ্কা সরকার।
প্রশ্ন: শিলাদিত্য মৌলিকের ছবিতে আপনি আর রেডিয়ো, গল্পের জন্য রাজি হলেন?
প্রিয়াঙ্কা: এক দম। বিষয়টা অন্য রকম। অভিনয়ের সুযোগও রয়েছে। চিত্রনাট্য বলছে, ঘুমিয়ে থাকা অনেক অনুভূতিগুলো হয়তো জেগে উঠবে। সব মিলিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জিং।
প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কা কোনও দিন রেডিয়ো শুনেছেন?
প্রিয়াঙ্কা: যত ক্ষণ গাড়িতে থাকি তত ক্ষণ রেডিয়ো বাজে! এফ এম চ্যানেলগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুনি। একেক দিন একেক ধরনের গান কানে লেগে যায়। ব্যস, গোটা দিনটা ওই পছন্দের গানের জন্য উৎসর্গ করে ফেলি! আগে থেকে সেট করে রাখা গানে আর যাই হোক মেজাজ তৈরি হয় না।
প্রশ্ন: প্রিয়াঙ্কার হাতে এখন ১০টি ছবি...
প্রিয়াঙ্কা: লকডাউনের আগে পাঁচটি ছবির শ্যুটিং হয়ে গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে নতুন শ্যুট শুরু হবে চলতি মাসের শেষ থেকে। অনেকেই হয়তো ভাববেন, প্রিয়াঙ্কার পৌষ মাস! তাঁরা জানেন না, আমাকেও অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। টলিউডের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়া মানে বাকিদের মতো আমারও অন্নসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা। তার মধ্যেই সবাই যে ভাবে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছেন আমিও করছি। শুধু নতুন ছবি বানালেই চলবে না। তার মুক্তি পাওয়াটাও জরুরি। আমি চাই আরও কাজ হোক। ইন্ডাস্ট্রি আবার আগের জায়গায় ফিরুক।
প্রশ্ন: রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ‘চং চং’, শিলাদিত্য, অর্ণবের আগামী ছবিতে আপনি। অন্যান্য প্রযোজক, পরিচালকেরাও আপনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। ধৈর্যের ফল মিষ্টি লাগছে?
প্রিয়াঙ্কা: ১২ বছর বয়স থেকে টালিগঞ্জে। অভিনয় ছাড়া কিচ্ছু বুঝি না। পারিও না। কাজ করতে করতে অনেক কিছু শিখেছি। আরও শেখা বাকি। তার পরেও রাহুল, শিলাদিত্য, অর্ণবেরা অন্য ধরনের চরিত্রে আমায় ডাকছেন, অন্যরা আমায় নিয়ে ভাবছেন শুনলে খুব ভাল লাগে। আমারও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যখন এঁরা বারবার আমায় ডাকবেন তখন বুঝব আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: লকডাউনের আগে যশ দাশগুপ্তের বিপরীতে শ্যুট সারলেন। ব্যক্তি যশ আর অভিনেতা যশ কেমন?
প্রিয়াঙ্কা: সব দিক দিয়েই আমার কিন্তু ভীষণ ভাল লেগেছে যশকে। মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভাল। আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, অভিনেতা যশকেও ভাল নম্বর দেব। এমনও হয়েছে, আমি যে দৃশ্যটা খুব সহজ ভাবে নিয়েছি যশ তাতেও মনোযোগী। শ্যুটের আগে চিত্রনাট্য পড়ে সংলাপ ঝালিয়ে নিত। আমার সঙ্গে আলাদা করে অভ্যাস করত, এটাই যশ দাশগুপ্ত। শ্যুটিয়ের সময় অভিনয়ের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ।
প্রশ্ন: নিন্দুকেরা যে বলেন, ভাল প্রযোজনা সংস্থা আর নামী নায়িকা নাকি যশের ছবি হিটের নেপথ্য কারণ?
প্রিয়াঙ্কা: একেক জনকে নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের রটনা ছড়ায়। যশের গায়ে সে ভাবেই হয়তো এই তকমা লেগেছে। এ গুলো আমাদের পেশার অঙ্গ। আমিও তাই আর এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। তবে এটা মানতেই হবে, যশের কিন্তু বড় সংখ্যক অনুরাগী রয়েছেন। সেটা যশ নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন।
প্রশ্ন: আপনাকে নিয়েও তো অনেক রটনা...
প্রিয়াঙ্কা: আমার কিন্তু ভালই লাগে। গুঞ্জন মানে আমাদের নিয়ে অনুরাগীরা ভাবছেন। দর্শকেরা আমাদের পছন্দ করছেন। আমিই তো সংবাদমাধ্যম থেকে নিজের বিষয়ে নিত্যনতুন কত খবর পাই! মজা লাগে।
প্রশ্ন: কটাক্ষের শিকার হয়ে সৌরভ দাস সহ অনেক অভিনেতা নেটমাধ্যম ছাড়ছেন। আপনিও মন্তব্য শোনেন। কোনও দিন সরে যাবেন?
প্রিয়াঙ্কা: নেটমাধ্যম ছাড়ব কেন! খারাপ দিকের পাশাপাশি অনেক ভাল দিকও এর আছে। অনেক খবরাখবর পাই এখান থেকে। আমার একটা মন্তব্যে খুশি হন প্রচুর অনুরাগী। সবার সঙ্গে যে মাধ্যম এত সহজে আমায় জুড়ে দিচ্ছে তাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারি না।
প্রশ্ন: যশের মতোই আপনার অনেক সহ-অভিনেতা রাজনীতি থেকে অভিনয়ে ফিরছেন...
প্রিয়াঙ্কা: (কথা থামিয়ে দিয়ে) আমার এই কথায় একটু আপত্তি আছে। ওঁরা কিন্তু কেউ অভিনয় ছেড়ে রাজনীতিতে আসেননি। পাশাপাশি দুটো কাজ করতে চেয়েছেন। নির্বাচনে একাধিক দল থাকবে। কেউ জিতেছেন কেউ হেরেছেন। হেরেছেন বলেই ‘রাজনীতি ছেড়ে অভিনয়ে ফিরছেন’--- এই কথাটা বোধহয় ঠিক নয়। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে কেউ যদি রাজনীতির মঞ্চ বেছে নেন, সেটা নিয়ে এত কথা কেন?
প্রশ্ন: আপনিও সমাজসেবা করেন। ডাক পেলে রাজনীতিতে আসবেন?
প্রিয়াঙ্কা: আমি অভিনয় ছাড়া আর কিচ্ছু পারি না। সেই দুনিয়ায় এখনও আমার অনেক কাজ বাকি। ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আমার দায়িত্বও রয়েছে। তা ছাড়া, রাজনীতিতে আসতে গেলে বিষয়টিকে জানতে হয়। পড়াশোনা করতে হয়। আমার সেটাও নেই। তার থেকেও বড় কথা পেশা, পরিবার সামলানোর পর আর কিছু করার মতো সময় আমার হাতে নেই।
প্রশ্ন: আপনার সাহসী ফটোশ্যুট, অভিনয় নিয়ে ছেলে সহজ কিছু বলে? তারকা সন্তান হওয়া উপভোগ করে?
প্রিয়াঙ্কা: আগামী প্রজন্ম সব দিক থেকেই ভীষণ এগিয়ে। ওরা এ সব নিয়ে মাথাই ঘামায় না। সহজ আমার সাহসী ফটোশ্যুট নিয়ে কোনও কথা বলে না। ওকে কেন নিয়ে যাইনি, কোথায় শ্যুট করলাম? এ সব জানতে চায়। তা ছাড়া, আমি যেমন মা তেমনি আমি এক জন সম্পূর্ণ নারী। তাই যে কোনও বিষয়ে আমার স্বাধীনতা থাকবে। কাজের ক্ষেত্রেও। আমি চাই সহজ সেটা বুঝুক। ও যেন বুঝতে পারে, ছোট জামা পরলেই মেয়েরা খারাপ হয়ে যায় না। ও যেন আমার পরিশ্রমকে সম্মান দেয়, স্বীকৃতি জানায়। আবার আমিও সহজের কথা ভেবে এমন কিছু করি না যাতে সহজ আহত হয়। তাই আমার মধ্যেও কোনও অপরাধবোধ নেই। বাকি তারকা সন্তান। সহজ এখনও অনেক ছোট। তাই বোঝেই না, তারকা সন্তান কাকে বলে! তবে সহজ এটা বোঝে, পেশার খাতিরে মায়ের সঙ্গে সবাই ছবি তুলতে চায়। এ দিকে লাজুক বলে ও আবার সবার সঙ্গে ছবি তুলতে চায় না। বেশি লোকজন দেখলে গুটিয়ে যায়। আমিও ওকে তারকা সন্তান হিসেবে বড় করছি না। সহজ খুব সহজ ভাবেই বড় হচ্ছে। ভবিষ্যতেও ওর ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে।
প্রশ্ন: পুজোর আর ৯২ দিন বাকি। কিছু পরিকল্পনা করেছেন?
প্রিয়াঙ্কা: অতিমারির কারণে গত বছর থেকেই আমি পুজো থেকে একটু দূরে। বাঘাযতীন তরুণ সংঘের পুজোতেও নেই। ছেলেকে, পরিবারকে সময় দিই। সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি বেরোইনি। এ বছরেও তাই-ই হবে।
প্রশ্ন: রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর একটি ছবি দিয়েছিলেন। অনুরাগীরা দেখে বলেছেন, পর্দায় আর বাস্তবে মিল হয় না?
প্রিয়াঙ্কা: (হেসে ফেলে) কোনও পরিচালক ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এর মতো ছবি বানাতে পারলে অবশ্যই রাহুলের সঙ্গে পর্দা ভাগ করব। বাকি বাস্তব জীবনের মিল। রাহুলকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি। বন্ধুত্ব আছে। ওর সঙ্গে আমি বড় হয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি রাহুলের দৌলতে। আমার পছন্দ-অপছন্দ ওর থেকে বেশি আর কেউ জানে না। তার পরেও বলব, আমরা উপযুক্ত দম্পতি বা যুগল নই। সেই কারণেই ছ’বছর ধরে নিজেদের মতো করে আমরা আলাদা। এত বছর পরে এক সঙ্গে সংসার জীবনে আর ফেরা যায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy