Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
অনেক দিন পরে ধারাবাহিকে ফিরছেন কৌশিক
Tollywood

Kaushik Sen: ‘আনিসের বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের সমালোচনা করার পরও রাজ ফোন করে কাজের প্রস্তাব দেয়’

পরেশ রাওয়াল কলকাতায় আসছেন একটি হিন্দি ছবির কাজে। সেটায় ওঁর সঙ্গে কাজ করার একটা সুযোগ এসেছে। আমি আর রেশমী দু’জনেই রয়েছি ছবিটায়।

কৌশিক সেন।

কৌশিক সেন।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৫
Share: Save:

প্র: নাটক, ছবি, সিরিজ়ের কাজের মাঝে হঠাৎ ধারাবাহিকে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
উ: প্রথমত, রাজ (চক্রবর্তী) যে গল্পটা বলেছিল, সেটা আমার ভাল লাগে। সাম্প্রতিক বাংলা ধারাবাহিকের কাঠামোর মধ্যে থেকেও ‘গোধূলি আলাপ’ একটা অন্য ধরনের গল্প বলবে, যা দর্শকের ভাল লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। যে আইনজীবীর চরিত্রে আমি অভিনয় করছি, তার একটা প্রতিবাদী সত্তা আছে। ঘটনাচক্রে প্রায় হাঁটুর বয়সি একটি মেয়ের সঙ্গে সে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমেই এটা দেখিয়ে দেওয়ায় দর্শক একটা ধাক্কা খান। এ বার গল্পটা কী ভাবে এগোয়, সেটাই ইন্টারেস্টিং। আর দ্বিতীয়ত, এই ধারাবাহিকে অংশ নেওয়ার আরও একটা বড় কারণ, আমার থিয়েটার।

প্র: কী রকম?
উ: এ বছর ‘স্বপ্নসন্ধানী’ তিরিশে পা দেবে। খুব দুরূহ একটা নাটকে হাত দিয়েছি, ‘হ্যামলেট’। আগামী ক’মাস পরিপূর্ণ ভাবে সেই কাজে মন দিতে চাই। আর সেটা সম্ভব একমাত্র সিরিয়াল করেই। তার কারণ, ছবি বা সিরিজ়ে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র, যখন-তখন আউটডোর শুটিং ইত্যাদির চাপ থাকে। বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে ছবি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে গুটিয়ে ফেলা হয় এখন। আর দু’-একটা ছবি করে সার্ভাইভ করা সম্ভব নয়। পুরো বিষয়টা আমাকে খানিক ক্লান্ত করে দিয়েছে। অন্য দিকে, সিরিয়ালের একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। নিয়মিত শুটিং করেও কী ভাবে নাটকের জন্য সময় বার করা যায়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমার স্ত্রী রেশমী। গত দু’বছরে আর সব নাট্যদলের মতো ‘স্বপ্নসন্ধানী’ও আটকে গিয়েছিল। তাই এ বছরটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতিমারি শিখিয়ে দিয়েছে যে, জীবন অনিশ্চিত। কে জানত একটা ভাইরাস এত লোকের প্রাণ নিয়ে নেবে? কে ভেবেছিল একদিন এ রকম একটা যুদ্ধ বাধবে? কাজেই যেটা মন থেকে করতে ভালবাসি, সেটা যে ভাবেই হোক করে যেতে হবে। আমার কাছে সেটা থিয়েটার। রাজকে বলাই আছে, আমাকে মাঝে মাঝে নাটকের জন্য একটু ছাড়তে হবে।

প্র: আপনার সমসাময়িক অনেক অভিনেতাই বাংলা-হিন্দি ছবি-সিরিজ়ে চুটিয়ে কাজ করছেন...

উ: আমি সদ্য একটি হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ের কাজ ছাড়লাম। আসলে আমার নিজের কেরিয়ার নিয়ে বিরাট কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। আর এটাও বিশ্বাস করি, শাশ্বত (চট্টোপাধ্যায়), টোটা (রায়চৌধুরী), পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়)... এই সময়ে দাঁড়িয়ে যাঁরা জাতীয় স্তরে জমকালো ভাবে কাজ করছেন, প্রত্যেকেই অভিনেতা হিসেবে আমার চেয়ে এগিয়ে। তাঁরা সেটা ডিজ়ার্ভ করেন। এ নিয়ে আমার কোনও আফসোস নেই। প্রতিটা মানুষ তো কিছু না কিছু করতে জন্মায়। আমি থিয়েটার করতে জন্মেছি। দুর্ভাগ্যবশত এমন একটা দেশে আমার জন্ম, যেখানে শুধু থিয়েটার করে জীবনধারণ করা হয়তো সম্ভব নয়। এ নিয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই।

প্র: কম বয়সেও অনেক ধারাবাহিকে কাজ করেছেন। এখন কতটা পরিবর্তন অনুভব করেন?

উ: এক সময়ে রাজা দাশগুপ্তের ‘কালপুরুষ’ আমাকে টেলিভিশনের দর্শকের কাছে পরিচিত করে তুলেছিল। সকলে অর্ক বলে চিনত আমাকে। টেলিভিশনে শেষ কাজ বলতে ‘ভূমিকন্যা’। সেটা অবশ্য ঠিক মেগাসিরিয়াল ধাঁচের ছিল না। সেই অর্থে অনেক দিন পরেই ধারাবাহিকে ফিরছি। স্বাভাবিক ভাবেই কাজের পুরো প্যাটার্নটা বদলে গিয়েছে এখন। তবে তার মধ্যে থেকেই নিজের কাজটা করে যেতে হবে। ধারাবাহিকের কাজে একটা একঘেয়েমি আছে, এটা সত্যি। সেটা কিছুটা হলেও মেনে নিতে হবে আমার নাটকের স্বার্থেই। তবে রাজ যে গল্পটা ব্রিফ করেছে আমাকে, সেটা যদি ঠিকঠাক এগোয়, তা হলে মনে হয় এই চরিত্রটা করেও আনন্দ পাব। যদি এমন একটা ধারাবাহিকের প্রস্তাব আসত, যেটা করতে একেবারেই মন সায় দিচ্ছে না, তা হলে হয়তো এটা করতাম না। ‘গোধূলি আলাপ’-এর গল্প শুনে মনে হয়েছিল, এই কাজটার জন্য ঝুঁকি নেওয়া যায়।

প্র: ঝুঁকি কেন বলছেন?

উ: ইন্ডাস্ট্রিতে আসলে কিছু গতে বাঁধা মানসিকতা আছে। আমি ধারাবাহিক করছি বলে এখন যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজন আমাকে নেওয়ার আগে দু’বার চিন্তা করেন, আমার কিছু করার নেই। এই ঝুঁকিটা নিতেই হবে আমায়। শঙ্কর চক্রবর্তীর মতো বলিষ্ঠ অভিনেতা যেমন টিভি-র অভিনেতা হয়েই রয়ে গেলেন। চন্দন সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্তের মতো অভিনেতাদের সে ভাবে ব্যবহারই করা হল না। আসলে ইন্ডাস্ট্রি বড্ড ছাপ ফেলে দেয়।

প্র: এই মুহূর্তে ধারাবাহিক আর নাটক ছাড়া আর কিছু করছেন?

উ: পরেশ রাওয়াল কলকাতায় আসছেন একটি হিন্দি ছবির কাজে। সেটায় ওঁর সঙ্গে কাজ করার একটা সুযোগ এসেছে। আমি আর রেশমী দু’জনেই রয়েছি ছবিটায়। এ ছাড়া বেশ কয়েকটা ছবি মুক্তির অপেক্ষায়, যেমন ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘কাবেরী অন্তর্ধান’, ‘দেবতার গ্রাস’ ইত্যাদি। পাভেল, সৌকর্যর (ঘোষাল) মতো তরুণ পরিচালকদের ছবিও করলাম, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর পরিচালনায় ‘লস্ট’ করলাম। প্রায় সকলের সঙ্গেই তো কাজ করেছি। এ বার এই একটা বছর একটু লোভ সংবরণ করি।

প্র: ‘হ্যামলেট’ কবে মঞ্চে আসছে?

উ: মে-এর শেষে, দলের জন্মদিনে। ঋদ্ধি করছে হ্যামলেট, রেশমী গার্ট্রুড, সুরাঙ্গনা ওফেলিয়া। অনেক দিন পরে আমিও মঞ্চে অভিনয় করছি, ক্লডিয়াসের চরিত্রে। সঙ্গীতের দায়িত্বে জয় সরকার।

প্র: আনিস খান, সাম্প্রতিক পুর-নির্বাচনে হিংসার মতো বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন আপনি। কাজের জায়গায় এর প্রভাব পড়ে না?

উ: সাইকোলজিক্যালি হয়তো পড়ে। মজার বিষয়, যে দিন আনিসের বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলাম, তার দিন দুয়েক পরেই রাজের ফোন এসেছিল ধারাবাহিকের প্রস্তাব নিয়ে। তখন কিন্তু শুধু কাজের কথা হয়েছে। আমার কাছে রাজ শুধু তৃণমূলের বিধায়ক নয়। রাজ আমার কাছে সেই ছেলেটাও, যে বরুণ বিশ্বাসকে নিয়ে ‘প্রলয়’-এর মতো ছবি বানাতে পারে। আমি ভাগ্যবান, ইন্ডাস্ট্রি কখনও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে কোনও ব্র্যাকেটে ফেলেনি আমাকে। এই কারণে অভিনেতা হিসেবে আমি গর্বিত।

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Bengali Serial kaushik sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy