সুজিত সরকার
প্র: ট্রেলার দেখে বোঝা যাচ্ছে, ‘সর্দার উধম’ বড় ক্যানভাসের ছবি। সিনেমা হল তো খুলে গিয়েছে, তা হলে ওটিটি রিলিজ় কেন?
উ: আমার আগে থেকেই কমিট করা ছিল। তখন বুঝিনি, পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সিনেমা হল খুলে যাবে। তা ছাড়া ওটিটি মাধ্যমেও সিনেম্যাটিক ফিল পাওয়া যায়। দর্শকও নিজেদের ওটিটিতে অভ্যস্ত করে ফেলছেন। ল্যাপটপ, মোবাইল বা স্মার্ট টিভিতে নিজের ইচ্ছেমতো সময়ে আয়েশ করে তাঁরা সিনেমা দেখছেন।
প্র: আপনি নিজে সিনেমা হলের ম্যাজিকে বিশ্বাস করেন। রিলিজ়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রযোজক আর পরিচালক— দুই সত্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল?
উ: যখন ছবির কাজ শুরু করেছিলাম, তখন জানতাম না এই পরিস্থিতি হবে। অবস্থার সাপেক্ষে এটাই সেরা সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে। মানুষের কাছে পৌঁছনোটাই আসল। ওটিটিতে ‘গুলাবো সিতাবো’ রিলিজ় করেছিল, সে ছবিতে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম, আমিই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ‘সর্দার উধম’ নিশ্চয়ই আরও বেশি সংখ্যক মানুষ দেখবেন।
প্র: ‘ইয়াহাঁ’, ‘ম্যাড্রাস কাফে’, ‘সর্দার উধম’... ছবিগুলোর মধ্যে একটা যোগসূত্র রয়েছে। রাজনীতি-ইতিহাস কি আপনার পছন্দের বিষয়?
উ: একেবারেই তাই। আসলে সিনেমা একটা বিচারধারা, একটা দর্শন। এই ধরনের বিষয়ে আগ্রহ আছে বলেই একজন বিপ্লবীকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছি।
প্র: উধম সিংহকে নিয়ে আগেও ছবি হয়েছে। এখানে দর্শক নতুন কী পাবেন?
উ: চরিত্রটা নিয়ে আমার নিজের একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমি ওঁকে কী ভাবে দেখছি... শুধু ঘটনাবলি দেখাতে চাইলে তথ্যচিত্র বানাতাম। উধম সিংহের সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা কঠিন ছিল। কত অজানা অচেনা বিপ্লবী রয়েছেন, যাঁদের কথা কেউ জানে না। ছবির গবেষণার অংশটা সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল। লেখার কাজটাও। পিরিয়ড ছবি মানে আলাদা একটা দায়িত্ব। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল। উধম সিংহও নিশ্চয়ই প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন। নয়তো কুড়ি বছর ধরে তিনি কী নিয়ে থাকলেন?
প্র: উধম সিংহের চরিত্রে আপনি প্রথমে ইরফান খানকে ভেবেছিলেন। এমনকি, ইরফানের সুস্থ হওয়ার জন্য অনেক দিন অপেক্ষাও করেছিলেন...
উ: ইরফানের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অন্য রকমের ছিল। ওকে ছাড়া কাজটা করছি, এটা ভাবাই কষ্টকর ছিল। প্রথম দিকে শুটে গেলে ওকে বলতাম। ও খুব উৎসাহ দিত। পরের দিকে আর বলতাম না, খারাপ লাগত। ভিকিকে (কৌশল) যেমন আমরা প্রথমে বলিনি যে, চরিত্রটা ইরফানের করার কথা ছিল। এটা ভিকির উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করত। ওর কাছেও এই চরিত্রটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে ছবির নেপথ্যে আমার দর্শনটা বুঝতে পেরেছে ভিকি, এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওনা।
প্র: আপনাকে কি ভিকি কৌশলের মতো করে চিত্রনাট্য প্রস্তুত করতে হয়েছিল?
উ: না, চরিত্রের নির্মাণে কোনও বদল হয়নি।
প্র: বাংলার কোনও বিপ্লবী চরিত্রকে নিয়ে ছবি করার আগ্রহ রয়েছে?
উ: একবার ভেবেছিলাম ১৯১১ সালের মোহনবাগান ও ইস্ট ইয়র্কশায়ারের ম্যাচ নিয়ে ছবি বানাব। ফুটবল ম্যাচ হলেও, আইএফএ শিল্ড জেতা এক রকম বিপ্লব ছিল। তবে চিত্রনাট্য তৈরি করে উঠতে পারিনি। অনেক ভাবনাই আসে। নেতাজিকে নিয়েও ছবি করার কথা ভেবেছিলাম। তবে আমি ভাবতে ভাবতেই অন্যরা বানিয়ে ফেলেছে (হাসি)! ক্ষুদিরাম বসুকে খুব বেশি লোক চেনে না। ওঁর ঘটনাও আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
প্র: দু’দফার লকডাউন কী ভাবে কাটালেন?
উ: বাড়িতেই আটকে ছিলাম। রান্না করেছি, বাড়ির কাজ করেছি। শান্তনুর (মৈত্র) সঙ্গে মিউজ়িক নিয়ে আলোচনা করছি, অন্য দিকে সবজিওয়ালা জানালা দিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কী নেব! এই সব জগাখিচুড়ি চলছিল। ভেবেছিলাম, অনেক সময় পাব কিন্তু সেটা হয়নি।
প্র: পুজোয় কী পরিকল্পনা?
উ: পুজোর সময়ে কাজ রাখি না। তবে এ বার পুজোর পরেই রিলিজ়। ছবি নিয়ে ব্যস্ত থাকব। কলকাতায় থাকলে ঠাকুর দেখতাম। তবে এ বার শুনলাম, প্যান্ডেলে যাওয়ার অনুমতি নেই, না?
প্র: হ্যাঁ। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে প্রতিমা দর্শন করতে হবে।
উ: ভাল সিদ্ধান্ত। থার্ড ওয়েভ না এলেই ভাল। বাড়িতে বসেই লোকজন ছবি দেখুন। ‘সর্দার উধম’ আরাম করে বসে দেখার মতো ছবি। একটা গতি আছে, কোনও তাড়াহুড়ো নেই। আমার মতোই (হাসি)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy