সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়
ঝুলিতে তো দু’-দু’টি পুরস্কার। কতটা প্রত্যাশিত ছিল? সাগ্নিক জানান, অ্যাওয়ার্ড নিয়ে মাথা ঘামানো কোনও কালেই পছন্দের নয় তাঁর। বললেন, “আমি ছবিটা পাঠিয়েছিলাম, কারণ আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছিল ছবিটা পাঠানো দরকার। বিচারকেরা মান্যতা দিয়েছেন, তাতে আমি খুশি।”
সাগ্নিকের কথায়: ‘ইনার কল’। তা হলে কি কোনও প্রত্যাশাই ছিল না পরিচালক হিসেবে? একটু ভেবে ফোনের ওপার থেকে জবাব এল: “হ্যাঁ, একটা এক্সপেকটেশন ছিল। আমি যেন ছবিটা শেষ করে হল অবধি নিয়ে যেতে পারি। বাধাবিপত্তি যা-ই আসুক না কেন ছবিটি যেন হলে মুক্তি পায়।”
এসেছিল নাকি বাধাবিপত্তি? একটু হাসলেন সাগ্নিক। বললেন, “আমার বলে নয়, সেই সত্যজিৎ রায়ের সময় থেকে আজ অবধি ফেলুদাকে নিয়ে ছবি বানালে বাধাবিপত্তি আসবেই।” কী রকম বাধাবিপত্তি? ‘সোনার কেল্লা’র শুট পিছিয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন কারণে। শুধু সত্যজিৎই নন। সমস্যায় পড়তে হয়েছিল সন্দীপ রায়কেও। ‘টিনটোরেটোর যীশু’ অর্ধেক শুট হয়ে প্রযোজক হঠাৎই বদলে যায়। ছবির শুটিংও পিছিয়ে যায় এক বছর। কিন্তু এ তো গেল সত্যজিৎ-সন্দীপের কথা। আপনার ক্ষেত্রে কী অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছিল? কিছুটা মজার ছলেই সাগ্নিক জানালেন, পরিচালক মহলে প্রচলিত রয়েছে, ফেলুদার সঙ্গে বাধাবিপত্তি থাকলেই নাকি তা শুভ বলে মানা হয়ে থাকে। ইতিহাস বলছে, তা হলেই নাকি ছবি ‘সুপার হিট’। বললেন, “ছবিটার ৫০ শতাংশ শুট হয়ে গিয়েছিল। যিনি প্রযোজক ছিলেন তিনি মাঝপথে ব্যাকআউট করেন। হয়তো আর টানতে পারছিলেন না। এমন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছি যখন বুঝতে পারছি না আদৌ আমার ছবিটা হবে কি না। ধরে নিয়েছি হবে না। বাধ্য হয়ে প্রযোজকের ভূমিকায় নামতে হয় আমায়। বিশ্বাস করুন, প্রযোজক হওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না আমার।” ঋণ করা টাকায় চালিয়ে গিয়েছেন শুটিং। সাগ্নিকের গলায় পরিতৃপ্তির সুর। বললেন, “এত কষ্ট, এত পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। সে জন্যই বোধহয় নন্দনে সাত সপ্তাহ হাউজফুল গিয়েছে এই ছবি।”
সৌমিত্র এবং সাগ্নিক
সাগ্নিকের বক্তব্য: ‘‘ছবির ক্ষেত্রে স্ট্রাগলটা খুব জরুরি। এক বার হয়ে যাওয়ার পর এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস আসে। আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। ক্রাইসিসে না পড়লে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় না। আর আমার ভাল লাগাটা আরও বেশি কেন জানেন? ক্রাইসিসের সময় যাঁরা ছিলেন তাঁদেরকে কিছু দিতে পেরেছি।’’ কৃতজ্ঞ সাগ্নিক শ্রদ্ধা জানালেন মেন্টর যোগেশ মাথুরকে। জানালেন, সঙ্কটের সময়েও সন্দীপ রায় হাত ছেড়ে যাননি।
আরও পড়ুন- মুভি রিভিউ ‘বাটলা হাউজ’: গদগদ দেশভক্তি ছবিটিকে গিলে খায়নি
‘ফেলুদা’-র মতো এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভয় হয়নি? অকপটে এ কথা স্বীকার করে নিলেন সাগ্নিক, ‘‘হ্যাঁ, ভয় ছিল। কিন্তু ভয়টা নিজের উপর। একাধারে পরিচালক এবং চরম ফেলুদা ভক্ত। দুটোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তো ছিলই। ফেলুদা ভক্ত সত্তা যখনই বলেছে ছবিটা বোধহয় আর করা হল না, পরিচালক সত্তা সাহস জুগিয়েছে, ঠিক পারবে।’’ পরিচালক জানালেন, সামনে নতুন ছবি নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনাও রয়েছে।
ফিরে দেখা
কথা প্রায় শেষ হয়েই গিয়েছিল। হঠাৎই যোগ করলেন সাগ্নিক, “কোনও সংবাদমাধ্যমকে এত দিন জানাইনি। আপানদেরই বলছি। মায়ের গয়না বন্ধক রেখে ছবিটা বানিয়েছি। অনেক ভালবাসা জড়িয়ে আছে। মা চেয়েছিল আমি যাতে ছবিটা শেষ করতে পারি। পেরেছি। এটাই প্রাপ্তি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy