Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Interview

‘যা বুঝলাম শুভশ্রীদি বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার করা একদমই পছন্দ করে না’

রাজ চক্রবর্তীর ‘হাবজি গাবজি’র ট্রেলারে সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্র ওরফে ‘অনীশ বসু’।

স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্র।

স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্র।

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২০ ১৪:২১
Share: Save:

মাত্র ক্লাস সেভেন। ১০ বছরের অভিনয় জীবন। রাজ চক্রবর্তীর ‘হাবজি গাবজি’র ট্রেলারে সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্র ওরফে ‘অনীশ বসু’। বাস্তবে তার ক’টা মোবাইল? সব জানাল আনন্দবাজার ডিজিটালকে।

তোমার ক’টা মোবাইল?

স্যমন্তক: একটাও নেই।

এটা ছবি করার আগে না পরে?

স্যমন্তক: (হেসে ফেলে) আমার কোনও দিনই মোবাইল নেই। বাবার মোবাইল ব্যবহার করি। নয়তো মায়ের। বন্ধুদের হাতে দেখি বিগ স্ক্রিনের মোবাইল। স্কুলেও সারাক্ষণ পাবজি খেলছে। আমায় কত কথা বলে বলে গেম নিয়ে! কিচ্ছু বুঝি না!

ট্রেলার দেখে তেমনটা মনে হয়নি!

স্যমন্তক: এটাও অনেকে বলেছেন। আমি আমার এক দাদা, স্কুলের বন্ধু, সেটের সবার থেকে খুঁটিয়ে জেনেছি মোবাইলের গেম সম্বন্ধে। তার পর সেটাকে অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

‘হাবজি গাবজি’র ট্রেলার দেখে বড়রা তোমায় ভয় পাচ্ছেন, জানো?

স্যমন্তক: সত্যি? তা হলে সেটা আমার কাছে আশীর্বাদ! রাজ চক্রবর্তী যেটা চেয়েছিলেন, সেটা পর্দায় ফোটাতে পেরেছি।

‘অনীশ বসু’ হতে গিয়ে তোমার ভয় করেছিল?

স্যমন্তক: প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। মা-বাবাকে বলেওছিলাম, এই চরিত্র আমি ফোটাব কী করে! রাজ আঙ্কল, শুভশ্রীদি, পরমদা-- সবাই মিলে ধরে ধরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেখানে পারছিলাম না, জেনে নিয়েছি ওঁদের থেকে। শেষ পর্যন্ত দেখলাম, পেরে গেলাম।

তোমার চেনা এ রকম ভয়ঙ্কর মোবাইল অ্যাডিক্ট কেউ আছেন?

স্যমন্তক: (উত্তেজিত গলায়) আমার বাবা-ই তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফোন নিয়ে বসে থাকেন! আমার যেটা একদমই ভাল লাগে না।

এটা তা হলে তোমারই গল্প! বাস্তবে তোমার সঙ্গে এমনটা হয়নি?

স্যমন্তক: সবার বাবা-ই যে মোবাইল দেন, এমনটাও নয়। আমার ছোট পিসি আর পিসাই দু’জনেই কাজ করেন। মাধ্যমিকের পরে ছোড়দিকে ফোন দিয়েছেন। বাড়িতে একটা মোবাইল থাকত। পিসি-পিসাই ফোন করতেন। আউটগোয়িং পরিষেবা ছিল না। দিদি উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫ পার্সেন্ট পেয়েছে। ল’ নিয়ে পড়ছে। আমার মা-বাবাও আমাকে ফোন দেননি।

রাজ চক্রবর্তী পরিচালক। শুভশ্রী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় মা-বাবা। শোনার পরে আনন্দে লাফিয়েছিলে?

স্যমন্তক: আমি প্রথমে জানতেই পারিনি। পরমদার সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি ‘বনি’ ছবিতে। শুভশ্রীদির সঙ্গে এই প্রথম। শোনার পর একটু নার্ভাস লাগছিল। শুভশ্রীদি কেমন মানুষ, জানতাম না বলে। শ্যুট করতে গিয়ে দেখলাম, কী ভাল উনি! প্রত্যেক দৃশ্যের আগে বুঝিয়ে দিয়ে তার পর শট দিতেন।

রাজ ‘আঙ্কল’ আর শুভশ্রী ‘দি’! ‘আন্টি’ নন?

স্যমন্তক: (ইতঃস্তত করে) না না, 'শুভশ্রী আন্টি' কিছুতেই না। শুভশ্রীদি। কী সুন্দর দেখতে! শ্যুট না থাকলে আমাদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। লুডো খেলতেন। ঘুরতে যেতেন। একদম নিজের দিদির মতো।

ছোট-বড় পর্দা মিলিয়ে সব সময়েই ব্যস্ত। তারকাদের সঙ্গে ওঠাবসা। ছোট থেকে এটাই চেয়েছিলে?

স্যমন্তক: একেবারেই না। আমি চেয়েছিলাম, ডিটেকটিভ হব। মা-বাবার হাত ধরে প্রথম কাজ করি ‘স্বয়ংসিদ্ধা’য়। তখন আমি মাত্র তিন! টানা চার দিন অঝোরে কেঁদেছি। মা-বাবা বুঝিয়ে শান্ত করেছেন। কাজ শুরু করেছি। এখন শ্যুটিং ছাড়া থাকতেই পারি না। লকডাউনে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

রাজ চক্রবর্তী যেটা চেয়েছিলেন, সেটা পর্দায় ফোটাতে পেরেছি।

পড়াশোনা? কোন স্কুলের ছাত্র?

স্যমন্তক: সোনারপুর শিশু নিকেতনে পড়ি। আমি সেটে গিয়েও পড়ি। অনেকেই অবাক হন, এত হট্টগোলের মধ্যে কী করে পড়াশোনা করি! আসলে অভ্যেস করে নিয়েছি। সিনেমা বা ধারাবাহিক যেটাতেই কাজ করি, মা গিয়ে সেটে সবার আগে খোঁজ নেয়, কে কোন বিষয়ে সেরা। স্টার জলসার ‘প্রথমা কাদম্বিনী’তে আমি সতীশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। মা গিয়ে জেনেছেন, হানি বাফনাদা অঙ্কে মাস্টার। ব্যাস, অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব ওঁর কাঁধে। স্কুল থেকেও অনেক সাহায্য পাই। সব টিচাররাই বলেছেন, স্যমন্তক পড়াশোনা ঠিকমতো করে যদি অভিনয় করে তা হলে কোনও আপত্তি নেই।

‘হাবজি গাবজি’র সেটে কে, কী পড়ালেন?

স্যমন্তক: বেশির ভাগ শ্যুট সিকিমে। তাই বই নিয়েই যাইনি (হাসি)! মনের সুখে শ্যুটিং করেছি। ঘুরেছি খুব। এক বার অসুস্থও হয়ে পড়েছিলাম। ওখানে টাওয়ার ছিল না। বাড়ির লোকেরা কিছুতেই ফোনে পাচ্ছিলেন না। আমি কথা বলতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে ভীষণ মনখারাপ। তার থেকে বমি, মাথাঘোরা। বাড়ির ফোন আসতেই আমি একদম ফিট!

অনেকদিন অভিনয়ে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রুক্মিণী মৈত্রের সঙ্গে কাজ করেছ। স্কুলের বান্ধবীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়?

স্যমন্তক: ১০ বছর হয়ে গেল অভিনয় করছি। আগে বন্ধুরা প্রায়ই বলত, আমাদের জন্য ছবি, অটোগ্রাফ এনে দিবি? আমরাও তোর মতো অভিনয় করব। শুনে মজা লাগত। ‘হাবজি গাবজি’তে অভিনয়ের কথা বন্ধুদের থেকে প্রথম জেনেছি। দার্জিলিংয়ে বেড়াতে গিয়েছিল ওরা। রাজ আঙ্কল সিকিম যাচ্ছিলেন রেকি করতে। ট্রেনে আলাপ হওয়ার পরে আমার নাম বলতেই আঙ্কল বলেন, তোমাদের বন্ধু আমার নতুন ছবিতে অভিনয় করবে। শুনেই বাকিরা বলল, আমাদের নিয়ে যাবি সিকিমে? বললাম, হ্যাঁ, সেটাই বাকি! আর আমাদের কো-এড স্কুলে 'বন্ধু-বান্ধবী' বলে কিছু নেই। আমরা সবাই বন্ধু।

শুভশ্রীদি মা হওয়ার খবর জানিয়েছেন? ইউভানকে দেখেছ?

স্যমন্তক: হ্যাঁ জানি। সেটে তো শুভশ্রীদি আমায় বলতেন, বাচ্চাদের মোবাইল ব্যবহার করা উনি একদমই পছন্দ করেন না।

পরমদাকে মারতে গিয়ে কষ্ট হয়েছিল?

স্যমন্তক: পাঁচ বার টেকের পর ওকে হয়েছিল শট। কিছুতেই পারছিলাম না। শেষে পরমদা বললেন, তুই জোরেই মার। লাগবে না। মারার পর দেখি কাচ ভেঙে গিয়ে পরমদার সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তাও দাদা কিচ্ছু বলেননি, বকেননি।

আর সৌমিত্রদাদু? কী শিখলে কিংবদন্তি অভিনেতার থেকে?

স্যমন্তক: দুটো ছবি করেছি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ‘বরুণবাবুর বন্ধু’ আর ‘মায়াজালের খেলা’। দুটোতেই পর্দার বাইরেও আমি যেন দাদুর সত্যিকারের নাতি। হাতে ধরে চোখের কাজ, হাঁটাচলা, অভিনয়-- সব শিখিয়েছেন। কাজ না থাকলে গল্প শোনাতেন। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবির সেটে কী কী মজার কাণ্ড ঘটেছিল, বলেছেন। জানো, আমি দাদুর এক ঘণ্টার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম একটি চ্যানেলের হয়ে। নিজেই প্রশ্ন সেট করেছিলাম। দাদু অতক্ষণ ধরে বসে উত্তর দিয়েছিলেন। খুব মিস করছি দাদুকে।

‘হাবজি গাবজি’ করে তোমার অভিজ্ঞতা?

স্যমন্তক: ট্রেলার রিলিজের পর দেখি মা-বাবা মোবাইল হাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন সবাইকে লিঙ্ক পাঠাতে। আমি চুপচাপ মাঝখানে বসে। একদম সিনেমার মতো। শেষে বলেই ফেললাম, তোমরাই তো দেখি অনীশের মা-বাবা হয়ে গেলে! সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বসে আছ।

চুপচাপ বসে কই! স্যমন্তক তো নতুন ছবি সাইন করে ফেলল?

স্যমন্তক: হ্যাঁ, ভাইফোঁটার দিন। বাংলাদেশ নিয়ে ছবি। আমাকে বাঙাল ভাষা শিখতে বলেছে। বাংলাদেশে শ্যুটিংও হবে। খুব মজা হচ্ছে। মা-বাবার কাছে শুনেছি, আমার দেশ রাজশাহী। (তার পরেই সচেতন) আর কিচ্ছু বলা যাবে না। পরের এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউয়ে সব বলব, প্রমিস।

অন্য বিষয়গুলি:

Interview Child Actor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy