মিমি দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আবার তা হলে ধারাবাহিকে ফিরলেন।
মিমি: (হেসে) না ফেরার কোনও কারণ নেই। কারণ, গল্পটা ভাল। প্রযোজকের ঘর আমার পরিচিত। এখন শুধু দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষা।
প্রশ্ন: স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’ ধারাবাহিকে আপনার প্রথম কাজ।
মিমি: (হেসে) প্রায় ১৮ বছর আগের কথা। এখনও ভাবলে মনে হয়, যেন দিন কয়েক আগের ঘটনা। মাঝে প্রচুর কাজ করেছি। কিন্তু যোগাযোগ ছিল। এই প্রযোজনা সংস্থায় আবার প্রায় ১০ বছর পর ফিরলাম।
প্রশ্ন: দশ বছর আগেও বাংলা ধারাবাহিক নারীকেন্দ্রিক ছিল, আজকেও তাই। অভিনেত্রী হিসেবে কোনও বিবর্তন কি চোখে পড়েছে?
মিমি: ধারাবাহিকে কাজের ধরন আমূল বদলে গিয়েছে। কিন্তু দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি বা তাঁদের পছন্দ কিন্তু এখনও একই রয়ে গিয়েছে। কারণ মাঝে নির্মাতারা ভিন্ন স্বাদের ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। সেগুলো সেই ভাবে দর্শক পছন্দ করেননি। যেমন আমার অভিনীত ‘মেয়েবেলা’ ধারাবাহিকের বিষয়টা আর পাঁচটা ধারাবাহিকের থেকে একটু আলাদা ছিল।
প্রশ্ন: নতুন ধারাবাহিক ‘যোগমায়া’ সেখানে কতটা আলাদা?
মিমি: একটা পরিবারের লড়াইয়ের গল্প। আর পাঁচটা ধারাবাহিকের থেকে একটু আলাদা। প্রতিটা চরিত্রের একটা আলাদা গল্প রয়েছে। আমার চরিত্রটাও ইতিবাচক।
প্রশ্ন: কী রকম?
মিমি: খুব বেশি এখনই খোলসা করতে চাইছি না। সমাজে অগণিত শিক্ষিত মহিলা গৃহবধূ। তাঁরা কিন্তু পরিবারের কথা ভেবেই বেরিয়ে আসতে পারেননি। তাঁদের লড়াই দর্শকদের পছন্দ হবে।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকে প্রায়শই এক জন মহিলার বিরুদ্ধে অপর এক জন মহিলাকে লড়তে দেখা যায়। বিষয়টাকে কী ভাবে দেখেন?
মিমি: এটাকে আমি খুব একটা নেতিবাচক দিক থেকে দেখতে চাই না। কারণ বাস্তবেও তো এক জন মহিলা আর এক জনের সঙ্গ লড়াই করেন।
প্রশ্ন: এখন যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, অথচ ধারাবাহিকে কিন্তু যৌথ পরিবারের গল্প দর্শক দেখছেন।
মিমি: হ্যাঁ। দেখুন, নারী ক্ষমতায়ন বা পারিবারিক ঐক্যের গল্প দর্শক সব সময়েই দেখতে পছন্দ করেন। আমার মনে হয় আর একটু সহনশীলতা এবং স্বার্থত্যাগ করতে পারলে আমাদের চারপাশে অনেকেই যৌথ পরিবারে থাকতে পারতেন। আমরা হয়তো এখন একটু বেশিই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছি, তাই ‘নিউক্লিয়ার’ পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ আমরাই পারিবারিক ছবির গল্প দেখতে পছন্দ করি। ‘হাম আপকে হ্যায় কউন’ বা ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ এখনও আমার দেখতে ভাল লাগে।
প্রশ্ন: আপনি ও আপনার স্বামী (ওম সাহানি) দু’জনেই এখন ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। দম্পতি হিসেবে কতটা উপভোগ করছেন?
মিমি: প্রচণ্ড। ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে বহু সিনেমায় অভিনয় করেছি। কিন্তু বড় হয়ে আবার একটানা ধারাবাহিকেই অভিনয় করেছি। প্রতি দিনের অভিনয় বলে ধারাবাহিকটা বেশি প্রিয়।
প্রশ্ন: কাজের ব্যস্ততায় একে অপরকে সময় দিতে পারছেন?
মিমি: ওমের ব্যস্ততা একটু বেশি। তুলনায় আমার চাপ একটু কম। তাই আমাদের পরিবারের তরফেও সকলেই বলেছেন, যেন আমি নিজে সংসারটাকে আগলে রাখি। তাই আমার দায়িত্বও বেশি। সেই চেষ্টাই করছি।
প্রশ্ন: কখনও মনে হয় না যে ওমের থেকে আপনার দায়িত্বের পাল্লাটা বেশি ভারী হয়ে গিয়েছে?
মিমি: না, সেটা মনে হয় না। কারণ মহিলা হিসেবে শুরু থেকেই জানতাম, দায়িত্বটা আমার উপরেই আসবে। এটা না আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর এই দায়িত্বটা কিন্তু সময়ের সঙ্গে মহিলারা সামলেও নিতে পারেন। আমি নিজে দেখেছি অভিনেত্রীরা সাংসারিক কাজ সামলেই দিনের পর দিন শুটিং ফ্লোরে আসছেন। শুটিং ফ্লোরে বসেই সিসিটিভি ক্যামেরায় বাড়িতে কী কী কাজ চলছে তার খোঁজ রাখছি। আমি ছোট থেকেই মাল্টি টাস্কিং করতে পারি। ছেলেরা কিন্তু সেখানে দেখি, অনেকটাই চাপমুক্ত। দিব্যি বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়ে শুটিং করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন: মাল্টি টাস্কিংয়ের কথা বলছিলেন। এই গুণটা কী ভাবে আয়ত্ত করলেন?
মিমি: এটা আমার মায়ের থেকে পাওয়া। ছোট থেকেই মাকে একান্নবর্তী পরিবারের দায়িত্ব সামলাতে দেখেছি। মা বরাবরই বলেন, যে সব কিছু করতে জানতে হবে। তাই আমিও যে নির্দিষ্ট কিছু করতে পারব না, সে রকম ধারণা কখনও মনের মধ্যে পুষে রাখি না। মা আমার জীবনে অন্যতম বড় অনুপ্রেরণা। ঈশ্বরের কাছে এখন শুধু একটাই প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন সংসার এবং পেশা সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার শক্তি দেন।
প্রশ্ন: একই পেশায় কর্মরত দম্পতিদের নিয়ে বিভিন্ন মতামত শোনা যায়। এটা ভাল না কি খারাপ?
মিমি: (হেসে) ওম এটা আরও ভাল বলতে পারবে। কারণ আমি তিন বছর বয়স থেকে অভিনয় করছি। তাই কাজকে আমি কখনও আলাদা ভাবে দেখিনি। পড়াশোনার মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে অভিনয় করেছি।
প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে অন্যের থেকে কম বা বেশি কাজ পাওয়া নিয়ে কোনও মতানৈক্য হয় নাকি?
মিমি: আমি এ রকম ধারণায় বিশ্বাস করি না। ওমের মধ্যে তো এ রকম কোনও মনোভাব কোনও দিনই দেখিনি। ও খুবই সরল মনের মানুষ।
প্রশ্ন: ওম আর আপনি তো খুব ভাল নাচেন। সম্প্রতি ওমের সঙ্গে মনামীর নাচের দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। হিংসে হয় না?
মিমি: (প্রচন্ড হেসে) হিংসের কোনও প্রশ্নই নেই। কেন হিংসে করব বলুন তো! সে তার জায়গায়, আমি আমার। অন্য কাউকে ছোট না করেই বলছি, আমার সঙ্গে ওমের রিল এতটাই ভাইরাল হয় যে, আলাদা করে দুশ্চিন্তা হওয়ার কোনও কারণ নেই। সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবির গানে আমাদের রিল এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে নির্মাতারা পর্যন্ত সমাজমাধ্যমে আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অন্য যে কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে রিল তৈরি করলেও আমার আর ওমের রিলের গ্রহণযোগ্যতা একই রকম থাকবে।
প্রশ্ন: অভিনয় নিয়ে ওম কোনও পরামর্শ দেন না?
মিমি: দেখুন, ও শুধু একটাই কথা বলে যাতে বেশি চাপ নিয়ে কাজ না করি। পাশাপাশি ভাল অভিনেত্রী হিসেবে আমি যেন আরও বেশি সংখ্যক কাজ করি তার জন্য ও আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করে।
প্রশ্ন: সেই জন্যই কি মাঝে বিরতি নিয়েছিলেন?
মিমি: হ্যাঁ। কারণ ভাল কাজ ছাড়া আমি করতে চাই না। তাতে কাজের সংখ্যা কম হোক, ক্ষতি নেই। কিন্তু দর্শক যেন কোনও অভিযোগ না করতে পারেন, সেটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। দেখুন, ১৯৯৭ সালে ‘জন্মভূমি’ সিরিয়ালের মাধ্যমে আমার অভিনয়ে হাতেখড়ি। আমার সময়ে যাঁরা শুরু করেছিলেন, আজকে তাঁদের মধ্যে অনেকেই হারিয়ে গিয়েছেন। লকডাউন ছাড়া সেই ভাবে বিরতি নিইনি। ভাল কাজের খিদেটা চিরকালই রয়েছে।
প্রশ্ন: সামনে নতুন কোনও কাজ?
মিমি: একটা ছবি এবং বেশ কয়েকটা ওয়েব সিরিজ় মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই মুহূর্তে সিরিয়াল নিয়েই ব্যস্ত থাকব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy