অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য।
প্র: আবার গোয়েন্দার চরিত্র এবং আরও একটি পিরিয়ড ড্রামা। ব্যোমকেশের পর এ বার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোয়েন্দা, মহিমচন্দ্র।
উ: ‘ডিটেকটিভ’ গল্পটার সঙ্গে একটা সুখস্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে আমার। রবীন্দ্রভারতীতে গ্র্যাজুয়েশনের সময়ে আমাদের ড্রামা ডিপার্টমেন্ট থেকে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ‘ডিটেকটিভ’ অভিনীত হয়েছিল, সেটায় ছিলাম আমি। স্ক্রিপ্ট শোনার পরে বুঝতে পারলাম, গল্পটা একেবারেই ভুলে গিয়েছি। আবার পড়লাম মূল কাহিনিটা। এর আগে ‘ল্যাবরেটরি’, ‘মানভঞ্জন’ করেছি, দুটোই পিরিয়ড ড্রামা। এ ছাড়া নাটকের একটা প্র্যাকটিস তো ছিলই। পুরাতনী সমাজের বাঙালির শরীরী ভাষা, মুখের ভাষা, তার যে গ্র্যান্ডনেস, সেটা ফুটিয়ে তোলার প্রতি আমার নিজেরও বিশেষ ভাল লাগা রয়েছে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ের ভক্ত ছিলাম এত দিন। ওঁর পরিচালনায় প্রথম বার কাজ করে দারুণ লেগেছে।
প্র: দু’দিন শুটিং হয়েই অতিমারির জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা। ফ্লোরে ফেরার সময়ে কি ভাবনা হচ্ছিল?
উ: একটু ভয় ছিল, অভিনয়ে ফেরা নিয়ে। মনে হত, এতটা বিরতির পরে অভিনয়টা ভোঁতা হয়ে যাবে না তো? এটাও তো এক্সারসাইজ়ের মধ্য দিয়ে জ্যান্ত রাখতে হয়। তিন মাস পরে জুনে ফ্লোরে ফিরে বুঝলাম, নাহ্, ম্যানেজ দেওয়া যাচ্ছে। ‘ডিটেকটিভ’-এর ডাবিং করতে গিয়ে আমি নিজেই দু’-তিনটে জায়গায় বুঝতে পেরেছি, লকডাউনের পরে আর আগে শুট করা অংশের তফাত। তবে তা খুব সূক্ষ্ম, দর্শক আশা করি বুঝতে পারবেন না (হাসি)! স্ক্রিপ্টেও সে ভাবে কোনও বড়সড় বদল আনতে হয়নি। শুধু রাতের দৃশ্য শুটের সময় সীমিত হওয়ায় কয়েকটা নাইট সিকোয়েন্স কমাতে হয়েছে।
প্র: লকডাউন তার মানে ভালই প্রভাব ফেলেছে আপনার উপরে...
উ: এই সময়টা শুধু তো বাড়িতে বসে থাকাই নয়, সর্বক্ষণ কাজ করা একটা দুশ্চিন্তা। শরীর নিয়ে, পরিবার নিয়ে, অনিশ্চয়তা নিয়ে। চিকিৎসার খরচের বহর দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি। নিজে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় জানি, এক ধাক্কায় লাখ খানেক টাকা বেরিয়ে যাওয়ার মানে কী। মধ্যবিত্ত তো প্ল্যান করে বাঁচে। তার উপর যা ঘটে চলেছে আমাদের দেশে, মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখাই দায়!
প্র: ব্যোমকেশ সিরিজ়ের আগামী সিজ়নের শুট শুরু হয়ে গেল। সেটে ব্যক্তিগত ভাবে সাবধানতা নিচ্ছেন?
উ: অযথা ভয় না পেয়ে, যতটা সম্ভব সাবধানতা মেনেই চলার চেষ্টা করছি। শুটিংয়ে ফ্লাস্কে গরম জল, বেটাডিন ক্যারি করা, দু’-তিনবার গার্গল করে নেওয়া... এই আর কী।
প্র: ‘ড্রাকুলা স্যার’ পোস্ট প্রোডাকশনে, ‘গোলন্দাজ’-এর শুটিং বাকি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার পরবর্তী সিরিজ়ের পরিকল্পনা কি শুরু করে দিয়েছেন?
উ: ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ নিয়ে সৃজিতদা আমাকে বলেছে ঠিকই, কিন্তু এ নিয়ে কথাবার্তা এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। যেহেতু একটু বড় বহরে শুটিং করতে হবে, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কিছু প্ল্যান করা যাচ্ছে না। ‘গোলন্দাজ’-এর দ্বিতীয় পর্বের শুট শুরু হলে করব। আপাতত ব্যোমকেশ করছি। থিয়েটারটা তো একদম বন্ধ হয়ে গেল। ‘তিতুমীর’, ‘পন্তু লাহা ২.০’ চলছিল। সম্প্রতি সুমন মুখোপাধ্যায় আর শুভদীপ গুহর সঙ্গে একটা নাটকের কাজ শুরু করেছি।
প্র: লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিও বেড়ে গিয়েছে, ট্রোলিংও। কী ভাবে সামলাচ্ছেন?
উ: আমি সার্কাজ়মের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি। সেটাতে কেউ অপমানিত হতে পারেন। আমি একমাত্র টুইটারটাই নিজে হ্যান্ডল করি। এক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতাম। এসে দেখলাম, কত কিছুই মিস আউট করে যাচ্ছিলাম। নানা মানুষ এত রকমের কথা বলছেন। বড় মাপের একজন শিল্পী কিছু লিখছেন, তাঁর পোস্টে আপাদমস্তক গালাগালি দিয়ে লোকে কমেন্ট করছে! আমাদের নাটকে একবার একটা গান বাঁধা হয়েছিল, যার প্রথম লাইন ছিল, ‘ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে গিয়েছে’। এখানেও ব্যাপারটা তাই। আমার কাছে কাউকে গালাগালি দেওয়ার চেয়ে সার্কাস্টিক হওয়াটা বেটার অপশন। আবার কেউ যখন একই রকম রসবোধ নিয়ে জবাব দিয়েছে, সেটাও অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি।
প্র: এই পরিস্থিতিতে থিয়েটার, সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
উ: এর আগেও প্যানডেমিক এসেছে, তখনও থিয়েটার, ফিল্ম ছিল। তখন কি অভিনেতারা মাস্ক পরে শুটিং করতেন? তা তো নয়। এখন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই অন্য ভাবে ভাবতে হচ্ছে, তবে সারভাইভ করাটাই আসল। এত বছরের একটা অভ্যেস এই ক’দিনে পাল্টে যেতে পারে না। বৃহৎ সময়ের আঙ্গিকে ভাবলে ক্ষুদ্র কালখণ্ড। কিন্তু এই সময়টা যাঁরা পার করছেন, তাঁদের জন্য কঠিন সময়। থিয়েটারকর্মীদের জন্য আমাদের ফান্ড থেকে সাহায্য এখনও চালিয়ে যাচ্ছি।
প্র: এসভিএফের চুক্তির বাইরে কবে কাজ করতে দেখা যাবে আপনাকে?
উ: মিনার্ভা রেপার্টরির সঙ্গেও আমার চুক্তি ছিল, এসভিএফ-এর সঙ্গেও রয়েছে। মিনার্ভা রেপার্টরিতেও সারা জীবন ছিলাম না, এসভিএফেও থাকব না। তাঁরা নিজেও হয়তো সেটা চাইবেন না। একটা সময়ের পরে তো তাঁরা বলবেন, ‘এ বার তুমি বাইরে কাজ করতে পারো।’ কিংবা আমিই বলব, এ বার আমি নিজের মতো করে কাজ করতে চাই। বেঁচে থাকলে, সেই সময় তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy