Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Swagata Mukherjee

ফেভারিটিজম একলব্যের যুগ থেকে হয়ে আসছে: স্বাগতা

শাহরুখকে তো কেউ জিজ্ঞেস করে না, আপনি শুধুই নায়ক কেন? ২৫ বছর ধরে নাগাড়ে খলনায়িকা! এটাই আমার পাওয়া।

এতগুলো বছর ধরে খলনায়িকা করেও একঘেয়েমি আসেনি। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

এতগুলো বছর ধরে খলনায়িকা করেও একঘেয়েমি আসেনি। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

উপালি মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৫৮
Share: Save:

আপনি শুধুই খলনায়িকার চরিত্র করবেন?
স্বাগতা: শাহরুখকে তো কেউ জিজ্ঞেস করে না, আপনি শুধুই নায়ক কেন? ২৫ বছর ধরে নাগাড়ে খলনায়িকা! এটাই আমার পাওয়া।

সেলিব্রেশন?
স্বাগতা: আমি নিজের জন্মদিন পালন করতে পারি। ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ‘অভিনয়ের ২৫ বছর’ উদ্‌যাপন? বিশ্বাস করুন, পারব না। মনে রাখার মতো কাজ করলে ইন্ডাস্ট্রি বা অনুরাগীরা নিজে থেকে পালন করবেন। করছেন না মানে হয়ত কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে।

আড়াই দশক ধরে ‘নেগেটিভ’ রোলে দেখতে দেখতে দর্শকেরা বোধহয় বোর...
স্বাগতা: দর্শকেরা ক্লান্ত হননি। হলে ফিডব্যাক পেতাম। সোশ্যালে মন্তব্য আসত। আমিও কখনও এক প্যাটার্নের নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করিনি! দেবাংশু সেনগুপ্তের ‘বহ্নিশিখা’য় আমি যেরকম, ‘তমসা রেখা’য় সম্পূর্ণ আলাদা। ‘দুর্গা’, ‘ঝাঁঝ লবঙ্গ ফুল’, ‘রাণু পেল লটারি’ প্রত্যেকটি ধারাবাহিকে আমার সাজ, চরিত্রে কোনও মিল নেই। ফলে, বোরডমে ভোগার কোনও অবকাশও নেই।

আপনি ক্লান্ত?
স্বাগতা: প্রশ্নটা শুনতে শুনতে বোর। দুটো কারণে এতগুলো বছর ধরে খলনায়িকা করেও একঘেয়েমি আসেনি। এক, নানা রকম পদ রাঁধা আর যে কোনও একটি বিশেষ উপকরণের পদ রাঁধা বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমি সেটাই করি। অর্থাৎ, নেগেটিভিটির নানা শেড ফুটিয়ে তুলি আমার চরিত্রে। যেটা করা খুব সহজ নয়। দুই, নেগেটিভও কিন্তু আসলে পজিটিভ। সে নিজের জন্য বা সন্তানের ভালর জন্য তথাকথিত ‘খারাপ কাজ’ করছে। এটাই স্বাভাবিক!

এ তো একলব্যের আমল থেকে হয়ে আসছে! গুরু দ্রোণাচার্য কি এমনি এমনি তাঁর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়েছিলেন? ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

‘দার্শনিক’-এর মতো কথা বলছেন!
স্বাগতা: (হেসে ফেলে) ‘দর্শন’ আমার বিষয় তো! ফিলজফিতে এমএ-র পর খুব ইচ্ছে ছিল অধ্যাপক হব। মেঘনাদ ভট্টাচার্য ‘দায়বদ্ধ’ নাটকে বদলি অভিনেত্রী হিসেবে ডাকতেই হয়ে গেলাম অভিনেত্রী। ‘বাসভূমি’ নাটক থেকে পাকাপোক্ত এই পেশায়। যা স্বপ্নেও কোনও দিন ভাবিনি। ওই জন্য আমার কোনও পোর্টফোলিও নেই। পিআর খুব খারাপ।

দেশ, ইন্ডাস্ট্রি এই মুহূর্তে প্রচণ্ড নেতিবাচক। সুশান্ত সিংহ রাজপুত, কঙ্গনা রানাউত, নেপোটিজম নিয়ে। আপনার ‘দর্শন’ কী বলছে?
স্বাগতা: এ তো একলব্যের আমল থেকে হয়ে আসছে! গুরু দ্রোণাচার্য কি এমনি এমনি তাঁর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়েছিলেন? প্রিয় শিষ্য অর্জুনের থেকে যাতে একলব্য সেরা না হয়ে যান, তার জন্য। এটাই বাস্তব। কেউ কোনও কাজ করলে পছন্দের, প্রিয়জনদেরই ডাকেন। যাতে কমফোর্ট জোন তৈরি হয়। কাজটাও ভাল হয়। আমিও একই প্রযোজনা সংস্থায় একের পর এক কাজ করে গিয়েছি। সেটাও তাহলে ফেভারিটিজম! ওঁরা কিন্তু অভিনয় দেখে ডেকেছেন। এতে অন্যায় তো কিছু দেখি না! তবে কাউকে বসিয়ে দিয়ে পছন্দের অ-যোগ্য মানুষকে কাজ পাইয়ে দেওয়াটা অবশ্যই অন্যায়।

কখনও এর শিকার হয়েছেন?
স্বাগতা: অনেক সময় মনোনীত হয়েও বাদ পড়েছি। তবে সেটা গ্রুপিজম বা ফেভারিটিজমের জন্য নয়।

কারণটা কী?
স্বাগতা: ওই চরিত্রের যোগ্য নই, তাই। যদি দেখতাম আমার থেকে নীচু মানের কোনও অভিনেত্রীকে নেওয়া হয়েছে তাহলে অন্যায় হত। সেটা হয়নি আজও।

লকডাউনের সময়টুকু বাদে আমি আর স্বামী ঋষি মুখোপাধ্যায় অভিনয় শেখাচ্ছি প্রতি শনি, রবিবার। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

অন্যদের কত অভিযোগ! আপনি এত পজিটিভ?
স্বাগতা: (হো হো হাসি) সবটাই আমার জীবন দর্শন, গান আর আমার একাডেমির জন্য। নিজের লিমিটেশন জানি। তার মধ্যেই ব্যালান্স করে চলি। মঞ্চে গানের অনুষ্ঠান করি, গানের অ্যালবাম হয়েছে। খুব তৃপ্তি পেয়েছি। লকডাউনের সময়টুকু বাদে আমি আর স্বামী ঋষি মুখোপাধ্যায় অভিনয় শেখাচ্ছি প্রতি শনি, রবিবার। একটি ক্লাসে আট জন ছাত্র। এখন সেই সংখ্যা ছয়। যাঁরা সত্যিই অভিনয় ভালবাসেন, শিখতে চান তাঁরা আসছেন। গত আট বছর ধরে এ ভাবেই রবিবার টু রবিবার কাজে ডুবে থাকি। কাজ বাদে সারাক্ষণ হইহই করি। শ্বশুরবাড়ি থেকেও প্রচণ্ড স্বাধীনতা পেয়েছি। ঋষি আর আমি একে অন্যকে স্বাধীনতার দুটো ডানা উপহার দিয়েছি। যার জোরেই হয়ত এত ভাল আছি।

কী কী শেখান একাডেমিতে? হঠাৎই শুরু করলেন এই কাজ?
স্বাগতা: দ্বিতীয় প্রশ্নের আগে উত্তর দিই। ‘ভায়োলিন ব্রাদার্স’-এর জ্যোতিশঙ্কর রায় এই উদ্যোগের সঙ্গে ভীষণ ভাবে জুড়ে রয়েছেন। আমি আর ঋষি, আমরা অনেকদিন ধরেই ওয়ার্কশপ করাই, গ্রুমিং করাই। উনি আমাদের বললেন, তোমরা একটা নিজস্ব একাডেমি কর। সেই শুরু। অভিনয় থেকে ডাবিং, সব শেখানো হয় এখানে। স্বচ্ছ্বতা বজায় রাখতে আমরা ছাত্রছাত্রীদের মিথ্যে কাজের গ্যারান্টি দিই না। খুব নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় অডিশনে পাঠাই। সাম্প্রতিক ‘ফিরকি’ও গ্রুম হয়েছে আমাদের একাডেমি থেকেই।

পর্দায় হাড়হিম খলনায়িকা। ব্যক্তিগত জীবনে কোনও দাগ নেই!
স্বাগতা: আমি খুব সোজা রাস্তায় চলতে পছন্দ করি। কেউ আমায় গড়িয়াহাটে যাওয়ার অচেনা শর্টকার্ট রাস্তা দেখালেও যাব না। চেনা বড় রাস্তা ধরেই হাঁটব। কারণ, ওতে বিপদের সম্ভাবনা কম।

আরও পড়ুন: কী কারণে আর্টিস্ট ফোরাম বেরিয়ে গেল ফেডারেশনের ছত্রচ্ছায়া থেকে?

আরও পড়ুন: রিয়ার বয়ানে প্রথম সারির বলি অভিনেতার নাম! মুখোমুখি জেরা ভাই-বোনকে

অন্য বিষয়গুলি:

Swagata Mukherjee TV Celebrity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy