—ফাইল চিত্র।
প্রিয়ঙ্কা ঝা?
অনেক চেষ্টা করেও নামটা মনে করতে পারলেন না চঞ্চল ভট্টাচার্য। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রাক্তন কোচ।
প্রাক্তন ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত-রও একই অবস্থা। ধোনির পুরোনো বন্ধু, তবু মাহির যে এই নামে কোনও গার্লফ্রেন্ড ছিল, তা জানতেন না।
টিম ইন্ডিয়ার সদস্যরাও নাকি পর্দায় প্রিয়ঙ্কাকে দেখে চমকে গেছেন। ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ দেখার পর কয়েকজন জুনিয়র আবার সিনিয়রদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘‘ইয়ে মাহি ভাই কী গার্লফ্রেন্ড থি?’’
প্রশ্নটা শুনেই মুচকি হাসলেন পর্দার প্রিয়ঙ্কা ঝা। আসলে, দিশা পাটানি।
শপিং মলের ফুড কোর্ট থেকে টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুম—এই মুহূর্তে বছর একুশের এই মেয়েই দেশের টকিং পয়েন্ট।
দিশা নিজে অবশ্য শ্যুটিং শুরুর দিনকয়েক আগেও জানতেন না যে, ধোনির জীবনে সত্যিই কোনও প্রিয়ঙ্কা ছিলেন। ‘‘বরাবরই সাক্ষীর নাম শুনেছি। তাই প্রথম যে দিন পরিচালক নীরজ পাণ্ডে চরিত্রটির কথা বললেন, আমি চমকেই গিয়েছিলাম। বিশ্বাসই হয়নি যে ধোনি স্যর-এর কোনও গার্লফ্রেন্ড ছিল,’’ মুম্বই থেকে আনন্দplusকে বলছিলেন দিশা।
শ্যুটিং চলাকালীন একবারও ধোনির সঙ্গে দেখা হয়নি। পরিচালক নীরজ পাণ্ডে বারণ করেছিলেন কোনও বাড়তি হোমওয়ার্ক করতে। শুধু একটাই নির্দেশ ছিল—গো উইথ দ্য ফ্লো। স্রোতের সঙ্গে ভাসো।
এবং শ্যুটিং চলাকালীন সেটাই অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন দিশা। পরিচালকের নির্দেশ মতো ভেঙেছেন নিজেকে, কিন্তু একবারও চেষ্টা করেননি প্রিয়ঙ্কার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। ছবির স্ক্রিপ্টের দায়িত্বে ছিলেন প্রিয়ঙ্কার দাদা দিলীপ ঝা। কথা বলেননি তাঁর সঙ্গেও । জানতে চাননি ঠিক কেমন ছিলেন বাস্তবের প্রিয়ঙ্কা, যাঁর পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর ডিপ্রেশনে চলে যান দেশের সফলতম ক্যাপ্টেন।
‘‘আমাকে নীরজ স্যর বলেছিলেন কাউকে অনুকরণ না করতে, কারণ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা নষ্ট হয়ে যেত। উনি সেটা চাননি,’’ বলছিলেন দিশা।
‘‘শ্যুটিং শুরুর দিন থেকেই আমি জানতাম যে বাস্তবের প্রিয়ঙ্কাকে অনুকরণ করাটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমি তো জানি ওই বয়সের একটা মেয়ে কী ভাবে, কী চায়, বা কী পছন্দ করে। আমি জাস্ট সেটাই করেছি,’’
বলছিলেন দিশা।
তবু যেন গলায় একটু আক্ষেপের সুর। ‘‘যদি শ্যুট শুরুর আগে ধোনি স্যরের সঙ্গে একবার দেখা হতো, তাহলে হয়ত জিজ্ঞেস করতাম প্রিয়ঙ্কার ব্যাপারে। তখন কারও নিষেধ মানতাম না,’’ একটু হেসে বলছিলেন।
বাস্তবের ধোনি না থাকলেও, সেটে দিশাকে সব সময় ‘গাইড’ করেছেন ঝাঁকড়া চুলের এক যুবক, যাঁকে হুবহু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো দেখতে...
হ্যাঁ, সুশান্ত সিংহ রাজপুত!
‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-তে দিশা ও সুশান্ত
যখন ধোনির চোখে জল
ছবির প্রিমিয়ারের দিন, প্রথম বার ধোনির সঙ্গে দেখা হয়। ক্যাপ্টেন কুল নিজেই আলাপ করেন দিশার সঙ্গে। বলেন, পর্দার প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে বাস্তবের প্রিয়ঙ্কার কোনও তফাত খুঁজে পাননি। “দ্যাট ওয়াজ দ্য বিগেস্ট কমপ্লিমেন্ট,” বলছিলেন দিশা, ছবি শুরুর আগেও যিনি জানতেন না, আদৌ এই চরিত্রটা ঠিকঠাক করতে পারবেন কি না।
একটু থেমে যোগ করলেন, “ধোনি স্যর বললেন যে আমার অভিনয় খুব ভাল লেগেছে। এবং আমার প্রতিটা মুভমেন্ট নাকি ওঁকে আসল প্রিয়ঙ্কার কথা মনে করাচ্ছিল, হি ওয়াজ ইমোশনাল।’’
বাস্তবে প্রিয়ঙ্কার মৃত্যু হয় বন্ধুর বিয়ে থেকে ফেরার পথে। কিন্তু পর্দায়, প্রিয়ঙ্কা পথ-দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নয়া দিল্লিতে শপিং সেরে ফেরার পথে। দিশা অবশ্য, এই তথ্যের ‘সামান্য অদল-বদল’ নিয়ে বেশি ভাবতে রাজি নন। বরং তাঁর সাফল্যের কৃতিত্বটা তিনি দিচ্ছেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে।
প্রতিটা শট-এর আগে, ধোনির বিভিন্ন গল্প শোনাতেন সুশান্ত। নিজের প্রথম ছবিতে যেন স্নায়ুর চাপে না ভোগেন দিশা, নজর রাখতেন সে দিকেও। “সুশান্ত ইজ টেরিফিক। এত ট্যালেন্টেড হওয়া সত্ত্বেও ও প্রতি মুহূর্তে আমার মতো জুনিয়রকে গাইড করে গেছে। প্রতিটা শটের আগে ও আমাকে বুঝিয়েছে কী করে আরও ইমোশনস আনতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হতো যেন আসল ধোনির সঙ্গে শট দিচ্ছি।”
হিরোর নাম জ্যাকি চ্যান…
হোক না এটাই বলিউডে তাঁর প্রথম ব্রেক, ইতিমধ্যেই বিদেশি এক সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করে ফেলেছেন দিশা!
সেই ব্যক্তির নাম, জ্যাকি চ্যান। মাসখানেক আগে যখন ‘কুংফু যোগা’-র ইন্দো-চিন প্রজেক্টের জন্য দিশাকে অফার করা হয়, তখনও বিশ্বাস হয়নি। “প্রথম যখন জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে দেখা হল, কয়েক মিনিট ভীষণ অদ্ভুত লাগছিল। মনে হচ্ছিল, আরে! ছোটবেলায় তো আমি এই ভদ্রলোকের বিশাল ফ্যান ছিলাম,” কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলছিলেন দিশা।
মাইকেল জ্যাকসন, ব্রুস লি-র কথা শুনেছেন। তবে, জ্যাকি চ্যানের সঙ্গে কাজ করার পর, মন্ত্রমুগ্ধ বরেলির মেয়ে। “এত বছর কাজ করার পরেও যে ভাবে এক জন নতুন অভিনেত্রীকে কাজ শিখিয়েছেন সেটা অসাধারণ। যাতে আমি বিদেশে আরও কাজ করতে পারি, সে কারণে ওঁর এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগও দিয়েছেন,” বলছিলেন দিশা।
এক হ্যায় টাইগার
মডেলিং-এর সূত্রে কয়েক বছর আগে যখন বরেলি থেকে মুম্বই আসেন, তখনও জানতেন না, কী ভাবে মুম্বই-য়ের লাইফ স্টাইলের সঙ্গে তাল মেলাবেন। কিন্তু, এখন বলিউডে নাকি দিশার বয়ফ্রেন্ড-দের লিস্টটা বেশ লম্বা। কান পাতলেই যে নামটা প্রথম শোনা যায়, সেটা টাইগার শ্রফের। জ্যাকি শ্রফের পুত্র। যাঁর সঙ্গে হুটহাট বেরিয়ে পড়েন, কিংবা ছুটি কাটাতে যান রিসর্টে।
দিশা নিজে অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন। একটু উত্তেজিত হয়ে জানালেন টাইগার কিংবা সুশান্ত স্রেফ ‘ভালো বন্ধু’। “লোকেরা যা ইচ্ছে ভাবতে পারে। আমার কিছু বলার নেই। আমার জীবন আমি কী ভাবে কাটাব সেটা আমার ব্যাপার,” বলছিলেন রণবীর কপূরের অন্ধ ভক্ত।
একে বিরাট, দুইয়ে সচিন…
যতই ধোনি-ধোনি করুন, তরুণীর পছন্দের প্রথম দুই ক্রিকেটারের লিস্টে ধোনির নাম নেই। তালিকার শীর্ষে বিরাট কোহালি, তার পরেই সচিন তেন্ডুলকর। আর ধোনি?
নেই। তবে, প্রশ্ন করতেই নিজেকে একটু সামলে নিলেন। জোরে হেসে বললেন যে, একটা সময়ে ধোনির হেয়ারস্টাইলের ফ্যান ছিলেন। “ক্যাপ্টেন কুল ইজ ক্যাপ্টেন কুল। ওঁর মতো ব্যক্তিত্ব খুব কম লোকের আছে,” মুচকি হেসে বলছিলেন।
গত বছরের গোড়ায় যখন ‘এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র অডিশনে তাঁকে ডাকেন পরিচালক নীরজ পাণ্ডে, তখন ভাবেননি যে, ছোট একটা চরিত্র এত পরিচিতি দেবে তাঁকে। কিন্তু আজকাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখেন, ফোনের ইনবক্সে জমে রয়েছে অসংখ্য শুভেচ্ছামূলক মেসেজ আর হোয়াটসঅ্যাপ।
“ভাবিনি, এত লোক আমাকে পছন্দ করবেন। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে প্রিয়ঙ্কা বেঁচে থাকলে ভাল হতো। আবার কখনও মনে হচ্ছে আমিই তো প্রিয়ঙ্কা। আমার মধ্যে দিয়েই তো বাস্তবের প্রিয়ঙ্কাকে দেখতে পাচ্ছেন দর্শক। এটা আমাদের ট্রিবিউট,” মৃদু হেসে বললেন দিশা পাটানি।
আসলে, প্রিয়ঙ্কা ঝা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy