Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

হাল না ছাড়ার গল্প

একটা গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ‘প্রিভিলেজড’ শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাটা কি নৈতিক ভাবে ঠিক? সং‌বিধান হয়তো শিক্ষাব্যবস্থায় ভেদাভেদ রাখেনি।

অন্তরা মজুমদার
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

পটনার গণিতবিদ আনন্দ কুমারের লড়াইয়ের গল্প, ‘সুপার থার্টি’ ছবিটির দৌলতে এখন কমবেশি সকলেরই জানা। নিম্নবিত্ত পরিবারের ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র কেমব্রিজের ডাক পেয়েও অর্থাভাবে পৌঁছতে পারেননি তাঁর স্বপ্নের ল্যান্ডমার্কে। কিন্তু তাঁরই মতো অন্যরা, সমাজ ব্যবস্থা যাদের স্বপ্ন দেখাতেও ট্যাক্স বসিয়ে রেখেছে, তাদের জন্য একটা রাস্তা তৈরি করতে লেগে পড়েছিলেন আনন্দ। সেই রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে অবশ্য থইও হারিয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। তাঁর স্বপ্নের বাকি শরিকদেরও ছাড়তে দেননি হাল। বাকিটা তো পাতার পর পাতা সাকসেস স্টোরি, লাইম লাইট, বায়োপিকের সার্থকতা...

‘সুপার থার্টি’ একটা প্রশ্ন খুব সুন্দর করে বুনে দিয়েছে তার ন্যারেটিভের ভাঁজে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ‘প্রিভিলেজড’ শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাটা কি নৈতিক ভাবে ঠিক? সং‌বিধান হয়তো শিক্ষাব্যবস্থায় ভেদাভেদ রাখেনি। কিন্তু বিভেদের যে প্রাচীর পুরনো সংস্কারের গভীরে প্রোথিত, তাকে অস্বীকার করাটা সত্যিই মুশকিল। তাই লুকিয়ে-চুরিয়ে স্বপ্ন দেখলেও, না-খেয়ে-থাকা-পেটের কাছে তাকে সফল করতে পারাটা অধরাই থেকে যায়। আনন্দ কুমার সেই অসাধ্যকে চূর্ণ করেছেন। বিপদের মুখে পড়েও শক্ত হাতে জমি আঁকড়ে রেখেছেন। কিন্তু বিপদটা কী? এডুকেশন মাফিয়া এবং রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার সামাজিক বিপদ, যা আমরা চোখ বুজে থাকলেও সদা জাগরূক। ‘সুপার থার্টি’ এই জায়গাগুলোকেও দাগিয়ে দিয়েছে তার চিত্রনাট্যে। দেখতে দেখতে রেগেও উঠতে পারেন।

তবে আনন্দ কুমার কি সর্বতো ভাবে বিতর্কমুক্ত? এই প্রশ্নের জায়গাটাই রাখা হয়নি ছবিতে। সমাজের চোখে যিনি নায়ক, তাঁকে ‘ভিলিফাই’ করার চেষ্টা চলতেই পারে। সেই অসৎ চেষ্টা তো সৎ উদ্দেশ্যকে নাকচ করতে পারে না। তা হলে ভয়টা কোথায়? তা ছাড়া বায়োপিকে নায়ককে শুধু ‘গ্লোরিফাই’ করে গেলে, তিনি বোধহয় রক্তমাংসের মানুষের কাছে ততটাও বিশ্বাসযোগ্য হন না!

সুপার থার্টি পরিচালনা: বিকাশ বহেল অভিনয়: হৃতিক রোশন, ম্রুণাল ঠাকুর, পঙ্কজ ত্রিপাঠী ৬/১০

যাই হোক... মূল প্রশ্নটা ছিল, এই গল্পকে পর্দায় কতখানি সজীব করে তুলতে পারবেন হৃতিক রোশন? তিনি পেরেছেন। নিজেকে উজার করেই পেরেছেন। আনন্দ কুমারের অভিব্যক্তি, শরীরী ভাষা সবটাই নিখুঁত ফুটিয়ে তুলেছেন। চরিত্রটির জন্য যে বড্ড পরিশ্রম করেছেন, সেটাও খুব স্পষ্ট ছিল তাঁর অভিনয়ে। কিন্তু মেকআপের সাহায্যে চেহারায় পোড়া ভাব আনাটা চোখে লাগার মতো। ছবির প্রথমার্ধে ঠিক যতটা চোখে লাগার মতো উপস্থিতি নায়িকা ম্রুণাল ঠাকুরের। তবে রক্তদান শিবিরে দু’জনের প্রেমের ছোট্ট শট মিষ্টি। দুর্নীতিপরায়ণ নেতা হিসেবে পঙ্কজ ত্রিপাঠী অবশ্য অনবদ্য!

কিন্তু বাড়তি আবহ, অপ্রয়োজনীয় আইটেম ডান্স, অতিনাটকীয় সিকোয়েন্স, আজগুবি ক্লাইম্যাক্স এ রকম উত্তরণের কাহিনিতে উটকো মেদের মতো ঠেকে। সদ্যই বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মুক্তিকামী কিছু মানুষের চোখে রূপকথার পরশ বুলিয়ে দেওয়ার গল্প শুনিয়েছিল ‘আর্টিকল ফিফটিন’। পরিচালক বিকাশ বহেলের ছবিটি কতকগুলো অনাবশ্যক অলঙ্কার জুড়ে বাস্তব থেকে মাঝে মাঝেই সরে গেল। অবশ্য কিছু সংলাপ এবং ছবির সিনেমাটোগ্রাফি মনে রেখে দেওয়ার মতো।

সুতরাং বলিউডি ত্রুটিগুলো বাদ দিলে মানবতার একটা পাঠ সত্যিই মনে করিয়ে দেয় এই শিক্ষকের বায়োপিক। কোনও বাধাই বড় নয়, যদি উদ্দেশ্য মহৎ হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Super 30 Hrithik Roshan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE