লড়াইয়ে সাধারণ-সেলেব মিলেমিশে একাকার।
সংক্রমণে ধুঁকছে গোটা দেশ। প্রত্যেকে লড়ছেন নিজেদের মতো করে। পাশাপাশি, লড়াইয়ের রসদ জোগাচ্ছেন চেনা-অচেনা সকলকে। যাঁর অক্সিজেন লাগবে, তাঁকে সিলিন্ডারের হদিশ দিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ বা হাসপাতালের বেডের খবর জানাচ্ছেন। কখনও বা পথ্যের যোগাযোগ নম্বর দিচ্ছেন। পুরোটাই হচ্ছে নেটমাধ্যমে। সামাজিক দূরত্ব মেনে। এই লড়াইয়ে সাধারণ-সেলেব মিলেমিশে একাকার।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কথাই ধরুন। জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক আপাতত সিনেমা ভুলেছেন। গত ক’দিন ধরে তাঁর সামাজিক পাতায় শুধুই হাসপাতালের খোঁজ। অক্সিজেন সিলিন্ডার কোথায় পাওয়া যাবে? চাইলেই প্লাজমা পাবেন কোথায়? তারও হদিশ দিয়ে চলেছেন সৃজিত। এমনকি, নিভৃতবাসে থাকাকালীন কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, সে দিকেও তাঁর নজর। হাতেগরম সমস্ত তথ্য সৃজিত জুগিয়ে চলেছেন দিনরাত। এই তালিকায় আছেন আছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, বিরসা দাশগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ও। করোনা আক্রান্ত অনসূয়া মজুমদারও অসুস্থ অবস্থাতেই নেটমাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছেন ঘরে ঘরে। এঁরা সবাই প্রতি মুহূর্তে হদিশ দিচ্ছেন চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, যোগাযোগ নম্বরের।
রুক্মিণী মৈত্রের হালফিলের পোস্ট বলছে, অভিনেত্রী সাধারণের অসহায়তায় স্তব্ধ। রোগ আর রোগীর পারস্পরিক টানাপড়েন দেখতে দেখতে চোখ ভিজে উঠছে তাঁর। প্রতি মুহূর্তে তাঁর কাছে সাহায্য চাইছেন অসংখ্য মানুষ। সবার পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তাঁরও নেই। পরিবর্তে প্লাজমা দান করে নজির গড়েছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর প্রথম ছবির শ্যুটিং উপলক্ষে বলিউডে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। রুক্মিণী আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ। নিজের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সেই সময় দেখেছিলেন, হাসপাতালে অক্সিজেন, প্লাজমার প্রচণ্ড ঘাটতি। সুস্থ হওয়ার পরে এক ভিডিয়ো বার্তায় জানান, তিনি প্লাজমা দিয়েছেন। পাশাপাশি, কী ভাবে, কারা, কোথায় প্লাজমা দিতে পারবেন সেই হদিশও জানান।
একই ভাবে প্রিয়ঙ্কা সরকার সবাইকে সচেতন করে দু'টি মাস্ক একসঙ্গে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। কী করে ব্যবহার করবেন, সেই পদ্ধতিও ধাপে ধাপে তিনি জানিয়েছেন নেটমাধ্যমে। সবাই যাতে সময় মতো চিকিৎসা পরিষেবা পান, তার দেখভালে ব্যস্ত সাংসদ তারকা দেব, নুসরত জাহান, মিমি চক্রবর্তী। পাশাপাশি নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে কী ভাবে দূরত্ববিধি মেনে করোনা রোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে সে কথাও জানিয়েছেন মিমি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেই বা কী করবেন? নিভৃতবাসে থেকে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, শরীরের তাপমাত্রা এবং অক্সিজেনের মাত্রা মাপার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা-- লড়াইয়ের সমস্ত ধাপ ফুটে উঠেছে তাঁর নেটমাধ্যম স্টোরিতে।
তন্ময় ঘোষ, অনুপম রায়, পিয়া চক্রবর্তী এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় একজোট হয়ে গড়েছেন বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ। হেডস সংস্থার সঙ্গে মিলিত ভাবে এই ৪ তারকা ওষুধ, অক্সিজেন সহ করোনার সঙ্গে লড়ার সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন সাধ্যমতো। পাশাপাশি, সামাজিক পাতা খুললেই চোখে পড়বে তারকাদের ইতিবাচক ভাবনা। প্রত্যেকে মনের জোর হারাতে বারণ করছেন বার বার। একটাই আশ্বাসবাণী তাঁদের, ‘কেউ একা নন। সবাই আছেন সবার জন্য’।
ভোটের পরেই তাঁদের আর দেখা মিলবে না, তারকা প্রার্থীদের ঘিরে এমনই অনুযোগ ছিল রাজ্যবাসীর। সেই অভিযোগ মুছেছেন রাজ চক্রবর্তী, পার্নো মিত্র, কাঞ্চন মল্লিক, দেবদূত ঘোষ, কৌশানি মুখোপাধ্যায় সহ বাকিরা। প্রত্যেকে টুইটে, ইনস্টাগ্রামে করোনা সংক্রমিতের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, ওষুধ, খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে।
পিছিয়ে নেই টেলিপাড়াও। নেটমাধ্যম, মিডিয়ায় সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান শুনতে শুনতে ক্লান্ত রাজ্যবাসী। তাঁদের মনে ইতিবাচক ভাবনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। প্রত্যেক দিন কত সংখ্যক মানুষ সুস্থ হয়ে ফিরে আসছেন মৃত্যুর মুখ থেকে, সেই খবর নেটমাধ্যমে জানাচ্ছেন সাধারণের মনের জোর বাড়াতে। এই তালিকায় রয়েছেন রূপা ভট্টাচার্য, শ্রীলেখা মিত্র, জিতু কমল, রাহুল দেব বসু, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীময়ী চট্টরাজ সহ আরও অনেকে।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে তরুণ ব্রিগেডও। ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, দিব্যজ্যোতি দত্তের মতো এই প্রজন্মের অভিনেতারা ‘দেশের নামে’, ‘ছোট্ট প্রয়াস’-এর মতো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ‘দেশের নামে’ আদতে ঋতব্রতের নাট্যদল। সেই দলের সমস্ত কুশীলব আক্রান্তের পাশে দাঁড়াচ্ছেন অক্সিজেন, খাবার, ওষুধ পৌঁছে দিয়ে। হাসপাতালের খালি শয্যার খোঁজ জানিয়ে। ‘ছোট্ট প্রয়াস’-এর হাত ধরে দিব্যজ্যোতি দত্ত খাবার নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন সেই সমস্ত নিম্ন মধ্যবিত্তের সংসার্ যাঁরা নিভৃতবাসে থাকতে গিয়ে অভুক্ত রয়েছেন। একই ভাবে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ খ্যাত ‘বামাখ্যাপা’ সব্যসাচী চৌধুরী ইতিমধ্যেই স্থানীয় দুঃস্থ মানুষদের খাবারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন একার কাঁধে। সম্প্রতি নেটমাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানিয়েছেন। খবর, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরিবারের কাছে রেশন পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy