বাঁ দিক থেকে দিতিপ্রিয়া রায়, ইন্দ্রাণী হালদার এবং তিয়াসা রায়।
“সুবান আমাকে নিয়ে খুব টেনশন করছে”, চিন্তা নিয়ে বললেন কৃষ্ণকলির ‘শ্যামা’ অর্থাৎ তিয়াসা রায়।
“রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। কিন্তু আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত”, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন ‘শ্রীময়ী’ ইন্দ্রাণী হালদার।
যে কোনওদিন ডাক পড়লেই শুটে যাবেন রাসমণির ‘রানি মা’
খুলছে টলিউডের স্টুডিয়ো পাড়ার দরজা। শুরু হতে চলেছে শুটিং। আড়াই মাস ধরে রুদ্ধ টলিউডে তাই এখন জোর প্রস্তুতি। চলছে সংগঠনগুলির মধ্যে আলোচনা, ঘন ঘন ফোন,মিটিং..একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে স্টুডিয়ো সাফাইা অভিনেতারাও থেমে নেই। স্বামী সুবানের সঙ্গে শুটিংয়ের ব্যাগে তিয়াসা গুছিয়ে রাখছেন স্যানিটাইজার, মাস্ক। অন্যদিকে দিতিপ্রিয়া মা-বাবাকে বারবার আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই”। যে কোনওদিন যে ডাক পড়তে পারে শুটিংয়ের, তা ভাল ভাবেই জানেন ‘রানি মা’।
গতকাল অর্থাৎ সোমবার ছিল ১ জুন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাল থেকেই শুরু করা যেত টলিউডের শুটিং। কিন্তু ছাড়পত্র পাওয়া গেলেই তো আর শুটিং শুরু করা যায় না! মাথায় রাখতে হবে সবার সুরক্ষার কথাও। টেকনিশিয়ান-অভিনেতাদের সুরক্ষাবিধি কীভাবে মানা হবে তা এখনও চুড়ান্ত করতে পারেননি ইম্পা, আর্টিস্ট ফোরাম সহ বিভিন্ন সংগঠনগুলি। মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। সেই আলোচনা থেকে যে সিদ্ধান্ত উঠে আসবে তা নিয়ে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে আর একপ্রস্থ মিটিং হবে ৪ তারিখ। এর পরই স্থির হবে শুট শুরুর দিনক্ষণ।
স্যানিটাইজ করা হচ্ছে স্টুডিয়ো পাড়া
তবে তার আগে এই কয়েকটা দিন কোনওমতেই সময় নষ্ট করতে চাইছে না টলিপাড়া। আড়াই মাস ধরে বন্ধ থাকা টলিউডের স্টুডিয়োগুলো সোমবার সকাল থেকেই সচল। জোরকদমে চলছে স্টুডিয়ো পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া। দাসানি স্টুডিয়োতে যেমন কাল সকাল থেকেই শুরু হয়েছে সাফাইয়ের কাজ। শুটিং ফ্লোরের সামনের অংশে সারাদিন ধরে স্যানিটাইজ করা হয়েছে, এই কাজ চলবে আরও দু’দিন। সামনের অংশ পরিষ্কার হলে তারপর মেকআপ রুম, বাথরুম... সবশেষে শুটিং ফ্লোর। সেখানে আবার বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কারের কাজ শেষ করতেই হবে, শুরু হবে ‘শ্রীময়ী’র শুটিং।
‘দ্য শো মাস্ট গো অন': দিতিপ্রিয়া
এ ক’দিন বাড়িতে থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠছিলেন দিতিপ্রিয়া। বললেন, “মনে হচ্ছিল, কবে আবার বাইরের পৃথিবীটা দেখতে পাব। কবে ছুঁতে পারব শুটিং ফ্লোর? কবে আবার দিতিপ্রিয়া থেকে রাসমণি হয়ে আবার আসব সবার সামনে?” তবে আজ যখন সত্যিই সেই সময় আসন্ন তখন কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন দিতিপ্রিয়া। নিজের চেয়েও তাঁর বেশি চিন্তা বাবা-মাকে নিয়ে। কিন্তু উপায় তো নেই। নিজেই বলছিলেন, “আড়াই মাস কাজ বন্ধ মানে ইন্ডাস্ট্রির যে কত বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তা তো সকলেই জানেন। টেকনিশিয়ানদের আয় হয়নি, আমাদেরও তো একই অবস্থা। আর কথাতেই তো বলে, যাই হোক না কেন, ‘দ্য শো মাস্ট গো অন...’,
সত্যি করে বলুন তো কোথায় নেই রিস্ক ফ্যাক্টর?
সুরক্ষাবিধি না হয় তৈরি হবে। শুরু হবে শুটিংও। কিন্তু একটি ইউনিটে এত জন মানুষ সবাই মেনে চলবেন তো? “তিন মাস বাড়িতে থেকে আমাদের সবার মধ্যে একটা নিয়ম মানার অভ্যেস তৈরি হয়ে গিয়েছে। বারবার হাত ধোয়ার অভ্যেস। মাস্ক পরার অভ্যেস। যেখানে সেখানে হাত না দেওয়ার অভ্যেস... অসুবিধে হওয়ার কথা নয়”, শুটিং শুরু হলেই সেই অভ্যেসগুলো নিয়েই কাজ করতে চাইছেন ইন্দ্রাণী।‘ কিন্তু ভয়? “রিস্ক ফ্যাক্টর তো রয়েছেই। কিন্তু সত্যি করে বলুন তো কোথায় নেই রিস্ক ফ্যাক্টর? বাজার-হাট করতে গেলেও তো আপনি সংক্রামিত হতে পারেন, তাই না?” পাল্টা প্রশ্ন শ্রীময়ীর।
‘নকশিকাঁথা’ ধারাবাহিকের দৃশ্য
কৃষ্ণকলির ‘শ্যামা’-কে ছাড়তে চাইছেন না স্বামী সুবান
অন্য দিকে লকডাউনের সময়েই ফোনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল তিয়াসার। বাইরের দুনিয়া থেকে কিছুটা ফাঁক পেয়ে স্বামী সুবানের সঙ্গে কলকাতার ফ্ল্যাটেই চলছিল তিয়াসার অবসরযাপন। এ বার বাজতে চলেছে শুটিং শুরুর দামাম। তাই স্ত্রীকে নিয়ে বেজায় চিন্তায় সুবান। করোনার থাবা, সংক্রমণ...স্ত্রীকে ছাড়তে চাইছেন না তিনি। কিন্তু নিজেও ইন্ডাস্ট্রির অংশ সুবান জানতেন, এক দিন না এক দিন করোনাকে সঙ্গে নিয়েই ফিরতে হত কাজে। আর তিয়াসা? “ওসব এখন আর ভাবতেই পারছি না। ভাবতে চাইছিও না। ভাবলেই টেনশন হবে।কাজ তো আর এত দিন থেমে থাকতে পারে না। কাজ করব। সুরক্ষা মেনেই করব শুটিং। আর তার পরেও যদি আক্রান্ত হই, কী আর করা যাবে,” বলছিলেন কৃষ্ণকলির ‘শ্যামা’।
ভয় পেয়ে বাড়িতে বসে থাকলে আর চলবে না
বাড়িতে বয়স্ক মানুষ রয়েছে ‘নকশিকাঁথা’-র ‘শবনম’ অর্
মধ্যবিত্তদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নেই, ত্রাণ নেই
টিআরপি লিস্টে প্রায়শই প্রথম পাঁচে থাকা ধারবাহিকদের মুখ্য চরিত্ররা নামছেন শুটের ময়দানে।একবাক্যে কাজে ফেরায় সায় জানিয়েছেন শ্যামা-শ্রীময়ী-রাসমণিরা। যেমনটা জানিয়েছেন, টিআরপি লিস্টে প্রায়শই প্রথম পাঁচে জায়গা করে নেওয়া ‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের মুখ পল্লবী শর্মা।বললেন, “মধ্যবিত্তদের মধ্যে রয়েছে একবুক আত্মসম্মান। তাঁরা না পারবে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দাঁড়াতে, না পারবে জমানো ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নিয়ে আজীবন চালাতে। তাই সেই সমস্ত টেকনিশিয়ান, আর্টিস্টদের জন্য শুটিং শুরু করতেই হবে। আমরা পারব। সব কিছু মেনেই আবারও ঘুরে দাঁড়াব আমরা সবাই”।
টলিউড কীভাবে এত কম লোককে নিয়ে মেগার শুটিং চালাবে?
তবে শুটিং শুরুর অসুবিধের লিস্ট ও নেহাত কম নয়। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, একসঙ্গে একটি শুটিং ইউনিটে ৩৫ জনের বেশি নেওয়া যাবে না । একটি ইউনিটে কম-বেশি ৭০ জনকে নিয়ে কাজ করা? টলিউড কীভাবে এত কম লোককে নিয়ে মেগার শুটিং চালাবে, তা বুঝতেই পারছেন না অনেক প্রযোজক-প্রযোজনা সংস্থা। এসভিএফ-এর কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি যেমন বললেন “একটা বিরাট অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাই শুটিং শুরু নিঃসন্দেহে খুব ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু ধারাবাহিক বা ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে ৩৫ জনকে নিয়ে কাজ করা খুব একটা অসুবিধের না হলেও মাত্র ৩৫ জনকে নিয়ে সিনেমার শুটিং করা বেশ কষ্টকর। সে জন্যই আপাতত দেব অভিনীত ‘গোলন্দাজ’ ছবির শুটিং শুরু করতে পারব না আমরা।” তবে এ প্রসঙ্গে জি বাংলার ক্লাস্টার হেড (পূর্ব ) সম্রাট ঘোষ জানিয়েছেন, যে মুহূর্তে নির্দেশ পাবেন, সুরক্ষাবিধি নিয়ে যাবতীয় গাইডলাইন সামনে আসবে ঠিক সেই মুহূর্তেই শুটিং করতে প্রস্তুত তাঁরা।
‘কে আপন কে পর’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য
ইন্ডাস্ট্রির প্রবীণ অভিনেতারা কী করবেন?
সমস্যা রয়েছে আরও। নবান্নের নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের বাড়ির বাইরে অকারণে না আসতে। তা হলে ইন্ডাস্ট্রির প্রবীণ অভিনেতারা কী করবেন? ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’? তা নিয়েও চলছে বিভ্রান্তি। অভিনেত্রী দোলন রায় যেমন পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, “আমায় হয়তো শুটে বেরোতে হবে। কিন্তু টিটো (দীপঙ্কর দে) এখন শুটিংয়ে যেতে পারবে না কিছুতেই।“
আর সে কারণেই আজ আর্টিস্ট ফোরাম, ইম্পা, ফেডারেশন, প্রোডি
রিপিট টেলিকাস্ট দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া আপনি খুব শীঘ্রই দেখতে পাবেন আপনার পছন্দের ধারাবাহিকের আনকোরা নতুন এপিসোড। করোনাকে সঙ্গে নিয়েই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নে এখন বিভোর টলিপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy