বাংলা ছবিকে এ বার চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল দক্ষিণী ছবি?
অল্লু অর্জুনের নতুন ছবি। ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ পার্ট ওয়ান’। গোটা দেশে তো বটেই, দক্ষিণী ছবি রমরমিয়ে চলছে কলকাতাতেও। অতিমারির ধাক্কা সামলে সবে একটু একটু করে ছন্দে ফিরছে ছবির দুনিয়া। হলমুখী হচ্ছেন দর্শক। পুজোর সময় থেকেই প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তির পথে হাঁটছে টলিউডও। তার মধ্যেই সব হিসেব ওলটপালট করে দিল তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড়ের পাশাপাশি হিন্দিতেও মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’। খাস বাংলায় কি তবে বাংলা ছবিকেই এ বার চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল দক্ষিণী ছবি? বলিউডি ছবির পরে হয়ে উঠল টলিউডের নতুন প্রতিযোগী?
শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে দক্ষিণী সুপারস্টার অল্লু অর্জুনের এই নতুন ছবি। বক্স অফিসের হিসেব বলছে, প্রথম দিনেই বিশ্বজুড়ে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে লাল চন্দনকাঠের চোরাকারবারি পুষ্পা রাজের কাহিনি। ছবির জগতের পরিসংখ্যান বলছে শুধু তেলঙ্গানাতেই মুক্তির দিনে তার ঝুলিতে ১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা, তামিলনাড়ুতে ৪ কোটি ৬ লক্ষ টাকা।
মুক্তির দিনে কলকাতা তথা বাংলার বক্স অফিসে কতটা শোরগোল ফেলল ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’? ছবির টিকিট কাটার অ্যাপ ‘বুক মাই শো’র হিসেব বলছে প্রথম দিনেই ৮৪ শতাংশ দর্শকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে অল্লু অর্জুনের কাণ্ডকারখানা। শহর ও শহরতলির মোট ২১টি প্রেক্ষাগৃহে হিন্দিতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ৮টিতে মুক্তি পেয়েছে তেলুগু ভাষায়।
‘বাহুবলী’র পরে ফের কি দক্ষিণের বঙ্গ জয়? দক্ষিণ কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহের তরফে প্রণব রায় জানালেন, 'স্পাইডার: ম্যান নো ওয়ে হোম'-এর সঙ্গে এক দিনে মুক্তি পেয়েছে ‘পুষ্পা দ্য রাইজ’। তার পরেও বাংলা জুড়ে ছবিটি এ ভাবে আধিপত্য বিস্তার করবে, ভাবতে পারেননি কোনও হল-মালিক। দর্শকদের মুখে মুখে ফিরছে ছবির নায়ক অল্লু অর্জুন আর নায়িকা রশ্মিকা মনদানার নাম। প্রণবের কথায়, “সে রকম কোনও প্রচার নেই। তবু প্রথম দিনেই ব্যবসা করে ফেলেছে গড় হিসেবের প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। শনি, রবিবার ছুটির দিন। ইতিমধ্যেই ছবিটি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। দর্শক সংখ্যা হয়তো ক্রমশ বাড়বে।”
‘পুষ্পা দ্য রাইজ’-এর প্রথম দিনের ব্যবসা চমকে দিয়েছে উত্তর কলকাতার এক প্রেক্ষাগৃহের মালিককে। কর্তৃপক্ষের তরফে বিদিশা বসুর কথায়, “প্রথমে ভেবেছিলাম, দর্শকেরা বোধহয় ভুল করে ইংরেজি ছবির টিকিট কাটতে গিয়ে ‘পুষ্পা’র টিকিট কাটছেন। পরে দেখলাম, একেবারেই তা নয়। অন্য হল মালিক এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গেও কথা বলেছি। সকলেই বলছেন, দর্শকেরা ওই ছবিটিই দেখতে চাইছেন। এর থেকেই প্রমাণিত নায়ক-নায়িকা নয়, ছবির মূল আকর্ষণ এখন ছবির গল্প। প্রথম দিনেই আমাদের হলে ছবিটি প্রায় ৯৫ শতাংশ ব্যবসা দিয়েছে।”
বাণিজ্য বিশ্লেষক পঙ্কজ লাডিয়ার ব্যাখ্যা, “দক্ষিণী ছবির প্রতি এতখানি আকর্ষণ তৈরি হয়েছে ‘বাহুবলী’র হাত ধরে। ডাবিং করা ছবি দেখাটাও ক্রমশ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একে অল্লু অর্জুনের মতো অভিনেতা, তাতে ভাল গল্প। দর্শক তো আসবেই। সাম্প্রতিক হিসেবে ‘সূর্যবংশী’র আপাতত এই ছবিটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। মুক্তির দিনে যে ক’টি হল হাউসফুল ছিল না, সম্ভবত সেগুলিও দ্বিতীয় দিনে হাউসফুল।”
এত দিন বলিউডের সঙ্গে জোর টক্কর ছিল বাংলার। এ বার বাঙালি দর্শক দৌড়চ্ছেন দক্ষিণী ছবি দেখতে। প্রতিযোগিতায় কি তবে পিছিয়ে পড়ছে টলিউড?
দৌড়ে বাংলা ছবির পিছিয়ে পড়ার কথা মানতে নারাজ পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “সিনেমার কোনও ভাষা হয় না। পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও ‘বেলাশেষে’, ‘পোস্ত’ তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। আসলে বর্তমান ভারতে আঞ্চলিক বলে আর কিছু হয় না। অল্লু অর্জুনকে এই মুহূর্তে আমি ভারতের সেরা স্টাইলিশ তারকা বলে মনে করি। এ ছাড়াও ওই ছবিতে রশ্মিকা মন্দনা, ফাহাফ ফসিল, সামান্থা প্রভুর মতো অভিনেতারা রয়েছেন। এখন তাঁরা প্রত্যেকেই জাতীয় তারকা। তাঁদের দেখতে মানুষ নিশ্চয়ই আসবেন। আর সব শেষে বলব ছবির গল্পের কথা। সেটা ভাল হলে, ছবি যে ভাষারই হোক, মানুষ তা পছন্দ করবেন।”
ভাল গল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এল অভিনেতা অঙ্কুশের কথাতেও। তিনি বলেন, “ওটিটি প্ল্যাটফর্মের রমরমার যুগে মানুষকে প্রেক্ষাগৃহে টানার জন্য বিশেষ কিছু দরকার। ঘরে বসেই যাঁরা বিনোদন পাচ্ছেন, তাঁরা কেন টিকিট, পপকর্নের জন্য টাকা খরচ করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা আগে ভাবতে হবে। ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ মানুষকে ভাল গল্প দিয়েছে। ওই ছবি যে ভাবে শ্যুট করা হয়েছে, তা বড় পর্দায় দেখলেই উপভোগ করা যাবে। অল্লু অর্জুনের মতো অভিনেতার নিজস্ব অনুরাগী মহল তো আছেই। তবে বাংলায় এই ছবির প্রচার সে ভাবে না হলেও ইন্টারনেট থেকেই সবটা জানাজানি হয়েছে।”
তুল্যমূল্য বিচারের পথে হেঁটেছেন পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “প্রশ্ন হল, কে বেশি কাছের। অল্লু অর্জুন না স্পাইডারম্যান? স্পাইডারম্যান আসা সত্ত্বেও একটি তেলুগু ছবি দর্শককে টানছে। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে মেনস্ট্রিম ছবির খিদে এখনও কমেনি আর সেখানে ভাষাটা কোনও ব্যাপারই নয়। ছবির বিষয় এবং নায়কই আসল কথা। হিন্দি ছবির একাধিপত্য খর্ব করতে দক্ষিণ ভারত তৈরি প্রায়। কিন্তু আমরা এখনও তৈরি নই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy