Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Reality show

রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগীদের যে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়া হয়, তার সবটাই কি সত্যি?

বিচারকের আসনে থাকেন বাংলা তথা জাতীয় স্তরের শিল্পীরা। প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে তাঁরা কি সত্যিটাই বলেন?

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৭:২৪
Share: Save:

জন্মলগ্ন থেকেই রিয়্যালিটি শোয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক বার নয়, বারবার। ছোট পর্দায় যে রিয়্যালিটি দেখানো হচ্ছে, সেটাই কি সত্যি? না কি পর্দার পিছনেও রয়েছে অন্য কোনও বাস্তব? নন-ফিকশন জ়ঁরের এই শো-গুলিও কি ফিকশনের অন্য রূপ? এমন শোয়ের সিদ্ধান্ত দর্শকের মনমতো না হলে, ‘স্ক্রিপ্টেড’ বলে দাগিয়ে দিতেও পিছপা হন না তাঁরা। সম্প্রতি সেই বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছেন অমিতকুমার।

হিন্দি গানের এক রিয়্যালিটি শোয়ে অতিথি-বিচারক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিশোরকুমার স্পেশ্যাল পর্বে প্রতিযোগীরা গেয়েছিলেন কিংবদন্তির গান। তবে পরে অমিতকুমার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রতিযোগীরা যেমনই পারফর্ম করুক, সকলকে প্রশংসা করতে বলা হয়েছিল। সেটা করেছি। তার জন্য পারিশ্রমিকও পেয়েছি।’’

জনপ্রিয় দু’টি বাংলা চ্যানেলের গানের রিয়্যালিটি শোয়ের দর্শক নেহাত কম নন। সেখানে বিচারকের আসনে থাকেন বাংলা তথা জাতীয় স্তরের শিল্পীরা। প্রতিযোগীদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে তাঁরা কি সত্যিটাই বলেন?

রিয়্যালিটি বনাম শো

লোপামুদ্রা মিত্র মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘শো’-এর খাতিরে অনেক কিছুই করতে হয়। যেমন, তিনি সাজতে ভালবাসেন না। ‘‘আমি লিপস্টিক-পাউডার লাগাতে পছন্দ করি না। কিন্তু শোয়ে থাকতে গেলে প্রেজ়েন্টেবল হতে হবে,’’ বললেন শিল্পী। ‘‘প্রতিযোগীদের সত্যিটাই বলি। আর চ্যানেলের তরফে পজ়িটিভ এনার্জি ধরে রাখতে বলা হয়। হয়তো কখনও কোনও প্রতিযোগীর প্রতিভার সঙ্গে অ্যাপিয়ারেন্সেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেটা শোয়েরই অংশ,’’ মত তাঁর।

রাঘব চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রতিযোগীরা এত খাটাখাটনি করে, ওদের কড়া ভাবে কিছু বলা যায় না, উচিতও নয়। তার মানে এটাও নয় যে, ভাল পারফরম্যান্স না হলেও প্রশংসা করব। তবে চ্যানেল কখনও কিছু বলেনি।’’ এর উল্টো অভিজ্ঞতা রয়েছে রূপঙ্করের। ‘‘আমার যা মনে আসে, সেটাই বলি। কিন্তু কড়া ভাবে বলা সেই অংশ পরে এডিট করে বাদ দেওয়া হয়েছে,’’ বললেন তিনি।

মিথ ও রিয়্যালিটি

মঞ্চে বসে শোনা আর টিভির পর্দায় দেখার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রিয়্যালিটি শোয়ে বিচারক হওয়ার পরে এই ফারাক আরও ভাল ভাবে বুঝেছেন লোপামুদ্রা। ‘‘রেকর্ডেড ভার্শনে সুরের সূক্ষ্ম বিচ্যুতি বোঝা যায়, যা টিভিতে ধরা পড়ে না। দর্শকের মনে হয়, বিচার ঠিক হচ্ছে না। সেটা সত্যি নয়,’’ বললেন গায়িকা। রাঘব বললেন, ‘‘দর্শকের একাংশ ভাবেন, রিয়্যালিটি শোয়ে চার-পাঁচ বার টেক দিয়ে গান শোনায় প্রতিযোগীরা। এটা মিথ। শুটিংয়ের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই ওরা রিহার্সাল করে। শুটিংয়ের দিন ওয়ান শটেই পুরো ব্যাপারটি হয়।’’

রিয়্যালিটি শো কি ভবিষ্যৎ গড়ে?

ছোটদের রিয়্যালিটি শোয়ে একটি সিজ়নের বিচারক হয়েছিলেন কৌশিকী চক্রবর্তী। এ ছাড়া বড়দের শোয়ে অতিথি-বিচারক হয়ে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। তাঁর মত, ‘‘চ্যানেলের তরফে কোনও নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়নি। তবে প্রতিযোগী ছোট হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক, কাউকে রূঢ় ভাবে কিছু বলতে আমার রুচিতে বাধে। ভাল ও কম ভাল-র ফারাক আমি কথায় বুঝিয়ে দেব। কিন্তু কারও স্পিরিট নষ্ট করার অধিকার আমার নেই।’’ কৌশিকী মনে করেন, রিয়্যালিটি শো ভবিষ্যৎ গড়ে না। তাঁর মতে, যাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন, তাঁরা সকলেই গাইয়ে হবেন না। কিন্তু চেষ্টাটুকুকে সম্মান দিতে হয়।

আবার রিয়্যালিটি শো রুজি-রোজগারের পথ প্রশস্ত করেছে বলে মত সুরকার-গায়ক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। ‘‘বিজয়ী হয়নি, এমন অনেককেই আমি ছবিতে প্লেব্যাকের সুযোগ দিয়েছি। ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা নিজেদের কণ্ঠ দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে পারছে। আমার কাছে এই মঞ্চ সদর্থক।’’ জিতের আবিষ্কার মেঘলা, জীমূত, পবনদীপের মতো শিল্পীরা, যাঁরা রিয়্যালিটি শো থেকেই পরিচিতি পেয়েছেন।

গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি

রিয়্যালিটি শোয়েরও সাফল্যের চাবিকাঠি ধরা থাকে পরিচালকের হাতে। দীর্ঘ সময় ধরে সফল ভাবে সে কাজ করে চলেছেন অভিজিৎ সেন। ‘‘দর্শককে ফাঁকি দেওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাঁরাও বিচারকদের মতো গান শুনছেন। বিচারকদের মধ্যে মতের অমিল হলে, রেকর্ডেড ভার্শন শোনানো হয়। সেটার টেলিকাস্টও হয়। আর অডিশন থেকে শেষ অবধি (ব্যতিক্রম দর্শকের ভোট) বিচারকই শেষ কথা,’’ বললেন তিনি। ২০১৮-১৯ সালে বাংলার এক রিয়্যালিটি শোয়ে ফার্স্ট রানার আপ হয়েছিলেন স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন, ‘‘আমাকেও শুনতে হয়েছে, টাকা দিয়ে ফাইনালে উঠেছি। তবে অত বড় মঞ্চে বড় বড় নামেদের সামনে দিনের পর দিন গেয়ে যাওয়া সহজ নয়। সেখানে সবটাই বোঝা যায়। ভাল হলে প্রশংসা পেয়েছি, আবার না হলে কথাও শুনেছি।’’

রিয়্যালিটি শোয়ে সত্যি-মিথ্যের খেলা এক জটিল ধাঁধার মতো। তবে প্রতিযোগী হোন বা বিচারক... জনতার দরবারে নিজেদের প্রমাণ করতেই হয় সকলকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Reality show Judges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy