Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

আমরা তো আর ছোট নেই...

বয়সে ছোট হলেও কাজের হিসেবে বড়দের টেক্কা দিচ্ছে ছোট পর্দার খুদে তারকারা। অভিনয়ের মাঝে কী করে বেঁচে আছে তাদের শৈশব? স্কুলেও বলা থাকে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে না পারলে পরে পরীক্ষার ব্যবস্থাও করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

লোকনাথের চরিত্রে অরণ্য (বাঁ দিক থেকে) লটারির চরিত্রে আর্শিয়া এবং উমার চরিত্রে সৃজা।

লোকনাথের চরিত্রে অরণ্য (বাঁ দিক থেকে) লটারির চরিত্রে আর্শিয়া এবং উমার চরিত্রে সৃজা।

নবনীতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

পুতুল পুতুল মেয়েটা যখন কচি গলায় গান গেয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে আদর করে কোলে তুলে নিতে। আবার বাচ্চা ছেলেটা যখন হম্বিতম্বি করে, তখন নিশ্চয়ই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুদূর প্রবাসী নাতির মুখটা। ছোট পর্দায় এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এমনই অনেক খুদে তারকা, যারা অনায়াসেই জায়গা করে নিয়েছে দর্শক মনে। কিন্তু আসলে কেমন আছে ওরা? ছোট বয়স থেকে ওরাও যে বড়দের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পড়াশোনা ও কর্মজীবন সামলাচ্ছে। মুখের কথা নয় কিন্তু। সারা দিন যদি শুটিংয়েই ব্যস্ত থাকে, তা হলে ওরা পড়ে কখন, খেলেই বা কখন?

অভিনয়ের ফাঁকেই পড়ার ক্লাস

‘কেশব’-এর নামভূমিকায় অভিনয় করছে দ্বিতীয় শ্রেণির অভিরূপ কর্মকার। অন্য দিকে ‘মহাতীর্থ কালীঘাট’-এর উমা অর্থাৎ সৃজা ভট্টাচার্য পড়ে ক্লাস ওয়ানে। ওদের পড়াশোনা চলে সেটে। সৃজার কথায়, ‘‘পরীক্ষা থাকলে তো মেকআপ রুমেই অঙ্ক কষে নিই। পড়াও মুখস্থ করে ফেলি।’’ স্কুলেও বলা থাকে। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে না পারলে পরে পরীক্ষার ব্যবস্থাও করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পাঁচ-ছ’বছরের খুদেকে বাড়িতে পড়তে বসাতেই সাধ্যসাধনা করতে হয়। সেখানে সেটের মাঝে কি আদৌ পড়াশোনা হয়?

‘নেতাজি’ ধারাবাহিকের নেতাজি অর্থাৎ অঙ্কিত মজুমদারের বাবা অনিরুদ্ধ মজুমদারকে একটু চিন্তিত শোনাল, ‘‘ও যেহেতু লিড রোল করছে, দিনে প্রায় চোদ্দো ঘণ্টা তো সেটে থাকতে হয়। আগে পরে যাওয়া-আসা নিয়ে আরও দু’ঘণ্টা, তার পরে রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। এর মাঝে পড়াশোনার ক্ষতি তো হয়ই। সামনেই ক্লাস ফাইভের ফার্স্ট টার্ম আছে। কী ভাবে তৈরি হবে, সেটাই চিন্তার। সেটে পড়ে ঠিকই। কিন্তু সেটের পরিবেশে কতটা পড়া হয়...’’ দুশ্চিন্তায় কথাও সম্পূর্ণ করতে পারলেন না তিনি। তবে অনিরুদ্ধর কাছ থেকেই জানতে পারা গেল, অঙ্কিতের দু’টি নেশা আছে। গল্প লেখা আর ছবি আঁকা। শুটিংয়ের ফাঁকে সময় পেলেই ও কিন্তু এই দুটো কাজ চালিয়ে যায়।

পড়াশোনায় মন আছে অরণ্য রায়চৌধুরীরও। ‘জয় বাবা লোকনাথ’-এর মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে সে। বিজ্ঞান ও ভূগোল তার পছন্দের বিষয়। অরণ্যের কথায়, ‘‘বড় হয়ে আমি বিজ্ঞানী হতে চাই। তার সঙ্গে যদি অভিনেতাও হতে পারি, তা হলে আরও ভাল।’’ অভিনয়ের পাশাপাশি স্কুলে কামাই নেই তার। স্কুল করে পৌঁছে যায় সেটে।

খেলা খেলা দিয়ে শুরু...

খেলার ছলেই হয়তো ওদের অভিনয় জীবন শুরু। কিন্তু অভিনয়ের দায়িত্বও যে আছে। গুরুভার এই বয়সেই কাঁধে তুলে নিয়েছে ওরা। আর ওদের শৈশব? বিকেল হলেই কি শিশুমনগুলো বেরিয়ে পড়ে না খেলার খোঁজে?

কঠিন প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই সহজ করে দিল নার্সারির সুকন্যা চট্টোপাধ্যায়, ‘‘আমি তো মেকআপ রুমেই আমার ডলহাউস সাজিয়ে ফেলি। শট দিয়ে এসে সেখানেই আমার মেয়েকে খাওয়াই, ঘুম পাড়াই।’’ ‘নিশির ডাক’ ধারাবাহিকে তারার চরিত্রে অভিনয় করছে সে। অন্য দিকে অভিরূপ জানাল, ‘‘সেটের গোডাউনেই ব্যাট বল রাখা থাকে। খেলতে ইচ্ছে করলে সেটের গাছতলায় বা বাগানেই শুরু হয়ে যায় ক্রিকেট।’’ সহ-অভিনেতারাও জুটে যায় বোলিং ও উইকেট কিপিংয়ে।

পড়াশোনা, খেলাধুলো না হয় হল। কিন্তু ওরা ক্লান্ত হয় না? বড়রাই যেখানে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠছে। সেখানে খুদে তারকারা দিব্যি বারো-চোদ্দো ঘণ্টা কাটিয়ে ফেলছে সেটে! ‘‘আমি তো বড় হয়ে নায়িকা হব। তাই সারা দিন সেটে থাকলেও ক্লান্ত হই না।’’ প্রশ্নবাণের সামনে দাঁড়িয়ে মায়ের তদারকিতে আধো বুলিতে বলে যায় সুকন্যা। যদিও তাঁর কথা এখনও স্পষ্ট নয়, কিন্তু পড়া মুখস্থের মতোই এই প্রশ্নের উত্তরটি সে আউড়ে যায়।

অসুস্থ শরীরেও কামাই নেই

কচিকাঁচাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও দেখার মতো। অসুস্থ শরীরেও তারা সেটে হাজির! সৃজার মায়ের কাছ থেকে জানা গেল এমনই এক ঘটনা। ‘‘পাঁচ-ছ’বার বমি করেও মেয়ে সেটে গিয়ে শট দিয়ে এসেছে। বাড়িতে থাকতে চায় না। রোজ সেটে যাবেই। এক বার তো সারা রাত শুট করে ভোর পাঁচটায় হাসতে-হাসতে বাড়ি ফিরেছে,’’ বললেন গর্বিত মা!

অন্য দিকে ‘রানু পেল লটারি’র লটারি অর্থাৎ আর্শিয়া মুখোপাধ্যায়ের মা বললেন, ‘‘মুম্বইয়ে থাকাকালীন দু’বার ওর ডেঙ্গি হয়। তখন কিন্তু যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। ও সুস্থ হয়ে তবে শুটে গিয়েছে। কলকাতাতেও তাই। শরীর খারাপ থাকলে সেটে যা খেতে চায়, সুপ, নুড্‌ল... সে সবেরই ব্যবস্থা করে দেয়।’’ তবে কলকাতা-মুম্বই শুটের জেরে স্কুল পাল্টাতে হয়েছে আর্শিয়াকে।

বয়স কম, তাই এনার্জি হয়তো অফুরান। ঘুমচোখে স্কুল, সেখান থেকে সেট, অভিনয়, তার মাঝেই পড়াশোনা... নিরলস দিন কেটে যায়। চাপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে তারা শিখেও যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

প্যাকআপ হলে চরিত্রের খোলস ছেড়ে ওরা বেরিয়ে আসে সেট থেকে। দিনের শেষে খুদে নেতাজি, লোকনাথরা ফিরে যায় নিরাপদ আশ্রয়ে। কিন্তু চরিত্ররা সঙ্গে থেকে যায় তখনও। পরদিন ভোর থেকেই যে আবার দৌড় শুরু...

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Child Artist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy