উৎসবের আমেজে টলি তারকারা।
রোদে ভরা বসন্তের সকাল।
কালো চশমার বাহার। শাড়ি থেকে ঘাগড়া। পঞ্জাবি থেকে বারমুডা আবিরে বর্ণিল টলিউড। একদিকে অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহান, ব্রাত্য বসু তো অন্য দিকে বাদশা মৈত্র।
নেই কোনও পক্ষ-বিপক্ষ। শীততাপনিয়ন্ত্রক ভ্যানিটি ভ্যানের আরাম ভুলে নোভোতেলের খোলা ছাদে কেবল কথা আর সুরের পিচকিরি। এই শুধু আনন্দের জন্য রোদে পুড়তেও রাজি পুরো টলিউড।
আনন্দবাজার ডিজিটাল আর উনডোজ-এর যৌথ উদ্যোগে ২০২১-এর বসন্ত উৎসবে বেজে উঠল সব রঙের সুর। টলিউডের প্রথম সারির প্রযোজক সংস্থা উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে এই প্রথম হাত মেলাল আনন্দবাজার ডিজিটাল। অতিমারির বেরঙা দিনগুলিতে রং ভরতেই এই আয়োজন। নোভোতেলের ছাদে ঠান্ডাই, চা, কফি, হরেক রকম মিষ্টি ও নোনতা খাবারের গন্ধ। ‘হ্যালো মাইক টেস্টিং...’ প্রস্তুত সব। তৈরি মঞ্চ!
কোভিডের স্বাস্থ্যবিধিতেও খামতি ছিল না অনুষ্ঠানে। আনন্দবাজার ডিজিটালের সম্পাদক অনিন্দ্য জানা উৎসবের প্রথমেই জানিয়ে দিলেন দোল খেলার এক অভিনব পন্থা। এ বার ‘নিজের রং নিজে মাখুন’। একে অপরকে রং না মাখিয়ে নিজের জন্য রং নিলেন তারকারা।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘চার দিকটা উগ্র বিষাদের রঙে ভরা। এই উৎসবের আসল উদ্দেশ্য, সেই রং মুছে আনন্দ ও মিলনের রং ছড়িয়ে দেওয়া।’’ তেমনটাই হল দোলের দিন।
অন্যের ক্ষতি করে নিজের আনন্দের জন্য রং খেলতে রাজি নন ‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ। ছোটবেলার দোলের অভিজ্ঞতার গল্প করলেন তৃণমূলের কর্মী। গায়িকা সোমলতা আচার্য ‘বেলাশেষে’ ছবির ‘শেষ বেলা’ গানটি শোনালেন বাকি অতিথিদের। দরাজ গলায় গান ধরলেন ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকের জনপ্রিয় চরিত্র ‘পটকা’ অম্বরীশ ভট্টাচার্য। ‘সখি ভাবনা কাহারে বলে’ গানে অম্বরীশের সঙ্গে গলা মেলালেন অভিনেত্রী খেয়া চট্টোপাধ্যায়। এমন সুরে সুর মেলালেন সঞ্চালক অনিন্দ্যও।
বসন্ত উৎসব অথচ প্রেমের গল্প হবে না?
আলাপ জমল খেয়া ও আদিত্য সেনগুপ্তের প্রেমের গল্প নিয়ে। তাঁরা গেয়ে উঠলেন ‘তোমাকে বুঝি না প্রিয়’। আদিত্যর মা অভিনেত্রী খেয়ালি দস্তিদার তাঁর ফিরে গেলেন নাট্যদলের বসন্ত উৎসবের দিনে।
এর মধ্যেই হাজির নুসরত। তাঁর শরীরে দোল খেলছে হাল্কা নীল রঙে। যদিও এই নীল রাজনীতির নয় সোজাসুজি জানিয়ে দিলেন নুসরত। দোলের উৎসব সব রং মিলিয়ে দেয় বললেন তিনি। দোলের দিনের ভয় বেরিয়ে এল তাঁর কথায়। রঙে তাঁর ভয় লাগে বটে, কিন্তু উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকেন না বলেই জানালেন অভিনেত্রী। আর কথা নয়। শুরু হল গান। সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ধরলেন ‘রঙ্গবতী’। সেই ছন্দে বসে থাকা দায়। মঞ্চে উপস্থিত ‘মুখার্জিদা’ এবং ‘মুখার্জিদার বউ’ বিশ্বনাথ বসু, কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনামী ঘোষ, মানালি দে, নুসরত এবং অম্বরীশ নাচলেন মনের আনন্দে। দূরে দাঁড়িয়ে পরিচালক শিবপ্রসাদ আর নন্দিতা রায় পরস্পর বলছেন, ‘‘এই ফ্রেম কি আগে দেখেছিল টলিপাড়া?’’
আবার গল্পে ফেরা। বাসন্তী রঙা শাড়িতে ‘গোত্র’ ছবির সেটে রং খেলার গল্প বললেন মানালি।
অম্বরীশ ও সুরজিৎ গাইলেন ‘এ কী লাবণ্যে’। তালে তালে নাচলেন কণীনিকা ও মনামী। ‘বেলাশেষে’ ও ‘বেলাশুরু’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল মনামী এবং অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের। খুদে শিল্পী রণিতা ধরলেন গান। তার মধ্যে ছিল ‘হামি’ ছবির গান।
গান আর কথা থেকে সরে এলেন অভিনেতা মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসুক, ছবি দেখুক, দোলের দিনে সেই আশা রাখলেন তিনি তাঁর প্রিয় দর্শকের কাছে।
কথার ছেড়ে রাধা কৃষ্ণ আর হোরিখেলায় মাতলেন গায়িকা ও তৃণমূল প্রার্থী অদিতি মুন্সি। তাঁর রিনরিনে কণ্ঠে ভরে উঠল নোভোতেলের ছাদ। ‘রঙ্গে রঙ্গিল হইল’-র সুরে তখন মুগ্ধ দর্শক।
দোলের সব রং তাঁর শাড়িতে। অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী তাঁর মনের কথা বুঝিয়ে দিলেন গানের কথায়, ‘‘রং যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে।’’ আর এক খুদে শিল্পী রক্তিম সামন্ত ‘মিলন হবে কত দিনে’-তে সুর মেলাল প্রাণ খুলে।
প্রেম, সম্পর্ক, মিলন থেকে অপেক্ষা। কে যেন আসবে। সবুজ রঙা সিল্কের ব্লাউজ, দুধ সাদা শাড়িতে রানি পাড়ের মিশেল। খোলা চুল। টিপ আর মুক্তমালায় ফাগ ওড়ানোর ইঙ্গিত নিয়ে আড্ডায় কোয়েল মল্লিক। বললেন, ‘‘রানে আমার সাজ দেখে বলছিল, এ কী দোলের জন্য যাচ্ছো সাদা কুর্তা, জিনস্ আর কালো চশমা পরবে তো! আমি বললাম, বাঙালির দোল হল বসন্ত উৎসব। ওটা তো হোলির সাজ!’’ ছোটবেলায় মল্লিক বাড়ির সদস্যরা শান্তিনিকেতনের দোল উৎসবে কী করতেন? উঠে এল কোয়েলের কথায়। তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস কুমারের সঙ্গে উপস্থিত হলেন তাঁর কন্যা অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার। উইন্ডোজ প্রোডাকশন হাউসের ‘নীল দিগন্তে’ গানের তালে পা মেলালেন তিনি।
কোঁকড়ানো চুল। রামধনু হার। দোলের সব রঙের বালা। আর বক্ষ উজাড় করা সাদা লম্বা জামায় সোহিনী সরকার যেন দোল খেলার শেষ রং নিয়ে এলেন উৎসবে। ছোটবেলায় দোলের পরে পরীক্ষা থাকার বিড়ম্বনার স্মৃতিচারণ করলেন অভিনেত্রী। বাংলাদেশের কবি মিজানুর রহমানের কবিতা পড়লেন।
দোলের রঙে কোনও রাজনীতিই যে সত্যি নেই বসন্ত তার সাক্ষী রইল। একই অনুষ্ঠানে আড্ডা দিলেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র এবং নাট্যকার ব্রাত্য বসুও। উজ্জ্বয়িনী মুখোপাধ্যায় নিজের গুরুজীর গান গাইলেন। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাজির তাঁর ছেলে উজান গঙ্গোপাধ্যায়। ‘লক্ষ্মীছেলে’ ছবির বানানোর অভিজ্ঞতা জানালেন উজান। বাবার পরিচালনায় তাঁর প্রথম ছবি। রবি ঠাকুরের ‘হরি খেলা’ পাঠ করলেন শিল্পী সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
প্রেমিকা স্বস্তিকা দত্তকে ছাড়াই হাজির শোভন গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর গানে তাল মেলালেন দর্শকরা। বসন্তে বৃষ্টি ঝরালেন তিনি। ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গাইলেন শোভন।
সুর থেকে কথায় ফিরলেন সঞ্চালক।
বলা হয় রং মেখে ভূতের মতো দেখায়। পেত্নীর মতো কেন দেখায় না? উত্তর এল অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেনের কাছ থেকে। দোল খেলার পরের ক্রিকেট ম্যাচের গল্প বললেন ঋদ্ধি সেন। তাঁর বাবা অর্থাৎ কৌশিক সেনের সঙ্গে সেই খেলা চলত তাঁদের পুরনো বাড়িতে। দোল কি কেবল রঙেই? মোটেও না। কাঁচা ডিম ও বাদুড়ে রঙের কথা মনে করিয়ে দিলেন উজান। বসন্তের রোদেলা দুপুরে আড্ডা জমে উঠল বেশ। সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গেল ‘কোন গোপনে...’।
বসন্ত নতুন অনেক কিছুর জন্ম দেয়। সে ভাবেই সোলাঙ্কি রায় ও বিদীপ্তা চক্রবর্তী উইন্ডোজের সঙ্গে প্রথম কাজ করার অভিজ্ঞতা জানালেন উৎসবের দিনে।
সুরকার-পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ‘আমার ভিতর বাহিরে’ গান গেয়ে পড়ন্ত দুপুরের আমেজ তৈরি করে দিলেন। বসন্ত উৎসবের নানা গল্প শোনালেন টেলি অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দত্ত। হাজির ওম সাহানি আর তাঁর নববধূ অভিনেত্রী মিমি দত্ত।
বেলাশেষে শুরু হল খেলা। সকলেই আলতো আবিরের ছোঁয়ায় রঙিন। রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন ওম-মিমি ‘রঙ্গবতী’ গানের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে।
লাগল যে দোল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy