নিরীহ মুখ এবং দীর্ঘাকায় হেমন্ত ছবির প্রস্তাব পাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কখনও কল্পনাতেও আনেননি তারকা হওয়ার স্বপ্ন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ০৯:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
জঙ্গলই ছিল তাঁর ঘর-বাড়ি। আর বনের পশুপাখিরা পরিবার। নিজে মানুষ হলেও মানুষকে শত্রু মনে করতেন। হেঁটে চলাফেরার চেয়ে গাছের লতা-পাতা ধরে ঝুলে বাঁদরের মতো অন্য গাছে নিমেষে চলে যাওয়া ছিল তাঁর কাছে বেশি সহজ।
০২১৪
পর্দায় এই রকমই টারজানের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন হেমন্ত বিরজে। তাঁর জীবনে এই ছবি ছিল লটারি পাওয়ার মতোই। নিরীহ মুখ এবং দীর্ঘকায় হেমন্ত ছবির প্রস্তাব পাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কখনও কল্পনাতেও আনেননি তারকা হওয়ার স্বপ্ন।
০৩১৪
কোনও দিন অভিনয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র ঝোঁক ছিল না তাঁর। অথচ এই ছবি রাতারাতি তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয়। এই ছবির আগে এবং এই ছবির পরে তাঁর জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
০৪১৪
এই ছবির প্রস্তাব পাওয়ার আগে সামান্য একজন নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করতেন হেমন্ত। সকাল ৯টায় কাজ শুরু হত। চলত বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
০৫১৪
১৯৮৫ সালে ‘টারজান’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন কিমি কাটকার। ছবির পরিচালক ছিলেন বি সুভাষ। মিঠুন চক্রবর্তীর অন্যতম সফল ছবি ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর পরিচালকও তিনি ছিলেন।
০৬১৪
বি সুভাষ আসলে মিঠুনের সঙ্গে ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর সিকোয়েল করার পরিকল্পনা করছিলেন সে সময়। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য মিঠুন ওই ছবিতে সময় দিতে পারেননি। মিঠুন ছাড়া ওই ছবি করা ছিল অসম্ভব।
০৭১৪
তাই পরিচালক স্থির করে যত দিন না মিঠুনের ব্যস্ততা কাটে তিনি অন্য ধরনের ছবি করবেন। প্রাণীদের উপর ছবির করার মনস্থির করেন। যার জন্য নতুন মুখের খোঁজ শুরু হয়। প্রহরারত হেমন্তকে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। হেমন্তের মুখের নিরীহ ভাব এবং দীর্ঘ শরীর, মজবুত কাঁধ— ঠিক এ রকমই ‘টারজান’ খুঁজছিলেন তিনি।
০৮১৪
যেন লটারি পেয়ে গিয়েছিলেন হেমন্তও। একজন সামান্য প্রহরী থেকে সিনেমার নায়ক হয়ে গেলেন তিনি। চূড়ান্ত সফল হয় ছবিটি। রাতারাতি হেমন্তের অনুরাগী হযে ওঠেন অসংখ্য দর্শক। পরিচালক বি সুভাষও তাঁর সঙ্গে আরও ছবি করার প্রতিশ্রুতি দেন।
০৯১৪
তার পর প্রায় মিঠুনের প্রতিটি ছবিতেই হেমন্তকে দেখা যেতে শুরু করে। কিন্তু ছবির সুযোগ পেলেও ‘টারজান’-এর পর হেমন্ত খুব ভাল চরিত্র পাচ্ছিলেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি পার্শ্ব চরিত্রেই অভিনয় করছিলেন। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা হেমন্তের কাছে আর কোনও বিকল্পও ছিল না। ছবিতে টুকিটাকি যা সুযোগ পেতেন তাই-ই করতেন।
১০১৪
ফলে ক্রমশ আর্থিক সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করে। তার উপর ২০০৫ সালে এক মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। ওই মহিলা হেমন্তের অপরিচিত ছিলেন। মহিলার অভিযোগ ছিল, তাঁকে দেখে হেমন্ত প্রকাশ্য রাস্তাতেই কুমন্তব্য করেন এবং শ্লীলতাহানি করেন। এই অভিযোগ সামনে আসার পর হেমন্তের কেরিয়ারে বড় আঘাত নেমে আসে।
১১১৪
শুধু তাই নয় হেমন্তের বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত খবর সামনে আসতে শুরু করে। ২০১২ সালে স্ত্রী রেশমা তাঁর বিরুদ্ধে মত্ত অবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। ওই সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে, প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বারবারই তাঁর ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার খবর শোনা যেত।
১২১৪
ক্রমশ আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ছিল হেমন্তের। ২০১৫ সালে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে চুক্তির সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও হেমন্ত ফ্ল্যাট দখল করে রয়েছেন। উপরন্তু ফ্ল্যাটের মালিককে ভাড়াও দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় জিতে তাঁকে ফ্ল্যাট থেকে বার করে দেন বাড়ির মালিক।
১৩১৪
যে হেমন্ত এক সময় তাঁর রূপ এবং ব্যক্তিত্বের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, আজকের হেমন্তের সঙ্গে তাঁর কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। হেমন্ত পুরোপুরি বদলে গিয়েছেন। মাথার চুল প্রায় সব পড়ে গিয়েছে। চোখেমুখে সেই নিরীহ ভাবও নেই।
১৪১৪
তবে এখনও কিছুটা হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। যে কারণে ছবিতে সুযোগ না পেলেও কখনও কোনও অনুষ্ঠানে তো কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচারে ডাক পান তিনি।