টিম মুক্তধারা।
সংশোধানাগার মানেই স্যাঁতস্যাঁতে, মন খারাপ করা আবহাওয়া, নিশ্ছিদ্র অন্ধকার আর গুমোট গন্ধ মাখা কুঠুরি…মনেগেঁথে যাওয়া এই ছবি আট বছর আগে হঠাৎ করেই পাল্টে দিয়েছিলেন পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘মুক্তধারা’-র কথা মনে আছে? মনে আছে ইউসুফ-নীহারিকাদের কথা? শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক বাতাবরণ তৈরি করে অপরাধী মননে যে আমূল পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন ওই পরিচালক জুটি। আটে পড়ল ‘মুক্তধারা’। আর তার সঙ্গেই ছবি সম্পর্কে জানা গেল এমন কিছু না জানা কথা যা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দেয়।
এই ছবির মধ্যে দিয়েই সাধারণ দর্শক জানতে পারে ‘কালচার থেরাপি’-র কথা। অপরাধীদের উপর ‘কচুয়াধোলাই’, ‘শক থেরাপি’, ‘থার্ড ডিগ্রি’প্রয়োগের সঙ্গে বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস-কবিতায় আমাদের এর আগে পরিচিতি ঘটলেও শিল্পকলার মধ্যে দিয়েও যে দাগী আসামি বদলে হয়ে যেতে পারেন তা দেখিয়েছিলেন ওঁরা দু’জন। সমাজের আতসকাচে আজীবন অপরাধী হিসেবে দেগে যাওয়া মানুষগুলোও যে শিল্পের উপর ভিত্তি করে ফিরতে পারে মুলস্রোতে, দেখিয়েছিল ছবিটি। আর একই সঙ্গে মানসপটে গেঁথে যাওয়া অন্ধ কুঠুরির স্যাঁতস্যাঁতে ছবিতে এসে লেগেছিল নানারঙের বাহার। বলতেই পারেন, ছবিতে অমনি দেখানো যায়, বাস্তবে নয়।
এই ছবির হাত ধরেই বাংলা ছবি এক নতুন অভিনেতা পায়। তিনি নাইজেল
আরও পড়ুন- করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিভৃতবাসে কৃষ্ণকলি ধারাবাহিকের নীল ভট্টাচার্য
বাস্তবিকই এই থেরাপির আঁতুড়ঘর বাংলা। শিবপ্রসাদ বলছিলেন , “এই কাজ প্রথম শুরু হয় মুর্শিদাবাদের সংশোধনাগারে। আমাদেরই বন্ধু প্রদীপ ভট্টাচার্যের উদ্যোগে এবং ইনস্পেক্টর জেনারেল বিডি শর্মার তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রনাথের নাটক দিয়ে প্রথম শুরু হয়েছিল।“সেখানে সফলতা আসার পরেই কলকাতার প্রেসিডেন্সি এবং আলিপুর সংশোধানাগারেই অনুরূপ থেরাপি শুরু হয় যার নাচ এবং নাটকের দায়িত্বে ছিলেন অলকানন্দা রায়। সেখানে নিয়মিত ভাবে বিচারাধীন বন্দিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে নাটক ‘বাল্মিকীপ্রতিভা’। মনে করুন, খবরের কাগজে,বিভিন্ন মিডিয়ায় তা নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হয়েছিল সে সময়। কারাগারের বন্দীরা নাটক পরিবেশনা করছেন! কারাদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জায়গায় সেই নাটক দেখানোর বন্দোবস্ত করাহয়েছিল। শিবু-নন্দিতাও দেখেন। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় ‘মুক্তধারা’-র আইডিয়া।
এ তো শুধু ছবি নয়, অন্ধকার সরিয়ে আলোর খুব কাছাকাছি নিয়ে আসার এক অন্তহীন প্রয়াস
‘কালচার থেরাপি’ নিয়ে প্রথম কোনও ছবি। শুরু হয় জোরকদমে কাজ। জাঁকজমকের সেট নয়, দামি পোশাক নয়। একেবারে সংশোধানাগারের ভিতরে গিয়ে হাতে-কলমে কাজ। শিবপ্রসাদের কথায়,“আবাসিক থেকে কর্মী, জেলার, বন্দী সবার সঙ্গে কথা বলা, অনেক কিছু জানা এক বিরাট অভিজ্ঞতা”।এই ছবির আরও একটি চমকে দেওয়া বিষয়, সে সময়কার বিচারাধীন বন্দিদের দিয়ে ছবিতে কাজ করানো। গান গাওয়ানো। তাঁরা কেউ খুনের আসামি, কেউ বা আরও কোনও মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কোনও না কোনও সময়ে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাঁরা প্রিজন ভ্যানে করে গান রেকর্ড করতে এসেছিলেন। বড় বড় পাঁচিল দেওয়া সংশোধনাগারের মধ্যে আটকে পড়া প্রাণ নিয়েছিল মূলস্রোতের একবুক নিঃশ্বাস। এই ছবির হাত ধরেই বাংলা ছবি এক নতুন অভিনেতা পায়। তিনি নাইজেল। যার আগের জীবন সম্পর্কে অনেকেই জানেন। পরিচালক জুটি কিন্তু নাইজেলকে দিয়ে ওই একটি কাজ করিয়েই ব্রাত্য করেননি। তাঁদের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘গোত্র’-তেও নাইজেলই হিরো। অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেছিল ‘মুক্তধারা’। অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজেও পাওয়া গিয়েছিল ওই ছবিতে। আর সে জন্যই আট বছর পার করেও ছবিটির জনপ্রিয়তা কমেনি। এ তো শুধু ছবি নয়, অন্ধকার সরিয়ে আলোর খুব কাছাকাছি নিয়ে আসার এক অন্তহীন প্রয়াস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy