Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hamlet

‘হ্যামলেট’ দেখে বাক্যহারা দেবশঙ্কর! শব্দ ধার করে লেখা চিঠি পাঠালেন ঋদ্ধি, কৌশিককে

শিল্পীর প্রতি শিল্পীর প্রত্যাশা, আদানপ্রদানের উদাহরণ হয়ে উঠল ‘হ্যামলেট’-এর মঞ্চ। হাতে লেখা চিঠিতে ঋদ্ধিকে সমাদর দেবশঙ্করের। কৌশিক চান, এমন মুহূর্তগুলি শিল্পের ইতিহাসে অক্ষয় হোক।

শেষমেশ চিঠি লিখে নিজের অভিব্যক্তি কৌশিক, ঋদ্ধিকে পাঠালেন দেবশঙ্কর। কী ছিল সেই হাতে লেখা চিঠিতে?

শেষমেশ চিঠি লিখে নিজের অভিব্যক্তি কৌশিক, ঋদ্ধিকে পাঠালেন দেবশঙ্কর। কী ছিল সেই হাতে লেখা চিঠিতে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৪
Share: Save:

ঋদ্ধি সেন অভিনীত ‘হ্যামলেট’ দেখে মুগ্ধ হলেন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার। সেই মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করা যে কত কঠিন, তা নিজেও আগে বুঝতে পারেননি। তাই শুরুতে ভাষা হারিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে অ্যাকাডেমি মঞ্চে ‘হ্যামলেট’-এর শো শেষে গ্রিনরুমে এসে দাঁড়িয়েছিলেন দেবশঙ্কর। পরিচালক কৌশিক সেনের মনে হয়েছিল, কিছু হয়েছে দেবশঙ্করের। কিছু বলতে চান। তার পর বুঝলেন, অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারছেন না শিল্পী। তার পরই ঋদ্ধির সঙ্গে কোনায় গিয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হয় শুক্রবার দুপুরে। যখন হাতে লিখে শেষমেশ নিজের অভিব্যক্তি কৌশিককে পাঠান দেবশঙ্কর। কী ছিল সেই হাতে লেখা চিঠিতে?

দেবশঙ্কর সাদা কাগজে নীল কালিতে লিখছেন, ‘‘কথার পর কথা সাজানো হাজারদুয়ারি। হাওয়ার একগুঁয়ে হামলায় এ বার ধসে পড়ল। এখন আমার সামনে রয়েছে একটা ঝড়ঝাপটা দাগা মুখ আর শরীর। তাকে আমি একতাল অন্ধকারে বুকের কাছে রেখেছি। এখন শব্দের ঘেরাও থেকে বেরিয়ে এসেছি, কে আর আমাকে থামাতে পারে? এই ভালোবাসাকে বুকে নিয়ে আমি নক্ষত্রলোকে পাড়ি দেব। সেই আলোক সংকেত পাওয়ার জন্য, সেই হৃদয়বার্তা শোনার জন্য আমার যেটুকু অপেক্ষা। এতকাল আমি ছন্নছাড়া দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাস ছিলাম। এ বার উধাও গানের ঢেউ জড়িয়ে আমার চলা শুরু এবং আমার পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তারাফুল ঝরার পালা।

‘স্বপ্নসন্ধানী’র ‘হ্যামলেট’ দেখে অরুণ মিত্রর এই কবিতাটি নাটকের সকল কলাকুশলী এবং অবশ্যই ঋদ্ধির জন্য।’’

দেবশঙ্কর যখন এই বার্তা হাতে লিখে পরিচালক কৌশিককে পাঠিয়েছেন, তখন কাছাকাছি ঋদ্ধি ছিলেন না। গিয়েছিলেন এক অনুষ্ঠানে। কৌশিকই তাঁকে মেসেজ করে চিঠিটি পাঠান। অভিভূত ঋদ্ধি সেটির দিকে তাকিয়ে থাকেন।

দেবশঙ্করের হাতে লেখা সেই চিঠি।

দেবশঙ্করের হাতে লেখা সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র।

খুশিতে ডগমগ তিনি। আবার একই সঙ্গে গলা বুজে আসে তাঁর। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘ভাল কাজ দেখার পর অনেক সময় ভাষা হারিয়ে যায়। ঠিক তখনই কিছু বলার মতো ভেবে পাই না। তখন কথা ধার করতে হয়...। কাল শো শেষে দেবুকাকুও আমায় কী বলবে বুঝতে পারছিল না। জড়িয়ে ধরেছিল। তার পর কোণে ডেকে কবিতাটা পড়ে শোনায়। এর পর তো আমি ‘থ্যাংক ইউ’ বা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে কিছু প্রকাশ করতে পারব না, যা বলতে চাইছি তার ভাষা আমার কাছেও নেই। শুধু বলতে পারি, এক জন শিল্পীর কাছে এটা বড় প্রাপ্তি।’’

ঋদ্ধি বোঝেন, শুধু এক জন দর্শক বলছেন না, দেবশঙ্কর এক জন স্বনামধন্য অভিনেতাও। তাঁর এ হেন অনুভূতির সাক্ষী হওয়াই যে সৌভাগ্য! আবেগে ভেসে ঋদ্ধিও বলেন, ‘‘তিনি তো বুঝেছেন অভিনেতা হিসেবে কোন জায়গাটা আমার পক্ষে পারফর্ম করা কঠিন ছিল, আর কোনটা পারিনি—সবটুকুই দেবুকাকু দর্শক এবং শিল্পীর চোখ দিয়ে দেখেছে। সেখান থেকে তার একটা স্বতঃস্ফূর্ত এবং শৈল্পিক অভিব্যক্তি খুব দামী। আর হাতে লেখা চিঠি...। এখন কে এমন করেন?’’

জানালেন, সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা তাঁর অভিনয়জীবনে। ধন্যবাদ না হয় দিতে পারবেন না, প্রতিদানের কথা কিছু ভেবেছেন? ঋদ্ধিকে প্রশ্ন করতেই তিনি হেসে বললেন, ‘‘আমার কী-ই বা যোগ্যতা! শুধু চাইব আরও বেশি করে দেবু কাকুর অভিনয় দেখতে।’’

আবেগপ্রবণ কৌশিকও। এই সম্মান পরিচালক হিসাবে তাঁরও। ঋদ্ধিকে নিয়েও গর্বে বুক ভরে ওঠে তাঁর। যদিও পুত্র বলে নিজমুখে তাঁর প্রশংসা করলেন না।

আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘শিল্পীর প্রতি শিল্পীর শ্রদ্ধা তো এমনই হওয়া উচিত। গতকাল শোয়ের পর আমার দেবশঙ্করকে দেখে মনে হচ্ছিল, ওর যেন ঘোর লেগেছে ঋদ্ধির অভিনয় দেখে। প্রথম বার মেকআপ রুমে দেখা করে যাওয়ার পর স্ত্রীকে নিয়ে আবার ফিরে এল।’’

তাঁর চোখেমুখে কেমন এক ঔজ্জ্বল্য। সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভঙ্গি যেন দেবশঙ্করোচিত নয় ঠিক। কৌশিকের কথায়, ‘‘ও একটু অন্তর্মুখী, নিজের মতো থাকতেই ভালবাসে। সেখানে ওর ভাল লাগার কথা এমন করে বলা অন্য রকম তো বটেই। বোঝা যাচ্ছিল, গোটা প্রযোজনাটাই, বিশেষ করে ঋদ্ধির অভিনয়, ওকে কতটা স্পর্শ করেছে। একজন শিল্পীর বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না, মুগ্ধতার এই প্রকাশটা মনের কোন স্তর থেকে উঠে আসে।’’

দেবশঙ্কর জানিয়েছিলেন, নিজের কথায় তিনি জানাতে চাইছেন না তাঁর ভাল লাগার অনুভব। তাই তিনি শরণ নিয়েছেন কবি অরুণ মিত্রের।

কৌশিকের কথায়, ‘‘‘হ্যামলেট’ একটা সর্বগ্রাসী চরিত্র। চরিত্রটা ঋদ্ধি ধারণ করতে পারে। এ কথা নাসিরউদ্দিন শাহ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীও বলেছেন। কিন্তু শিল্পী দেবশঙ্করের এই ভাল লাগা যেন বিশেষ হয়ে দেখা দিয়েছে। নিছক ভালমন্দ বলার বাইরে শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর আদানপ্রদানের পরিসরটা এখানে যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শিল্পীর প্রত্যাশাও তেমনটাই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy