শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে ছিলেন বড্ড খুঁতখুঁতে। কারণ, সেই বিষয়ে পড়াশোনা ছিল বিস্তর। গান গাওয়ার ক্ষেত্রে ত্রুটিবিচ্যুতি ভারী অপছন্দ ছিল তাঁর। গায়িকা হৈমন্তী শুক্ল ছিলেন তাঁর সমসাময়িক। যদিও একে অপরকে দাদা-দিদি বলেই সম্বোধন করতেন। দু’জনের মধ্যে সেতুবন্ধনের মাধ্যম বাঙাল ভাষা। একে অপরের মধ্যে এই ভাষাতেই কথোপকথন চলত। অনুপের প্রয়াণের খবরে মনটা ভারক্রান্ত হৈমন্তীর। তিনি বললেন, ‘‘আর কিছু দিন থাকতে পারত, হয়তো সময় হয়ে গিয়েছিল।’’
আরও পড়ুন:
আনন্দবাজার অনলাইনকে হৈমন্তী বলেন, ‘‘ওর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর বিরাট দখল ছিল। সব রকমের গান গাইতে পারত। খুব মেধাবী ছিল। সত্যজিৎ রায় কেন তাকে দিয়ে গানগুলো গাইয়েছিলেন, তার গায়কিতেই স্পষ্ট। তেমনই ভাল নজরুলগীতি গাইত। ভুলভাল গাইলে রেগেও যেত।’’
শিল্পী অনুপের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে হৈমন্তীর, তবে মানুষ অনুপের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল গায়িকার? হৈমন্তীর কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে ওর একটা হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল। আমাকে নিজের বোনের মতো দেখত। কখনও কখনও গানের মাঝে বলত, বেশি উঁচু স্কেলে না গাইতে। কারণ, অনেক দিন গাইতে হবে। গলার যত্ন নিতে বলত। গানের মাঝে ভাল চা পাতা দিয়ে চা করে খাওয়াত। এগুলো সবই প্রকৃত শিল্পীর পরিচয়। তবে একটা সময় যোগাযোগ কমতে থাকে। ও আমাকে এক বার ইলিশ মাছ রেঁধে খাইয়েছিল, সেই বাটিটা আজও আমার কাছে রয়ে গিয়েছে। আমার খুব মনটা খারাপ হয়ে গেল শুনে। আরও একটু থাকতে পারত।’’
১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবির ‘দেখো রে নয়ন মেলে’, ‘ভূতের রাজা দিল বর’, ‘ও মন্ত্রী মশাই’-এর মতো কালজয়ী গান তাঁর গাওয়া। ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির ‘মোরা দু’জনায় রাজার জামাই’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’, ‘এসে হীরক দেশে’র মতো গানও অনুপ ঘোষালেরই গাওয়া। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন অনুপ ঘোষাল। তাঁর মৃত্যুর পর শোকবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।