Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Haami 2

‘কোথাও একটা গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে’! শিবপ্রসাদ-গার্গীর রসায়ন কি এ বারও তেমন জমবে?

গার্গী রায়চৌধুরী এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পর্দার জুটি সেই ‘রামধনু’ থেকেই। দু’জনের রসায়ন নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে কলম ধরলেন পরিচালক-অভিনেতা।

‘হামি ২’ ছবিতে লাল্টু-মিতালী জুটি।

‘হামি ২’ ছবিতে লাল্টু-মিতালী জুটি। নিজস্ব চিত্র।

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৫
Share: Save:

‘ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল স্কুল মাস্টার হবে, এখন স্টুল মাস্টার’— এই সংলাপটি ‘হামি ২’ ছবির যে দৃশ্যের, সেটি অন্যতম মজার, আবার মনে দাগ কাটার মতোও। লাল্টু আর মিতালী, এই দুই চরিত্র তৈরি হয়েছিল ২০১৪ সালের ‘রামধনু’ ছবিতে। লাল্টু-মিতালী জুটি। মিতালী কঠিন কঠোর বাস্তব কথাগুলি অকপট সহজ ভাবে বলে। লাল্টু কখনও সেটা বুঝতে পারে, কখনও পারে না, থতমত খেয়ে যায়। ‘রামধনু’ ছিল স্কুলে ভর্তি করানোর গল্প। মিতালী তার ছেলেকে বড় স্কুলে ভর্তি করতে যায়। লাল্টুর গেঞ্জির কলারটা চেপে ধরে মিতালী সে বার বলেছিল, “আর মাত্র একটা স্কুল বাকি আছে… আমার ছেলেকে আমি স্কুলে ভর্তি করাবই। তার জন্য সিপিএম তৃণমূল যা করতে হয় তুমি করো…।” লাল্টু অবাক চোখে তার বউয়ের দিকে তাকিয়েছিল।

২০১৮ সালে ‘হামি’তে মিতালী কোনও দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে কাউন্সিলরের বউকে পিটিয়ে দিয়েছিল। মিতালী এই যুগের মা। সে মধ্যবিত্ত। সে তার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু করতে পারে। সে সেরাটা চায়। সে জানে তাকে লড়াই করে পেতে হবে। সে জানে তার স্বামী, তার শ্বশুরবাড়ি বা তার বাপের বাড়ি, কোনও জায়গা থেকে সে গচ্ছিত কোনও কিছু পাবে না। তাকে অর্জন করতে হবে। সে মুখরা, সে কঠিন অথচ বাস্তব।

বেহালার এক লোকেশনে মিতালী এবং লাল্টু মণ্ডলের বাড়ির শুটিং হচ্ছে। সরকারি এক পরীক্ষার জন্য লাল্টু প্রস্তুত হচ্ছে। মুখস্থ করে যাচ্ছে দেশ, রাজধানীর নাম। মুখস্থের মাঝখানেই সে ভুল করে বসে। তার মনে পড়ে না মাল্টা বলে যে দেশ আছে, তার রাজধানী কী। লাল্টু বলে চলে মাল্টা… মাল্টা আরে মাল্টা… সেই সময় তার ছেলে, যে কি না বিস্ময় বালক, সে এসে বলে ভেল্লেটা। লাল্টু অবাক। মিতালী ওরফে গার্গী এগিয়ে আসে লাল্টুর দিকে। মিতালী বলে ওঠে, “সাত বার স্কুলের চাকরির পরীক্ষা দিয়েও তো লিস্টে নাম ওঠেনি… ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল স্কুল মাস্টার হবে আর এখন স্টুল মাস্টার।” সংলাপটা যখন বলা হচ্ছে ফ্লোরে সবাই হেসে ওঠে। এমনকি, স্ক্রিপ্ট রিডিং-এর সময়ও সবাই হেসেছিল। শুধু শুটিংয়ের সময় আমার ক্যামেরাম্যান অলোক মাইতি আমার কাছে এসে বলে, “দাদা বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। লাল্টুর জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। কত ছেলে আছে বলো, যাদের স্বপ্ন ছিল তারা কিছু হবে। স্কুল মাস্টার হবে, সেটা পূরণ হল না।”

গার্গী রায়চৌধুরী এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পর্দার জুটি সেই ‘রামধনু’ থেকেই।

গার্গী রায়চৌধুরী এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পর্দার জুটি সেই ‘রামধনু’ থেকেই। নিজস্ব চিত্র।

‘হামি ২’ চিত্রনাট্য লেখার সময় কোথাও পড়েছিলাম পোস্ট অফিসের পিওনের চাকরির জন্য পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করা জনৈকও পরীক্ষায় বসেছে। মাস্টার্স করা অনার্স গ্র্যাজুয়েট হাসপাতালের ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্ট, তার চাকরির জন্য বসেছে। লাল্টু মণ্ডল সেই মানুষগুলির মধ্যে পড়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল, এক দিন স্কুল মাস্টার হবে। লিস্টে নাম উঠেও পিছনের লোক চাকরি পেয়ে গিয়েছে, কিন্তু সে পায়নি। তাই সে কমোড টুল বিক্রি করে, কিন্তু এখনও সে অপেক্ষা করে একটা চিঠির কিংবা একটা ফোন কলের। মাঝেমাঝে গিয়ে দেখে তার লিস্টে নাম উঠেছে কি না।

‘হামি ২’ ছবির একটি দৃশ্যে গার্গী এবং শিবপ্রসাদ।

‘হামি ২’ ছবির একটি দৃশ্যে গার্গী এবং শিবপ্রসাদ। নিজস্ব চিত্র।

লাল্টু-মিতালীর কিছু কিছু দৃশ্য ‘রামধনু’ এবং ‘হামি’তেও ছিল। আর কিছু কিছু সংলাপ দর্শকের খুব পছন্দের এবং আমাদের লিখতেও খুব ভাল লাগে। যে রকম মিতালীর লাল্টুকে ‘লাল্টুবাবু’ বলে সম্মোধন বা লাল্টুর নিজের স্ত্রী এবং পরিবারের সকলকে খেতে দেওয়ার সময় ‘মে আই’ বলে খাবার সার্ভ করা। আবার ধরুন কোনও সময় লাল্টুর মনে হচ্ছে, বোধ হয় ‘কোথায় একটা কিছু গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে’। এই গন্ডগোল কথাটা খুব স্পেশ্যাল লাল্টু এবং মিতালীর কাছে। ‘হামি ২’-তেও এই রকম একটা দৃশ্য আছে যেটা শুটিং করতে গিয়ে বেশ মজা পেয়েছি। বিক্রম-বেতালের বেতালের মতো মিতালী এসে লাল্টুর গলাটা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে। সত্যি বলছি, কোন স্বামীকে যদি বউ এসে ভীষণ আপন করে জড়িয়ে ধরে ডাকে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। নিশ্চয়ই কোনও একটা ভয়ঙ্কর কিছু চাইবে বা জিজ্ঞাসা করবে। আর মিতালী অর্থাৎ গার্গীর এই ডাকটা অসম্ভব সুন্দর। এই দৃশ্যে ছিল মিতালী এসে আমার গলা জড়িয়ে বলবে ‘লাল্টুবাবু তুমি কখনও ভেবেছিলে আমাদের দু’জনের ছেলে এই রকম একটা কিছু হবে’, লাল্টু তখন লুঙ্গি পরছে। এই লুঙ্গি পরাটা কিন্তু খুব ডেলিকেট ব্যাপার। এই লুঙ্গি পরার সময় মিতালী লাল্টুকে জড়িয়ে ধরে। আর লাল্টু তখন বলে ‘আমার মনে হয় কোথাও একটা কিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে… মনে হয় হাসপাতালে পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে।’ লাল্টু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না যে, তার ছেলে বিস্ময় বালক। কারণ, সে তো সাত বার স্কুলের চাকরির পরীক্ষায় বসেছে, কিন্তু সুযোগ পায়নি। এই দৃশ্যটা বেশ মজার। কিন্তু মজার মধ্যেও যে সত্যটা আছে, সেটা মনকে নাড়া দেয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Gargi Roy Chowdhury Shiboprasad Mukherjee Haami 2
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy