গুলশন দেবাইয়া। ছবি: সংগৃহীত।
একসঙ্গে বড় পর্দা ও ওটিটি-তে কাজ করছেন। এক দিকে চলছে তাঁর ওয়েব সিরিজ় ‘ব্যাড কপ’। সিরিজ়ে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। অন্য দিকে, বড় পর্দায় আসছে তাঁর ছবি ‘উলঝ’। এই ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই মুম্বই থেকে ফোনে কথা বললেন গুলশন দেবাইয়া। শুনল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: ‘ব্যাড কপ’ চলছে। দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করছেন। কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
গুলশন: সেই ভাবে বলতে পারব না। দর্শক বলতে পারবেন। তবে এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলেও বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি। পুলিশের উর্দিতে দর্শক পছন্দ করছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁরা আমাকে জানাচ্ছেন সে কথা। কিন্তু একটাই সমস্যা, দর্শক চাইছেন, সব ক’টি এপিসোড একসঙ্গে আসুক। আসলে এখনও গল্পের বহু মোড় নেওয়া বাকি আছে।
প্রশ্ন: ‘দহাড়’ ওয়েব সিরিজ়ে এক সৎ পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর এই সিরিজ়ের নামই বলে দিচ্ছে— ‘ব্যাড কপ’। কোনও চরিত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে মেলাতে পেরেছেন কি?
গুলশন: তেমন কিছুই নয়। দু’টি চরিত্রই আমার খুব কাছের। আসলে চরিত্রগুলিতে অভিনয় করতে আমি কতটা আগ্রহী, সেটাই বিচার্য। আমি তো পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করছি দু’জায়গাতেই। দু’টি চরিত্রে অভিনয় করতে ভাল লেগেছে অভিনেতা হিসেবে। ‘ব্যাড কপ’-এ নাটকীয়তা বেশি। অন্য দিকে ‘দহাড়’-এ বাস্তবতা বেশি।
প্রশ্ন: ‘শয়তান’ ছবি থেকে আপনার বলিউডের সফর শুরু। তার পর ১৩ বছর কেটে গিয়েছে। নিজের পরিবর্তন কতটা টের পান?
গুলশন: এই বিষয়ে আমার বহু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু লড়াই ছাড়া কোনও কিছুই সম্ভব নয়। এই যাত্রাপথ খুব সহজ ছিল না। তবে সেটাই স্বাভাবিক। এই সময়টায় আমি অনেক কিছু শিখেছি। অভিনয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় হয়তো কিছু অসুবিধা হয়। কিন্তু সে সব অতিক্রম করে অনেক কিছু শিখেছি। অভিনয় জগতে এসে নিজের কেরিয়ার গড়া, ছবির ব্যবসায়িক দিক ইত্যাদি বহু কিছু শিখেছি, যা আমি সত্যিই উপভোগ করি।
প্রশ্ন: অনুরাগ কাশ্যপের প্রযোজনায় প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছেন। এখন তিনিই আপনার সহ-অভিনেতা। কোনও তফাত খুঁজে পেয়েছেন?
গুলশন: প্রযোজক বা পরিচালক হিসেবে অনুরাগ খুবই ক্ষমতাবান। সৃজনশীল স্বাধীনতা যথেষ্ট দেন। অভিনেতা হিসেবে ওঁর সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া যায়। এর আগে ওঁর সঙ্গে সেই ভাবে আড্ডা হয়নি। তবে ‘ব্যাড কপ’-এ ওঁর সঙ্গে জমিয়ে গল্প করেছি।
প্রশ্ন: এই আড্ডা থেকে কি অনুরাগকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলেন?
গুলশন: ওঁর স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে (হাসি)। এ ছাড়া নতুন কিছু দেখিনি। তবে আমি মনে করি, ওঁর নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। এখন একটু স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া উচিত ওঁর। কিন্তু, মানুষ হিসেবে ওঁকে আমার সব সময়ই খুব মধুর বলেই মনে হয়েছে।
প্রশ্ন: বহু ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কী ভাবে চিত্রনাট্য পড়ে চরিত্র নির্বাচন করেন?
গুলশন: আমায় যদি কেউ প্রশ্ন করেন, আমি কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, আমার উত্তর হবে, আমি সত্যিই জানি না। কিন্তু কেউ আমার কাছে কোনও চিত্রনাট্য নিয়ে এলে সেটা পড়ে যদি আমার ভাল লাগে, আমি কাজটা করি। চিত্রনাট্য পড়ে আগে নিজের ভাল লাগতে হবে। আগের কাজের সঙ্গে তার যেন কিছু পার্থক্য থাকে। গল্প এবং চরিত্র, দুটোই আমার কাছে আকর্ষণীয় হতে হবে। নানা ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাই অবশ্যই। এ ছাড়া এর পর পরিচালক কী ভেবে আমাকে চাইছেন কোনও চরিত্রে, সেই বিষয়গুলি আসে।
প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত কোন চরিত্রে অভিনয় করা সবচেয়ে কঠিন ছিল?
গুলশন: দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গোস্ট স্টোরিজ়’-এ সেই দানবের চরিত্রে অভিনয় করতে সত্যি আমায় বেগ পেতে হয়। টানা সাত দিন ১৪ ঘণ্টা ধরে গোটা শরীরে প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে অভিনয় করতে হয়েছিল। প্রতি দিন সেটে এসে এই মেকআপ নিতে হত। তবে বিষয়টা শেষ পর্যন্ত বেশ অন্য রকম দেখতে লেগেছিল।
প্রশ্ন: ‘অভিনেতা’ না কি ‘তারকা’— নিজেকে কী বলতে পছন্দ করেন?
গুলশন: আমি নিজেকে অভিনেতা বলেই মনে করি। দর্শক আমায় অভিনেতা না কি তারকা মনে করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি আমায় তারকা মনে করেন, বা তারকার সম্মান দেন, তা সত্যিই আমার ভাল লাগবে। গোটা বিশ্বে যদি আমি বিরাট কোনও পরিচিতি পাই, আমার অবশ্যই ভাল লাগবে। কিন্তু, আমার লক্ষ্য যেন কখনওই তারকা হয়ে ওঠা না হয়ে যায়। আমি আমার কাজটা মন দিয়ে করতে চাই। অভিনয়ে একশো শতাংশ দিতে চাই। সেটা ভাল ভাবে করতে পারলেই আমি খুশি।
প্রশ্ন: তারকা-সন্তান বনাম বহিরাগত— বলিউডের এই চর্চা নিয়ে আপনার কী মত?
গুলশন: এই নিয়ে সত্যিই কোনও তর্ক হওয়া উচিত নয়। আসলে আমরা নিজেদের সুবিধার কথা ভুলে যাই, যখন সামনে আরও বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত কাউকে দেখি। আমি জীবনে কী কী সুবিধা পেয়েছি, তা সব সময় নিজেকে মনে করাই। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তা সত্ত্বেও আমায় অভিনয়ে আসার অনুমতি তাঁরা দিয়েছেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে দিয়েছেন। কখনও কোনও বাধা দেননি। ভাল স্কুলে পড়াশোনা করিয়েছেন। এমনকি, এখনও বাবা-মা আমার থেকে একটা টাকাও নেন না। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, আমিও কম সুবিধা পাইনি। নিজের সুবিধার কথাও মনে রাখা দরকার। আমার থেকেও প্রতিভাবান বহু মানুষ রয়েছেন। কিন্তু, তাঁরা সেই সুবিধাগুলি পাননি বলে হয়তো নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি।
প্রশ্ন: ‘উলঝ’-এ অভিনয় করছেন জাহ্নবী কপূরের সঙ্গে। অভিজ্ঞতা কেমন?
গুলশন: জাহ্নবী খুবই পেশাদার ও পরিশ্রমী অভিনেত্রী। নিজের কাজ নিয়ে ভীষণ রকম মনোযোগী। আর আমি পেশাদার অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসি। ‘গানস অ্যান্ড গুলাব’-এ রাজকুমারের (রাজকুমার রাও) সঙ্গেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অতিরিক্ত কিছু ছিল না। আমরা কাজ শেষ করে যে যার মতো হোটেলে পৌঁছে যেতাম।
প্রশ্ন: এমন কোনও চরিত্র রয়েছে, যা আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে প্রভাবিত করেছে?
গুলশন: তেমন কোনও চরিত্র মনে পড়ছে না। তবে ২০১৭-য় আমার ডান হাঁটুতে একটা বড় অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তার ছ’মাসের মধ্যেই আমি ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’ ছবির শুটিং শুরু করি। এই চরিত্রের প্রস্তুতির সময় নিজের বাস্তব জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলাম, কারণ চিকিৎসা তখনও চলছিল। বিষয়টা বেশ কঠিন ছিল, প্রায়ই যন্ত্রণা হত। কিন্তু ভিতর থেকে শক্তি অর্জন করেছিলাম, যার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলাম।
প্রশ্ন: সাফল্য ও ব্যর্থতা কী ভাবে সামলান?
গুলশন: সব কিছুই সাময়িক। সারা জীবন ধরে কিছু চলবে না। নিজের সাফল্য ও ব্যর্থতার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এটাই নিজেকে বলতে থাকি।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের শুরুর দিকে লড়াই করতে হয়েছিল?
গুলশন: আমি এখনও লড়াই করে চলেছি। লড়াই জীবনেরই অংশ। দু’মাস আগে নতুন বাড়িতে এসেছি। কিন্তু এখনও দেওয়ালে ছবিগুলো টাঙানো হয়নি। যদিও এটা খুবই বোকা বোকা একটা লড়াই। হয়তো আরও বেশি লড়াই করা উচিত ছিল। লড়াই ছাড়া জীবন চলে না। লড়াই করলেই জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায়। কাজের ক্ষেত্রে হোক বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক, আমরা সব সময় শিখে চলেছি। আর তার মধ্যে লড়াইও রয়েছে। আমিও লড়াই করছি এখনও। এ নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই।
প্রশ্ন: অবসরে কী করেন?
গুলশন: অবসরে আমি ঘুমোই। ইউটিউবে নানা বিষয়ে ভিডিয়ো দেখি।
প্রশ্ন: সমাজমাধ্যমে দেখেছি, পোষ্যের সঙ্গেও সময় কাটান...
গুলশন: আমি তিন পোষ্য সন্তানের খুব সুখী বাবা। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার সবচেয়ে বড় পোষ্য বিড়ালের ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে। অনেক চিকিৎসা করিয়েছিলাম। সেই ক্ষতি আমার জীবনে কখনওই পূরণ হবে না। এ ছাড়া বাকি দু’জনের সঙ্গে সময় কাটাই। ওদের একটু শরীর খারাপ হলেই আমি খুব চিন্তায় পড়ে যাই।
প্রশ্ন: আপনি নাকি বাংলা বলতে পারেন। বাংলা গানও গাইতে পারেন। বাংলার সঙ্গে যোগ কী ভাবে?
গুলশন: বেঙ্গালুরুতে একটা বাঙালি গোষ্ঠী রয়েছে। সেখানে আমি যুক্ত ছিলাম। সেখানে বহু বাঙালি ছিলেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন। সেখানে সৃজিতের পরিচালিত একটা নাটকে আমি অভিনয়ও করেছিলাম। এখন তো বাংলা ছবিতে সৃজিত খুবই সফল পরিচালক। আমরা অনেক ভাল সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি।
প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে তা হলে আপনাকে দেখা যাবে?
গুলশন: আমি সত্যিই জানি না। আমি শৈশবে হিন্দি ছবির প্রেমে পড়েছিলাম। সেই স্বপ্নই এখন আমার সত্যি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আঞ্চলিক ভাষাতেও বহু ভাল কাজ হচ্ছে। জানি না, আগামীতে কী হবে। ভবিষ্যৎ সবারই অজানা। সৃজিতের সঙ্গেই কথা হয়েছে বেশ কয়েক বার। তবে সময়ের জন্য হয়ে ওঠেনি।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি দেখেন?
গুলশন: সাম্প্রতিক কোনও ছবি দেখিনি। কিন্তু একটা সময় সত্যজিৎ রায়ের সব ছবিই দেখেছি।
প্রশ্ন: বাংলার কোন বিষয়টা সবচেয়ে পছন্দ?
গুলশন: বাংলা সাহিত্যের কথা বলতে হয়। এ ছাড়া যেটা বলতেই হবে, সেটা হল বাঙালি খাবার। আমার অন্যতম প্রিয় খাবার। এমনকি, নিরামিষেও বহু ভাল খাবার রয়েছে। আমার তো খুব ভাল লাগে। আমি ইনস্টাগ্রামে কিছু রেসিপি অনুসরণ করে রান্না শিখছিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy