রাজ চক্রবর্তীর ধারাবাহিক ‘গোধুলি আলাপ’ এ সপ্তাহে স্লট লিডার। কৌশিক সেন এবং সমু সরকারের অসমবয়সি প্রেমের গল্পে মজেছেন বাংলার দর্শক। প্রথম বার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় সমুর। তাও আবার রাজের পরিচালনা এবং কৌশিকের সঙ্গে জুটি। দক্ষিণ দিনাজপুরের মেয়ে সমুর দেড় মাসের অভিজ্ঞতা কেমন? ভাগ করে নিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
‘গোধূলি আলাপ’-এ কৌশিক-সমু
প্রশ্ন: মধ্য বয়সের পুরুষের প্রেমে আপনার চরিত্র। বাস্তব জীবনে কখনও সমুর সঙ্গে এ রকম হয়েছে?
সমু: অনেকের স্কুলে বা কলেজে শিক্ষকদের প্রতি ভাললাগা তৈরি হয়। আমার সেই সুযোগই হয়নি। মেয়েদের স্কুলে পড়েছি। স্যার বলে ডাকতেই পারিনি কাউকে। কলেজেও তাই। এক জনই শিক্ষক ছিলেন, বাকি শিক্ষিকা। কিন্তু সেখানেও ভাললাগা তৈরি হয়নি। আমার এমনিতেই দুঃখের জীবন।
প্রশ্ন: তা কেন?
সমু: এখনও প্রেম কী, তাই বুঝিনি। প্রেমে পড়িইনি। অসমবয়সি ছেড়েই দিলাম। সমবয়সি পুরুষের প্রেমেও পড়িনি আমি।
প্রশ্ন: সেকী!
সমু: (হেসে) হ্যাঁ। তাই জন্যেই বোধহয় মন দিয়ে কাজ করতে পারছি। প্রেম নেই জীবনে।
প্রশ্ন: কিন্তু ধারাবাহিকে তো প্রেম আসবে। অরিন্দম রায়ের (কৌশিক সেনের চরিত্রের নাম) প্রেমে পড়বেন আপনি। তখন তো কৌশিক সেনের সঙ্গে প্রেমের সংলাপ আদানপ্রদান করতে হবে। প্রেমের দৃশ্যেও অভিনয় করতে হবে।
সমু: তখন কী হবে, সেটা নিয়ে সত্যিই এখনও ভাবিনি। ভাবতে হবে।
প্রশ্ন: ভাবুন না।
সমু: (হেসে) আমার ধারণা, সেটে উকিলবাবুর (কৌশিক সেন) সামনে ‘নোলক’ (সমুর চরিত্রের নাম) হয়ে উঠলেই প্রেমের সংলাপ বলতে লজ্জা করবে না। কৌশিক স্যার আর পরিচালক তো আছেনই। ওঁরা আমায় সাহায্য করবেন নিশ্চয়ই।
প্রশ্ন: কৌশিক সেন কি হট? মহিলাদের মধ্যে ওঁকে নিয়ে তো পাগলামি আছেই। আপনার কী মনে হয়?
সমু: এ বাবা! শব্দটা উচ্চারণ করতেই আমার লজ্জা লাগছে। উনি আমার স্যার। ও ভাবেই দেখি। এ সব জানি না।
প্রশ্ন: কৌশিক স্যার সেটে বকাঝকা করেন?
সমু: একেবারেই না! উনি খুব মিষ্টি এক জন মানুষ। তবে কোনও দিন যেন বকা না খাই, সেই প্রার্থনা করুন। ওঁর কাছ থেকে শিখেই চলেছি আমি। এক দিন কান্নার দৃশ্যে আমি শুরু থেকেই জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছিলাম। উনি আমাকে অভিনয়ের গ্রাফ বুঝিয়ে দিলেন সে দিন। ওঁর পরামর্শ মতোই ধীরে ধীরে কান্নার সুর চড়ালাম। তাতে শুনতে ও দেখতে ভাল লাগল। তা ছাড়া কোনও কঠিন বাংলা শব্দের মানে বুঝিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে উচ্চারণ ঠিক করিয়ে দেওয়া, স্যারের থেকে শেখার অন্ত নেই।
প্রশ্ন: এক মাসের মধ্যেই ‘গোধুলি আলাপ’ ধারাবাহিক স্লট লিডার। এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনকেই বলেছিলেন, টিআরপি নিয়ে ভাবেন না। কিন্তু এখন?
সমু: না না এখনও ভাবি না। ওটা আমার মাথা ব্যথা নয়। চ্যানেল, প্রযোজকরা ওই দিকটা দেখেন। আমার কাজ আমার চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। সেই দিকে এগিয়ে চলেছি। অভিনয়টাই শিখছি।
প্রশ্ন: ‘বাংলা সেরা’ তো মিঠাই। কখনও ওই ধারাবাহিককে টক্কর দিতে ইচ্ছে করবে না?
সমু: আপনি প্রশ্ন করলেন বলে ভেবে দেখলাম, টক্কর দিলে তো মন্দ নয়। বাংলার সেরা ধারাবাহিক হলেই তো বুঝব, মানুষের ভাল লাগছে। আর দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছনোটাই তো আমার বা আমাদের কাজ।
প্রশ্ন: দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ কী বলছেন? আপনার প্রতিবেশীরা?
সমু: অনেক দিন বাড়ি যাইনি। তাই বুঝতে পারছি না খুব একটা। তবে হ্যাঁ, আমার বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে কিছু ঘটনা জানতে পারি। অনেকে নাকি তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘নোলক তোমাদের বন্ধু? এলে আলাপ করিয়ে দিও।’’ এগুলো শুনলে ভাল লাগে। মানুষ চিনছে আমায়।
প্রশ্ন: আপনি তো সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল?
সমু: আমি চিরকাল অভিনয়টাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হ্যাঁ, যদি অভিনয়ের দিকে আমার ভাগ্য না খুলত, তা হলে হয়তো ভিডিয়ো এডিটর হতাম। আগে ভিডিয়ো এডিট করে রোজগারও করেছি। একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি এডিট করেছিলাম।
প্রশ্ন: তা হলে অভিনয় করার সময়ে আপনার বাড়তি সুবিধা হয়।
সমু: হ্যাঁ, খানিক হয়। জানি, এই জায়গাটা এ ভাবে কেটে বাদ দেবে। ওই জায়গাটা ও ভাবে জুড়বে। এতে অভিনয়ে বাড়তি সুবিধা আছে বৈকি।
প্রশ্ন: ভিডিয়ো এডিটরের তো প্রচুর চাহিদাও আছে চার দিকে।
সমু: (হেসে) তাই? তা হলে কোনও সময়ে অভিনয়ে সুযোগ না পেলে আমার চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলছেন?
প্রশ্ন: অবশ্যই…
সমু: (হেসে) না না, অভিনয়টাই করতে চাই। ওটাই আমার ধ্যান জ্ঞান। বাড়ির লোকে অল্প হলেও মাঝে মাঝে বলেছে যে চাকরি করা দরকার। নিরাপত্তা রয়েছে। তার থেকেও বেশি বলেছেন আত্মীয়রা। কিন্তু লড়াই করে আজ আমি রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায়, কৌশিক স্যারের বিপরীতে অভিনয় করছি। এই লড়াই তাই জারি থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy