Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
গানবাজনায় আগামীরা
Music

প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পুত্রকন্যারাও হাঁটছেন অভিভাবকদের দেখানো রাস্তাতেই

দিদি প্রৈতী ও আরও ক’জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরব খুলে ফেলেছে গানের দল ‘নাইয়োর’।

পুরব

পুরব

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

অভিভাবকরা যদি স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বীকৃত, আদৃত হয়ে থাকেন, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে অদৃশ্য ব্যাটন যেন আপনা থেকেই চলে আসে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠিত কোনও শিল্পীর ছেলে কিংবা মেয়ে সেই শিল্পের সাধনায় মন দিয়েছে, কাঁচা বয়স থেকেই। সেই অভ্যেস সঞ্চারিত হয় পরিবারের পরিবেশের গুণে, অনেকটা অজান্তেই। নেপোটিজ়মের যুগে আগামী প্রজন্মের শিল্পীদের স্বীকৃতির লড়াইটা হয়তো খানিক বেশি। তবু নিজগুণে পায়ের তলার মাটি শক্ত করে ফেলেছে এই ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই।

উত্তরসূরি

আকাশ

বাংলার গানবাজনার দুনিয়ার এই জেনারেশনের পরিচিত জুটি যেমন পুরব শীল আচার্য আর দীপরাজ চৌধুরী। শ্রীকান্ত আচার্য আর প্রতীক চৌধুরী ছিলেন কলেজবেলার বন্ধু, তাঁদের ছেলেরাও তাই। জুটি বেঁধে মিউজ়িক অ্যারেঞ্জও করে দু’জনে। রূপঙ্কর বাগচী, শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে স্কুলের গণ্ডি না পেরোনো দীপরাজের। ‘‘বাবা চলে গিয়েছেন। তবে বিশ্বাস করি, উনি এখনও আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তিন-চার বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে স্টেজে বাজাতাম। পরবর্তী কালে ড্রামস আর তবলা শিখতে শুরু করি,’’ বলল প্রতীক চৌধুরীর পুত্র দীপরাজ। কমার্স নিয়ে পড়া দীপরাজের গানবাজনার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক্সেও মন দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে, ‘প্ল্যান বি’ হিসেবে। এই প্রজন্ম কি গানবাজনাকে পুরোদস্তুর পেশা হিসেবে বেছে নিতে প্রস্তুত? মনোময় ভট্টাচার্যের পুত্র আকাশের কথায়, ‘‘বাবা বলেছিলেন, গানবাজনার সঙ্গে এমন কোনও বিষয় নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে, যাতে পরবর্তী কালে পছন্দের পেশায় সফল হতে না পারলে একটা জব-ব্যাকআপ থাকে।’’ আকাশও পুরব-দীপরাজের বন্ধু। সেন্ট জ়েভিয়ার্সে মাস কমিউনিকেশনের ব্যাচমেট পুরব আর আকাশ। ক্লাসের ফাঁকে চলে জ্যামিং, ডাক আসে নানা শো, রুফটপ কনসার্টেরও। স্টেজের ভীতি কাটাতে বাবার সঙ্গে স্টেজে উঠে শেকার্স বাজাত ছোট থেকেই। এখন বাবার জন্য গান কম্পোজ় করে সে। আকাশের প্রথম প্লেব্যাক ওয়েব সিরিজ় ‘পাঁচফোড়ন টু’-এর টাইটেল ট্র্যাক। তবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজ়িককেই এগিয়ে রাখে সে। ‘‘ফিল্ম মিউজ়িক যে কোনও শিল্পীকেই একটা প্ল্যাটফর্ম দেয়। কিন্তু স্বাধীন ভাবে গানবাজনা করার আনন্দ অনেক বেশি। বাংলা মৌলিক গানকে আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। বিশেষ করে যখন এফএম চ্যানেলগুলো বাংলা গান বাজানো প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে,’’ অনুযোগ তার কণ্ঠে।

সুরে ও ছবিতে

বন্ধুর মতো স্টেজ-ভীতি কাটেনি এখনও পুরবের। বন্ধুদের গিটারে সঙ্গত করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ শ্রীকান্ত আচার্যের পুত্র। যদিও তার অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছে। স্কুলে ‘লায়ন কিং’-এ তাঁর অভিনয়-গান দেখে ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ছবিতে তাকে কাস্ট করেছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ছেলে’ এবং ‘কাবেরী অন্তর্ধান’, দু’টি ছবিতেই আছে পুরব। ‘‘ছোট থেকেই গাইতে খুব লজ্জা পেতাম, এখনও পাই। বাড়িতে গানের পরিবেশ রয়েছে বলে ছোট থেকেই পুরো প্রসেসটার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম। বাবা আমাকে আলি আকবর খাঁ থেকে শুরু করে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল, সবই শুনিয়েছেন। ভাল কনসার্ট শোনাতে নিয়ে যেতেন,’’ বলল পুরব। দিদি প্রৈতী ও আরও ক’জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে পুরব খুলে ফেলেছে গানের দল ‘নাইয়োর’। সেই দলে রয়েছে তবলাবাদক শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক প্রবুদ্ধ রাহা, গায়িকা অনসূয়া মজুমদারের পুত্রকন্যারাও।

অনিশ্চয়তায় ভর করে

রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের দুই কন্যাও শামিল তরুণ-ব্রিগেডে। গত পুজোয় মুক্তি পেয়েছে সিঙ্গল ‘পরম্পরা’, যেখানে ছোট মেয়ে আহিরীর সুরে ডুয়েট গেয়েছেন রাঘব এবং তাঁর বড় মেয়ে আনন্দী। ক্লাস সেভেন থেকে গান কম্পোজ় করে আহিরী, গিটারও শেখে। বাবার মতোই ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যালে ফিউশনের ছোঁয়ায় অন্য রকম সাউন্ডস্কেপ তৈরির আগ্রহ রয়েছে তার। ইচ্ছে সঙ্গীত পরিচালক হওয়ার। আনন্দী আবার সেমি-ক্লাসিক্যালের ছাত্রী, বেনারস ঘরানার। তবে দু’জনেই মনে করে, সঙ্গীতকে একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ায় অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তবে অনিশ্চয়তা আছে জেনেও মনপ্রাণ শুধু গানবাজনাতেই ঢেলেছে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র বিহু। ‘‘ছোটবেলা থেকেই হাতের কাছে যা পেতাম, বাজাতাম। বাবাও তবলা, ঢোল ভালই বাজাতে পারেন। বাড়িতে আড্ডার আসরে বাবা, শ্রীকান্তকাকু, প্রতীককাকুর গানের সঙ্গে ঠেকা দিতাম আমি। ‘কুইনাইন’ ব্যান্ডে বাবা ছিলেন, সেখানে যিশু সেনগুপ্তের কাছে ঘুরঘুর করতাম, ড্রামস বাজাব বলে। ছোট থেকেই বাড়ির সকলে বুঝে গিয়েছিল, এ ছেলের পড়াশোনা হবে না, শুধু গানবাজনাই করবে।’’ থিয়েটার নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড মেডেলিস্ট বিহু এখন আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম করে। অভিনয় করে ফেলেছে গোটাদশেক ছবিতেও! ‘‘১৩ বছর বয়স থেকে প্রোফেশনালি বাজাচ্ছি। সামপ্লেস এলসে যখন বাজাতাম, তখনও আমার আঠারো হয়নি। ওদের রান্নাঘর দিয়ে ঢুকতে হত আমায়।’’ ল্যাটিন ও জ্যাজ় ইনস্ট্রুমেন্ট স্পেশ্যালিস্ট বিহুর মতে, গায়করা যতখানি স্বীকৃতি পান, একই পরিশ্রম সত্ত্বেও সেই স্বীকৃতি মেলে না বাজিয়েদের। সেই ফারাক মুছে ফেলার চেষ্টাই রয়েছে তার।

বিহু

স্বপ্নপূরণ

শুধু বাজনার জোরে পায়ের তলার জমি শক্ত করেছে রোহন রায়ও। ভায়োলিন ব্রাদার্সের অন্যতম দেবশঙ্কর রায়ের পুত্র রোহন বর্তমানে লন্ডনের বাসিন্দা, কিংস্টন কলেজে মাস্টার্সের ছাত্র। রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’র সূত্রে রোহনের বাজনার সঙ্গে যেমন পরিচয় ঘটেছে বাংলার শ্রোতাদের, তেমনই রোহন সুযোগ পেয়েছে মোনালি ঠাকুর, শান্তনু মৈত্রদের সঙ্গে কাজ করার। সুজিত সরকারের ‘অক্টোবর’-এর থিম তারই বাজানো। চার বছর বয়স থেকে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যালে হাত পাকানো শুরু রোহনের। আমেরিকান ভায়োলিনিস্ট ক্রিশ্চিয়ান হাউসের মাস্টারক্লাস করা তার জীবনের অন্যতম স্বপ্নপূরণ, লন্ডন থেকে জানাল রোহন। সেখানেই নিজের সোলো প্রজেক্ট নিয়ে আপাতত ব্যস্ত রোহন।

বাংলা গানবাজনার দুনিয়ার জেন-নেক্সট নিজেদের প্রমাণ করতে প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু সমাদর আর স্বীকৃতির।

অন্য বিষয়গুলি:

music Akash Purav Bihu Guitarist Drummer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy