লোপামু্দ্রার সাহসীকতাকে আরও উসকে দিয়েছিলেন তাঁর ‘প্রথম প্রেম’ সমীর চট্টোপাধ্যায়।
লোপামুদ্রা মিত্রের গান-জীবন কি জলের মতোই সহজ? ভিন্ন স্বাদের গান নিজের মধ্যে ধারণ করা তো মুখের কথা নয়! বিশেষ করে যে শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রগান আলাদা মাত্রা পায়। অনুরাগীদের এই বিষয়েও নিরাশ করেননি লোপামুদ্রা মিত্র। শনিবাসরীয় আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ আড্ডায় তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন। আর লোপামুদ্রা মানেই গান-আড্ডা। তখনই জানা গিয়েছে, নাজিয়া হাসানের বিখ্যাত হিন্দি গান গেয়ে বাবার কাছে কী কী বকুনিই না খেয়েছিলেন শিল্পী!
লোপামুদ্রার জবানিতে, ‘‘আমাদের বাড়িতে গান শুদ্ধ জিনিস। তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে না গাইতে পারলে কপালে অনেক গঞ্জনা জুটত। এ হেন প্রাচীনপন্থী যৌথ পরিবারে রবীন্দ্রনাথ যে আক্ষরিক অর্থেই ‘ঠাকুর’, সেটা বলাই বাহুল্য। আমার যদিও এত ছুঁৎমার্গ পছন্দ ছিল না। তাই আমি গলা খুলে ‘আপ জ্যায়সা কোই মেরি’-ও গাইছি। আবার রবীন্দ্রগানও চর্চা করছি।’’ শুধুই হিন্দি গান গাওয়া নয়! একটি শব্দ বদলে তিনি গানের অর্থই পাল্টে দিয়েছিলেন! যেমন? ‘আপ জ্যায়সা কোই মেরি... বাত বন যায়ে’-র ‘বাত’ শব্দটি লোপামুদ্রার উচ্চারণে ‘বাপ’ হয়ে গিয়েছিল! শুনে তাঁর বাবা হায় হায় করে উঠেছিলেন! কপাল চাপড়ে বলেছিলেন, ‘‘মেয়েটা তো উচ্ছন্নে গেল! এই মেয়ে নিয়ে আমি কী করব?’’
বাবাকে নিরাশ করেননি সেই মেয়ে। পরে তিনিই গেয়েছিলেন জয় গোস্বামীর লেখা কবিতা ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ থেকে তৈরি গান 'বেণীমাধব বেণীমাধব'। সমীর চট্টোপাধ্যায়ের সুর দেওয়া এই গান বাংলা আধুনিক গানের ইতিবৃত্তে এক মাইল ফলক তো বটেই। শনিবার আড্ডা দিতে দিতে জীবনখাতার একের পর এক পাতা আরও এক বার উল্টে দেখছিলেন লোপামুদ্রা। তখনই সামনে আসে এরকমই আরও অনেক সাহসিকতার নজির। যেমন, পঞ্চম শ্রেণির লোপামুদ্রা মায়ের কাছে আবদার জানিয়েছিলেন, তাঁর বড় মাঠওয়ালা একটি স্কুল চাই! লোপামুদ্রার মা যৌথ সংসারের সবচেয়ে নির্বিবাদী মানুষ। সেই তিনিই সবার অজান্তে মাল্টিপারপাস স্কুলের ফর্ম তুলে, মেয়েকে পরীক্ষা দিইয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন। গায়িকার আগুনে দাপটের বীজ আসলে লুকিয়ে ছিল তাঁর মায়ের মধ্যেই।
পরে লোপামু্দ্রার সাহসীকতাকে আরও উসকে দিয়েছিলেন তাঁর ‘প্রথম প্রেম’ সমীর চট্টোপাধ্যায়। গায়িকার দাবি, সমীর ছিলেন তাঁর প্রেমিক, গুরু, আবেগ, ভাল-মন্দ সব কিছু। রাখঢাক না রেখেই শিল্পীর জবাব, ‘‘আমি প্রথম প্রেম করেছি ওঁর সঙ্গে। আমার মা-বাবা, বন্ধু— শেষ দিন পর্যন্ত সব কিছুই সমীর চট্টোপাধ্যায়।’’ ঋণস্বীকারের ভঙ্গিতেই তিনি বলেছেন, ‘‘ওই মানুষটিই আমার মধ্যে অন্য রকম কিছু করা, অন্য ভাবে বাঁচা, ভিন্ন গান গাওয়ার ভাবনার বীজ বুনে দিয়েছিলেন।’’ আর সমীর বলতেন, লোপামুদ্রা ছিলেন গুটির ভিতরে থাকা ঘুমন্ত প্রজাপতি। তিনি তাঁর ঘুম ভাঙিয়েছেন। পরিবর্তে গায়িকা ছিলেন তাঁর ‘সাউন্ড বক্স’! সমীরের গাইতে না পারার দুঃখ গান গেয়ে ভুলিয়ে দিয়েছিলেন লোপামুদ্রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy