Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পারস্পরিক সম্পর্কে প্রভাব, টালিগঞ্জে রাজনীতির আঁচড়ে বন্ধুত্বে ক্ষত?

ইন্ডাস্ট্রির হাল-হকিকত আনন্দ প্লাসে মতাদর্শের জায়গা থেকে তর্কাতর্কি বাঙালির গা-সওয়া। কিন্তু ফেসবুকে রাজনৈতিক বিরোধ যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার লক্ষণ ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে।

অন্তরা মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

রাজনীতির আঁচ লেগে বাংলা ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে পারস্পরিক সম্পর্কগুলোয় যে ভাবে ভাঙন ধরছে, সেটা বোধহয় এর আগে দেখা যায়নি। পুরোটাই ঘটছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু তার রেশ থেকে যাচ্ছে বাইরেও। তা হলে কি বন্ধুত্বেও লেগে যাচ্ছে রাজনৈতিক রং?

সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে বিজেপি শিবিরে যোগ দেন পার্নো মিত্র। তিনি কেন ওই দলে যোগ দিয়েছেন, সেই রাজনীতিগত অবস্থান জানিয়েও ছিলেন পার্নো। কিন্তু মঙ্গলবার নাম না করে পার্নোর এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে পরিচালক অঞ্জন দত্ত ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমার চেয়ে বয়সে অনেকটাই ছোট সহকর্মী, যার ব্যাপারে আমি বেশ যত্নশীলও ছিলাম, যে এতটা ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিল, এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি লজ্জিত।’’ ওই পোস্টেই পরিচালকের প্রশ্ন, ‘‘আমি যাদের কাছের লোক বলে ভাবতাম, তারা শুধুমাত্র টাকার জন্য দেশের এমন অবস্থাতেও একটা বিপজ্জনক দিককে বেছে নিচ্ছে?’’

ঘটনাচক্রে অঞ্জনের পরিচালনায় ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’ এবং ‘দি বংস এগেন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন পার্নো। দু’জনের সম্পর্ক ভাল বলেই সকলে জানেন। পার্নোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অঞ্জনদাকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি। ওঁর কাছে ঋণীও। এই ফেসবুক পোস্টটি যদি আমার দিকে ইঙ্গিত করে লেখা হয়ে থাকে, তা হলে আমার প্রশ্ন, ফেসবুকে লিখতে গেলেন কেন? আমার কাছের লোক হয়ে থাকলে ফোন করতে পারতেন!’’ গোটা পোস্টটা পড়ে পার্নোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অন্য কেউ আমার চয়েস নিয়ে কথা বলবেন কেন? চয়েসটা আমার নিজস্ব। টাকার প্রসঙ্গ তুলে আমাদের ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আমার পাল্টা প্র‌শ্ন, ওঁরই প্রযোজকের নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তারই পয়সায় উনি এখনও ছবি বানিয়ে যাচ্ছেন। বড়রাই বা কী শেখাচ্ছেন আমাদের!’’

দিল্লিতে গিয়ে শিল্পীদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই শ্রীলেখা মিত্র একটি পোস্টে হালকা ছলেই লেখেন, ‘অভিনয়ের জন্য রাজনীতি, না রাজনীতির অভিনয়’। সেখানে বিভিন্ন কমেন্টের মধ্যে একটি কমেন্ট রূপাঞ্জনা মিত্রের। তিনি সেখানে লেখেন, ‘তুমি আর্টিস্টস ফোরামের মেম্বার তো? কার্ড রিনিউ করাও?...’ পরে এগিয়ে দেন আরও তীক্ষ্ণ প্রশ্ন, ‘শিল্পী-কলাকুশলী দিনের পর দিন পারিশ্রমিক না পেয়ে আন্দোলন করছেন, কই তাঁদের সাপোর্ট করার জন্য তোমাকে তো এক বারও দেখলাম না কোনও মিটিংয়ে?’ ফেসবুকেই চলতে থাকে বিবাদ। শ্রীলেখা এ ব্যাপারে আনন্দ প্লাসকে বলেন, ‘‘মনে হল, আমাকে এক প্রকার থ্রেট করা হচ্ছে ওখানে। আমি কোনও শিবিরে নেই বলেই বোধহয়। কাউকে তো বলিনি যে, তুমি কাল তৃণমূল ছিলে, আজ বিজেপি হয়ে গেলে! পার্সোনাল অ্যাটাকও করিনি। মতবিরোধ হলে সেটা প্রকাশ করতে পারব না? ফেসবুক ওয়ালে কী লিখব, সেটা তো আমার স্বাধীনতা।’’

রূপাঞ্জনা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শ্রীলেখাদির সঙ্গে আমার ১২ বছরের বন্ধুত্ব। নাম করে না লিখলেও ওঁর ইঙ্গিতটা স্পষ্ট ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে বিশ্বাস ব্রাদার্সের যে অরাজকতা, রানা সরকারের পাঁচ কোটি টাকা বাকি রাখার ঘটনা, এ সবের বিরুদ্ধে লড়ব বলেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। আর্টিস্টস ফোরামকে অটোনমাস রাখতে চাই বলেই লড়ছি। উনি ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রশ্ন তুলেছেন যখন, ওঁর জানা উচিত, কোনও দলে যোগ দেওয়াটাও আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা। আলটপকা মন্তব্য করার আগে ওঁর একটু ভাবার প্রয়োজন ছিল।’’

মতাদর্শের জায়গা থেকে তর্কাতর্কি বাঙালির গা-সওয়া। কিন্তু ফেসবুকে রাজনৈতিক বিরোধ যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার লক্ষণ ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood BJP TMC Anjan Dutta Shreelekha Mitra Parno Mitra Rupanjana Mitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy