শ্রীলেখা মিত্র
বন্ধুত্ব দিবস নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে সর্বত্র। দেবযানীর চেহারাটা চোখে ভাসছে আজ। লম্বা লম্বা চুল। মাঝে মাঝে বিনুনি বাঁধত। গালে টোল পড়ত ওর। চুরিদার পরত। মিষ্টি করে হাসত। এখন খালি মনে হয়, আমি হয়তো ওকে বাঁচাতে পারতাম।
কিন্তু… সব শেষ হয়ে গেল। সেই আফসোস সারা জীবন থেকে যাবে।
দু-তিন বছরের বন্ধুত্ব ছিল, তাতেই দেবযানীর সঙ্গে আমার আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায়। আমার জন্মদিনে ও নিজে হাতে একটা চুড়ির বাক্স বানিয়ে উপহার দিয়েছিল।
দেবযানী খুব ভাল ছাত্রীও। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের ঠিক আগে দেবযানী হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিল, পরীক্ষা দেবে না। দিল না। আমরা স্নাতক স্তরে পড়াশোনা শুরু করলাম। দেবযানী পরের বছর পরীক্ষা দেবে, এমনই ঠিক হয়ে রয়েছে। আমরা জানি যে সে রকমই মনস্থির করে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেবযানী। কিন্তু কী হল কে জানে, পরের বছর ও পাশ করতে পারল না। এ রকম হবে আমরা কেউ ভাবিনি। এত ভাল ছাত্রী ছিল যে পরীক্ষায় পাশ না করার ঘটনাটি খুব আশ্চর্যের।
মনে আছে, সে দিন ওকে নিয়ে ট্যাক্সি করে ফিরছিলাম। সারা রাস্তা আমার কোলে মাথা রেখে কেঁদে গেল। কোল ভিজে গিয়েছিল দেবযানীর চোখের জলে।
কলকাতায় ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকত। ওর মা-বাবা অসমে থাকতেন চাকরিসূত্রে। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে খুবই ভেঙে পড়েছিল দেবযানী। এ রকমই এক দিন আমি কলেজে ক্লাস সেরে বেরিয়েছি, মনে কোথাও একটা অস্বস্তি চলছিল। দেবযানীর মুখ ভাসছিল বার বার। মনে হচ্ছিল, ও ঠিক আছে তো? ওর বাড়ি যাই এক বার। কিন্তু ভেবেও যেতে পারিনি।
সে দিন আবার আমার ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। তাই বাড়ি ফিরে আসি। বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই ল্যান্ড লাইন বেজে উঠল। মা ফোন ধরে। ফোন রাখার পর মা আমাকে শুধু একটিই কথা বলেন, ‘‘চল আমাদের বেরোতে হবে। দেবযানীর বাড়ি যেতে হবে।’’ আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। বুঝে যাই। দেবযানী আর নেই!
নিজেকে প্রশ্ন করি, সে দিন যদি কলেজ থেকে সোজা ওর বাড়ি যেতাম, তা হলে কি আজ দেবযানী বেঁচে থাকত? আমি কি দুর্ঘটনাটি আটকাতে পারতাম? বড্ড আফসোস হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy