Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Film Review

প্রতিভাকে ছাপিয়ে গেল মা-মেয়ের দ্বৈরথ

যেহেতু এ ছবি ‘সত্যি ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত’, তাই কতখানি সত্যি, আর কতখানি ‘ক্রিয়েটিভ লিবার্টি’, তা শকুন্তলার ঘটনাবহুল জীবন পর্দায় দেখতে দেখতে বোঝা মুশকিল।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

বায়োপিক নয়, মেয়ের চোখ দিয়ে দেখা এক মায়ের গল্প। এমন এক মা, যাঁর একটা আলাদা পরিচয় রয়েছে। আর সেই পরিচিতির ব্যাপ্তি এতটাই, তার ভার বইতে পারা যে কোনও মেয়ে, স্বামী কিংবা পরিবারের পক্ষে সহজ হয় না। একই রকম ভাবে একজন ‘ভাল’ মা কিংবা স্ত্রী হয়ে ওঠার জার্নিটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় সেই ‘জিনিয়াস’ নারীর কাছে, যাঁকে দুনিয়া চেনে ‘হিউম্যান কম্পিউটার’ নামে। গিনেস বুক অব ওয়র্ল্ড রেকর্ডসের খাতায় যে নাম তোলা রয়েছে ‘শকুন্তলা দেবী’ বলে।

অনু মেনন আরও একবার তাঁর ‘অল উওম্যান’ ব্রিগেড নিয়ে পর্দায় বুনেছেন এক নারীর কাহিনি, আর এক নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে। বিদ্যা বালন, ওরফে শকুন্তলা একাই দাপটে শাসন করেছেন কাহিনির আগাগোড়া। কখনও হতবাক করে দেওয়া আশ্চর্য প্রতিভা, ছলকে ওঠা হিউমর, কখনও স্বার্থপর, হার-না-মানা শকুন্তলা দেবীর চরিত্রের বিভিন্ন পরত, সাদা-কালো-ধূসর সব দিকই ছুঁয়ে গিয়েছে বিদ্যার অভিনয়। তরুণী থেকে প্রৌঢ়া— বিভিন্ন বয়সি শকুন্তলাকেও বিদ্যা সামলেছেন অবলীলায়। ছবি শুরু হয় বেঙ্গালুরুর নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট্ট শকুন্তলার গল্প দিয়ে, যার ছোটবেলা কেটে গিয়েছে বাবার হাত ধরে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ম্যাথস শো’ করে। কঠিন অঙ্কের ধাঁধার মুখে মুখে সমাধান করে দিয়ে হাততালি আর অর্থ— দুই-ই অর্জন করে একরত্তি মেয়েটা। বঞ্চিত ছোটবেলা তাড়া করে বেড়ায় বড় বয়সেও। তখন চেনা গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে শো করছে শকুন্তলা। নাম-যশ-অর্থের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আত্মপ্রত্যয়, উচ্চাভিলাষ। এর পরেই দেখানো হয়, তার জীবনে আসা প্রেম, ঘর বাঁধা, সন্তান ও তা নিয়ে টানাপড়েন। কম্পিউটারকে ভুল প্রমাণিত করা শকুন্তলার জিনিয়াস সত্তা থেকে কাহিনির ভরকেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়ে যায় সেই টানাপড়েনে, যা চলে ছবির শেষ পর্যন্ত।

শকুন্তলা দেবী

পরিচালনা: অনু মেনন

অভিনয়: বিদ্যা, যিশু, সানিয়া, অমিত

৫.৫/১০

যেহেতু এ ছবি ‘সত্যি ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত’, তাই কতখানি সত্যি, আর কতখানি ‘ক্রিয়েটিভ লিবার্টি’, তা শকুন্তলার ঘটনাবহুল জীবন পর্দায় দেখতে দেখতে বোঝা মুশকিল। তবে ‘হিউম্যান কম্পিউটার’-এর ‘হিউম্যান’ সত্তাটুকু রাখঢাক না করেই দেখানো হয়েছে। আত্মসর্বস্ব শকুন্তলার প্রতি যাতে সহমর্মিতা না থাকে, সে ব্যবস্থা যেমন রয়েছে চিত্রনাট্যে, আবার দর্শক যেন তাকে ভুল না বোঝেন, ব্যালান্স করা হয়েছে সে দিকও। এই রোলার-কোস্টার রাইড দেখাতে গিয়েই কখনও মেলোড্রামার আশ্রয় নিতে হয়েছে, কখনও ফেমিনিজ়মের! বিদ্যার অভিনয়ই এ ছবির প্রাণ, তবে প্রায় প্রতিটি ম্যাথস শোয়ে তাঁর উচ্ছল হাসি, শাড়ি-বেণি সজ্জিত ভারতীয় নারীর প্রতিনিধিত্বে অতিনাটকীয়তা খানিক ‘লাউড’ মনে হয়। ঈশিতা মৈত্রের সংলাপ কোথাও ঈষৎ চড়াদাগের। পঞ্চাশ-ষাটের দশকের কথ্য ইংরেজি, ‘বিদ্যা কসম’-এর অনুষঙ্গের পুনরাবৃত্তির মতো বিষয়গুলিতে আরও সতর্ক হওয়া যেত। শকুন্তলার প্রতিভার তল খোঁজার পরিবর্তে যখন গল্পে গুরুত্ব পায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী মা আর বঞ্চিত মেয়ের দ্বন্দ্ব, সেখান থেকেই চেনা ছকে পড়ে যায় এ ছবি। মেয়ে অনুপমার চরিত্রে সানিয়া মলহোত্রের অভিনয় প্রশংসনীয়, বিশেষ করে যে সব দৃশ্যে সে ভালনারেবল। যিশু সেনগুপ্ত এবং অমিত সাধের চরিত্র দু’টির নির্মাণে বিশেষ ফারাক রাখা হয়নি। মা এবং মেয়ের ভরসাযোগ্য সঙ্গীর চরিত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন দুই অভিনেতাই। যিশু হিন্দি ছবিতে তাঁর সাম্প্রতিক অ্যাপিয়ারেন্সগুলির চেয়ে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ফেলেছেন এ ছবিতে।

নিজের শর্তে বাঁচতে চাওয়া এক নারীর জীবনকে সেলিব্রেট করা হয়েছে ‘শকুন্তলা দেবী’তে। যে ‘জিনিয়াস’কে আদ্যোপান্ত এক্সপ্লোর না করলেও, এ ছবি শকুন্তলাকে পৌঁছে দিল তাঁকে ভুলতে বসা বহু মানুষের কাছে। প্রাপ্তি সেখানেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Film Review Shakuntala Devi Bollywood Vidya Balan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE