টোটা।
প্র: এক দিকে ফেলুদার মতো চরিত্র, অন্য দিকে ছোট পর্দায় বিপুল জনপ্রিয়তা। কেমন লাগছে?
উ: মুম্বইয়ে ওয়েব সিরিজ়ের কাজ ফেলে কলকাতায় ছুটে এসেছিলাম সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) অফারটা পেয়ে। ফেলুদা হচ্ছে একমাত্র চরিত্র, যার প্রতি আমার বরাবর ভীষণ লোভ। একটা সময়ে আমাকে ব্যোমকেশ অফার করা হয়েছিল। আবীর (চট্টোপাধ্যায়) তখন ব্যোমকেশ করছে। কিন্তু তবুও আমাকে ব্যোমকেশ করে তিনটি ছবি করতে আগ্রহী ছিলেন এক প্রযোজক। এক বাক্যে তাঁকে ফিরিয়ে দিই। কারণ কিছু বেসিক এথিকসের বাইরে আমি কখনও যাইনি। কিরীটিরও প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু করিনি। আর ফেলুদার জন্য বহুবার সন্দীপ রায়ের কাছে দরবার করেছি। ফেলুদার নানা বেশে সেজে গিয়েছি (প্রচণ্ড হেসে)। তবে মনপ্রাণ দিয়ে কিছু চাইলে ঈশ্বর বোধহয় নিরাশ করেন না। এ বার রোহিত সেন প্রসঙ্গে আসি। লীনাদি (গঙ্গোপাধ্যায়) এর আগে দুটো সিরিয়াল অফার করেছিলেন। কিন্তু এক বছর সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না। তার পর যখন ‘শ্রীময়ী’তে রোহিত সেন চরিত্রটির প্রস্তাব আসে তখন বলেছিলাম, ফেলুদার প্রস্তুতি থেকে ডাবিং পর্যন্ত সময় দিতে পারব না। লীনাদি অপেক্ষা করেছিলেন। ভেবেছিলাম, যাওয়া-আসার মধ্যে থাকব, কিন্তু দর্শকের এত ভালবাসায় যাওয়া আর হল না।
প্র: গোলাপের কাঁটাও থাকে। ফেলুদা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হতে হয়েছে আপনাদের...
উ: যাঁরা ট্রোল করছেন, ‘ফেলুদা ফেরত’এর এক-এক সেকেন্ডের শট দেখে বুঝে যাচ্ছেন, কী ঘটতে চলেছে! এই ধোঁয়া ছাড়া বা এ ভাবে কথা বলার কারণ কী, তা সিরিজ় না দেখে বুঝলেন কী ভাবে? ফেলুদার সাহেবিয়ানা প্রসঙ্গে আসি। আনন্দ পাবলিশার্সের দু’ খণ্ডের ফেলুদা সমগ্র ছিল আমাদের পথনির্দেশক। যাঁরা সাহেবিয়ানা নিয়ে কথা বলছেন তাঁদের চ্যালেঞ্জ করছি, সত্যজিৎ রায়ের আঁকায় ফেলুদা সাহেবি পোশাক ক’টাতে পরে আছেন আর ক’টায় বাঙালি পোশাকে, সেটা দেখুন। সাহেবিয়ানা তো স্রষ্টা রেখে গিয়েছেন, তা হলে আমার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে কেন? সমালোচনা করুন কিন্তু হোমওয়র্ক করে। তবে ট্রোলিংয়ে আমার কিছু এসে যায় না। দু’দশক ধরে কাজ করছি। চামড়াটা কাজিরাঙার গন্ডারের মতো হয়ে গিয়েছে।
প্র: ‘চোখের বালি’-র বহু বছর পর আবার এতটা প্রচার পেলেন। ফিরে দেখলে কী ভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
উ: আগে আবেগ দিয়ে ভাবতাম, কিন্তু এখন পরিষ্কার সবটা বুঝতে পারি। এখানে যত বড় তারকা হোক না কেন, প্রযোজক- পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা খুব দরকার। আমার ক্ষেত্রে কোথাও কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। মনে হত, ওঁরা আমার কাজ দেখেছেন, বারবার কাজ চাইলে বিরক্ত হবেন। পরে বুঝেছি, ওটাই কর্মপদ্ধতি। দ্বিতীয়ত, যেহেতু ভিলেনের চরিত্র দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছি, তাই হিরোর পিয়োরিটি আমার মধ্যে ছিল না। অ্যান্টিহিরো হলেও সেটা কিন্তু ‘হিরো’। আমি মার্কামারা ভিলেন হিসেবে কাজ করেছি। তাতে ইমেজ কোথাও কলুষিত হয়েছিল। একটা ‘চোখের বালি’ তা মেরামত করতে পারেনি। আর সব পেশায় পারফরম্যান্সের পরে যেটা আসে, তা পিআর। সেই সত্যটা তখন উপলব্ধি করিনি। তবে জীবন আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছে। এ বার সে ভুল আর করব না। যোগাযোগ রাখিনি বলে হয়তো অনেকে ভেবেছেন আমি নাক-উঁচু।
প্র: এত বড় জুয়েলারি ব্র্যান্ডের মালিক সম্পর্কে সেটা ভাবা কি খুব অস্বাভাবিক?
উ: যখন ঠিক করেছিলাম অভিনেতা হব, তখন বাবা আমাকে স্পষ্ট বলেছিলেন, যে কোনও একটা পথ বেছে নাও। আমি সিনেমা বেছেছিলাম। হ্যাঁ, ছাদটা পেয়েছিলাম। তবে সিনেমা করেই আমি রোজগার করেছি। সব সময়ে যে খুব স্বচ্ছন্দে ছিলাম, তাও নয়। অনেক প্রযোজক এটাও বলেছেন, ‘আরে ওকে নিয়ে কী হবে, ওর তো প্রচুর আছে।’ দরকার যে আমারও আছে, সেটা তাঁরা বোঝেননি।
প্র: আপনার মেয়েও যদি অভিনয় করতে চায়, ওকে আসতে দেবেন?
উ: আমি সব ক্ষেত্রে হৃদয়কে প্রাধান্য দিয়েছি। মেয়েকেও ছোটবেলা থেকে সেটাই শিখিয়েছি। ও ডিজিটাল মিডিয়া আর্টস নিয়ে পড়তে চায়। তবে কাল যদি বলে অভিনয় করতে চাই, বাধা দেব না। এটাও বলব, প্রশিক্ষণ নাও। তোমার বাবা যে ভুলটা করেছে, সেটা কোরো না।
প্র: আপনার ফিটনেস সব সময়ে ঈর্ষণীয়! জিম খোলার বা ছবি প্রযোজনা করার পরিকল্পনা আছে?
উ: আমার এক অবাঙালি বন্ধু বাঙালি নায়কদের চেহারা নিয়ে কটু কথা বলেছিল। সে দিনই ঠিক করে নিয়েছিলাম, আমার ছবি যদি পোস্টারে থাকে, তা যেন অন্য প্রদেশের হিরোদের চেয়ে কোনও অংশে কম না হয়। একটা ছবি প্রোডিউস করে বুঝেছি, প্রযোজক হওয়ার কষ্ট। সকলে প্রাপ্য বুঝে নিয়ে চলে যায়। ছবি মুক্তির পর কেউ খোঁজ নেয় না, ছবিটা চলল কি না! তা ছাড়া অভিনেতা সত্তা ও প্রযোজক সত্তা একসঙ্গে থাকলে কোনও একটিকে ঠকানো হয়। তাই আগামী ১৫ বছর অভিনয় ছাড়া আর কিচ্ছু ভাবব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy