অদিতি রায়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বাড়ির মেয়েরা কি বাংলা ছবির পরিচালক হতে চান? এককালে এই পেশার নাম শুনে মুখ ঘুরিয়ে নিতেন অনেকেই। বিশেষত মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে এই চল খানিকটা কমই দেখা যেত। সময় বদলেছে। বর্তমানে পরিচালনা থেকে সিনেম্যাটোগ্রাফি— সর্ব ক্ষেত্রেই দাপিয়ে কাজ করে চলেছেন মহিলারা। টলিপাড়ার তেমনই এক পরিচালক অদিতি রায়। একের পর এক সিরিজ় থেকে সিরিয়ালে চুটিয়ে কাজ করছেন তিনি। ৯ জুন মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত নতুন সিরিজ় ‘নষ্টনীড়’। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা থেকে পেশাদার পরিচালক হওয়ার যাত্রাটা ঠিক কেমন? জানতে চাইল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: কত বছর হল এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আপনি?
অদিতি: ২০১০ সালে আমি প্রথম ছবি ‘অবশেষে’ তৈরি করি। যা মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালে। তার আগে অবশ্য আমি বেশ কিছু কাজ করেছিলাম। তবে এটাই স্বাধীন ভাবে আমার প্রথম কাজ। এ ছাড়াও বেশ কিছু সিরিয়ালে ক্রিয়েটিভ হেড হিসাবেও কাজ করেছি। ১৩ বছরেরও বেশি হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে।
প্রশ্ন: টালিগঞ্জে মহিলা পরিচালকের সংখ্যা তুলনায় কম। এই ১৩ বছরের যাত্রাটা কেমন?
অদিতি: মহিলা পরিচালক বলে আলাদা করে কিছু বুঝতে পারিনি। আমি যা বলছি আপনাদের মনে হতে পারে ‘সুগারকোট’ করে বলছি। তবে আমার এই যাত্রাপথে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, কেউ আমায় এটা অনুভব করাননি যে আমি ‘মহিলা পরিচালক’। যে হেতু কম বয়স থেকে কাজ শুরু করেছি, প্রত্যেকের সাহায্য পেয়েছি। খারাপ-ভাল সব জায়গাতেই থাকে। তার মধ্যে থেকে ভাল নিংড়ে নেওয়ায় আমি বিশ্বাসী।
প্রশ্ন ‘নষ্টনীড়’ সিরিজ়টি তো ‘মিটু’ অভিযানকে কেন্দ্র করে। ব্যক্তিগত জীবনে কখনও এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বা শুনেছেন?
অদিতি: দেখুন, ‘মিটু’ এই বিষয়টিকে সম্পর্কের মোড়কে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করেছি আমরা। গল্পের লেখিকা সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। চরিত্রগুলো লেখার সময় ওর ভাবনায় কিছু মানুষকে তৈরি করতে হয়েছে। আশেপাশের ঘটনা থেকেও ও মানুষদের তুলে নিয়েছে। যাঁদের নিয়ে ও ওর মতো করে গল্পটি বুনেছে। আমি পরিচালক হিসেবে বলতে পারি, যে চরিত্রগুলো এই সিরিজ়ে আছে, তারা প্রায় আমাদের আশেপাশেই ঘুরছে। আমি সরাসরি হয়তো এমন কিছু দেখিনি। তবে কিছু ঘটনা এসেছে নজরে।
প্রশ্ন: সিনেমা জগৎ নিয়ে আমজনতার বেশ কিছু নেতিবাচক ধারণা আছে। বিশেষত ‘মিটু’ অভিযানের পর সেই ধারণা আরও প্রকট হয়েছে। পরিচালকদেরকেও অনেকে অন্য নজরে দেখেন। এমনটা দেখলে আপনার খারাপ লাগে?
অদিতি: দেখুন একটা কথা আছে, ‘যা রটে, তার কিছু তো বটে’। কিন্তু যেটা আপনি বোঝাতে চাইলেন, আমি আমার চারিদিকে এমনটা কখনও দেখিনি।
প্রশ্ন: অনেকেরই ধারণা, ভাল কাজ পেতে হলে নাকি পরিচালকদের সঙ্গে ভাল ‘বন্ধুত্ব’ থাকা জরুরি? সত্যি?
অদিতি: আমি তেমন কিছু দেখিনি। আমায় যদি প্রশ্ন করেন, ছবির জন্য অভিনেতাদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমার কোনও আলাদা পছন্দ আছে কি না— আমার সে সব নেই। তবে কোনও পরিচালক যদি মনে করেন এক জন অভিনেতাকে বার বার নেবেন, কারণ সে তাঁর তৈরি চরিত্রগুলোকে ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে, সে ক্ষেত্রে অন্যায় তো কিছু নেই। আজকাল দ্রুত কাজ করতে হয়। অভিনেতার সঙ্গে পরিচালকের সেই বোঝাপড়া থাকা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সিরিজ়ে ‘অপর্ণা’ চরিত্রের জন্য কেন সন্দীপ্তাকে সঠিক বলে মনে হল?
অদিতি: আগে আমি ওর সঙ্গে একটাই কাজ করেছি, ‘বোধন’। রাকার চরিত্রে ওকে দেখে মনে হয়েছিল, ওর ভিতরে এমন অনেক ছোট ছোট জিনিস রয়েছে যা এক্সপ্লোর করা যায়। আর সন্দীপ্তা ব্যক্তিগত জীবনে খুবই গোছানো এবং লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। তাই মনে হয়েছিল এই চরিত্রটার জন্য ওই সঠিক। ওর অধ্যবসায় দেখে তাই মনে হয়েছিল অপর্ণার চরিত্রে সন্দীপ্তাকেই মানাবে।
প্রশ্ন: আপনাকে দেখে শান্ত মনে হচ্ছে, সেটেও আপনি কি তেমন?
অদিতি: ফ্লোরে আমার মাথা ঠান্ডা। কারণ হাতের পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। সেটে ঢুকলে আমি নিজেকে সবার থেকে বয়সে বড় মনে করি। তাই সকলকে মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে কাজটা বার করে নেওয়ার চেষ্টা করি। এমনিতেও আমি ঝগড়া, চিৎকার থেকে দূর থাকতেই ভালবাসি।
প্রশ্ন: কেউ যদি আপনার তৈরি সিরিজ় দেখে খারাপ বলে, কী প্রতিক্রিয়া দেবেন?
অদিতি: আমরা একটা প্রবন্ধ পড়তাম ‘আ ডেথ অফ অ্যান অথার’। এক জন লেখক যতক্ষণ একটি বই লেখেন, সেটা তাঁর সম্পত্তি। যখন পাঠকরা সেটা পড়েন, তা তখন পাঠকদের সম্পত্তি। সম্পূর্ণ তাঁদের বিচার্য। সেখানে লেখকের আর নিজের কিছু থাকে না। আমি মনে করি, কোনও কাজ সকলের ভাল লাগতে পারে না। আমি কারও কাছে ভাল হতে পারি, কারও কাছে আবার খারাপ। আমি চাই, আমার কাজ নিয়ে দর্শক সমালোচনা করুন। ভাল বললে ভাল লাগবে। খারাপ বললে আগামী দিনে ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy