নতুন ওয়েব সিরিজ় ‘সেভেন’ মুক্তির আগে মুখোমুখি অভিনেত্রী অঙ্কিতা চক্রবর্তী। —ছবি: ফেসবুক।
ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় ১৭ বছর। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছেন। সিরিয়ালের জনপ্রিয় মুখ অঙ্কিতা চক্রবর্তী। প্রতি দিন তাঁকে ‘ইন্দ্রাণী’ সিরিয়ালে দেখেন দর্শক। মুক্তি পেতে চলেছে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ওয়েব সিরিজ় ‘সেভেন’। যে সিরিজ়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেত্রীকে। সিরিজ় মুক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অভিনেত্রী অঙ্কিতা।
প্রশ্ন: অঞ্জন দত্তের পরিচালনায় এটা আপনার ষষ্ঠ কাজ। কী প্রাপ্তি হল?
অঙ্কিতা: হ্যাঁ, অঞ্জনদার সঙ্গে এটা আমার ষষ্ঠ কাজ। আগে ওঁর ব্যোমকেশে কাজ করেছি। এতগুলো কাজ করার পর যখন ‘সেভেন’ করলাম, তখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই যাত্রাটা খুবই সহজ এবং আনন্দদায়ক ছিল।
প্রশ্ন: এক দিকে রমরমিয়ে চলছে আপনার সিরিয়াল ‘ইন্দ্রাণী’। অন্য দিকে আবার মুক্তি পাচ্ছে সিরিজ়। তা হলে আপনি এখন অনেকটা ‘হ্যাপি স্পেসে’?
অঙ্কিতা: আমি সব সময়ই খুশি থাকি। আমার হাতে কাজ থাকলেও যেমন আমি খুশি। তেমনই আবার কাজ না থাকলেও আমার কোনও দুঃখ থাকে না। তখনও আমি খুশিই থাকি। কারণ, কাজের বাইরেও আমার জীবনে আরও অনেক কিছু করার আছে।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার যাত্রাটা শুরু হল কীভাবে?
অঙ্কিতা: অনেক বড় গল্প। বলতে গেলে সময় লাগবে। শুনবেন?
প্রশ্ন: অবশ্যই।
অঙ্কিতা: দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি থিয়েটার শুরু করি। ‘আগুনের বর্ণমালা’ বলে একটা শো করতাম। খুবই জনপ্রিয় হয়। প্রচুর কাজের সুযোগ আসতে শুরু করে। কিন্তু সেই সময় মা অনুমতি দেননি। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের পর আমি কাজ শুরু করি, তা সেটা ঝগড়াঝাঁটি করে হোক বা যে ভাবেই হোক। তবে সত্যি বলতে প্রথম ১০ বছর আমি আমার কেরিয়ারকে সেই অগ্রাধিকারই দিইনি।
প্রশ্ন: কবে মনে হল অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?
অঙ্কিতা: সেই ভাবনাটা আসে ‘ইষ্টি কুটুম’-এর পর। আমি টানা আট বছর লীনাদি (লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) এবং শৈবালদার (শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে কাজ করি। সেই সময়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তার পর আসে ‘ইষ্টি কুটুম’-এ সুযোগ। সিরিয়ালটা টানা চার বছর ধরে চলেছিল। আমার চরিত্রটা বিপুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর আমি বাইরে কাজ করতে চাইছিলাম। সেই প্রথম আমি নিজেকে নিয়ে, আমার কেরিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করি। ভাবলাম বাইরে যাওয়া উচিত। অন্য কিছু করা দরকার। বুঝলাম প্রশিক্ষণ দরকার। বেণীদির (দামিনী বেণী বসু) কাছে অভিনয় শেখা শুরু করলাম। সেই আমার যাত্রা শুরু হয় ২০১৬-১৭ সাল থেকে। বলা যায়, জীবন তোলপাড় করা একটা যাত্রা।
প্রশ্ন: জীবন কেন?
অঙ্কিতা: একটা একটা করে সব ভেঙে যায়। আমি তার পরে মুম্বই যাই। ভাবলাম দুই শহরেই কাজ করব। নিজেকে খোঁজার যাত্রা শুরু হয়। যে যাত্রায় আমি আমার ন’বছরের সম্পর্ককে হারিয়ে ফেলি। বিচ্ছেদের পর গভীর অবসাদে ডুবে যাই। ৫-৬ বার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টাও করি। তার পর থেরাপি শুরু হয়। তখন অনেকে আমায় পাগল বলত। ওজন কমে গিয়েছিল। আমার ওজন হয়ে গিয়েছিল ৪২ কেজি! আমি নিজের মধ্যেই ছিলাম না। এর মধ্যেই আচমকা লকডাউন হয়ে যায়।
প্রশ্ন: লকডাউন তো তখন মানুষকে আরও বেশি করে অবসাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। আপনি কী ভাবে কাটালেন?
অঙ্কিতা: আমার ক্ষেত্রে লকডাউন ছিল ‘শাপে বর’-এর সমান। কারণ আমি তার আগে পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এক দিকে বাড়ি, বিপরীতে পেশা, অন্য দিকে প্রেম এবং বিচ্ছেদ। শুধুই যেন দৌড়চ্ছিলাম। ওই সময়টা কে আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ন’বছরের সম্পর্ক ভুললেন কী ভাবে?
অঙ্কিতা: ভোলা যায় না। কোনও ভাবেই তা সম্ভব নয়। আমি তা ভোলার চেষ্টাও করিনি এবং করছি না। সেই মুহূর্তটা আমায় ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পর্কের একটা ভাল দিকও ছিল। আমার কারও প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই। সবার প্রতি ভালবাসা রয়েছে। তবে ঠিক করেছি, ভালবাসার জন্য আর নিজেকে ভাঙব না।
প্রশ্ন: এত কিছুর পর তা হলে প্রান্তিক (বন্দ্যোপাধ্যায়) আপনার জীবনে আসায়, আপনার জীবন কি এখন একটু স্থিতিশীল হয়েছে?
অঙ্কিতা: প্রান্তিক আমার জীবনে একটা বিশ্বাস। আমার এই যাত্রায় সবসময় প্রান্তিক ছিল। যখন সম্পর্কে ছিলাম তখনও প্রান্তিক ছিল। তার পর মুম্বই যাওয়া, সেখান থেকে ফেরা কিংবা বিচ্ছেদের সময়— সব সময় ও আমার পাশে থেকেছে। আবার যে দিন নতুন করে জীবন শুরু করলাম সে দিনও প্রান্তিক আছে। আমি ওকে এ ভাবে পেয়েছি, আর এই ভাবেই পেতে চাই। ‘স্বামী’ তকমা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাই না।
প্রশ্ন: ১০ বছর আগে যদি নিজের কেরিয়ারকে প্রাধান্য দিতেন তা হলে কি জীবনটা আরও মসৃণ হত?
অঙ্কিতা: না, এক বারও মনে হয় না। ১৭ বছরের কেরিয়ারে আমি হয়তো বড় বড় ব্যানারে ছবি করিনি। কিন্তু যখন কেউ আমার নাম নেয়, যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করে। আসলে আমি নিজের শর্তে কাজ করি। এটাই চেয়েছিলাম। ভুয়ো জীবনযাপন কাউকে দেখানোর ইচ্ছাও নেই আমার। আমার কাছে যখন টাকা ছিল না, সিরিয়াল করেছি। টাকা জমিয়ে মাঝে দুটো ভাল কাজ করব। অন্যের থেকে বিলাসবহুল গাড়ি আর ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার থেকে এটা আমার মতে অনেক ভাল পন্থা। এত বছর পর আমি এখনও ভাড়াবাড়িতে থাকি। সেটা স্বীকার করতে আমার লজ্জা নেই। ভাড়াবাড়ির প্রতিটা জিনিস পরিশ্রমের টাকায় কেনা। এখন তো আবার অনেকে বলতেই পারেন না যে কে বাড়ির এসি কিনে দিয়েছে আর কে কিনে দিয়েছে ফ্রিজ! আমার কেরিয়ার এবং জীবন নিয়ে আমি খুবই গর্বিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy