Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Saswata Cahtterjee

চূড়ান্ত অবসাদ গ্রাস করেছিল, টাকার চেয়েও কাজ থাকা আরও বেশি জরুরি: শাশ্বত

২৫ নভেম্বর মুক্তি পেতে চলেছে রঞ্জন ঘোষের নতুন ছবি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। ছবি মুক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

নতুন ছবি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মুক্তির আগে আড্ডায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।

নতুন ছবি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মুক্তির আগে আড্ডায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১১:৪০
Share: Save:

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে এটা আপনার কত নম্বর ছবি?

শাশ্বত: ‘পার্সেল’, আর সৃজিতের (সৃজিত মুখোপাধ্যায়) একটা ছবিতে কাজ করেছিলাম। এটা নিয়ে মনে হয় তিন নম্বর ছবি।

প্রশ্ন: আপনাদের দু’জনেরই এত বছরের কেরিয়ার, মাত্র তিনটে ছবি!

শাশ্বত: না, এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনও দোষ নেই। প্রযোজক-পরিচালকরা আমাদের নিয়ে ভাবেইনি, কী আর করব!

প্রশ্ন: পরিচালক রঞ্জন ঘোষ বহু দিন ধরে এই ছবিটিকে লালন করেছেন, সেই প্রভাব কি পর্দায় বোঝা যাবে?

শাশ্বত: হ্যাঁ, অবশ্যই বোঝা যাবে। শুধু ঋতু (ঋতুপর্ণা), আমি, পরমব্রত (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) নয়। একঝাঁক নতুন প্রজন্মের অভিনেতাকে দেখবেন দর্শক। প্রতিটি চরিত্রকে গুছিয়ে এঁকেছেন রঞ্জন।

প্রশ্ন: বর্তমান প্রজন্মের অভিনেতারা আপনাদের প্রজন্মের থেকে কোন দিকে এগিয়ে বা পিছিয়ে বলে মনে হয় আপনার?

শাশ্বত: একটি বিষয় নিয়ে ভাবা। তার পর সেই বিষয় নিয়ে কাজ করা। চর্চার জন্য আমরা অনেকটা সময় পেতাম। আজকাল তো সব রেডিমেড হয়ে গিয়েছে। কারও হাতে কোনও সময় নেই। নতুন করে কিছু শেখা কিংবা ভুল হলে তা শুধরে নিয়ে আবার কাজ করা— সেই সময়টাই এদের হাতে অনেকটা কমে গিয়েছে। তাই বর্তমান প্রজন্মকে টিকে থাকতে গেলে আমাদের থেকে অনেক বেশি প্রতিভাবান হতে হবে। শেখার জায়গা কমে গিয়েছে। সময়ও নেই। কেন নেই ? সেটা আমারও প্রশ্ন।

প্রশ্ন: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সময় আছে?

শাশ্বত: হ্যাঁ, আমার হাতে অঢেল সময় আছে। আমি তো প্রচুর ছবি করি না, বেড়াতে যাব বলে। নিজের জন্য সময় থাকা জরুরি।

নিজের জন্য সময় বার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অভিনেতা।

নিজের জন্য সময় বার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অভিনেতা। ফাইল-চিত্র।

প্রশ্ন: তাই কি আজকাল আপনাকে একটু বেশি ফেসবুকে দেখা যায়? জনসংযোগটা জরুরি তাই না?

শাশ্বত: রিল, ভিডিয়ো— এই সব তো করি না। হ্যাঁ, এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফেসবুকে আজকাল ছবি পোস্ট করি। কারণ আমার নামে এত ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি হয়েছে। তার ফলে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। সেই সমস্যা থেকে বাঁচতেই এই পন্থা।

প্রশ্ন: তা হলে নতুন কাজ পাওয়ার ফিকির নয় বলছেন?

শাশ্বত: আমি কাজ কেমন করছি, তা যাঁরা জানার ঠিক জেনে যান। ওটার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া লাগে না। কাজ খারাপ করলে শত জনপ্রিয়তা থাকলেও কিছু হবে না। এখন মনে হয়, অনুরাগীর সংখ্যার নিরিখে কাজ পাওয়া যায়। আমার ভাগ্য ভাল অনেক আগে আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে ঢুকে গিয়েছি। তখন এ সবের চল ছিল না।

প্রশ্ন: এই সময়ে কাজ শুরু করলে কি তা হলে বেশি চাপ হত?

শাশ্বত: হ্যাঁ, এখন তো ইনসট্যান্ট নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হয়, যা করা সম্ভব নয়। এটাই তো হচ্ছে। এই যে ধারাবাহিকে যারা অভিনয় করতে আসছে, একটা মেগাতে অভিনয় করতে না করতেই হোর্ডিংয়ে মুখ দেখা যায়। সিরিয়াল শেষের পর এদের আর কাউকে তেমন ভাবে দেখা যায় না। এটা খুব একটা ভাল লক্ষণ নয়। কারণ একটা ধারাবাহিক যদি প্রায় আড়াই বছর চলে, তত দিনে এক রকম টাকা পেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন সেই নির্দিষ্ট অভিনেতা। এর পর যে মুহূর্তে কাজটা চলে যায়, তখন সে কী করবে? কত আত্মহত্যা বেড়ে গিয়েছে বলুন তো! ডিপ্রেশন বেড়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার কখনও ‘ডিপ্রেশন’ এসেছে?

শাশ্বত: হ্যাঁ, কোভিডে এসেছিল। কাজ না করে কী ভাবে কাটাব সময়? কত বই পড়ব, কত সিনেমা দেখব? কয়েদখানার মতো লাগছিল। আপনারা বুঝবেন না, কারণ আপনাদের কাজ তো চলছিল। অনেক ধারাবাহিকে দেখতাম বাড়ি থেকে শুটিং হচ্ছে। কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার। খুব বাজে লাগত দেখতে। পয়সা থাক বা না থাক, হাতে কাজ থাকাটা খুব জরুরি। বেঁচে গিয়েছিলাম, প্রথম লকডাউন শেষ হওয়ার পরই লন্ডনে শুটিং করতে চলে যেতে পেরেছিলাম।

‘শবর’ এমন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি, যা এখনও ঘেঁটে যায়নি।

‘শবর’ এমন একটা ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি, যা এখনও ঘেঁটে যায়নি। ফাইল-চিত্র।

প্রশ্ন: আপনার কেরিয়ারের শুরুটাও তো ধারাবাহিক দিয়েই...

শাশ্বত: হ্যাঁ, তারও আগে থিয়েটার করতাম। ভাগ্যিস ধারাবাহিক ছিল। তাই জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। তখন তো আমায় কেউ সুযোগ দিত না সিনেমায়। তখন আমাদের বলা হত, যাঁরা ধারাবাহিকে কাজ করেন, তাঁদের দেখতে কেউ সিনেমা হলে যান না। তাই নেওয়াও হত না। আমরা যে সময় ধারাবাহিক করেছি, তখন একটা দৃশ্যের পিছনে অনেকটা সময় ব্যয় করা হত, কাজেই আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এখন তো তেমন হয় না, তাই বর্তমানে যাঁরা ধারাবাহিক করে নাম করছেন, তাঁরা অনেক বেশি ট্যালেন্টেড।

প্রশ্ন: টেলিভিশন থেকে সিনেমা— অভিনেতা শাশ্বতর বিবর্তনের প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?

শাশ্বত: আমায় প্রথম ভাল ভাবে পর্দায় এনেছেন অঞ্জন দত্ত। তার আগে বেশ কিছু ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু ‘বং কানেকশন’ করার পরে অনেকগুলো ছবি হয় পর পর। যদিও তখনও আমি সমানতালে ধারাবাহিক চালিয়ে যাচ্ছিলাম। শেষ ধারাবাহিক ছিল ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’। ঠিক সেই সময়ই এসভিএফ থেকে শ্রীকান্ত মোহতা এবং কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আমায় ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিটার জন্য বলেন। তখন স্পষ্ট বলেছিলাম, আমি ধারাবাহিক ছাড়তে চাই। না হলে চরিত্রটার প্রতি ন্যায় করা হবে না। সেই মুহূর্তে ওই সিদ্ধান্ত আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। বিশেষত অর্থনৈতিক দিক থেকে। তবে তখন সেটা করেছিলাম বলে হয়তো আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

প্রশ্ন: এই কয়েক বছরে কী মনে হল, টিকে থাকার জন্য কোনটা জরুরি?

শাশ্বত: সৃজনশীল সন্তুষ্টি থাকা সবচেয়ে জরুরি। মানুষ ভাল বললে কাজ করার ইচ্ছা দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেটাই জরুরি। শুধু টাকা মানুষকে শান্তি দিতে পারে না।

প্রশ্ন: আপনি ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্মে কি কিছুটা পিছিয়ে পড়ছেন?

শাশ্বত: সব ছবিই তো এখন ‘ওটিটি’-তে চলে আসছে। তা হলে আর কোথায় পিছিয়ে পড়লাম। ভাল কাজ না হলে, করে কী লাভ আপনি বলুন! তবুও করছি তো! প্রথম করেছিলাম ‘ধীমানের দিনকাল’। তার পর ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মের জন্য একটা কাজ করলাম। আর একটি প্রকাশ পাবে ‘জি ফাইভে’। নারায়ণ সান্যালের ‘কাঁটা সিরিজ়’, পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। হিন্দিতে ‘ডিজ়নি হটস্টার’-এ একটা বিশাল সিরিজ তৈরি হচ্ছে। সেখানে অনিল কপূর, আদিত্য রায় কপূর-সহ অনেকে অভিনয় করছেন। প্রায় ২৫ দিন শ্রীলঙ্কায় শুটিং করে এলাম। না ‘ওটিটি’-তেও কিন্তু চুটিয়ে কাজ করছি।

প্রশ্ন: কলকাতার অভিনেতারা ইদানীং কি একটু বেশিই মুম্বইমুখী?

শাশ্বত: কলকাতায় যদি ভাল কাজের সুযোগ না আসে, তা হলে তো শহরের বাইরে লোকে সুযোগ খুঁজবেই। আর যদি তা করতে সক্ষম হই, তা হলে আমি কেন করব না। এটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। যেখানে ভাল কাজ হবে, সেখানেই আমি যাব। আমি এক জায়গায় আটকে থাকব কেন? যত বেশি আমার কাজ দেখবেন দর্শক, তত বেশি আমার লাভ।

প্রশ্ন: ‘শবর’ আপনার সফল ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। বাংলা সিনেমায় এত ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির মধ্যে নিজের কাজ নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?

শাশ্বত: আমি বেশ সন্তুষ্ট। কারণ ‘শবর’ এখনও পর্যন্ত এমন একটা ব্র্যান্ড, যা ঘেঁটে যায়নি। অনেকে মিলে শবর করেনি। শুধু আমি করেছি। সেটা আমার একদমই ব্যক্তিগত।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক কালে আপনার মেয়েকে দেখা গিয়েছে র‌্যাম্পে হাঁটতে। তা হলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসার জন্য পরের প্রজন্মও কি তৈরি?

শাশ্বত: এখন ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। হ্যাঁ, ইচ্ছা তো আছে অনেক কিছু। কিন্তু জানি না। সবটাই ওর ব্যাপার। ওর যেমন শখ তেমন করবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Saswata Cahtterjee Interview Actor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy