‘পাসওয়ার্ড’-এ দেব।
সাউথ সিটির ২৯তলার অফিসে তাঁর আগামী ছবি ‘পাসওয়ার্ড’-এর আলোচনায় মত্ত তিনি। দেব। পাশে অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র আর পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। রুক্মিণী অর্ডার করলেন চিকেন মোমো।দেব খেলেন মুড়ি।এর মাঝেই শুরু হল সাক্ষাৎকার।
আপনি চিকেন খাচ্ছেন না কেন?
আমার বাড়িতে গণেশ পুজো চলছে। টানা পাঁচদিন নিরামিষ খাব।
যে কাজটাই করেন খুব জাঁকজমকের সঙ্গে সিনসিয়ারলি করেন...
না, জাঁকজমক ঠিক নয়। আসলে কাজের মধ্যে বরাবর আলাদা কিছু করতে চাই।
এই যেমন ‘পাসওয়ার্ড’?
একেবারেই তাই। ইন্ডাস্ট্রি আর দর্শকের ভালবাসা দিয়ে দেব তৈরি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে ইন্ডাস্ট্রি আমায় তৈরি করল তাকে আমারও কিছু ফেরত দেওয়ার আছে। সেই ফেরত দেওয়ার জায়গা থেকে আমি বার বার আমার ছবিতে নতুন কনটেন্টের দিকে ঝুঁকছি। এখানে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা সেফ খেলেন। ঘরের মধ্যেই ছবি তৈরি করে ব্যবসা আনেন। তাঁরা তাঁদের দিক দিয়ে নিশ্চয়ই ঠিক। কিন্তু আমি বার বার নিজেকে ভাঙছি। হতে পারে আমার কোনও কোনও ছবি সুপারহিট নয়। ঠিক আছে। লোকে অন্তত আমার পরিশ্রম, অন্যরকম কাজ করার ঝুঁকিটা তো দেখুক। বুঝুক।
‘পাসওয়ার্ড’-এর ঝুঁকি কতটা?
আমার ছবির কনসেপ্টেই ঝুঁকি আছে। ছবির ক্ষেত্রে আমি সহজ পথ বাছব না। আপনি যদি ‘ককপিট’-এর কথা ভাবেন ফ্লাইট ল্যান্ডিং নিয়ে কোনও ছবি ভারতেই তো নেই!আমি করেছি। ‘চ্যাম্প’আবার একেবারেই আলাদা, বক্সারকে নিয়ে ছবি। আর ‘পাসওয়ার্ড’-এর টিজার দেখে তো অনেকে আমায় বলেছে এটা হলিউডের ছবি মনে হচ্ছে। যেরকম লুক, সেট।এটাই তো পাওয়া। ‘ওয়ার’-এর টিজার দেখুন আর আমাদের ‘পাসওয়ার্ড’-এর টিজার রাখুন পাশাপাশি। মারাত্মক ফারাক কিন্তু নেই। আর যদি ফারাক দেখতেই হয় সেটা বাজেটে। আমরা চেষ্টা করছি বাংলা ছবিকে গ্লোবালি নিয়ে যেতে। মুম্বই যেমন কনসেপ্টে চলছে। ‘অন্ধা ধুন’হোক বা‘গাল্লি বয়’হোক। সেই কনসেপ্ট নির্ভর ছবি করতে চাই।
অন্য লুকে দেব
আবার দেব-কমলেশ্বর জুটি!
কমলদা মহিলা হলে আমি ওর প্রেমে পড়তাম।একসঙ্গে কত যে সময় কাটাই আমরা! তবে এটা ঠিক, এই ধরনের গ্রাফিক্সের ছবি করার জন্য, গবেষণার জন্য কমলদার মতো পরিচালক পশ্চিমবঙ্গে আর নেই। অন্য পরিচালকদের সম্মান রেখেই বলছি এ কথা। বেশ কিছু সময় ধরে গবেষণা হয়েছে এই ‘পাসওয়ার্ড’নিয়ে। আমরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে সাইবার ক্রাইমের সম্মুখীন হয়েছি। কেউ বলি। কেউ বলি না। হঠাৎ কারও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। কারও আধার কার্ড ব্যাঙ্কের সঙ্গে লিঙ্ক হয়ে আছে। আমরা সারাক্ষণ স্টেটাস দিচ্ছি কে কোথায় যাচ্ছি? আমি হয়তো লন্ডনে। আমার ব্যাঙ্কের সঙ্গে দ্রুত আমি ফিজিক্যালি কানেক্ট করতে পারব না। সেই বুঝে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ফেসবুকে আমার জন্মতারিখ থেকে ফোন নম্বর, সব আছে। এটাই তো ব্যাঙ্ক ভেরিফিকেশনে চায়। কাজটা সহজ হচ্ছে। সর্বোপরি সরকার উঠছে পড়ছে সাইবাল ক্রাইমে। ট্রাম্পের যা হল! টিএমআই— টু মাচ ইনফর্মেশন যে কতটা মারাত্মক সেই বিষয় মানুষকে সচেতন করতেই ‘পাসওয়ার্ড’। ছবিতে একদল তথ্য তুলে মানুষকে ঠকাচ্ছে, অন্য দল সেটার বিরোধিতা করছে। মহিলারা, বাচ্চারা সবাই এই সাইবার দুনিয়ায় আক্রান্ত!এই ভয়ঙ্কর সময়টাকেই তুলে ধরছি আমরা।
দুর্গাপুজোয় এ বার চারটে ছবি। এত কম ছবি কি ইন্ডাস্ট্রির দুর্বল অর্থনীতিকে চিহ্নিত করে?
যাঁরা ভেবেছিলেন পুজোতে ছবি আসবে, কিন্তু পরে আনছেন না তাঁদের আমি সাধুবাদ জানাই। আমি অনেক আগেই পুজোর ছবি ঘোষণা করে দিয়েছিলাম। তাই আমায় আনতে হল।
সে কী! পুজোতে বাংলা ছবি মুক্তি পাওয়া তো চিরাচরিত বিষয়?
হল পাওয়া যায় না।এত ছবি আসবে কোথায়? এটা খুব বড় সমস্যা। তবে বারো বছর ধরে আমার পুজোয় বারোটা ছবি রিলিজ হয়েছে। টাচউড, সবক’টাই ব্লকব্লাস্টার ছিল। পুজোয় লোকে সপরিবার অনেক স্টারকে একটা ছবির মধ্যেই দেখে নিতে চায়। আমি মাল্টিস্টারার ছবির কথা বলছি। এখনও লোকে চায় পুজোতে দেবের ছবি আসুক। দেবের কমার্শিয়াল ছবি আসুক। পুজোর সঙ্গে আমার ছবি আসার একটা সম্পর্ক আছে।
আরও পড়ুন- নতুন বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে জ্যাকি শ্রফ কন্যা!
কয়েক দিনের মধ্যেই যে শুভশ্রীর ‘পরিণীতা’ আসতে চলেছে, আপনি কি দেখতে যাবেন?
রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় শুভশ্রীর ‘পরিণীতা’ আমি নিশ্চয়ই দেখতে যাব।
কিন্তু এ বারের পুজোতে কম ছবি আসার ঘটনায় কি বলা যায়, টলি ইন্ডাস্ট্রি পড়তির দিকে?
নাহ্, এটা আমি বলতে পারব না। আমি তো আমার প্রডাকশন হাউজ থেকে একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত দশ বছরে ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’-র মতো পিরিয়ড ফিল্ম কী এসেছে? তবে কম ছবি আসা ভাল। আমিও পরের বার পুজোতে ছবি আনব কি না সেটা ভাবব। আমাদের ছবি দেখানোর জায়গা নেই। একটা হাউজ একটা ছবি আনলেই ভাল। খামোখা হাউজের ক্ষমতা দেখিয়ে ছবি এনে লাভ নেই। গ্রামেগঞ্জে নতুন হল দরকার।
রুক্মিণী মৈত্র
নতুন হল তৈরির ক্ষেত্রে সাংসদ দেবের কোনও ভূমিকা আছে?
নাহ্, সাংসদ দেব নয়। হিরো দেব এক্ষেত্রে অনেক বেশি সজাগ।বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যেন ভাল থাকে সে দায়িত্ব আমার! ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত যে কেউ আমার টেকনিশিয়ান থেকে ডিওপি, তাদের ভাল রাখার দায়িত্ব আমার।
ইন্ডাস্ট্রিতে বলাও হয় দেবের প্রডাকশন হাউজ সকলকে যথাসময়ে তাদের সাম্মানিক দেয়।
আমাদের সেটাই চেষ্টা। দেবকে ‘কিডন্যাপ’-এর মতো কমার্শিয়াল ছবিও করতে হবে। ‘সাঁঝবাতি’-র মতো ইমোশনাল ছবিও করতে হবে। আরে, আমিই তো ‘আরশিনগর’করেছি। অপর্ণা সেনের মতো পরিচালক। ওই রকম প্যাটার্নের ছবি করার মধ্যে যথেষ্ট ঝুঁকি ছিল। সব সময় আমি চেষ্টা তো করছি। সেটা আমার দর্শক জানে।
‘কমার্শিয়াল ছবি’,‘স্টার’,এই শব্দগুলো আজকের ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে না?
আমি মনে করি না। স্টার সবসময় মিনিমাম একটা স্টার প্রেজেন্স নিয়ে আসে। অমিতাভ বচ্চন বরাবর সুপারস্টারই!
আরও পড়ুন-গণেশ পুজোয় গান গাইলেন মিমি, শুনে নিন...
তাহলে রাজকুমার রাও এত জনপ্রিয় হলেন কী করে?
দেখুন, রাজকুমার রাও দুর্দান্ত অভিনেতা। কিন্তু তিনি কি‘সিম্বা’র মতো ছবি করতে পারবেন? তার জন্য স্টার লাগে। যে স্টারের নাম রণবীর সিংহ, যিনি আবার ‘গাল্লিবয়’-এর মতো ছবি করেন, তখন তাঁকে আর রণবীর সিংহ মনে হয় না। তিনি চরিত্র হয়ে ওঠেন।দেব কমার্শিয়াল ছবি করে দেব হিসেবে। কিন্তু রিয়্যালিস্টিক ছবিতে সে চরিত্র হয়ে ওঠে।আর ছবি হিট হয় মুখে মুখে। দর্শক হল থেকে বেরিয়ে ছবি নিয়ে বলে।
লোকে তো বলে, দেবের ঘরের ছবি মানেই তাতে রুক্মিণী থাকবে?
রুক্মিণী আর পাওলিকে কমলদা কাস্ট করেছে। আমি না।কমলদা তো পাশেই আছে, আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন। বিষয়টা লোকে বলে। ‘হইচই আনলিমিটেড’-এ রুক্মিণী কোথায় ছিল? ‘পাসওয়ার্ড’-এ অভীক মুখোপাধ্যায় আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথা শুধু আমি বলেছি। বাকিটা সব কমলদা।
পাওলি এবং পরম
আপনার বিয়ের আর কত দিন বাকি?
আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি।
রেকর্ডার বন্ধ।‘পাসওয়ার্ড’-এর নায়ক-প্রযোজক তাঁর মনের পাসওয়ার্ডের দিকে মুখ ফেরালেন। রুক্মিণীর বাড়ি থেকে আনা তালক্ষীরের দিকে তাঁর মন। খাওয়া নিয়ে শুরু হল দু’জনের খুনসুটি!
তারপর?
‘টু মাচ ইনফর্মেশন’ ক্ষতিকর! ‘পাসওয়ার্ড’ কি লেখা যায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy