‘দেবী চৌধুরানি’-তে হরবল্লভের ভূমিকায় সুজন মুখোপাধ্যায়।
‘দেবী চৌধুরানী’-তে আপনার চরিত্র হরবল্লভ ঠিক কেমন?
খুব লোভী এক জন জমিদার। খালি পাল্টি খায়... নিজের সুবিধার জন্য... রায়বাহাদুর খেতাব পাওয়ার জন্য... নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে। নেগেটিভ শেডস, তার সঙ্গে একটা সেরিয়-কমিক... উপন্যাসে যেমন শুধু রাশভারী, বকাবকি করে, ভীষণ গম্ভীর... সেটা তো আছেই... প্রজাদের উপর অত্যাচারও করে। ডিমিং ক্যারেক্টার একটা। ফলে মজা তৈরি হয়... স্টিরিও-কমিক যেটাকে বলে, যেটা এক সময় উৎপলবাবু (দত্ত) করতেন। সাকসেসফুল... এক বছর হয়ে গেল প্রায়।
টেলিভিশন মিডিয়ামে অভিনয় কি সিনেমার থেকে ভিন্ন?
না... আমি ওই ভাবে দেখি না। সিনেমা যখন তৈরি হয় তার একটা আলাদা প্রিপারেশন নিশ্চয় থাকে। এখানেও তা-ই হয়। সেই এফর্টটা আমি এখানেও দিচ্ছি যেটা সিনেমাতে দিই। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে, এত দিন ধরে করতে হয়... রিহার্সালের স্কোপ কম থাকে। একটা চটজলদি ব্যাপার থাকে। স্ক্রিপ্ট তো তোমাকে ইমিডিয়েট দিচ্ছে... কখন গল্পটা কোন দিকে মোড় নেবে, আজকের সিনের কী মোটিভ সেটা জানা যাচ্ছে সিন শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে। নিজের ইমাজিনেশন কাজে লাগিয়ে নিজস্ব ইনপুট দিয়ে যেতে হয়। নিজস্ব ইনপুট দেওয়াটা তো একটা... ক্যালিবারের ব্যাপার। এখানেই তফাৎ হয়ে যায়।
মেগার চরিত্র মোনোটোনাস হয়ে যায় না?
হয় তো বটেই... হওয়ার প্রবল আশঙ্কা আছে। তখন ভাবতে হয় ভেরিয়েশনের কথা। সব সিনেই যে বিরাট কিছু করতে হবে এমন নয়। যেখানে অন্য চরিত্রকে সাপোর্ট করার থাকে সেখানে জাস্ট সাপোর্ট করলেই চলে।
মঞ্চ ছাড়া আমি অন্ধ : সুজন মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
তা হলে হরবল্লভ মোনোটোনাস হয়ে গিয়েছে?
খুব এনজয় করছি। পোশাক আলাদা, ভাবনা আলাদা... হাঁটার লাঠি, পাগড়ি... জমিদার... বডি ল্যাঙ্গোয়েজ আলাদা... চরিত্রর পারস্পেক্টিভটাই আলাদা। সেই ভাললাগাটার জন্য এইটুকু মনোটনি সহ্য করা যেতে পারে।
আর মঞ্চ?
মঞ্চ আমার প্রাণ। সেখানে সমস্ত কিছু নিয়ে আলোচনা করতে পারি, প্র্যাক্টিক্যালি চর্চা করতে পারি। মঞ্চ ছাড়া আমি অন্ধ। মঞ্চেই অভিনেতা হিসেবে শিখতে শিখতে গেছি...
ছোট থেকেই?
হ্যাঁ, সেটা তো বাবার (অরুণ মুখোপাধ্যায়) দলটা ছিল বলে। দেখেছি কী ভাবে নাটক তৈরি হচ্ছে, কী ভাবে অভিনেতাদের শেখাচ্ছেন বাবা... মানে সেই বয়সের বুদ্ধিসুদ্ধি দিয়ে। এখন যেহেতু আমি দলের কর্ণধার হয়ে গিয়েছি... তার ফলে কী হয়েছে... দল চালানোটা... বিরাট একটা অভিজ্ঞতা এবং বিরাট প্রেশার... দুটো একসঙ্গে! দল চালানো, তার ফান্ডিং, এতগুলো মানুষকে সামলানো... এইটা জীবনে করতে হবে ভাবিনি। এইটা আমার কাছে খুবই আচমকা এসে যায়। একটা হচ্ছে ক্রিয়েটিভ জায়গায় ডিরেকশন দিচ্ছি এবং ডিরেকশন দিতে গিয়ে আমাকে ডিরেক্টর হিসেবে অ্যাকসেপ্ট করে নিল, যে জন্য চারটে নাটক পরিচালনা করা সম্ভব হল। আর একটা হচ্ছে, দলটাকেও সচল করলাম। সচল করলাম শুনতে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু সচল করার জন্য তো কোনও ফান্ডিং নেই... এই সবকটা মিলিয়ে আমি যে আবার করতে পারব, এটা ধারণার বাইরে। এটা নিজের কাছে অসম্ভব একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল আর কি।
মাগন রাজার পালা’য় আমার চাপ অনেক কম, দু’জন মিলে টুকটুক করে করে ফেলি : সুজন মুখোপাধ্যায়
এ বিষয়ে দাদার (সুমন মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে আলোচনা হয় না?
লালদার সঙ্গে আলোচনা হয়। লালদা তো একটা গোটা নাটকে মেন রোল করে গেল... ‘ডন’, হিট করল। লালদাকে আমি মুম্বই থেকে এনে অভিনয় করালাম। লালদা তো ওই হেল্পটা আমাকে করতে পারবে না ওখান থেকে বসে। তাই না? ওই প্রেশারটা লালদার পক্ষে নেওয়া মুশকিল। কিন্তু লালদা যখন ডন কিহোতের রোলটা করল, সেটা একটা বিরাট পাওনা হল, শুধু আমার নয়... দলের এবং বাংলার নাট্যমোদী দর্শকের। সব মিলিয়ে খুব ইউনিক ইউনিক জিনিস ঘটল। তার আগের নাটকটাই আমি আর কাঞ্চন (মল্লিক)... কাঞ্চন আমার ডিরেকশনে অভিনয় করল (‘মাগন রাজার পালা’)। তার আগে ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’, আবার নতুনটা (‘রানি ক্রেউসা’) একটা গ্রিক মৌলিক নাটক, ব্রাত্য বসুর লেখা। লিখে আমার ওপর চ্যালেঞ্জটা ফেলে দিয়েছে। নিবেদিতা (মুখোপাধ্যায়) রানির রোলটা করছে, সুপ্রিয় দত্ত আবার ব্যাক করেছে, এক সময় ‘চেতনা’র মূল অভিনেতা ছিল। সাহেব চট্টোপাধ্যায় আমার ডিরেকশনে প্রথম বার মঞ্চে অভিনয় করলো। ‘মাগন রাজার পালা’ সিম্পল দু’জন চোরের গল্প, ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ মরাঠি প্রেক্ষাপট, ‘রানি ক্রেউসা’ গ্রিক প্রেক্ষাপট, ডন কিহোতে স্প্যানিশ লিটারেচার... আমার ক্ষেত্রে সবটাই একটা বিরাট বড় গ্র্যাঞ্জার... সেটা লোকের এখন এক্সপেক্টেশন হয়ে গিয়েছে। শুনতে খুব ভাল, কিন্তু কাজটা খুব কঠিন... মানে... হা হা হা... ওই জন্য ‘মাগন রাজার পালা’য় আমার চাপ অনেক কম, দু’জন মিলে টুকটুক করে করে ফেলি, সামনে পঞ্চাশতম অভিনয়।
নিবেদিতার সঙ্গে আপনার রসায়ন?
নিবেদিতার সঙ্গে আমার ইকুয়েশনটা খুব পরিষ্কার। ও যে জায়গাটা পাচ্ছে আজকে, যে ভালবাসাটা পাচ্ছে... থিয়েটারে এবং সিরিয়ালে দু জায়গাতেই দেখছি। ওর সিরিয়াল টানা অনেকদিন টপ রেটেড ছিল (‘কৃষ্ণকলি’) এবং অসম্ভব পপুলার ওর চরিত্র (সুজাতা চৌধুরী), মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে টেলি সম্মান পুরস্কার নিল। ‘রানি ক্রেউসা’ ব্রাত্য বসু ওর কথা ভেবেই লিখেছে। এই যে শ্রদ্ধা ভালবাসা মানুষের কাছে পাচ্ছে তাতে আমার খুব ভাল লাগে। আর মঞ্চে আমার পরিচালনায় নিবেদিতা... একটা জুটি মতো হয়ে গেছে। কে একটা মজা করে যেন সেদিন লিখল, আমরা যেন অজিতেশ আর কেয়া চক্রবর্তীর মতো।
নিজের পরিচালনায় সবসময় আপনাকে অভিনেতা হিসেবে পাওয়া যায়নি...
তার অনেকগুলো কারণ আছে। এত প্রেশার হয় ডিরেকশন দিতে গিয়ে, আমার সবসময় মনে হয় আমি অভিনয়টা জাস্টিফাই করতে পারব না।
এখনও কেউ প্রেমে পড়ে?
নিশ্চয় পড়ছে। প্রেম তো থাকতেই হবে। তবে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ তুমি কী ভাবে করবে সেটাই হচ্ছে আসল। আমার প্রেমে কেউ পড়বে, আমিও পড়তে পারি কারও প্রেমে। কিন্তু সেটাকে কী ভাবে তুমি ট্যাকল করছ, সৌন্দর্য দিয়ে ট্যাকল করছ না কি কদর্যতায় নিয়ে যাচ্ছ, সেটাই হচ্ছে আসল। প্রেম থাকতেই হবে। প্রেম না থাকলে কী করে হবে? কিন্তু সেটার একটা পরিমিতি বোধ থাকা উচিত, আমার মতে। তাতে প্রেমটাও ভাল থাকে বলে আমার মনে হয়।
আরও পড়ুন: অপরাজিতার কোলে কে এই শিশু? নেটদুনিয়া এই প্রশ্নেই তোলপাড়
আরও পড়ুন: বিস্ময়প্রতিভার বায়োপিকের নতুন পোস্টারে বিশ্ব গণিত দিবস উদযাপন বিদ্যার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy