Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Rudranil Ghosh

হাতে কাজ নেই, পেটে ভাত নেই, বিনোদনের দুনিয়ায় চোখের জলও নেই: রুদ্রনীল ঘোষ

দিন আনি দিন খাই আমরাও। মার্চ থেকে আমাদের কারও রোজগার নেই।

রুদ্রনীল ঘোষ

রুদ্রনীল ঘোষ

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ১৮:২০
Share: Save:

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি পোস্ট করেছেন, মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছে না! লকডাউনের সময় কে কী লুকোচ্ছে?

অন্য কারওর বিষয় জানি না। তবে আমি আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি বলতে পারি।বলব?

বলুন না...

মানুষের মনোরঞ্জন করে পেট ভরে আমাদের। তাঁদের মন খারাপ হলে, সে মন একটু ভাল হয় আমাদের কাজ দেখে। তাই আমরা তাঁদের কাছে ভালবাসার বা প্রিয় হই। তাঁরা আমাদের উপহার দিয়েছেন সম্মান খ্যাতি সব কিছু। সাধারণ থেকে অসাধারণ করে দিয়েছেন তাঁরাই। এ বড় আনন্দের পাওনা। লকডাউনেও আমাদের কাজ দেখে মন হালকা করেছেন গৃহবন্দি প্রায় সবাই। পুরনো ধারাবাহিক দেখছেন মানুষ। টেলিভিশনে দেখতে দেখতে মনে হয়েছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির মানুষ দারুণ আছে। অনেক টাকা আমাদের। কোনও দুঃখ নেই। আসলে আমরা তো আমাদের প্রিয় দর্শকদের সামনে কাঁদতে পারি না। চিৎকার করে বলতে পারি না, শোনো তোমরা, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। আমরা বলিউড নই যে আমাদের ছবি কোটি কোটি টাকার ব্যবসা আনে! আমরা পারি না...আমাদের পিএফ গ্র্যাচুইটি পেনশন কিছুই নেই। পেটে খাবার থাক না থাক, হাসিমুখে সেজেগুজে থাকতে হয়, জাস্ট জীবিকার নিয়মে।

এই সময়ে ঠিক কী বলতে চাইছে আপনার মন?

যা পরিস্থিতি এল তাতে মনে হচ্ছে আমাদের জীবনের বাকি সব টেনশনের মতো করোনাকেও টেনশন হিসেবে অভ্যেস করে নিতে হবে। আমরা নিরুপায়। জীবনকে এরকম করে নিয়ে এ বার জীবিকার দিকে তাকাতে হবে।

দিন আনি দিন খাই আমরাও। মার্চ থেকে আমাদের কারও রোজগার নেই।

মানে আপনি শুটিং শুরুর পক্ষে?

ইন্ডাস্ট্রিকে যদি টিকে থাকতে হয়, সংক্রমণের ব্যাপারে সতর্কতা নিয়ে ধীরে ধীরে কাজে নামতেই হবে। আতংকে ঘরে বসে খালি পেটে মরে যাওয়ার মানে হয় না। সরকার তো বাস চালাচ্ছেন। বাজারে তো রোজ মানুষ যাচ্ছেন! সবাই মরে যাচ্ছেন করোনায়?

পিপিইকিট পরে, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনটেন করে সত্যি শুট সম্ভব?

কোনও একজন চেয়ারে বসে বলে দিলেন পিপিই কিট পরে শুট হবে, সেটা তো শেষ কথা হতে পারে না।তিনি চিকিৎসক নন। কোনও একক ব্যক্তি এত বড় ইন্ডাস্ট্রির নিদান দিতে পারেন না।তিনি হয়তো ভালর জন্যই বলছেন। কিন্তু মানুষ তো দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে। পেট চালানোর চেয়ে মৃত্যুভয়, সন্দেহের অবকাশ অনেক বড়!

তা হলে?

দায়িত্বশীল সংগঠন গুলোকে পরবর্তী মিটিং বর্ধিত আকারে করলে ভাল হয়। গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক প্রযোজক বা অভিনেতা অভিনেত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো উচিত, মানে, যাঁদের নামে বা কাজের গুণে মানুষ সিনেমা হলে টিকিট কাটেন! যাঁদের কাজে ইন্ডাস্ট্রির পেট ভরে তাদের মতামতটাও জানা জরুরী বলে মনে হয়।

কিন্তু এই যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বলিউডের ছবি রিলিজ শুরু হল, এর ঢেউ টলিউডেও এসে পড়বে। সেক্ষেত্রে মাল্টিপ্লেক্সের সঙ্গে যুক্ত মানুষের কী হবে?

দেখুন, বলিউডে যে ছবি রিলিজ হচ্ছে তা একশো, দেড়শো কোটি টাকা পেয়ে যাবে। কিন্তু বাংলায় অনলাইনে ছবি রিলিজ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, আইনক্স, সর্বত্র মানুষের চাকরি যাচ্ছে। তবুও মানুষ বাঁচছে তো! করোনা এখন আমার সমাজের খারাপ অংশ, এভাবেই ভাবতে হবে। কাজ শুরু করতে হবে। লকডাউন উঠে গেলেও ভয়ঙ্কর সমস্যায় থাকবে আমাদের সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের পেট। আসলে, দিন আনি দিন খাই আমরাও। মার্চ থেকে আমাদের কারও রোজগার নেই।শুটিং বন্ধ।বাংলায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম? হইচই-এর স্ট্রেন্থ কত? যদিও সার্ফিং অনুযায়ী ইনকাম আসছে। আমাদেরও ভাবতে হবে এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে।কারণ কাজ শুরু হতে হতে সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে।

কমসংখ্যক মানুষ দিয়ে কাজ করাতে হবে তো?

টেকনিশিয়ানরা আমাদের সহকর্মী।তাঁদের প্রতি নিশ্চয় সহানুভূতি থাকবে। তবে এক সময় ইন্ডাস্ট্রিতে এই লোকসংখ্যা নিয়েও জলঘোলা হয়েছিল। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল,বলা হয়েছিল এতজন টেকনিশিয়ানকে নিয়েই কাজ করতে হবে। তবে এটা শুধু টেকনিশিয়ান নয়, শিল্পীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাস্তব ভাবতে হবে এখন। যাকে লাগবে না আমি নেব কী করে?প্রাণ বাঁচানো কাজে এখন আর রিল্যাক্সেশন দেখানো যাবে না। আমাদের পারিশ্রমিকও কমাতে হবে। সকলকেই কমাতে হবে।সকলের পেটে ভাত চাই। তাই সকলকে নিরপেক্ষ হতে হবে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। জানি না কে সমর্থন করবেন? আর কে করতে চাইলেও অন্য কোনও কারণে সামনে এসে সমর্থন করতে পারবেন না! আমরা পরিচিত কয়েকজন শিল্পী,পরিচালক বা প্রযোজক মানেই ইন্ডাস্ট্রি নয়। আমরা মোটে ২-৩% এই ইন্ডাস্ট্রির, যাঁরা আরো ২ একমাস ডাল ভাত খেয়েও বেঁচে যাব। কিন্তু ছোট টেকনিশিয়ান আর শিল্পী যাঁরা ৮০/৯০% তাদের অবস্থা করুণ।

তা হলে কী বলবেন এক্ষেত্রে?

আমাদের হয়ে বলার মানুষ প্রায় নেই। বিনোদনের মানুষদের আবার দুঃখ-কষ্ট হয় নাকি! ফেসবুকে বা অন্যান্য ঘুরে বেড়ানো ভিডিয়োগুলো দেখে ভুল ভাববেন না। হাতে কাজ নেই, পেটে রোজগার নেই। যন্ত্রণা ভুলতে আর আপনাদের আনন্দ দিতে বাড়ি বসে এইসব করছি আমরা সবাই। এক টাকাও রোজগার নেই। শুধু আশার বীজ বুনছি।ছোট আর মাঝারি শিল্পী বা টেকনিশিয়ানরা বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না, খাবার টাকা নেই। অধিকাংশ ছেলেমেয়ে কলকাতার বাইরের জেলাগুলো থেকে লড়াই করতে আসে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। বিপদে বাড়িও ফিরতে পারেনি। মুড়ি-জল খেয়ে ভাড়াবাড়িতে আটকে আছে। বকেয়া টাকা চাইতে গেলে লোকজন পরিস্থিতির দোহাই দিচ্ছে বা ইন্ডাস্ট্রি খুললে পাবে বলছে!মডেলিং বা গ্ল্যামার জগতের সব লোকজনেরও এক হাল! খালি পেট। কিন্তু প্রকাশ্যে মাথা হেঁট করা যাবে না! জীবিকার নিয়ম। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড যে!

অন্য বিষয়গুলি:

Rudranil Ghosh Tollywood Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE