আসছে ‘পার্সেল’: বাঁ দিকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং ডান দিকে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের লেক গার্ডেন্স-এর বাড়ি। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে ‘পার্সেল’। সেই পার্সেলের নানা মুখ। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, জয় সরকার, ইন্দ্রাশিস আচার্য। সে দিনের পার্সেল খোলার অপেক্ষায় তাঁরা। অপেক্ষার নাম অবশ্যই ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ঋতুপর্ণার বাড়ির সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন শাশ্বত, “ওই আসছেন। এখন কথা বলতে বলতে নামবে, ভীষণ ব্যস্ত! প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছে হয়তো!”
“মোটেও না, মায়ের ফোন ছিল, বলছে তুই তো আর আসিস না!” ঋতুপর্ণা।
“বলে দাও, বলে দাও, অনেক তো হল! এ বার আমায় ছাড়।” শাশ্বত।
হাসি ঠাট্টায় শুরু হল আড্ডা।
সবাইকে সব তো বলা হয়ে গিয়েছে। যা বলা হয়নি আজ তাই শুনব!
জয়: আমার মনে হয় তা হলে গল্পটা বলে দেওয়া যাক এ বার।
ঋতুপর্ণা: পার্সেল এমন নাম যার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। এমনিতে তো পার্সেল যে কোনও মানুষের ক্ষেত্রেই সারপ্রাইজ। তবে এই ছবিতে ‘পার্সেল’ কেমন করে সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ল সেটাই দরকার! আমাদের জীবনেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা চলে আসে যা আমাদের অজান্তেই হয়ে যায়। ছোট ছোট ঘটনা সম্পর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ে, আমরা বুঝতেই পারি না। এই বিষয়গুলো ইন্দ্রাশিস খুব সুন্দর করে ‘পার্সেল’-এ বলেছে। এই ছবি শুধু স্বামী-স্ত্রীর গল্প নয়। অনেক মানুষ জড়িয়ে আছেন এই ছবির সঙ্গে। এই ছবির ‘নন্দিনী’ আমার ব্যক্তিজীবনকেও খুব প্রভাবিত করেছে।
পার্সেল কি সম্পর্কের মোড়কই খুলবে?
শাশ্বত: আমার কাছে এটা এন্টারটেনিং ছবি। তার মানে এই নয় যে এখানে চারটে গান, পাঁচটা ফাইট সিকোয়েন্স! একটা টানটান উত্তেজনা একটা সময়ের পর দর্শক এমন ভাবে অনুভব করবেন যে তাঁরা চোখের পাতা ফেলার সময় পাবেন না! এটা থ্রিলার। তাই আমরা কেউই ছবি নিয়ে কিছু বলছি না কিন্তু! আর বলবও না। শুধু বলব, পার্সেলটা সাবধানে খুলবেন।
শাশ্বত, আপনার কাছে জানতে চাই, অসাবধানতায় কোনও পার্সেল খুলেছিলেন নাকি কখনও?
শাশ্বত: পার্সেল আসেনি। ফোন এসেছিল। কিন্তু কোনও কথা বলেনি। বার বার আসত। ফোঁস-ফাঁস আওয়াজ করে বন্ধ করে দিত। আমি এক বার ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে বলেছিলাম, নাম আর ঠিকানা বলুন নয়তো চিনব কী করে? আর আমি তো মোবাইল ব্যবহার করি না। যদি কিছু হয়েও থাকে মোবাইলে কোনও রেকর্ড নেই আমার।
(সকলের প্রচন্ড হাসি। শাশ্বত ঘুরিয়ে জয় সরকারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘জয়জয়কারের কাছে এ বার শুনি একটু আচমকা পার্সেলের গল্প!)
টিম ‘পার্সেল’
জয় আপনার তো মোবাইলও আছে, লোপাও আছে, বান্ধবীও আছে…
শাশ্বত: ও খুব রঙিন। সব রং ছড়িয়ে দেয়। আর দেখুন নিজে কেমন সাদা পরে আছে।
জয়: আমি সম্পর্ক নিয়ে বলতে চাই। ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। কাজ ছাড়াও প্রচুর ভাবনা এক্সচেঞ্জ করি আমরা। বুঝতে পারি ওর চাহিদাটা একেবারেই আলাদা। এই ছবিতে একটা মব ভায়োলেন্সের বিষয় আছে সেই জায়গায় মিউজিকটা যাতে মেগা সিরিয়ালের মতো না হয়ে যায় সে নিয়ে আমি চিন্তায় ছিলাম। আর এই ভাবনাটা ও আমায় ভাবতে শিখিয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমার স্বাধীনতায় ইন্দ্রাশিস কখনও হস্তক্ষেপ করেনি।
ঋতুপর্ণা কেমন গাইলেন?
জয়: ঋতু আমার সঙ্গে ‘মুক্তধারা’ ছবিতে কাজ করেছে। ওখানেও গান গেয়েছিল। আর অভিনেত্রীরা যখন গান গায় তখন গান আর অভিনয়ের ব্যালান্সটা এত সুন্দর হয় যে তা গানের চেয়ে বেশি কিছু হয়ে ওঠে। এখানে কীর্তন গেয়েছে। লোপার গাওয়া ভার্সনটাই ও গেয়েছে।
শাশ্বত: ঋতুর গান? সারা ইন্ডাস্ট্রিকেই তো ঋতু ‘গান পয়েন্টে’ ধরে রেখেছে! কী দাপট!
আবার লোপাকে দিয়ে গাইয়ে আপনি অন্য কাউকে দিয়ে গান গাওয়ালেন?
জয়: গানের জন্য লোপা এটা অনেক বার করেছে। আমি গানের কথা ভাবলে, শুনতে চাইলে কাকে বলব? ওকেই বলব! আর শুনুন, এই যে আপনি ‘পার্সেল’ আসার গল্প শুনতে চাইছিলেন, আমার সারপ্রাইজ পার্সেল তো লোপার ভয়ে বাড়ি অবধি আসতেই পারে না! এটা আসলে রক্ষাকবচ আমার।
(সকলের প্রচণ্ড হাসি)
‘পার্সেল’ ছবির একটি দৃশ্য
সত্যিই রক্ষাকবচ?
শাশ্বত: আরে, এ তো সম্পর্ক নিয়ে ‘লোপালুপি’ করছে! আসল কথা বলছে না।
জয়: সত্যি, ইন্টারেস্টিং পার্সেল নেই।
ঋতুপর্ণা: কী আশ্চর্য! কথার ‘পার্সেল’ আসে নিশ্চয়ই।
জয়: ফোন আসতো আমার কাছে। দীর্ঘ দিন আগে। বিয়েরও আগে। তার পরে আমি বুঝে গিয়েছিলাম কে করে। তখনও ভিতু ছিলাম। আজও তাই…
সকলেই বললেন ইন্দ্রাশিস এ রকম চেয়েছে! সে অভিনয় থেকে মিউজিক— এত চাওয়া নিয়ে আপনি কোথায় পৌঁছতে চান?
ইন্দ্রাশিস: আমার, আমাদের সব চাওয়া হলে পৌঁছক।
কী মনে হয়? আপনার ছবি দেখার দর্শক তৈরি হয়েছে?
ইন্দ্রাশিস: জানি না… হয়তো হয়েছে।
আপনি বলেন, আপনি হিট হবে ভেবে ছবি করেন না।
ইন্দ্রাশিস: আমি কিছু কথা বলতে চাই এ প্রসঙ্গে। সিনেমা বিরাট মিডিয়াম। বাংলা ছবি নিয়ে আমরা খুব মাতামাতি করি। কিন্তু বিশ্বে বাংলা ছবি নিয়ে কোনও মাতামাতি নেই। আমরা ভাবি আমার সময়টুকু আমি যা চাইছি, পাচ্ছি না। অস্থির হই। কিন্তু ভাল কাজ হলে তা থেকে যাবেই। ব্যবসা হচ্ছে খুব ভাল কথা। তেমনই এক্সপেরিমেন্টাল ছবিও হওয়া উচিত। এমন দিন আসুক, লোকে বলবে কলকাতা শহরে পরিচালক এমন ছবি তৈরি করেছেন যা অ্যামস্টারডামে বসেও দেখা যাবে। এই পৌঁছনর জন্য চাই ভাল সাংবাদিক, ভাল পরিচালক, সিনেমা মিডিয়াম। ভাল ছবি করেও তো তা যাচ্ছে না।
শাশ্বত: বাঙালি যে কাঁকড়ার জাত। এ বার বাঙালিকে কাঁকড়ার গল্পটা ভুলতে হবে।
ঋতুপর্ণা: একদম তাই।
শাশ্বত-ঋতুপর্ণা জুটিকে কেমন লাগল?
ইন্দ্রাশিস: অর্গ্যানিক না ইনঅর্গ্যানিক?
দুটোই…
ইন্দ্রাশিস: আমার খুব অর্গ্যানিক মনে হয়েছে। দেখতে গেলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট দু’জনের খুব স্ট্রং। কেউ বুঝতে দেননি যে আমি ওঁদের অভিজ্ঞতার কাছে নতুন। জয়ের ক্ষেত্রেও তাই। ওঁর কাছে প্রথম যখন ছবি করব বলে গিয়েছিলাম, ও কিন্তু না বলেছিল। গান ছিল না ছবিতে।
জয়: তাই? না বলেছিলাম! এই রে!
পরিচালকের সঙ্গে ঋতুপর্ণা
আর ঋতুপর্ণা?
ইন্দ্রাশিস: আগের দু’টো ছবিতে এ রকম সাপোর্ট পাইনি। ও একা হাতে প্রচার করছে। অপুদাও করছে। জয় তো করেই থাকে। এখন দেখা যাক…
ঋতুপর্ণার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা?
শাশ্বত: খুব ধৈর্য বেড়ে যায়। নাহ্! যা শুনেছিলাম ততও লেট করেনি। খুউঊব একটা করে নি। তবে প্রজেক্ট অনুযায়ী ওর ইনভল্ভমেন্ট থাকে। তুমি আমায় স্টারডামের জন্য নিয়েছ? দেখ কত বড় স্টার আমি। তুমি অভিনয়ের জন্য নিয়েছ? আমি অভিনয় করব। আমি ওকে বুঝি তো! তাই বলে দিলাম আসল রহস্যটা।
ইন্দ্রাশিস: দেরি মনেই হত না কারণ সেটে অপুদা থাকত। ভরিয়ে রাখত।
ঋতু: আমি লেটডাউনও করিনি কিন্তু!
জুন মাসে এই জুটির আবার নতুন ছবি আসছে না?
শাশ্বত: হ্যাঁ।
ঋতুপর্ণা: এখন বলে দিলে?
শাশ্বত: আরে জুটি নিয়ে বলছেন? শুনুন, সেরা জবাব। ‘প্রাক্তন’ দেখেই হল থেকে বেরিয়ে ঊষাদি বলেছিলেন, ‘এ তুনে কেয়া কিয়া? নটি বয়! উড়াকে লে গয়া?’
এ বার উড়ছেন তাঁরা ‘পার্সেল’ হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy