Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সিন্ধু সভ্যতা

এক মাসের হানিমুন শেষ। পুরনো সব বদলার প্রতিহিংসা বুকে নিয়ে সামনে নতুন মোড়। এমন সন্ধিক্ষণে হায়দরাবাদের অ্যাকাডেমিতে বসা পি ভি সিন্ধু ইস্পাতকঠিন মনটা যেন সিন্দুক খুলে বার করলেন। প্রত্যক্ষদর্শী গৌতম ভট্টাচার্য একুশ বছর হল। একটা অলিম্পিক্স পদকও রয়েছে। পরের স্টেপ কী? কোনও বয়ফ্রেন্ড? আরে না না (খিল খিল হাসি)। ব্যাডমিন্টন আমার প্যাশন। এর মধ্যেই আমি বাঁচি। অন্য কিছুর সময় কোথায়? ফোকাসটা সারাক্ষণ ধরে রাখতে হয়।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

একুশ বছর হল। একটা অলিম্পিক্স পদকও রয়েছে। পরের স্টেপ কী? কোনও বয়ফ্রেন্ড?

আরে না না (খিল খিল হাসি)। ব্যাডমিন্টন আমার প্যাশন। এর মধ্যেই আমি বাঁচি। অন্য কিছুর সময় কোথায়? ফোকাসটা সারাক্ষণ ধরে রাখতে হয়।

বয়ফ্রেন্ড হলে ফোকাস নড়ে যাবে?

হাঃ, হাঃ। সেটা নয়। আমি আসলে নিজেকে প্রতিনিয়ত এই বলে ঠেলি যে কিছু পেতে হলে বড় কিছু দিতে হবে। ব্যক্তিগত সুখ, আহ্লাদকে তাই মাথায় চড়তে দিই না।

ব্যাডমিন্টনই তা হলে এখন বয়ফ্রেন্ড ?

ইয়েস, এখনও ব্যা়ডমিন্টনই বয়ফ্রেন্ড।

রাত্তিরে ঘুমোতে যান কখন?

সাধারণত ন’টা। খুব রাত্তির হলে সাড়ে ন’টা।

সকালে ওঠা?

যখন দূরে থাকতাম তখন আরও আগে উঠতাম। এই ক’বছর ঘুম থেকে উঠছি পৌনে চারটের সময়। অ্যালার্ম রোজ এই সময়েই সেট করা থাকে।

আপনার তো আজ বলার সুযোগ রয়েছে গোপী স্যর, আমার টাইমটা একটু পরে ফেলুন। ভোর সা়ড়ে চারটেতে রোজ রোজ আমার শিডিউল রাখবেন না।

ভোরবেলা একা প্র্যাকটিসের মধ্যে না একটা অদ্ভুত মাধুর্য আছে। অত সকালে একা। চারপাশ শান্ত। তখন মনটা দারুণ চলে। এর পর একটা ছোট ব্রেক নিয়ে আবার শুরু করি।

আপনার দৈনিক প্র্যাকটিস টাইম টেবলটা বলুন।

সকাল ৪.৩০-৬.৩০। ৮.৩০-৯। ১১.৩০-১২। মধ্যিখানে তিন ঘণ্টা রেস্ট। আবার ৪-৬.৩০। সাতটার সময় ধুঁকতে ধুঁকতে বাড়ি ফিরি।

ঘুমোনোর জন্য ছ’ ঘণ্টার বেশি সময় নেই বোঝা গেল। কিন্তু এই রুটিন রোজকার?

রোববার পুরো ছুটি থাকে। বৃহস্পতিবার ইভনিংটা ছুটি। কোনও কোনও সময় শনিবারেও। তবে কোনও সেশন মিস করলে রোববারও আসতে হয়।

মোটামুটি ভাবে ৩৬৫ দিনের রুটিন? চরম ক্লান্তিকর তো!

ইয়েস এটাই রুটিন। কোথাও ডিফারেন্স করতে হলে প্রাণান্তকর কিছু তো করতেই হবে।

এমন রুটিন ফলো করতে করতে মনে হয় না আমার বয়সি মেয়েরা পার্টি করছে। ইন্সটাগ্রামে ছবি পোস্ট করছে। বার-য়ে যাচ্ছে। আমি কেন এই বন্দিদশা বছরের পর বছর কাটাব?

হয় না। আপনাকে বললাম না সাফল্যও চাইব আবার বড় কিছু ছাড়ব না সেটা অসম্ভব।

সাইনা নেহওয়ালের তুলনায় আপনার ভক্ত সংখ্যা বেশি। কিন্তু সাইনাকে আজ পর্যন্ত আপনি কখনও হারাতে পারেননি।

ইয়েস দু’বার খেলেছি। হেরেছি। সাইনা আসলে আমার খেলাটা আদ্যোপান্ত জানে। প্রচুর অভিজ্ঞতা ওর। প্রথম যখন খেলি, ফার্স্ট গেমটা আমি জিতছিলাম। তারপর বাজে কয়েকটা নেগেটিভ পয়েন্ট দিয়ে হারি।

সেকেন্ড গেমটা নার্ভাসনেসে ভুগে হেরে যাই। তবে এগুলো বলছি ২০১৩-র কথা। আজকের দিনে ভুলগুলো আর হবে না।

আজকের দিনে খেলা হলে সাইনা উল্টোদিকে নতুন সিন্ধুকে আবিষ্কার করবেন?

ইয়েস। এখন আর নার্ভাস হব বলে মনে হয় না। আমার আক্রমণাত্মক মনোভাব ঠিকরে বার হবে। বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা আলাদা হবে। আমি মনে করি শাটল কক ঠিকঠাক হিট করার মতো শরীরী ভাষা ধারালো রাখাও খুব ইম্পর্ট্যান্ট।

আচ্ছা বিএমডব্লিউ-র চাবিটা হাতে তুলে দিয়ে কী বলেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর?

এ বার তেমন কিছু নয়। কিন্তু প্রথম যে বার ওঁর হাত থেকে গাড়ি পাই, সেই এশিয়ান আন্ডার নাইন্টিন চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর, তখন খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তোমায় অলিম্পিক্স মেডেল জিততে হবে। সে দিন তোমার জন্য আমি আর একটা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় থাকব।

সচিন যদিও অন্য খেলার মানুষ। তবু এই টাইপের ব্যক্তিত্ব কি আপনাকে মোটিভেট করতে পারেন?

দেখুন সচিনকে বলা হয়ে থাকে গড অব ক্রিকেট। অদ্ভুত একটা পজিটিভিটি ঠিকরে বার হয় ওঁর থেকে। আমার বরাবর ওঁকে খুব সাপোর্টিভ মনে হয়।

আজ যখন ইন্টারভিউ করতে বসছি, আপনার রিও-তে মেডেল জেতার ঠিক এক মাস পূর্ণ হল। পাঠকদের জন্য এই একটা মাসের প্লিজ বর্ণনা দেবেন।

উফ স্বপ্নের মতো কেটে গেল একটা মাস। দারুণ এনজয় করেছি। খাওয়াদাওয়া, অপর্যাপ্ত ঘোরাঘুরি, একটা ইভেন্ট থেকে আরেকটা ইভেন্টে। পরপর ছুটি কাটিয়ে যাওয়া। নতুন নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ হওয়া। জাস্ট ঘোরের মতো। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার জীবনের প্রথম অলিম্পিক্সেই পদক জিতেছি।

এই এক মাসে সবচেয়ে দামি প্রশংসা কী পেলেন?

বলা শক্ত। ভালবাসায় সবাই ভিজিয়ে দিয়ে আমার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে টাচড হয়েছি বেঙ্গালুরুর এক ফ্যানের রিঅ্যাকশনে। সে একদিনের মাইনে আমায় চিঠিতে পাঠিয়েছে। আড়াইশো টাকা খামের ভিতর। ভাবতে পারেন? অভিভূত আমি। অত গরিব একজন মানুষ, তার একদিনের মাইনে পুরো দিয়ে দিয়েছে!

অলিম্পিক্সের অন্য ইভেন্টে থাকা ভারতীয়দের দেখে কখনও ইন্সপায়ার্ড লেগেছে? যেমন লিয়েন্ডার? যেমন সানিয়া?

সানিয়া, লিয়েন্ডার, কী মেরি কম — এঁরা সবসময় অনুপ্রেরণা। সানিয়া যে আগ্রাসন নিয়ে কোর্টে চলাফেরা করেন। লিয়েন্ডার যে মারমুখী অ্যাটিটিউডটা ফুটিয়ে তোলেন। ভীষণ আকর্ষণীয়! আমার ওই আগুনে ভাবটা দারুণ লাগে।

আপনি বিষেণ সিংহ বেদীকে চেনেন?

না মানে (লজ্জিত মুখে)।

উনি ভারতের একজন বিখ্যাত ক্রিকেটার। একই রকম বিখ্যাত চিরকালের ঠোঁটকাটা মানুষ হিসেবে। সেই বেদী আপনি সেমিফাইনালে জেতার পর উচ্ছ্বসিত টুইট করেন...

(থামিয়ে দিয়ে) আমি জানি অনেকেই টুইট করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এত সব বিখ্যাত মানুষেরা যে এমন প্রশংসা করছেন, আমি রিও-তে বসে জানতামই না। ফোনটা তো টানা তিন মাস আমার হাতে ছিল না। (হাসি) কোচ নিয়ে রেখেছিলেন। দেশে ফিরে দেখেছি, ফোনে কত কত মেসেজ। এই যে টুইটের কথা বললেন, এখন মনে হচ্ছে বোধহয় সেটাও কেউ আমায় বলেছিল।

বেদীর টুইটটা একটু অন্য রকম ছিল তাই আবার মনে করাচ্ছি। আচ্ছা আপনি বেদীকে চেনেন না। গাওস্করকে চেনেন?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, মিস্টার সুনীল গাওস্করকে চিনি। বেশ কয়েক বার দেখাও হয়েছে।

বেদী বলেছেন, গাওস্করের ফোকাস আর আক্রমণমুখী মনোভাব নাকি আপনার চোখেমুখে দেখতে পেয়েছেন। এটা কিন্তু বিরাট প্রশংসা।

ওহ! দারুণ!

এমনিতে ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের মধ্যে কাকে পছন্দ? আর কেন?

(ফ্যানগার্লের হাসি মুখে এনে) বিরাট কোহালি। ওর অ্যাগ্রেশনটা আমার দারুণ লাগে। প্রেশারে ধোনির ঠান্ডা থাকাটা শিক্ষণীয়। কিন্তু বিরাটের অ্যাপ্রোচ দারুণ এক্সাইটিং।

আপনি অন্যদের আগুনে মনোভাবের কথা বলছেন। কোর্টের মধ্যে আপনিও তো বাঘিনির মতো চলাফেরা করেন। এটা কি পুরো ন্যাচারাল? ছোটবেলা থেকে?

নাহ, আমি আগে খুব ঠান্ডা টাইপের ছিলাম। অত অ্যাগ্রেসিভ বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ছিল না। কোর্টে কথাও বলতাম না। একদিন প্র্যাকটিসে গোপী স্যর খুব বকাবকি করলেন। বললেন, ন্যাকামি হচ্ছে নাকি? চলো চিৎকার করো। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি। অথচ গলা দিয়ে এক লাইনও বার হচ্ছে না। উনি বলেই যাচ্ছেন সকলের সামনে, কী হল চ্যাঁচাও। এত অপমানিত জীবনে কম হয়েছি। চোখ দিয়ে টস টস করে জল গড়াচ্ছিল অথচ এক লাইনও মুখ দিয়ে বার হচ্ছে না।

কবে কার কথা?

এই তো বছর চার-পাঁচ হবে। আজ মনে হয় গোপী স্যর ভালর জন্যই বলেছিলেন।

অ্যাদ্দিন সাইনা নেহওয়ালের ছা়য়ার পিছনে আপনি থাকতেন। অঘোষিত দু’নম্বরে। অলিম্পিক্সের পর আপনিই অঘোষিত এক নম্বর। চাপটা রাতারাতি বেড়ে গেল না?

চাপটাপ এখনও বুঝছি না। হ্যাঁ, দায়িত্ব বেড়েছে। আমার ওপর চাপ বেড়েছে। মানুষের নজর এ‌খন আমার দিকে। কিন্তু তেমনি নিজের ওপর কনফিডেন্সও তো বে়ড়েছে। আমি যেমন খেলতাম তেমনই
খেলব। আমার অ্যাগ্রেশন হয়তো আরও বা়ড়বে। কমার কোনও কাহিনি নেই (হাসি)।

বোঝা গেল। কাল আবার মনে করা যাক ফাইনাল ম্যাচটা হচ্ছে। ক্যারোলিনা মারিনের সামনে আপনি। কী কী বদলাবেন?

ফাইনাল, যেটা হেরেছিলাম সেটা যে কেউ জিততে পারত। পিছন ফিরে যখন ভেবেছি, তখন দেখেছি থার্ড গেমে ১০-১০ হয়ে যাওয়ার পর কয়েকটা ইজি পয়েন্ট আমি দিয়েছি। আবার খেললে এই রকম সিচুয়েশনে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করব। ওই ২/৩ পয়েন্ট খেলাটা ঘুরিয়ে দিল। আবার দেখা হলে একই ভুল করব না (হঠাৎ রূপান্তরিত কঠিন মুখের অ্যাথলিটে)।

জেতার পর মারিনের সেলিব্রেশন দেখে বোঝা যায় ম্যাচ সংঘর্ষের বহরটা কোথায় পৌঁছেছিল। আপনার নিচু রিটার্নটা যখন নেটে গিয়ে লাগল সব শেষ করে দিয়ে, তখন আপনি নিজে কী ভাবছিলেন?

প্রথমে অসম্ভব দুঃখ হয়েছিল যে হৃদয় উজাড় করে খেলেও জিতলাম না। তার পর মনে হল মারিনকে কনগ্র্যাচুলেট করি। ও সত্যিই দারুণ খেলেছে। তার পর কোচও টেনে নিয়ে আমায় বললেন, মন খারাপ কোরো না। তুমি যা করে দেখিয়েছ তা কি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিলে? যেটা করেছ আপাতত সেটা নিয়ে সুখী থাকো।

আবার মারিনের সঙ্গে দেখা হলে তো ভেতরে বেদনার আগুন তোড়ফোড় করবে?

আগুন তো থাকবেই। কিন্তু ঠিকঠাক স্ট্র্যাটেজি থাকবে। শুধু আগুনে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না।

মারিনের সঙ্গে পরের সাক্ষাতে কোর্টে দাঁড়িয়ে সার্ভ করার আগে নীরবে কী বলবেন?

বলব, যা ইচ্ছে ঘটে ঘটুক। না জিতে আমি কোর্ট থেকে বেরোব না।

মানে, রিও আবার হতে দেব না।

নাহ, রিও আর হতে দেব না।

এই যে একমাস পর নতুন উদ্যমে সিন্ধু তার স্বাভাবিক উদ্যমে ফেরত গেল। ফ্যানরা তার কাছে নতুন কী আশা করবেন?

আশা করবেন বাড়তি এফর্ট। সিন্ধু যে ভালবাসা পেয়েছে সে এবার সেই ঋণ চুকোতে চায়। ইন্ডিয়াতে যে দিন নেমেছি সেই ডে ওয়ান থেকে শুরু হয়েছে। অ্যাকাডেমি থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ভাবতেই পারি না। এই ভালবাসার জবাব একমাত্র একস্ট্রা পরিশ্রমেই দিতে পারি।

কেউ কেউ এমন প্রশ্নও করেছে যে, এত সংবর্ধনা আর উচ্ছ্বাসে তোমার কনসেনট্রেশন ভেসে যাবে না তো? আমি ঠিক উল্টো বলছি। ভালবাসা আমার মেন্টালিটিকে আরও তীক্ষ্ণ করেছে। নিজেকে এখন প্রতিনিয়ত বলছি, দিস ইজ ওনলি দ্য স্টার্টিং পয়েন্ট। অনেক দূর যেতে হবে তোমায়। অনেক বেশি কিছু করে দেখাতে হবে।

শুনলাম অলিম্পিক্স পরবর্তী আপনার বিরুদ্ধে এখন কোর্টে সময় সময় তিনজনকে নামাচ্ছেন গোপী।

হ্যাঁ। ডিপেন্ড করে। কোনও দিন হয়তো প্র্যাকটিসে দু’জন। কোনও দিন তিনজন। শনিবার দিনটা সাধারণত প্র্যাকটিসে বেশি বৈচিত্র আনা হয়। কোনও দিন হয়তো আমায় শুধু অ্যাটাকিং খেলানো হল। কোনও দিন শুধু ডিফেন্স।

ভারতবাসী কি আশা করতে পারে যে, টোকিও ২০২০-র সময় পি ভি সিন্ধুই থাকবেন বিশ্বের এক নম্বর?

নিশ্চয়ই। আপাতত আমি বিশ্বের দশ নম্বর। দ্রুত এক নম্বর হতে চাই। টানা এখন জিততে হবে। তা হলেই তো র‌্যাঙ্কিং উঠবে। সামনে সুপার সিরিজ আসছে। অল ইংল্যান্ড আসবে।

আপনি এখন মহিলা ক্রীড়াবিদদের রোল মডেল। কী বলবেন উঠতি মেয়েদের যারা কম বয়সে আপনার মতো সফল হতে চায়?

বলব প্রথমত নিজের মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমি পারব। আমি হিসেবটা ঘুরিয়ে দিতে সফল হব। দুই, ফোকাসটা ধরে রাখতে হবে। তিন, প্রচণ্ড পরিশ্রমের জন্য তৈরি থাকতে হবে। সেই পরিশ্রমটা কিন্তু আধ বছরের নয়। লাগাতার। আমি যেমন এগারো বছর ধরে হাড়ভাঙা রুটিনের মধ্যে রয়েছি। চার, প্রচুর স্যাক্রিফাইস করতে হয়। প্রচুর। শুধু সেটা প্লেয়ারের নয়। তার বাবা-মায়েরও। আমার বাব-মা প্রচণ্ড স্যাক্রিফাইস না করলে আমি এই জায়গায় পৌঁছতেই পারতাম না। দু’জনেই ভলিবলার। অথচ, কোনও জোর করেননি যে, আমাকে ভলিবলই খেলতে হবে। কত দূরে থাকতাম আমরা! সেই ১৩০ কিমি দূরত্ব পেরিয়ে রোজ ওঁরা আমায় প্র্যাকটিসে নিয়ে আসতেন। আজ তো অ্যাকাডেমি থেকে দশ মিনিট দূরে আমার বাড়ি। কিন্তু সেই সময়গুলো কী করে ভুলে যাই।

রিওতে দীপা কর্মকারের ফাইনালটা দেখলেন?

দীপা-সাক্ষী দু’জনের পারফরম্যান্সই টিভিতে দেখেছি। আমার নিজের খেলা ছিল পরের দিন। দীপা যা করেছে অভাবনীয়। জিমন্যাস্টিকসে ইন্ডিয়া থেকে গিয়ে একটা মেয়ে বিশ্ব পর্যায়ে এই রকম পারফরম্যান্স করছে — ভাবাই যায় না। আমি তো ভেবেছিলাম নির্ঘাত মেডেল পেয়ে গেল। বেচারি জাস্ট অল্পের জন্য ফিরে যায়।

আপনি মনে করুন দীপার গোপীচন্দ। কী বলবেন ছাত্রীকে?

(হাসি) বলব, দীপা, রোজ রোজ সবার দিন হয় না। দিনটা যদি তোমার সঙ্গে না থাকে, কিছু করার নেই। তোমার হাতে যেটা ছিল সেটা তুমি করেছ — সেরাটা দিয়েছ। দুর্ধর্য তোমার পারফরম্যান্স। মন খারাপ কোরো না। দুর্ভাগ্য কারও রোজকার সঙ্গী হতে পারে না। তোমার সময় আসবে। তৈরি থেকো।

রিওতে এত সব প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনার কাঁটাও ছিল। শোভা দে-র টুইট নিয়ে যেমন দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হল।

ইয়েস, ওরা বলেই যাচ্ছিল। বলেই যাচ্ছিল। বাট দিনের শেষে আমরা তো মেডেলগুলো দিয়ে দেখাতে পেরেছি যে হোয়াট ইজ হোয়াট। লোকে কথা বলে ঠিকই। তাতে আওয়াজও হয়। কিন্তু মেডেল আরও চিৎকার করে কথা বলে।

বাঃ। দারুণ লাগল লাইনটা। সংক্ষেপে একটু বলুন পদক জেতা পি ভি সিন্ধু এখন কী ভাবছে?

ভাবছে চারপাশে, সামনে, পিছনে যা-ই ঘটে থাক, তাকে বিনম্র থাকতে হবে। পরিশ্রম বাড়াতে হবে। এত মানুষের ভালবাসার মর্যাদা দিতে হবে। কোচ তার জন্য এত কিছু করেছেন। তাকে কোচকে কোনও মতে ভুললে চলবে না। তাকে কোর্টে আরও অ্যাগ্রেসিভ হতে হবে। শরীরী ভাষা ঠিকঠাক রাখতে হবে।

এ বার আমাকে এমন একটা প্রশ্ন বলে দিন যা পি ভি সিন্ধুকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। কিন্তু কলকাতা থেকে আসা সাংবাদিক করেনি।

প্রশ্ন-প্রশ্ন। নাথিং। সাংবাদিকেরা তো এক মাসে সবই জিজ্ঞেস করে ফেলেছে। ভাবছি... ভাবছি।

নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন আছে, যা কেউ করেনি। আমিও করলাম না।

ইয়েস আছে (হাসি)। কবে আপনি...

বুঝতে পেরেছি। সিন্ধু কবে আপনি বিয়ে করবেন...

আরে না, না (জোরে হাসি)। ওটা তো আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। এখন ও সবের কোনও ব্যাপার নেই। যেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি, তা হল, তুমি তো বলছ বিশ্বের পয়লা নম্বর হতে চাও। কবে হবে বলে মনে করছ? তার আগে বলো এক নম্বর হিসেবে কত বছর থাকতে পারবে? হয়ে যাওয়াটা এক রকম। তার পর সেটা রক্ষা করাটা ভয়ঙ্কর টাফ।

লাভলি প্রশ্ন সিন্ধু। এক নম্বর হয়ে কত বছর থাকবেন?

আমি সত্যি মনে করি কনসিসটেন্সিটাই আসল।

লাস্ট কোশ্চেন। এই বায়োপিকের বাজারে আপনার ওপর বায়োপিক হলে নিজের চরিত্রে কাকে চাইবেন?

দীপিকা পাড়ুকোন। হিরোইনদের মধ্যে দীপিকাকে আমার দারুণ লাগে। উনি সিন্ধু হলে (হাঃ হাঃ) আমার দারুণ লাগবে।

ফাইন লেগ

ক্রিকেটেও আছি, ফ্যাশনেও:

কলকাতায় অর্চনা বিজয়া

‘ছুঁয়ে দে আঙুল’:

বিজ্ঞাপন শ্যুটে মিমি

অন্য বিষয়গুলি:

Pusarla Venkata Sindhu interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy