Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Paran Bandopadhyay

Paran Bandopadhyay: ‘কম বয়সের দুষ্টুমির সব অনুভূতি তো আর মরে যায়নি’

মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি। হাতভর্তি কাজ। তারুণ্যের আর এক নাম পরান বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরান।

পরান।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪১
Share: Save:

প্র: আপনার বয়স এখন আশি পেরিয়ে গিয়েছে। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস রয়েছে, এমন ছবি সই করার আগে দুশ্চিন্তা হয়েছিল?

উ: হয়নি আবার! ‘টনিক’-এর গল্পটা যখন প্রথম শুনেছিলাম, ভাল লেগেছিল বেশ। ঘরোয়া ছবি, সব বয়সের দর্শকের জন্য। অ্যাডভেঞ্চারের অংশগুলো শুনে মনে হয়েছিল, ও সব নিশ্চয়ই আমাকে করতে হবে না। পরিচালক অভিজিৎ (সেন) এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে হালকা ছলনা করেছিল প্রথমটায়। পরে অবশ্য স্বীকার করেছে। শুটিং করতে পৌঁছলাম উত্তরবঙ্গ, রিভার র‌্যাফটিংয়ের দৃশ্য শুট করা হবে। তিস্তার পাড়ে গিয়ে বুঝলাম, ব্যাপারটা করতে হবে আমাকেই। তলে তলে সে ষড়যন্ত্র হয়ে গিয়েছে (হাসি)! এ সব সময়ে দেব পর্দার বাইরেও টনিকের মতো কাজ করেছে। ও না থাকলে, আমার পক্ষে এত কিছু করা সম্ভব হত না। দেব এসে প্রথমেই বলল, ‘‘কোনও ব্যাপার না পরানদা। পাঁচ মিনিট লাগবে।’’ ওর এই অতিমাত্রায় স্বাভাবিক হাবভাব দেখেই মনে সন্দেহ হয়েছিল। বোটে চড়ে কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেই দেখি আকাশচুম্বী ঢেউ আছড়ে পড়ছে! তখন বেজায় রাগ হলেও পরে মনে হল, করলাম তো!

প্র: অভিনেতা দেবকে কেমন লাগল?

উ: পর্দায় আর পর্দার বাইরে, ও পুরোদস্তুর টিমম্যান। সবটা সুন্দর ম্যানেজ করে, সকলকে নিয়ে চলার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। ও একটু তাড়াতাড়ি কথা বলে। ও নিজেও জানে সেটা। কিছু সিরিয়াস দৃশ্যের আগে ওকে বলতাম, কী ভাবে অভিনয়ে জোর দিতে হবে, সংলাপে নয়। সংলাপে অ্যাক্টিং থাকে না। সংলাপ হল, অক্ষম অভিনেতার আত্মরক্ষার বর্ম। যারা যত কম সংলাপে অনেক কথা বলতে পারে, তারাই এলেমদার। ও বুদ্ধিমান ছেলে, খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলল। অনেক বছর আগে ‘মীরাক্কেল’-এর একটি পর্বে দেব অতিথি হয়ে এসেছিল। গল্প করতে করতে বলেছিল, ‘‘জানো পরানদা, আমার স্বপ্ন, বাবাকে একটা নতুন বাড়ি তৈরি করে দেব।’’ আমি নিজেও তো একজন বাবা। ওর ওই কথাগুলো খুব ছুঁয়ে গিয়েছিল আমায়। বুঝেছিলাম, ও মাটির ছেলে। ‘টনিক’-এর একটা আবেগঘন দৃশ্যে ওকে জড়িয়ে ধরে কিছু সংলাপ ছিল আমার। সেই সময়ে ওর ওই কথাগুলো মাথায় খেলছিল।

প্র: এই ছবিটা করতে গিয়ে অনেক দিন পরে সাইকেল চালাতে হল। রক ক্লাইম্বিং, স্কাই ডাইভিংও করেছেন...

উ: রক ক্লাইম্বিং করতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যথা পেয়েছিলাম। সেটা দু’-আড়াই মাস ভুগিয়েছিল। আকাশে ওড়ার সময়ে একবারও চোখ খুলিনি। এ ছাড়া শীতের রাতে বৃষ্টিতে ভেজা, বাথটাবে স্নান— এ সবও করতে হয়েছে। কম বয়সের দুষ্টুমির অনুভূতি তো আর সব মরে যায়নি!

প্র: সম্প্রতি ‘বব বিশ্বাস’-কালীদার চরিত্রে আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। মুম্বই থেকে আর প্রস্তাব পেলেন?

উ: দিনকয়েক আগেই ফোন এসেছিল এক নামী হাউসের কাস্টিং ডিরেক্টরের। গড়গড় করে হিন্দিতে গল্পটা বলে গেল। সবটা শুনে বললাম, ‘হবেটা কোথায়?’ তাতে জানা গেল, গোয়া, আন্দামান ইত্যাদি জায়গায় শুটিং হবে। বলে দিলাম, আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। হিন্দি কাজের ডাক এর আগেও এসেছে। তবে বাংলা ছেড়ে মুম্বইয়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ওখানে মেক্যানিক্যাল ডিসিপ্লিন। ওর মধ্যে সৃষ্টি হয় না। বাংলায় যা সম্পদ আছে, সে সব ছেড়ে এখন দেখি অনেকেই মুম্বইয়ে দৌড়চ্ছে। সে যাক, তাদের প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ নেই। তবে আমি পারব না।

প্র: ‘বব বিশ্বাস’ ওটিটি-তে মুক্তি পেয়েছিল। আপনি নিজে দেখেন ওয়েব সিরিজ় বা ফিল্ম?

উ: নাহ! হাতের তালুর মধ্যে খুদে খুদে সব মানুষ দেখে চোখ, কান কোনওটারই আরাম হয় না। আর ওতে নান্দনিক অনুভূতিও থাকে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের কোনও সম্পর্ক নেই, সকলে ওই নিয়েই আছে। সিরিয়ালেও দেখি, সব এক রকম দেখতে মেয়েরা একসঙ্গে কাঁদছে। দামি গয়না, শাড়ি পরে ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিয়ে আর পুজোআচ্চায় বেশি জোর দেওয়া হয় দেখি এখন। ভাল স্ক্রিপ্ট আর কোথায়!

প্র: পরান বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক শ্রেণির দর্শক শুধু কমেডিয়ান হিসেবেই চিনলেন। এটা ভাবায় আপনাকে?

উ: ‘প্রলয়’, ‘সিনেমাওয়ালা’র মতো ছবিও তো ভাবা হয়েছে আমাকে নিয়ে। দর্শকের কাছে আর কোনও শব্দ নেই বলে কমেডিয়ান বলে। ভালবেসেই বলে। রবিদা, ভানুদা এঁরা তো কমেডিয়ান হয়েই রয়ে গেলেন! অথচ কমেডিয়ান একজন পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা। চার্লি চ্যাপলিন যদি শুধু কমেডিয়ান হতেন, তা হলে তাঁকে দেখে চোখে জল আসে কেন? আসলে কমেডি, ট্র্যাজেডি দুটোরই উৎস হল, অসঙ্গতি। মনে আছে, উৎপল দত্তের ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’ করার সময়ে তোতলামির ম্যানারিজ়ম করব কি না, ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তাতে বলেছিলেন, ‘‘ভাল লাগলে গ্রাহ্য হবে, না হলে অগ্রাহ্য।’’ রবীন্দ্র সদনে রিহার্সাল চলাকালীন প্রথম বার সেটা করতেই কম্বুকণ্ঠে হেসে উঠেছিলেন উৎপলদা। মানে, পাশ করে গিয়েছি! পরে ডেকে বললেন, ‘‘পরান, তুমি মাস্টারি করো?’’ বললাম, ‘‘না, সরকারি চাকরি করি।’’ তাতে বললেন, ‘‘না, না। তোতলাদের মাস্টারি করো?’’ তার মানে দশে সাড়ে আট!

প্র: সামনে কী কী কাজ রয়েছে?

উ: অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’ শেষ হল। ‘বেলাইন’ নামে একটা ছবি করলাম। শ্রীজাতর ‘মানবজমিন’ আছে সামনে। ‘হামি টু’র প্রস্তাব এসেছিল। অনেক দূরে যেতে হবে বলে ওদের বললাম, আমাকে রেহাই দে। ইদানীং চোখের কারণে বেশি পড়াশোনাও করতে পারি না। আনন্দবাজারের পাঁচের পাতার একটা খবর থেকে আমার নতুন নাটকটা লিখছি। এর মাঝেই নানা রকম কাজের প্রস্তাব আসছে। তবে এখন কে কী উদ্দেশ্য নিয়ে প্রস্তাব দেয়, সব বুঝতে পারি। তাই মাঝে মাঝে নিজেকে গিনিপিগ মনে হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Paran Bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy