পাওলি দাম।
প্রশ্ন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে এক চ্যানেলের অনুষ্ঠানে একবার বলেছিলেন, ‘‘দাদা আমি হাসতে চাই!’’ দুঃখটা কীসের আপনার?
পাওলি: দুঃখ ‘এলা, ‘মাধবীলতা’, ‘কেয়া’ এ সব চরিত্রের। আমার নয়! আমি সিরিয়াস চরিত্র করেই চলেছি। এ বার নিজেকে ভাঙতে চেয়েছিলাম। রমকম করার খুব ইচ্ছে আমার। বিশেষ করে এই অতিমারির সময় চারিদিকে যখন এত খারাপ খবর। কত মানুষের চাকরি নেই! এ রকম জায়গা থেকেই মনে হল, ৪ বছর পর যখন ‘মীরাক্কেল’ আসছে, তখন সেটা নিশ্চয়ই দর্শককে ‘রিলিফ’ দেবে। সেখানে আমি বিচারক! এটা জেনে ভাল লেগেছিল। কমেডি সেকশনে কাজ করতে এখন যে কী ভাল লাগছে!
প্রশ্ন: মীরকে কতটা ভাল লাগছে?
পাওলি: (খুব উত্তেজিত) আমি জাস্ট মুগ্ধ! কাছ থেকে ওকে কাজ করতে দেখাটা একটা অভিজ্ঞতা। একদিন সেটে দেখলাম ওর শরীর ভাল নেই। কিন্তু শ্যুটের সময় তার এতটুকুও আঁচ পাওয়া গেল না। ওকে যত দেখছি অবাক হচ্ছি! আর ‘মীরাক্কেল’-এর মতো শোয়ে বিচারক হয়ে আসা। পাশে কাঞ্চনদা, রুদ্রদা সারাক্ষণ হাসাচ্ছে। আমিও কিন্তু প্র্যাঙ্ক ভালবাসি। সকলে জানে না। ভাবে আমি গম্ভীর!
প্রশ্ন: অনেকে বলছেন, লকডাউনে বাংলা সিনেমার কাজ তেমন নেই। অনুরাগীদের কাছে ছোটপর্দায় নিজেকে অভ্যস্ত করার জন্যই পাওলি ‘মীরাক্কেল’-এ।
পাওলি: একেবারেই না! লকডাউনে প্রচুর কাজ করেছি আমি। অগস্টের শেষে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার শ্যুট করলাম। ছবির নাম ‘আবহ’। একদিনের শ্যুট এখনও বাকি। সৌমিত্রজেঠুর সঙ্গে কাজ ছিল আমার। কত গল্প হল সেদিন ওঁর সঙ্গে। ভাবিনি ওঁকে এভাবে হাসপাতালে থাকতে হবে!
টিম মীরাক্কেল।
আরও পড়ুন: লাল বেনারসী, গয়না, চন্দনে অপরূপ তৃণা, চললেন ‘শ্বশুরাল’?
প্রশ্ন: আপনি তো রনথম্ভোরেও গিয়েছিলেন?
পাওলি: হ্যাঁ। ‘রাত বাকি হ্যায়’ শ্যুট করতে গিয়েছিলাম।এর পর ‘কালী’ আছে। একটা বাংলা প্রজেক্ট আছে। হিন্দি ওয়েবসিরিজ আছে। কাজ নেই বলে ‘মীরাক্কেল’-এ গেলাম, ব্যাপারটা একেবারেই তেমন নয়। আমি সব ধারার কাজে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই। আর দেখুন, সকলে নিকে নিয়ে মজা করতে পারে না। তা-ও আবার ক্যামেরার সামনে। মীরের কাছ থেকে যে কত কিছু শিখছি! সোহমের সঙ্গে প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করছি। মনে হয় ‘মীরাক্কেল’-এ প্রত্যেকদিনই একটা নতুন জার্নি।
আরও পড়ুন: শ্লীলতাহানির অভিযোগই কি কাল হল? কেরিয়ার শেষ বিজয় রাজের?
প্রশ্ন: কিন্তু এখানে তো স্ক্রিপ্ট নেই! কী করে সামলাচ্ছেন?
পাওলি: একবারেই! মীর দুমদাম বলে দিচ্ছে তো! আর আমি চেষ্টা করছি ডজ করে বেরোনোর। একটা এপিসোডে মীর হঠাৎ ‘বরফি’-র একটা রোম্যান্টিক সং গাইল। আর আমি একজন প্রতিযোগীর সঙ্গে সেই গানের সঙ্গে নাচলাম। একটা অসাধারণ মুহূর্ত তৈরি হল। কী ভাল গায় মীর! আসলে সিনেমার চেয়ে এখানে নিজেকে নানা ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছি। আর সিনেমায় আমি চরিত্র থেকে যাই। পাওলি নয়। এখানে শুধুই পাওলি। হা-হা করে হেসে উঠছি! কিছু কিছু জায়গায় ধ্যাড়াচ্ছিও। কিন্তু সেটাই মজা। রুদ্রদা আর কাঞ্চনদার ইয়ার্কি শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে। আমি এখন রোজ ‘মীরাক্কেল’-এর শ্যুটের দিকে তাকিয়ে থাকি! এত হাসি জন্মেও হাসিনি!
আরও পড়ুন: মাদক-কাণ্ডে এ বার অর্জুন রামপালের বাড়িতে তল্লাশি এনসিবির
প্রশ্ন: শুধুই কী হাসি?
পাওলি: (একটু ভেবে) যাঁরা এখানে প্রতিযোগী— অটোওয়ালা, তাঁতি-সহ আরও কত পেশার মানুষ, তাঁদের প্রত্যেকের জীবনের লড়াই শুনতে শুনতে নিজের জীবনের লড়াইয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পিছনদিকে ফিরে যাচ্ছি! আমার সঙ্গে তাঁদের লড়াইয়ের কত মিল! কাঞ্চনদা তো বলে, তোর চোখে কল লাগানো আছে। আমি ওঁদের জীবনের লড়াই শুনে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। আমি তো চট করে আমার খুব ব্যাক্তিগত বিষয়, লড়াই এখনও কোথাও শেয়ার করি না। করিওনি! আমি যখন অভিনয় করতে এসেছিলাম, তখন কোথায় রিয়্যালিটি শো? এখন মনে হয়, এই শো থেকে সকলে মিলে যদি ভাল অভিনেতাদের তুলে আনতে পারি, তাদের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারি! আমি সব সময় পজিটিভিটিতে বিশ্বাস করি।
স্বামী অর্জুনের সঙ্গে পাওলি।
প্রশ্ন: এই পজিটিভিটি নিয়ে পাওলি ইন্ডাস্ট্রি আর সংসার কী ভাবে করে সামলাচ্ছেন?
পাওলি: (হাসি) ওটা ‘মীরাক্কেল’ নয় ‘মিরাক্ল’।আমি লিব্রা। আমার জীবনে ভারসাম্য রাখা খুব জরুরি। দেখুন, মা-বাবার বিষয় আলাদা। ওটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না।
প্রশ্ন: মানে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়?
পাওলি: নাহ্। আমি পজিটিভ এনার্জি নিয়ে যা করব, সেটাই ভাল হবে এটা জানি। আমার শাশুড়ি আমায় খুব সম্মান করেন। পরিবারের সকলেই জানেন, অভিনয় আমার প্রথম সত্তা। আমার মা আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক। আর শাশুড়ি সবচেয়ে বড় ফ্যান। আমি নিজের মুখে কাজের কথা বলি না। কিন্তু আমার শাশুড়ি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দেখলে বা ওঁর বন্ধুরা আমার কাজ নিয়ে ওঁকে খবর দিলেই সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে কাজের কথা জানতে চান। ওঁর ডাক নাম ‘বুলবুল’। আর ‘বুলবুল’ দেখে খুব ভাল লেগেছিল ওর। ‘কণ্ঠ’, ‘সাঁঝবাতি’, ‘আহারে মন’— সব দেখেছেন। প্রিমিয়ারে আসতে চান না। একটা গ্যাং আছে ওঁদের। সকলে মিলে ‘প্রিয়া’ বা ‘নন্দনে’ যান। মাল্টিপ্লেক্স পছন্দ করেন না। ‘মাটি’ ছবিটা খুব দেখেন আমার শাশুড়ি। বলেন, চোখে জল চলে আসে। আমার কাজে ওঁর সমর্থন আছে।
প্রশ্ন: আপনি নিজে কতটা সংসারী?
পাওলি: আমি রান্না করতে ভালবাসি। আমার বাড়িতে থাকলে শাশুড়ির যত্ন নিই।
প্রশ্ন: আর আপনার স্বামী অর্জুন?
পাওলি: অর্জুন বেশ আছে। এখন শুধু বলে, সাবধানে কাজ করো। আউটডোর থেকে ফিরে ওর সঙ্গে সময় কাটাই। মাছ ও পছন্দ করে না। আমি খুব পছন্দ করি। ভালই হয়েছে একদিকে। ব্যালান্স হয়ে গিয়েছে। ও কাঁকড়া খেতে ভালবাসে। আমি পুজোর সময় বানিয়েছিলাম ওর জন্য। পাতুরিও বানিয়ে দিই। ও একদিন কারবোনারা বানিয়েছিল। দারুণ হয়েছিল। আমার জন্মদিনে শ্যুটে থাকব শুনে একদিন স্পেশ্যাল ডিনার করাল। এ ভাবেই চলছে।
প্রশ্ন : অর্জুন কতটা পজেসিভ?
পাওলি: অর্জুন সব জানে। নাহ, অভিনেত্রী পাওলিকে নিয়ে অর্জুন কখনও অনিশ্চয়তায় ভোগে না।
প্রশ্ন: ফ্যামিলি প্ল্যানিং কবে হবে?
পাওলি: (খানিক চুপ করে থেকে) আমার প্ল্যান করে কিছু হয় না। তবে অনুষ্কা (শর্মা) খুব ভাল করেছে। এই লকডাউনের সময়টার ঠিক ব্যবহার করে নিল। আমি তো লকডাউনে বাবা-মায়ের কাছে ছিলাম। ভাই, মা-বাবা আমরা একসঙ্গে এতদিন পর খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। মা আমায় গান শিখিয়েছে কত! এখন যা সময়, মনে হয়, কে আছি-কে নেই জানি না! তাই যে যেখানেই থাকি, আনন্দে সময় কাটাতে চাই। সামনে তো আবার দীপাবলি আসছে। এ বছর যেন শান্তিপ্রিয় দীপাবলি হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy