‘ভাইয়াজি’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী। সংগৃহীত চিত্র।
প্রশ্ন:‘ভাইয়াজি’তে যখন কাজ শুরু করেছিলেন তখন মাথায় ১০০ তম ছবির ধারণাটা ছিল?
মনোজ: আমাদের ছবির তরুণ পরিচালক অপূর্ব সিংহ করকি সমাজমাধ্যমে খুব সক্রিয়। অপূর্ব জানতে পারেন, ‘ভাইয়াজি’ আমার কেরিয়ারের ১০০তম ছবি। তাই ছবির প্রচারে আমরা এই সংখ্যাকে ব্যবহার করছি। শততম ছবির পাশাপাশি এটাও বলে রাখি, ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০ বছর পূর্ণ করলাম। আমি যখন ‘ভাইয়াজির’ গল্প শুনি তখন নিশ্চিত ছিলাম, এই ছবিতে আর যাই হোক আমি কাজ করব না। কিন্তু অপূর্ব ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ পরিচালনা করেছিল। ও একদম নাছোড়ের মত ধরল।আমাকে বলল, এই ছবিটা করলে, কেবল আমাকে নিয়েই করবে। খুব বড় বাণিজ্যিক ছবিতে খুব কমই কাজ করেছি। কারণ, নিজেকে কোনওদিনই ওই ধাঁচায় খাপ খাওয়াতে পারিনি। কিন্তু অপূর্বর জেদের কাছে হার মানতে হল। আমি না করলে এই ছবিটা অপূর্ব বানাত না।
প্রশ্ন: ‘ভাইয়াজি’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী একদম নতুন রূপে। ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যে কতটা বডি ডাবল বা স্টান্ট ব্যবহার করেছেন?
মনোজ: দক্ষিণের বিখ্যাত অ্যাকশন মাস্টার বিজয়ন এই ছবির অ্যাকশন দৃশ্য পরিচালনা করেছেন। পুরো ছবিতে যা করেছি, সব নিজেই করেছি।বিজয়নের শর্ত ছিল, আমাকে দিয়েই সব করাবেন। এখনও পর্যন্ত আমার হাঁটুতে ব্যথা! গলার পেশিতে যে টান পড়েছিল সেটার জের এখনও আছে। রোজ সেটে আসার আগে ‘হনুমান চলিশা’ পাঠ করে আসতাম। ভাগ্য ভাল যে, চোটের প্রভাব খুব বেশি ছিল না।
প্রশ্ন: নিজের কেরিয়ারে এতটা পথ চলে আসার পর ভাগ্য, পরিশ্রম, অধ্যবসায়– সব থেকে বেশি কৃতিত্ব কোনটাকে দেবেন?
মনোজ: এই ইন্ডাস্ট্রিতে অল্পবিস্তর সব মাধ্যমে এবং সব ধরনের চরিত্রে কাজ করেছি। মনে হয়েছে ভাগ্যের থেকে বড় কিছু যদি কাজ করে থাকে সেটা হল কাজের প্রতি একাগ্রতা। ৩০ বছরে ১০০টা ছবি এই জন্য করেছি কারণ কখনও সংখ্যার পিছনে ছুটিনি। কেরিয়ারে যখন পতন দেখেছি ঈশ্বরের পর আমায় সব থেকে বেশি সামলেছেন আমার পরিচালকেরা। আর আমি বরাবরই খুব জেদি প্রকৃতির। মাটি আঁকড়ে পড়েছিলাম। সাফল্য বা ব্যর্থতা, কোনওটাই মাথায় ঢুকতে দিইনি। জীবনে একটা নীতি মেনে চলি-- আমার যখন খুব মন খারাপ হয় ৬ ঘণ্টার বেশি চুপচাপ থাকি না। এর পিছনে যুক্তি একটাই, অর্ধেক দিনের বেশি অবসাদে থাকব না।
প্রশ্ন:হিন্দি বাণিজ্যিক ছবির নায়কের চেহারা আপনার নয়, তার জন্য প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। প্রত্যাখ্যান সামলেছেন কীভাবে?
মনোজ: এটা সত্যি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নায়োকচিত চেহারার চাহিদা অনেক। কিন্তু এরই মধ্যে নানা পটেকরের মত অভিনেতা যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন, তখন তাঁকে দর্শক কিন্তু অনেক ভালবাসা দেয়। এমনকি নানা পটেকর এক সময়ে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক-পেতেন। আমরা এ-ও জানি, অমিতাভজি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন, ওঁকেও অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এখনও তথাকথিত সুপুরুষ অভিনেতাদের নিয়ে মাতামাতি হয় বইকি। এরই ফাঁকে এমন অভিনেতারা আসেন, যাঁরা তাঁদের পরিশ্রম এবং ভাগ্যের জোরে সব বাধা অতিক্রম করতে পারেন। মুষ্টিমেয় কিছু পরিচালক আমার সঙ্গে কাজ করতে অরাজি। তাতে মনখারাপ করে বসে থাকতে রাজি নই। মনোজ বাজপেয়ীর নিজস্ব দর্শক আছেন। তাঁদের জন্য কাজ করব। আর হ্যাঁ, দুনিয়ার সামনে আমার মা আর আমার স্ত্রীর চোখে কিন্তু আমিই সবচেয়ে সুপুরুষ (হাসি)।
প্রশ্ন: আগাগোড়া রোম্যান্টিক চরিত্রে আপনাকে কি দেখতে পাওয়া যাবে?
মনোজ: সেই একই কথায় আবার আসব, নায়ক কতটা সুপুরুষ সেই অনুযায়ী হিন্দি ছবির চরিত্রায়ণ হয়। যাঁদের চেহারা সহজ, সরল, সাধারণত ইন্ডাস্ট্রিতে ভগবানের চরিত্রে বা রোম্যান্টিক হিরোর জন্য তাঁদের বাছা হয় না।
প্রশ্ন: আপনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। কোনও চরিত্র আপনার ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলে?
মনোজ: প্রভাব পরে বইকি। আমরা জীবনে অনেক কিছুই করে থাকি। সব সময়ে তার সুফল এবং কুফল দু’দিকই থাকে। আমার উপরেও চরিত্র প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন: এত বছর পরেও ছবিমুক্তির দিন শুক্রবারে মানসিক অবস্থা কেমন থাকে?
মনোজ: ছবির শুটিং শেষ হয়ে গেলে ডাবিং-এর পর আর পিছন ফিরে তাকাই না। আমি তো শুটিংয়ের সময় মনিটর দেখাও পছন্দ করি না। একটাই কৌতূহল, আমার দর্শকের কেমন লেগেছে, কোথায় আমরা ভুল করেছি? সেগুলো জেনে নিয়ে আবার এগিয়ে যাই। সমালোচকরা কী মতামত দিলেন তা নিয়ে আমার কখনও দুশ্চিন্তা হয় না। তার উপর নির্ভর করে আমি কি অভিনয় ছেড়ে গেঞ্জি-জাঙ্গিয়ার দোকান খুলে বসব? যে সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, সেগুলো নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের সব থেকে কঠিন সময় কোনটা ছিল?
মনোজ: ‘ব্যান্ডিট কুইন’ মুক্তি পাওয়ার পর যখন মুম্বই আসি, তখন হাতে কোনও কাজ ছিল না। দীর্ঘ ৪ বছরের অপেক্ষার পর ‘সত্য’ ছবিটা পাই। মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। ‘পিঞ্জর’এবং ‘১৯৭১’ ফ্লপ হওয়ায় হাত আবার ফাঁকা হয়ে যায়। সহনশীলতা, ধৈর্য আঁকড়ে অপেক্ষা করতে থাকি। ওই সময় প্রযোজকদের ফোন করে কাজ পর্যন্ত চেয়েছি, লজ্জা পাইনি। যখন কাজ ছিল না তখন নিজের উপর কাজ করেছি।
প্রশ্ন: অবসরে কী করেন?
মনোজ: পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো (বেড়াতে যাওয়া) আর ওদের চাহিদা মেটানো– এর থেকে বড় পরিতৃপ্তি হতে পারে না।
প্রশ্ন: কন্যা আভা নয়লা আপনার ছবি দেখতে ভালবাসে?
মনোজ: হ্যাঁ, ওর পছন্দের তালিকায় সবথেকে উপরে ‘ফ্যামিলি ম্যান’। ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’ ও তিন বার দেখেছে। আমি আর শাবানা (স্ত্রী) চেয়েওছিলাম যেন ও এই ছবিটা দেখে। আমার মতে প্রত্যেক মেয়ের এই ছবিটি দেখা উচিত। ‘গুলমোহর’দেখার পর বাথরুমে গিয়ে খুব কেঁদেছিল। কারণ শর্মিলা ঠাকুরকে দেখে বার বার ওর দিদিমার কথা মনে পড়ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy