‘বিসমিল্লা’ প্রেক্ষাগৃহে আসছে ১৯ অগস্ট।
সদ্য নিজের ছবির প্রি-ভিউ দেখে উঠলেন পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। কেমন লাগল? প্রশ্ন করতেই পরিচালকের গলায় তৃপ্তির সুর ‘বিসমিল্লা’! দর্শকেরাও তুষ্ট হবেন? ছবি-মুক্তির আগে জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে।
প্রশ্ন: ‘কেদারা’র পরে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের নতুন ছবি ‘বারান্দা’ বা ‘বৈঠকখানা’ হতেই পারত। ‘বিসমিল্লা’ কেন?
ইন্দ্রদীপ: ‘কেদারা’ নিছকই বসার চেয়ার নয় কিন্তু। ‘কেদারা’ বা ‘চেয়ার’ আসলে ক্ষমতার প্রতীক। তার উপরে বসে থাকা মানুষটি আদতে কেউ নয়। কিচ্ছু নয়। সেটাই ছিল আগের ছবির বিষয়। এ বারের বিষয়, ঈশ্বরের নামে শপথ করে ভালবাসার কথা বলা। আমার কাছে ভালবাসা মানে ঈশ্বর, প্রেম মানেও ঈশ্বর। আমি নিজে শব্দের দুনিয়ার মানুষ। তাই এক একটি শব্দ আমার কানে খুব জীবন্ত। সেই জায়গা থেকেও বিসমিল্লা শব্দটার গভীরতা অনেক। তা ছাড়া, ভারত-খ্যাত সানাইবাদক বিসমিল্লা খানের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা তো আছেই। সব মিলিয়ে তাই দ্বিতীয় ছবির এ রকম নামকরণ।
প্রশ্ন: গায়ক, অভিনেতা, খেলোয়াড়ের জীবন নিয়েই সাধারণত ছবি হয়। সানাইবাদকের জীবনও ছবির বিষয় হতে পারে, কেন মনে হল?
ইন্দ্রদীপ: আধুনিকতার দোহাই দিয়ে আসলে আমরা আমাদের শিল্প, সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। সেটা কিন্তু নিজেরাও বুঝতে পারছি না। তার মধ্যে অন্যতম সানাই। যা এখন খুব কম শোনা যায় বা বাজানো হয়। সারেঙ্গি, রাবণহত্যা, তারসানাই খুব কম বানানো হয়। এগুলো ভারতের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র। এগুলোকে নিয়ে বহু দিন ধরে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। আমার চোখে সানাই প্রেমের প্রতীক। সানাই যেমন বিয়েতে বাজে তেমনি শ্রাদ্ধেও বাজে। সানাই আদতে বিদায়ের সুর। এই অনুভূতিগুলো নতুন করে সবার মনে ছড়িয়ে দিতেই আমার ছবির বিষয় সানাই এবং সানাইবাদক।
প্রশ্ন: ঋদ্ধি সেন কেন ‘বিসমিল্লা’?
ইন্দ্রদীপ: শক্ত প্রশ্ন। উত্তর দেওয়া আরও শক্ত। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার পুরনো হৃদ্যতা। আমি ওঁর অভিনয়ের অন্ধ ভক্ত। তাই কৌশিকদা আমার ছবিতে। কিন্তু ঋদ্ধি, শুভশ্রী এঁরা কেন আমার ছবিতে— এক কথায় বোঝানো মুশকিল। আমার মনে হয়েছিল, এক মাত্র ঋদ্ধিই পারবে আমার ‘বিসমিল্লা’ হয়ে উঠতে। যাকে দেখে দর্শক বুঝতে পারবেন খ্যাতনামী সানাইবাদককে। আমি নিজে তৃপ্ত না হলে দর্শক তুষ্ট হবেন কী করে?
প্রশ্ন: পর্দার ‘বিসমিল্লা’ আর বাস্তবের বিসমিল্লা খানের জীবন কি এক?
ইন্দ্রদীপ: বেড়ে ওঠা, অস্তিত্ব নিয়ে সংকট, ভালবাসা, অনিশ্চয়তা— এই চারটি বিষয়ে পর্দার আর বাস্তবের বিসমিল্লা খানের মধ্যে দর্শক কোনও ফারাক খুঁজে পাবেন না। তার পরেও বলব, এটা কিন্তু সানাইবাদকের জীবনী ছবি নয়। সাধারণ ঘরের একটি ছেলে যখন শিল্পী হয়, ক্রমশ জনপ্রিয়তা পায় তার গল্প।
প্রশ্ন: শোনা কথা, সানাইবাদক দেবী সরস্বতীর উপাসক ছিলেন। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে সুর শিখিয়েছিলেন। তাই আপনার ‘বিসমিল্লা’ আর শ্রীকৃষ্ণ একাকার?
ইন্দ্রদীপ: আমার ‘বিসমিল্লা’ কৃষ্ণরূপী, কারণ আমার চোখে যিনি আল্লা তিনিই শ্রীকৃষ্ণ। আমার কাছে প্রেমই আসল। প্রেমের আলাদা রূপ হতে পারে। লক্ষ্য কিন্তু এক। আমি যদি সাত জন নারীর প্রেমে পড়ি তা হলে সবার মধ্যেই একই জিনিস খুঁজব। আমার ঈশ্বরচেতনার মধ্যেও একই লক্ষ্য। রূপ বা আধারের পার্থক্য থাকতেই পারে। তাতে ঈশ্বরের কিছু যায়-আসে না। ঈশ্বরবিশ্বাসীরও না।
প্রশ্ন: দেশে অসহিষ্ণুতা, ধর্মান্ধতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। ‘বিসমিল্লা’ তার বিরোধিতা করে বার্তা দেবে?
ইন্দ্রদীপ: ‘বিসমিল্লা’ প্রেমের কথা বলবে। ধর্মান্ধতা, অসহিষ্ণুতা দেশের, দশের, রাজনীতির বিষয়। আমার ছবির বিষয় নয়। আমার ছবি সুরের কথা বলে। ভালবাসার অনুভূতি ছড়ায়। অনেক দিন সুরেলা ছবি তৈরি হয়নি। আমার ছবি সেটাই। দয়া করে এতে কেউ রাজনীতির গন্ধ বা রাজনৈতিক কটাক্ষ খুঁজবেন না।
প্রশ্ন: শুভশ্রী-ঋদ্ধি-সুরঙ্গনা ত্রিকোণ কি শ্রীকৃষ্ণের অনুষঙ্গ ধরে?
ইন্দ্রদীপ: সব বলে দিলে মুশকিল। কেউ আর প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যাবেন না। বরং, কেন এই ত্রিকোণ সেটা দেখতেই না হয় হলে আসুন!
প্রশ্ন: মুসলিম পরিবারের আবহে হিন্দু দেবতার কথা। ছবি-মুক্তির আগে বা পরে যদি বয়কটের হুমকি পান?
ইন্দ্রদীপ: এখনও কোনও হুমকি পাইনি। আমি হিন্দু দেবতার কথা কিছু বলিনি। মুসলিম দেবতার কথাও নেই ছবিতে। আমার কাছে ঈশ্বর শুধুই ঈশ্বর। তার কোনও জাত-ধর্ম নেই। আমি মন্দিরেও যাই। মাজারেও যাই। তাই আমার চোখে যিনিই আল্লা তিনিই বিসমিল্লা। আমি কোথায় ঈশ্বরকে খুঁজে পাব সেটা একান্তই আমার বিষয়।
প্রশ্ন: প্রেম ছাড়া নাকি শিল্পী অসম্পূর্ণ! ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের প্রেম এই ছবিতে থাকবে?
ইন্দ্রদীপ: যে কোনও পুরুষের প্রথম প্রেম তার মা। এই ছবিতে সেই দিকটি দর্শক দেখতে পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy